কোচবিহার জেলা
কোচবিহার জেলা পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের জলপাইগুড়ি বিভাগের একটি জেলা। আয়তনের হিসেবে এটি রাজ্যের ত্রয়োদশ[1] এবং জনসংখ্যার হিসেবে ষোড়শ বৃহত্তম[1] জেলা। এই জেলার উত্তরে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা; দক্ষিণে বাংলাদেশের রংপুর বিভাগ; পূর্বে অসমের ধুবড়ী জেলা এবং পশ্চিমে জলপাইগুড়ি জেলা ও বাংলাদেশের রংপুর বিভাগ অবস্থিত।[2]:৪৭
কোচবিহার জেলা | |
---|---|
পশ্চিমবঙ্গের জেলা | |
![]() পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে কোচবিহারের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৬.৩২° উত্তর ৮৯.৪৫° পূর্ব | |
সদর | কোচবিহার |
বৃহত্তম শহর | কোচবিহার |
বিভাগ | জলপাইগুড়ি |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
দেশ | ![]() |
প্রতিষ্ঠা | ১৯ জানুয়ারি, ১৯৫০ |
বিধানসভা কেন্দ্র | ৯ |
লোকসভা কেন্দ্র | তালিকা
|
আয়তন | |
• মোট | ১৩০৮ বর্গমাইল (৩৩৮৭ কিমি২) |
জনসংখ্যা (২০০১) | |
• মোট | ২৪,৭৮,২৮০ |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় সময় (ইউটিসি+৫.৩০) |
PIN | ৭৩৬১XX |
ওয়েবসাইট | http://www.coochbehar.gov.in/ |
বর্তমান কোচবিহার জেলা অতীতে বৃহত্তর কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। ১৭৭২ সালে কোচবিহার রাজ্য ব্রিটিশ ভারতের একটি করদ রাজ্যে পরিণত হয়। ১৯৪৯ সালে কোচবিহারের তদনীন্তন রাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুর রাজ্যটিকে ভারত অধিরাজ্যের হাতে তুলে দেন। ১৯৫০ সালে কোচবিহার পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলায় পরিণত হয়।[2]:৪৭
ইতিহাস

বর্তমান কোচবিহার জেলাটি অতীতে বৃহত্তর কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। কামরূপের রাজধানী দ্বিধাবিভক্ত হলে কোচবিহার ‘কামতা’-র অন্তর্গত। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে রচিত শাহজাহাননামা গ্রন্থে কোচবিহার নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মেজর রেনেলের মানচিত্রে কোচবিহার ‘বিহার’ নামে উল্লিখিত হয়। ১৭৭২ সালে ভুটানের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে কোচবিহার-রাজ ধৈর্যেন্দ্র নারায়ণ ও ওয়ারেন হেস্টিংসের মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ফলে কোচবিহার ব্রিটিশদের একটি করদ রাজ্যে পরিণত হয়। ১৭৭৩ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে রাজ্যটি "কোচ বিহার" নামে পরিচিত হয় এবং এর রাজধানীর নাম হয় "বিহার ফোর্ট"। উল্লেখ্য, "কোচবিহার" শব্দটির অর্থ "কোচ জাতির বাসস্থান"। কোচবিহার গেজেট অনুযায়ী, মহারাজার আদেশ অনুযায়ী রাজ্যের সর্বশেষ নামকরণ হয় "কোচবিহার"।[2]:৪৭
১৯৪৯ সালের ২৮ অগস্ট রাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ কোচবিহার রাজ্যকে ভারতীয় অধিরাজ্যের হাতে তুলে দেন। এই বছর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কোচবিহার ভারতের কমিশনার শাসিত প্রদেশে পরিণত হয়। ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের ২৯০ক ধারা বলে কোচবিহার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি জেলায় পরিণত হয়।[2]:৪৭
ভূগোল
