ভিটামিন
ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ হলো এক শ্রেণীর জৈব যৌগ যা বিভিন্ন খাদ্যে স্বল্প মাত্রায় থাকে এবং জীবের পুষ্টি সাধনে, স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশে এবং প্রজননে অত্যাবশ্যকীয় ভূমিকা রাখে। দেহে ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণের অভাবে বিভিন্ন রোগ বা সমস্যার প্রাদুর্ভাব হয়। যেমন ভিটামিন A'র অভাবে চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। ভিটামিন আবিস্কার করেন ফ্রাঙ্ক(1912)

মানবদেহের ভিটামিনসমূহ ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি
Vitamin name | রাসায়নিক নাম | দ্রাব্যতা | অভাবের ফলে সৃষ্ট রোগসমূহ | যে হারে খাবার গ্রহণ করতে হবে (পুরুষ, বয়স: ১৯-৭০)[1] |
সর্বোচ্চ যে পরিমাণ খাবার গ্রহণ করা যাবে (UL/day)[1] |
---|---|---|---|---|---|
ভিটামিন এ | রেটিনয়েড (রেটিনল, retinoids and carotenoids) |
স্নেহ পদার্থ | রাতকানা রোগ, Keratomalacia[2] |
900 µg | 3,000 µg |
ভিটামিন বি১ | Thiamine | পানি | Beriberi | 1.2 mg | (N/D)[3] |
Vitamin B2 | Riboflavin | পানি | Ariboflavinosis | 1.3 mg | N/D |
Vitamin B3 | Niacin | পানি | Pellagra | 16.0 mg | 35.0 mg |
Vitamin B5 | Pantothenic acid | পানি | Paresthesia | 5.0 mg [4] | N/D |
Vitamin B6 | Pyridoxine | পানি | রক্তশূন্যতা[5] | 1.3-1.7 mg | 100 mg |
Vitamin B7 | Biotin | পানি | n/a | 30.0 µg | N/D |
Vitamin B9 | Folic acid | পানি | Deficiency during pregnancy is associated with birth defects. |
400 µg | 1,000 µg |
Vitamin B12 | Cyanocobalamin | পানি | Megaloblastic anaemia[6] | 2.4 µg | N/D |
Vitamin C | Ascorbic acid | পানি | Scurvy | 90.0 mg | 2,000 mg |
Vitamin D | Ergocalciferol, Cholecalciferol | Fat | Rickets, Osteomalacia | 5.0 µg-10 µg [7] | 50 µg |
Vitamin E | Tocopherol, Tocotrienol | Fat | Deficiency is very rare, mild hemolytic anemia in newborn infants.[8] |
15.0 mg | 1,000 mg |
Vitamin K | Naphthoquinone | Fat | Bleeding diathesis | 120 µg | N/D |
জলদ্রাব্য ভিটামিন
ভিটামিন বি
ভিটামিন বি ,ভিটামিন বি কমপ্লেক্স নামেও পরিচিত। এই ভিটামিন পানিতে দ্রবণীয় এবং ভঙ্গুর। বি ভিটামিনের অনেকগুলো কার্বোহাইড্রেট বিপাকে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এখানে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন বি সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।
ভিটামিন বি ওয়ান বা থায়ামিন
ভিটামিন বি১-এর রাসায়নিক নাম থায়ামিন যা একটি বর্ণহীন, কেলাসাকৃতির পদার্থ। থায়ামিন শরীরের ভিতর থায়ামিন পাইরোফস্ফেটে পরিণত হয় যা কার্বোহাইড্রেট বিপাকে একটি সহ-উৎসেচক (যা উৎসেচকের সাথে মিলিত হতে হয়ে কিছু আংশিক বিক্রিয়া অণুঘটিত করে) হিসেবে কাজ করে । থায়ামিনের অভাবে বেরিবেরি রোগ হয় যা পেশী দূর্বল করে দেয়। এছাড়াও হৃৎপিণ্ডের আকার বেড়ে যাওয়া, পায়ে খিল ধরা এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর কারণ হিসেবে