ইদ্রিসি রাজবংশ

ইদ্রিসি রাজবংশ (আরবি: الأدارسة al-Adārisah, বার্বার: Idrisiyen) ছিল ৭৮৮ থেকে ৯৭৪ সাল পর্যন্ত মরক্কোর একটি রাজবংশ।[1] হাসান ইবনে আলীর প্রপৌত্র ইদ্রিস এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। ইদ্রিসিদেরকে সচরাচর মরক্কো রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ধরা হয়।[2]

ইদ্রিসি রাজবংশ
الأدارسة
মরক্কোর শাসক রাজবংশ

৭৮৮–৯৭৪


পতাকা

ইদ্রিসি রাজবংশের অবস্থান
ইদ্রিসি রাজ্যের সর্বোচ্চ সীমানা, ৮২০ সালের কাছাকাছি
রাজধানী ওয়ালিল্লি (৭৮৯–৮০৮)
ফেজ (৮০৮–৯২৭)
হাজার আন-নাসার (৯২৭-৯৮৫)
ধর্ম ইসলাম (জাইদি)
সরকার রাজতন্ত্র
ঐতিহাসিক যুগ মধ্যযুগ
 - সংস্থাপিত ৭৮৮
 - ভাঙ্গিয়া দেত্তয়া হয়েছে ৯৭৪
সতর্কীকরণ: "মহাদেশের" জন্য উল্লিখিত মান সম্মত নয়

ইতিহাস

ইদ্রিসি মুদ্রা, আল-আলিয়ায় প্রস্তুতকৃত, মরক্কো, ৮৪০ খ্রিষ্টাব্দ

ইদ্রিসিরা আরব বংশোদ্ভূত ছিল।[3] তারা ছিল শিয়া মতবাদের জাইদি শাখার অনুসারী।[4]

ইদ্রিস ইবনে আবদুল্লাহ এই বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।[5] আব্বাসীয় ও শিয়াদের মধ্যে ফাখের যুদ্ধের পর ইদ্রিস ইবনে আবদুল্লাহ মাগরেবে পালিয়া যান। প্রথমে তিনি তাঞ্জিয়ার আসেন। এটি তৎকালীন যুগে মরক্কোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল। ৭৮৮ সালা নাগাদ তিনি ভলুবিলিসে বসবাস শুরু করেন।

ভলুবিলিসের শক্তিশালী আওরাবা বার্বাররা তাকে তাদের ইমাম মনোনীত করে। তারা মূলত তিলিমসান অঞ্চলের বাসিন্দা ছিল। ৬৭০ ও ৬৮০ এর দশকে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে তারা কুসাইলাকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু ৮ম শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ নাগাদ তারা উত্তর মরক্কোয় বসতি স্থাপন করে। তাদের নেতা ইসহাক রোমান শহর ভলুবিলিসে তার কেন্দ্র স্থাপন করেন। এই সময় নাগাদ আওরাবারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তাদের বসবাসের অঞ্চলের অধিকাংশ গোত্রই ছিল খ্রিষ্টান, ইহুদি, খারিজি বা পৌত্তলিক সম্প্রদায়ের। নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানকে দৃঢ় করার জন্য তারা একজন শরিফি ইমামকে স্বাগত জানিয়ে থাকতে পারে। ইদ্রিস ইবনে আবদুল্লাহ আওরাবাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হন। ৭৮৯ সালে তিনি ভলুবিলিসের দক্ষিণপূর্বে মেদিনাত ফাস নামে একটি বসতি স্থাপন করেন। ৭৯১ সালে ইদ্রিস ইবনে আবদুল্লাহ একজন আব্বাসীয় গুপ্তচর কর্তৃক বিষপ্রয়োগে নিহত হন। মৃত্যুকালে তার কোনো পুরুষ উত্তরাধিকারী ছিল না। কিন্তু তার মৃত্যুর অল্প কিছুকাল পর তার স্ত্রী কানজা তার পুত্র দ্বিতীয় ইদ্রিসের জন্ম দেন। ইদ্রিসের বিশ্বস্ত সাবেক দাস রশিদ তার সন্তানকে বড় করেন এবং তার পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। ৮০১ সালে রশিদ আব্বাসীয়দের হাতে নিহত হন। পরের বছর ১১ বছর বয়সে দ্বিতীয় ইদ্রিসকে আওরাবারা ইমাম ঘোষণা করে।