সমগ্র কোচবিহার জেলাটি উত্তরবঙ্গ সমভূমির অন্তর্গত। জেলার প্রধান নদনদীগুলি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সামান্য ঢাল বরাবর প্রবাহিত হয়েছে। এখানকার ভূভাগ উঁচুনিচু। কোনো কোনো অঞ্চল এতটাই নিচু যে বর্ষাকালে নদীর দুকূল ছাপিয়ে বন্যা দেখা দেয়। জেলার উচ্চভূমি অঞ্চলটি শীতলকুচি ব্লকের লালবাজারে ও নিম্নভূমি অঞ্চলগুলি দিনহাটা মহকুমায় অবস্থিত। এই জেলায় কোনো পাহাড় বা পর্বত নেই। তবে বিভিন্ন এলাকায় একাধিক বিশালাকার ঝিল দেখতে পাওয়া যায়।[2]:৪৭-৪৮
নদ-নদী
- তিস্তা নদী
- জলঢাকা নদী
- তোরষা নদী
- কালজানি নদী
- রায়ডাক নদী-দুধকুমার নদী
- গদাধর নদী
- ধরলা নদী
- ডুডুয়া নদী
- ঘরঘরিয়া নদী
- মানসাই নদী
- সঙ্কোশ নদী
- শালটিয়া নদী
- সুটুঙ্গা নদী
- বুড়িতিস্তা নদী
- দেওনাই-চাড়ালকাটা-যমুনেশ্বরী নদী
- সিঙ্গিমারি নদী
- বানিয়াদহ নদী
- খুটামারা নদী
- মালদাহা নদী
- ফুলকুমার নদী
কোচবিহার জেলার ছয়টি প্রধান নদী হল তিস্তা, জলঢাকা, তোর্সা, কালজানি, রায়ডাক ও গদাধর। এই নদীগুলি উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত। হিমালয় থেকে উৎপন্ন এই নদীগুলি জলপাইগুড়ি জেলার পশ্চিম ডুয়ার্স অঞ্চল থেকে কোচবিহার জেলায় প্রবেশ করেছে। কেবল মাত্র গুম্মন নদটি ডুয়ার্স থেকে উৎপন্ন। কোচবিহারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে প্রবেশ করে শেষে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিলিত হয়েছে এইসব নদী। নদীগুলির পাড় উঁচুনিচু ও নদীতল বালুকাময়। বড়ো নদীগুলিতে প্রচুর পরিমাণে বোল্ডার দেখা যায়। বর্ষাকালে বন্যা, নদীপাড় ক্ষয় ও মৃত্তিকাক্ষয় দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে তিস্তা ছাড়া অন্য নদীগুলিতে বিশেষ জল থাকে না। জেলার অন্যান্য নদীগুলির মধ্যে শানিয়াজান, বুটামারা, মাতাঙ্গণ, কুমনাই, গিলান্ডি, ডুডুয়া, মুজনাই, ডোলং প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। বারংবার নদীখাত পরিবর্তনের ফলে পরিত্যক্ত নদীখাতগুলি কালক্রমে ঝিল বা বিলে পরিণত হয়। এই ঝিলগুলি বৃষ্টির জলে পুষ্ট। এখানে মৎসচাষ করা হয় এবং সেচের জল পাওয়া যায়। জেলার উল্লেখযোগ্য বিলগুলি হল ভেরভেরি, চম্পাগুড়ি, সুকানিম, সকজল, সিতল, পানিগ্রাম, জগৎবের প্রভৃতি।[2]:৪৮
আবহাওয়া ও জলবায়ু
কোচবিহার জেলার জলবায়ু অতিরিক্ত আর্দ্রতাযুক্ত ও মধ্যম রকমের উষ্ণ। জেলায় গ্রীষ্মকাল মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত এবং শীতকাল নভেম্বরের মধ্যবর্তী সময় থেকে ফেব্রুয়ারির শেষভাগ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বর্ষায় এই অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে জেলার গড় উষ্ণতা থাকে সর্বোচ্চ ৩৬° সেন্টিগ্রেড থেকে সর্বনিম্ন ১৯° সেন্টিগ্রেড; আবার শীতকালের গড় উষ্ণতা সর্বোচ্চ ২৭° সেন্টিগ্রেড থেকে সর্বনিম্ন ৮° সেন্টিগ্রেড। জেলার গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২,৫০০-৩,২০০ মিলিমিটার। বার্ষিক ৭০ শতাংশ বৃষ্টিপাত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেই হয়ে থাকে। বর্ষায় ঘূর্ণবাত ও নিম্নচাপ কেন্দ্র সৃষ্টি হয়ে অতিভারী বৃষ্টিপাত ও তীব্র বায়ুপ্রবাহ দেখা যায়। বর্ষার শুরুতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হয়। অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আকাশ মেঘমুক্ত বা প্রায় মেঘমুক্ত থাকে।[2]:৪৮
