মেটে তিতির
মেটে তিতির (বৈজ্ঞানিক নাম Francolinus pondicerianus) (ইংরেজি: Grey Francolin) বা ধূসর তিতির Phasianidae (ফ্যাজিয়ানিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Francolinus (ফ্র্যাঙ্কোলিনাস) গণের এক প্রজাতির বুনো তিতির।[1][2] মেটে তিতিরের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ পুদুচেরির খুদে মুরগী (ইতালীয় francolino = খুদে মুরগী; pondicerianus = পুদুচেরি)।[2] প্রায় ৩৩ লক্ষ ৮০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস।[3] আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা ন্যুনতম বিপদযুক্ত বলে ঘোষণা করেছে।[4] বাংলাদেশে এরা প্রাক্তন আবাসিক পাখি। বর্তমানে কোন নমুনা দেখার তথ্য জানা না থাকলেও বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধিত) আইন, ১৯৭৪ অনুসারে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[2]
মেটে তিতির Francolinus pondicerianus | |
---|---|
![]() | |
মেটে তিতির, F. p. interpositus উপপ্রজাতি | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Galliformes |
পরিবার: | Phasianidae |
উপপরিবার: | Perdicinae |
গণ: | Francolinus |
প্রজাতি: | F. pondicerianus |
দ্বিপদী নাম | |
Francolinus pondicerianus (Gmelin, 1789) | |
![]() | |
প্রতিশব্দ | |
Ortygornis ponticeriana, Tetrao pondicerianus (Gmelin, 1789) |
বিস্তৃতি

মেটে তিতির ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ইরানের আবাসিক পাখি। বাহরাইন, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরিশাস, সিশেলেস ও যুক্তরাষ্ট্রে (হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ) এই পাখি অবমুক্ত করা হয়েছে। আফগানিস্তানে পাখিটি অনিয়মিত (Vagrant)। তুর্কমেনিস্তানে মেটে তিতির দেখা গিয়েছে, কিন্তু এদের উৎস সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায় নি।[4] এককালে ঢাকা বিভাগের তৃণভূমিতে দেখা যেত, এখন নেই। বাংলাদেশের একমাত্র নমুনা ১৯শতকে পশ্চিমাঞ্চলের শুকনো এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।[2]
উপপ্রজাতি
মেটে তিতিরের মোট তিনটি উপপ্রজাতি সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।[5] এগুলো হল:

- F. p. interpositus (Hartert, 1917): উত্তর ভারতের মেটে তিতির - উত্তরপশ্চিম ভারত (বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত), নেপাল ও পাকিস্তান (সিন্ধু প্রদেশ); একসময় বাংলাদেশে এ উপপ্রজাতিটি পাওয়া যেত
- F. p. mecranensis (Zarudny and Harms, 1913): বেলুচিস্তানী মেটে তিতির - দক্ষিণপূর্ব ইরান, ওমান ও দক্ষিণ পাকিস্তান
- F. p. pondicerianus (Gmelin, 1789): মনোনিত উপপ্রজাতি - দক্ষিণ ভারত ও শ্রীলঙ্কা।