এই ভিটামিনের অভাব কাজ করে। স্নায়ু উদ্দীপক পদার্থ সংশ্লেষণে এটি ভূমিকা রাখে। সবচেয়ে বেশী থায়ামিন সমৃদ্ধ খাদ্যের মধ্যে রয়েছে: শূকরের মাংস, যকৃত, হৃৎপিণ্ড এবং বৃক্কের মাংস, ভাঁটিখানার ঈস্ট, চর্বিহীন মাংস, ডিম, ঢেকিছাটা চাল, শস্যদানা, গমের বীজ, বৈঁচী (এ ধরনের বীচিশূন্য ফল),চিনাবাদাম এবং শুঁটি। শস্যপেষাই কলের মাধ্যমে শস্যদানা ঝালঅই করার সময় এর থায়ামিনসমৃদ্ধ অংশগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাই চাল বা পেষাইকৃত গমে থায়ামিনের পরিমাণ কম থাকে। বর্তমানকালের গবেষণায় চাল ও গমে থায়ামিনের পরিমাণ বেশ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে, তথাপি অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই সমস্যা রয়েই গেছে।
ভিটামিন বি টু বা রাইবোফ্ল্যাভিন
ভিটামিন বি২-এর রাসায়নিক নাম রাইবোফ্ল্যাভিন (C17H20N4O6)। রাইবোফ্ল্যাভিন থেকে ফ্ল্যাভিন মনোনিউক্লিওটাইড ও ফ্ল্যাভিন অ্যাডেনিন ডাইনিউক্লিওটাইড নামে দুটি সহ-উৎসেচক তৈরি হয়। এই সহ-উৎসেচক কার্বোহাইড্রেট, চর্বি এবং শ্বসনীয় আমিষ বিপাকে সাহায্য করে থাকে। শ্লেষ্মা ঝিল্লীর রক্ষণাবেক্ষণেও এর ভূমিকা রয়েছে। বি২-এর অভাবে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় সেগুলো অতটা স্পষ্ট নয়। কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে: ত্বকের বিকৃতি (বিশেষত নাক ও ঠোটের চারপাশে) এবং আলোক সংবেদনশীলতা। রাইবোফ্ল্যাভিনের ভালো উৎসগুলোর মধ্যে আছে: কলিজা, দুধ, মাংস, গাঢ় সবুজ রঙের সব্জি, শস্যদানা, পেস্তা, পাউরুটি এবং মাশরুম।
ভিটামিন বি থ্রি বা নিকোটিনিক অ্যাসিড
এর রাসায়নিক নাম নায়াসিন (C6H5NO2) বা নিকোটিনিক এসিড। এটিও সহকারী উৎসেচক যা পুষ্টিকর খাদ্য থেকে শক্তির বিমুক্তকরণে সাহায্য করে। নায়াসিনের অভাব হলে অপুষ্টি রোগ দেখা দেয়। এর প্রাথমিক লক্ষণ হল ত্বকের যে অংশ সরাসরি সূর্যের আলো পায় সে অংশে বিভিন্ন স্ফোটক উদগত হয় যাতে মনে হয় সূর্যের আলোয় সে অংশ পুড়ে গেছে। পরবর্তী লক্ষনগুলো হল: লাল ও ==== ভিটামিন বি ফাইভ বা [[প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড]ফলিক অ্যাসিড ] ====
ভিটামিন বি সিক্স
এর রাসায়নিক নাম পাইরিডক্সিন। ভিটামিন বি৬ শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।
ভিটামিন এইচ বা বায়োটিন বা ভিটামিন বি সেভেন
ভিটামিন এইচের রাসায়নিক নাম হচ্ছে বায়োটিন (biotin - C10H16N2O3S) যা চর্বি বিপাকে সহায়তা করে। ডিমের কুসুম এবং কলিজায় এটি পাওয়া যায়। বায়োটিনের অভাবে ক্ষুধামন্দা, অন্তঃত্বকের কিছু রোগ, চুল পড়ে যাওয়া এবং অ্যানিমিয়া দেখা দেয়।[9]
ভিটামিন এম বা ফোলিক অ্যাসিড বা ভিটামিন বি নাইন
ভিটামিন সি বা অ্যাস্করবিক অ্যাসিড
সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি রয়েছে আমাজন জঙ্গলের কামু কামু বেরিতে। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিলিগোট পামে, আর তৃতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ রয়েছে হিমালয় পর্বতাঞ্চলের গোজি বেরিতে।[10]
স্নেহদ্রাব্য ভিটামিন
ভিটামিন এ বা রেটিনল