মাটির প্রকৃতি
কোচবিহারের মৃত্তিকা পাললিক প্রকৃতির। অধিকাংশ আলগা বালিমাটি, উপরের স্তরের দোঁয়াশ মাটি প্রায় সব জায়গাতেই তিন ফুট গভীর। কোথাও কোথাও এই গভীরতা আরও কম এবং তার নিচে বালিস্তর বিদ্যমান। পূর্বদিকের কালো দোঁয়াশ মাটি বাদ দিলে সর্বত্রই মাটি ছাই রঙের। উপরের স্তরের মাটির জলধারণ ক্ষমতা কম বলে আর্দ্রতা ধরে রাখার অনুপযোগী।[2]:৪৮
সংস্কৃতি
কোচবিহারের জনপ্রিয় লোকসংঙ্গীত হল ভাওয়াইয়া ।
শিক্ষাব্যাবস্থা
কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়‚ পুন্ডিবারী কোচবিহার আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়,[5] তুফানগঞ্জ মহাবিদ্যালয়, মেখলীগঞ্জ মাহাবিদ্যালয়, দিনহাটা মহাবিদ্যালয়, মাথাভাঙ্গা মহাবিদ্যালয়[6] ইত্যাদী বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় ও বহুসংখ্যক উচ্চ ও নিম্নবিদ্যালয় এই জেলার অন্তর্গত৷
পরিবহনব্যাবস্থা
৩১ নং জাতীয় সড়ক পরিবহনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে ৷ এটি পূর্বে আসামরাজ্য পর্যন্ত্য বিস্তৃত৷[7] | এছাড়া রেলপথ ও আকাশপথ পারিবহন ব্যাবস্থা রয়েছে | নিউ কোচবিহার এই জেলার প্রধান রেলস্টেশন এবং কোচবিহার বিমানবন্দর হল একমাত্র বিমানবন্দর |
প্রশাসনিক বিভাগ
সমগ্র কোচবিহার জেলাকে মোট পাঁচটি মহকুমা ও ১২টি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে বিভক্ত করা হয়েছে। জেলায় মোট ৬টি পুরসভা রয়েছে।
মহকুমা | মহকুমা সদর | সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক | পৌরসভা |
---|---|---|---|
কোচবিহার সদর | কোচবিহার | কোচবিহার-১ কোচবিহার-২ |
কোচবিহার |
মেখলিগঞ্জ | মেখলিগঞ্জ | মেখলিগঞ্জ হলদিবাড়ি |
মেখলিগঞ্জ হলদিবাড়ি |
মাথাভাঙ্গা | মাথাভাঙ্গা | মাথাভাঙ্গা-১ মাথাভাঙ্গা-২ শীতলকুচি |
মাথাভাঙ্গা |
তুফানগঞ্জ | তুফানগঞ্জ | তুফানগঞ্জ-১ তুফানগঞ্জ-২ |
তুফানগঞ্জ |
দিনহাটা | দিনহাটা | দিনহাটা-১ দিনহাটা-২ সিতাই |
দিনহাটা |
জেলাটির বারোটি জনগণনা নগর হলো -
- নগর চ্যাংড়াবান্ধা (মেখলিগঞ্জ)
- খড়িমালা খাগড়াবাড়ি (কোচবিহার ১)
- গুড়িয়াহাটি (কোচবিহার ১)
- ঢালিয়াবাড়ি (কোচবিহার ১)
- বাণেশ্বর (কোচবিহার ২)
- খাগড়াবাড়ি (কোচবিহার ২)
- বাইশগুড়ি (কোচবিহার ২)
- চকচকা (কোচবিহার ২)
- টাকাগাছ (কোচবিহার ২)
- কামাত ফুলবাড়ি (তুফানগঞ্জ ১)
- ছোট লাউকুঠি (তুফানগঞ্জ ২)
- ভাঙরি প্রথম খণ্ড (দিনহাটা ১)
আরও দেখুন
পাদটীকা
- "Districts : West Bengal"। Government of India portal। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-২৪।
- "জেলা পরিচয়: কোচবিহার", সপ্তর্ষি মিত্র, যোজনা - ধনধান্যে, অক্টোবর ২০০৬ সংখ্যা, পৃ. ৪৭-৫৪
- http://www.censusindia.gov.in/2011census/C-16.html
- "DISTRIBUTION OF THE 22 SCHEDULED LANGUAGES-INDIA/STATES/UNION TERRITORIES - 2011 CENSUS" (PDF)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৬।
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৪।
- http://www.mtbc.ac.in/%5B%5D
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৫ জুলাই ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১০।