বিবরণ
মেটে তিতির ভোঁতা লেজের ছোট মুরগীর মত ধূসর ভূচর পাখি। এদের দৈর্ঘ্য কমবেশি ৩৩ সেন্টিমিটার, ওজন ২৭৫ গ্রাম, ডানা ১৪.৬ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২.৫ সেন্টিমিটার, পা ৪ সেন্টিমিটার ও লেজ ৮.৫ সেন্টিমিটার।[2] প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠে রয়েছে হালকা পীত, তামাটে, ধূসর-বাদামি ও বাদামি ডোরা; অনুজ্জ্বল কমলা মুখে স্পষ্ট কালো চক্ষু রেখা। পিঙ্গল-বাদামী চোখ। সরু কালো মালাসহ হালকা পীতাভ গলা। দেহতলে কালচে বাদামি সরু ডোরা দেখা যায়। এর রূপালি ঠোঁটের নিচের পাটি অপেক্ষাকৃত বেশি কালচে। পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল লাল। ওড়ার সময় হালকা পীত অবসারনী ও লেজের প্রান্ত পালকের তামাটে কিনারা চোখে পড়ে। স্ত্রী ও পুরুষ তিতিরের চেহারা অভিন্ন। উপপ্রজাতিভেদে মেটে তিতিরের পালকের রঙে বিভিন্নতা দেখা যায়।[1][2] মুখে কমলা ছোপের গাঢ়ত্ব pondicerianus উপপ্রজাতির সবচেয়ে বেশি, interpositus উপপ্রজাতির একটু ফিকে আর mecranensis উপপ্রজাতির ক্ষেত্রে তা প্রায় সাদাটে।
স্বভাব
মেটে তিতির সাধারণত শুকনো তৃণভূমি, ক্ষেত-খামার, ক্ষুদ্র ঝোপ ও বালিয়াড়িতে বিচরণ করে। কালো তিতিরের মত আর্দ্র এলাকা এদের পছন্দ নয়। সচরাচর জোড়ায় জোড়ায় বা ৪-৮টি পাখির পারিবারিক দলে ঘুরে বেড়ায়। এরা ঠোঁট ও পা দিয়ে মাটি আঁচড়ে খাবার খোঁজে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, আগাছার বীজ, শস্যদানা, ঘাসের ডগা ও রসালো ফল। ডানা দ্রুত ঝাপটে কিছুক্ষণ ওড়ার পর কিছু সময় বাতাসে ভেসে থাকে, তারপর আবার ডানা চালায়। তবে ওড়ার চেয়ে হেঁটে বেড়ানো পছন্দ করে বেশি। রাতে ছোট কাঁটাগাছ অথবা ঘন ঝোপের নিচে থাকে। এরা মাঝে মাঝে ডাকে। ডাক অনেকটা খাতি-তার...খাতি...তার। মূলত ডাক থেকেই এদের নাম হয়েছে তিতির। ভয় পেলে ঘর্ষণের মত শব্দ করে ডাকে: ক্ষিরর-ক্ষিরর।[2]
প্রজনন
মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস মেটে তিতিরের প্রজনন মৌসুম। এরা কাঁটাঘেরা ঝোপ বা পাথরের ফাঁকে ঘাস-পাতা দিয়ে বাসা বানায়। বাসা বানানো শেষে ৪-৯টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফিকে-হালকা পীত রঙের হয়। ডিমের মাপ ৩.২ × ২.৬ সেন্টিমিটার। শুধু স্ত্রী তিতির ডিমে তা দেয়। ২১-২৩ দিন পর ডিম ফুটে ছানা বের হয়।[2]

মানুষের সাথে সম্পর্ক

বহু বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে বুনো তিতির ধরো পোষ মানানো হচ্ছে। পোষা মেটে তিতিরের মাধ্যমে বুনো তিতির ডেকে এনে ধরা হয় আর পোষ মানানো হয়। পোষা পুরুষ তিতিরের লড়াই অমানবিক হলেও তা এ অঞ্চলের মানুষের বিনোদনের অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচিত।
তথ্যসূত্র
- রেজা খান, বাংলাদেশের পাখি (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৮), পৃ. ১১২।
- জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ২-৩।
- Francolinus pondicerianus, BirdLife International এ মেটে তিতির বিষয়ক পাতা।
- Francolinus pondicerianus, The IUCN Red List of Threatened Species এ মেটে তিতির বিষয়ক পাতা।
- Francolinus pondicerianus, The Internet Bird Collection এ মেটে তিতির বিষয়ক পাতা।
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে মেটে তিতির সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- মেটে তিতির বিষয়ক আরও তথ্য
- Oriental Bird Images, মেটে তিতিরের আলোকচিত্র ও ডাক।
![]() |
উইকিপ্রজাতিতে-এ বিষয় সম্পর্কিত তথ্যে রয়েছে: মেটে তিতির |