উত্তর মরক্কোর অধিকাংশ অঞ্চলে নিজের নিয়ন্ত্রণ বিস্তৃত করতে পারলেও প্রথম ইদ্রিস আওরাবা নেতৃত্বের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিলেন। দ্বিতীয় ইদ্রিস এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি ওয়ালিলিতে আরব বসতিস্থাপনকারীদের স্বাগত জানান। দুইজন আরবকে তিনি তার উজিরকাজি নিযুক্ত করেছিলেন। আওরাবা নেতা ইসহাক তিউনিসিয়ার আগলাবিদের সাথে মিলে তার বিরুদ্ধে পরিকল্পনা শুরু করেন। এর ফলেই ইদ্রিস ইসহাককে হত্যা করেন। ৮০৯ সালে তিনি আওরাবা সংখ্যাগরিষ্ঠ ওয়ালিলি থেকে ফেজে নিজের দপ্তর স্থানান্তর করেন। এখানে তিনি আল-আলিয়া নামক নতুন বসতি গড়ে তোলেন। দ্বিতীয় ইদ্রিস তার বাবার প্রতিষ্ঠিত ফেজের উন্নয়ন করেন। এখানে তিনি দুই দফায় আরব অভিবাসীদের স্বাগত জানান। এর মধ্যে একটি অভিবাসীদল ৮১৮ সালে কর্ডো‌বা থেকে এবং অন্য দল ৮২৪ সালে আগলাবি তিউনিসিয়া থেকে আসে। এর ফলে অন্যান্য মাগরেবি শহরের তুলনায় ফেজের আরব বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় ইদ্রিস ৮২৮ সালে মারা যান। এসময় ইদ্রিসি রাষ্ট্র পশ্চিম আলজেরিয়া থেকে দক্ষিণ মরক্কো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এবং তা মরক্কোর প্রধান রাষ্ট্র হয়ে উঠেছিল।

দ্বিতীয় ইদ্রিসের মৃত্যুর পর রাজবংশের পতন শুরু হয়। তার পুত্র ও উত্তরসুরি মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিসের শাসনামলে রাজ্য তার সাত ভাইয়ের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। ফলে মরক্কো ও আলজেরিয়ায় আটটি ইদ্রিসি রাষ্ট্রের জন্ম হয়।[6] মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিসের হাতে শুধু ফেজের শাসনভার ছিল। তার অন্যান্য ভাইদের উপর তার শাসন কর্তৃত্ব ছিল আনুষ্ঠানিক। এই সময় শহরগুলিতে ইসলামি ও আরব সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে এবং মরক্কো ট্রান্স-সাহারার বাণিজ্য থেকে মুনাফা অর্জন করে।

ইসলামি ও আরব সংস্কৃতির বিকাশ সত্ত্বেও তা শুধু শহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল। মরক্কোর অধিকাংশ জনগণ বার্বা‌র ভাষা ব্যবহার করত। ইদ্রিসি রাজবংশও বার্বা‌র প্রভাবিত ছিল। ৮৭০ এর দশকে ইবনে কুতাইবা তাদেরকে প্রথার দিক থেকে বার্বা‌র বলে বর্ণনা করেছেন। ১১শ শতাব্দী নাগাদ রাজপরিবার সম্পূর্ণরূপে মরক্কোর বার্বা‌র সমাজের সাথে একীভূত হয়ে পড়ে। ১১শ শতাব্দীতে এসকল বার্বা‌র ইদ্রিসিদের মধ্য থেকে হামুদিদের উত্থান হয় এবং তারা উত্তর মরক্কো ও দক্ষিণ স্পেনের কয়েকটি শহরের ক্ষমতা নিতে সক্ষম হয়েছিল।

৮৬৮ সালে মাদইয়ুনা, গাইয়াতা ও মিকণাসার বার্বা‌র খারিজি গোত্রগুলি ইদ্রিসিদের বিরুদ্ধে একজোট হয়। সেফরুতে তাদের ঘাঁটি ছিল। তারা ইদ্রিসি শাসক আলি ইবনে উমরকে পরাজিত ও হত্যা করতে সক্ষম হয় এবং ফেজ দখল করে। তার ভাই ইয়াহিয়া ৮৮০ সালে পুনরায় শহর অধিকার করতে সক্ষম হন এবং নতুন শাসক হন। ইদ্রিসিরা কয়েক দফা বারগাওয়াতা ও সিলিলমাসার খারিজি ও নেকুরের সুন্নিদের উপর হামলা চালায় কিন্তু এসকল নিজেদের রাজ্যের অঙ্গীভুত করতে সক্ষম হয়নি।

৯১৭ সালে মিকণাসা গোত্র ও তাদের নেতা মাসালা ইবনে হাবুস তাদের মিত্র ফাতেমীয়দের পক্ষে ফেজ আক্রমণ করে। ইয়াহিয়া ইবনে ইদ্রিসকে ফাতেমীয়দের আধিপত্য মেনে নিতে বাধ্য করা হয়। প্রথম হাসান আল-হাজাম ৯২৫ থেকে ৯২৭ সাল পর্যন্ত ফেজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পেরেছিলেন। উৎখাতের উদ্দেশ্যে ফেজ থেকে মিকণাসা গোত্র মরক্কোজুড়ে ইদ্রিসি পরিবারের সদস্যদের সন্ধান শুরু করে। অধিকাংশ ইদ্রিসি উত্তরপশ্চিম মরক্কোর জাবালা গোত্রের কাছে আশ্রয় নেয়। জাবালা অঞ্চলে হাজার আন-নাসার দুর্গে তাদের শক্তঘাটি ছিল। এখান থেকে তারা তাদের ক্ষমতা পুনর্গঠনের চেষ্টা চালায়। শেষ ইদ্রিসি শাসক হাসান ইবনে কানুন কর্ডো‌বা কর্তৃক তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।

রাজবংশ

শাসকগণ

  • ইদ্রিস ইবনে আবদুল্লাহ – (৭৮৮–৭৯১)
  • দ্বিতীয় ইদ্রিস – (৭৯১–৮২৮)
  • মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস – (৮২৮–৮৩৬)
  • আলি ইবনে মুহাম্মদ, "প্রথম আলি" নামে পরিচিত – (৮৩৬–৮৪৮)
  • ইয়াহিয়া ইবনে মুহাম্মদ, "প্রথম ইয়াহিয়া" নামে পরিচিত – (৮৪৮–৮৬৪)
  • ইয়াহিয়া ইবনে ইয়াহিয়া, "দ্বিতীয় ইয়াহিয়া" নামে পরিচিত – (৮৬৪–৮৭৪)
  • আলি ইবনে উমর, "দ্বিতীয় আলি" নামে পরিচিত – (৮৭৪–৮৮৩)
  • ইয়াহিয়া ইবনে আল-কাসিম, "তৃতীয় ইয়াহিয়া" নামে পরিচিত – (৮৮৩–৯০৪)
  • ইয়াহিয়া ইবনে ইদ্রিস ইবনে উমর, "চতুর্থ ইয়াহিয়া" নামে পরিচিত – (৯০৪–৯১৭)

ফাতেমীয় আধিপত্য – (৯১৭-৯২৫)

  • আল-হাজ্জাম আল-হাসান ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আল-কাসিম – (৯২৫–৯২৭)
  • আল-কাসিম গানুম – (৯৩৭-৯৪৮)
  • আবুল আইশ আহমাদ – (৯৪৮-৯৫৪)
  • আল-হাসান ইবনে কানুন, "দ্বিতীয় হাসান" নামে পরিচিত – (৯৫৪–৯৭৪) (১৯২৯ সালে জন্মগ্রহণকারী দ্বিতীয় হাসান নয়)

সময়রেখা

Royal house
ইদ্রিসি রাজবংশ
পূর্বসূরী
মরক্কোর আমির
৭৮৯–৯১৭
৯২৫–৯২৭
৯৩৭–৯৭৪
উত্তরসূরী

উমাইয়া আধিপত্য
পূর্বসূরী
উমাইয়া রাজবংশ
কর্ডো‌বার খলিফা
হামুদি শাখা

১০১৬–১০২৩
১০২৫–১০২৭
উত্তরসূরী
উমাইয়া রাজবংশ
(পুনপ্রতিষ্ঠিত)
পূর্বসূরী

কর্ডো‌বা খিলাফতের ভাঙ্গণ
মালাগা তাইফা
হামুদি শাখা

১০২৬–১০৫৭
উত্তরসূরী

গ্রানাডা তাইফার সাথে একীভূত
পূর্বসূরী

কর্ডো‌বা খিলাফতের ভাঙ্গণ
আলজেসিরাস তাইফা
হামুদি শাখা

১০৩৯–১০৫৮
উত্তরসূরী

সেভিল তাইফার সাথে একীভূত]]
পূর্বসূরী
মারিনি রাজবংশ
মরক্কোর সুলতান
জওতি শাখা

১৪৬৫–১৪৭২
উত্তরসূরী
ওয়াতাসি রাজবংশ

আরও দেখুন

  • হামুদি রাজবংশ
  • লিবিয়া রাজতন্ত্র
  • শিয়া মুসলিম রাজবংশের তালিকা

তথ্যসূত্র

  1. Hodgson, Marshall (১৯৬১), Venture of Islam, Chicago: University of Chicago Press, পৃষ্ঠা 262
  2. See:
    • Mahjoob Zweiria & Christoph Königb, Are Shias rising in the western part of the Arab world? The case of Morocco, in: Journal of North African Studies, Volume 13, Issue 4, 2008, pages 513–529
    • Ch.-A. Julien, Histoire de l'Afrique du Nord, de la conquête arabe à 1830 - Tome II, p.44 (éd. Payot, 1961) : "Idriss Il n'était pas seulement un fondateur de villes, il fut le fondateur du premier État marocain"
    • G Joffe, Morocco: Monarchy, legitimacy and succession, in : Third World Quarterly, 1988 : "tradition (...) reaches back to the origins of the modern Moroccan state in the ninth century Idrisid dynasty which founded the venerable city of. Fes"
    • Moroccan dynastic shurfa’‐hood in two historical contexts: idrisid cult and ‘Alawid power in : The Journal of North African Studies Volume 6, Issue 2, 2001  : "The Idrisids, the founder dynasty of Fas and, ideally at least, of the modern Moroccan state (...)"
    • Ruth Cyr, Twentieth Century Africa, iUniverse, 2001 (আইএসবিএন ৯৭৮০৫৯৫১৮৯৮২৩), p.345: "In 788 Idris, the first Arab ruler of the whole of Morocco, united the Berbers and Arabs under his rule, creating the first Moroccan state. He founded the Idrisid dynasty that reigned for almost two hundred years."
  3. Moroccan Feminist Discourses. Fatima Sadiqi. 2014, page 46.
  4. See:
  5. Idris I, D. Eustache, The Encyclopaedia of Islam, Vol. III, ed. B.Lewis, V. L. Menage, C. Pellat and J. Schact, (Brill, 1986), 1031.
  6. Idrisids, D. Eustache, The Encyclopaedia of Islam, Vol. III, 1035.

উৎস

  • Ibn Abi Zar, Rawd al-Qirtas (contains a chronicle of the dynasty).
  • Charles-André Julien, Histoire de l'Afrique du Nord, des origines à 1830, Payot 1994.

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.