ভিটামিন এ একটি হালকা হলুদ বর্ণের প্রাথমিক অ্যালকোহল। এটি ক্যারোটিন থেকে উদ্ভূত হয়। ত্বকের উৎপত্তি ও রক্ষণাবেক্ষণ, শ্লেষ্মা ঝিল্লী, হাড়, দাঁত, দৃষ্টি এবং পুনরুৎপাদন ক্ষমতার উপর এই ভিটামিনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। রাতকানা রোগ অন্যতম প্রাচীন একটি রোগ। ভিটামিন এ-'র অভাবে এই রোগটি হয়ে থাকে। এছাড়া এই ভিটামিনের অভাবে যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় তা হল: ত্বকের অত্যধিক শুষ্কতা, শ্লেষ্মা ঝিল্লীর নিঃসরণ কমে যাওয়া, ব্যাক্টিরিয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া, অশ্রু গ্রন্থির অকার্যকারিতা এবং তার ফলে চোখের শুষ্কতা। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিশুদের অন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনেও এই ভিটামিনের অভাব কাজ করে।
দুইটি ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে মানব দেহে ভিটামিন এ তৈরি হতে পারে। একটি হল: ক্যারোটিন থেকে উৎপাদন। গাজর, ফুলকপি, লাউ, পালং শাক, মিষ্টি আলু প্রভৃতিতে ক্যারোটিন থাকে। অন্য উপায়টি হল: তৃণভোজী প্রাণী কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ভিটামিন এ সরাসরি গ্রহণ করা। প্রাণীজ উপায়ে ভিটামিন এ যা থেকে পাওয় যায় তা হল: দুধ, মাখন, পনির, ডিমের কুসুম, কলিজা এবং মাছের যকৃতের তেল। আমরা সাধারণত যে খাবার গ্রহণ করি তা থেকেই এই ভিটামিনের চাহিদা অনেকটা পূরণ হয়ে যায়। অতিরিক্ত ভিটামিন এ গ্রহণ করা উচিত নয়। এতে শারীরিক বৃদ্ধির উপর প্রভাব পড়ে। এছাড়া মাসিক রজঃস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া, লোহিত রক্ত কণিকা ধ্বংস হওয়া, ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া, মথা ব্যাথা এবং জন্ডিস সহ এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
এ২
এটি ভিটামিন এ-এর একটি বিশেষ রুপ যা মাছের যকৃত থেকে পাওয়া যায়।[9]
ভিটামিন ডি বা ক্যাল্সিফেরল
ইহা এমন এক প্রকার ভিটামিন যা সূর্যালোক এর উপস্থিতিতে মানবদেহের চর্মে উৎপন্ন হয়।
উৎস:
- সুর্য আলোক রশ্মির উপস্থিতিতে মানবদেহের চর্মে উৎপন্ন হয়।
- ভোজ্য তেল, দুগ্ধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য, বিভিন্ন মাছের তেল, ডিমের কুসুম, মাখন,ঘি, চর্বি এবং ইলিশ মাছের তেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।
কাজ:
- অস্থি ও দাঁতের কাঠামো গঠন।
- অন্ত্রে ক্যালসিয়াম এর শোষণ বাড়ায়।
- রক্ত প্রবাহে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
অভাবজনিত রোগ
রিকেটস্:
লক্ষণসমূহ:
- ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম এর অভাবে শিশুর হাড় নরম হয়ে যায় এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
- পায়ের হাড় ধনুকের মত বেঁকে যায় এবং দেহের চাপে অন্যান্য হাড়গুলোও বেঁকে যায়।
- হাত ও পায়ের অস্থিসন্ধি বা গিট ফুলে যায়।
- বুকের হাড় বা পাজরের হাড় বেঁকে যায়।
প্রতিরোধ:
শিশুকে ভিটামিন “ডি” সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো। শিশুকে কিছুক্ষণের জন্য সূর্যের নরম আলোয় বিশেষ করে সকাল ও বিকাল বেলা খেলাধুলা করতে দেওয়া।
অস্টি ও ম্যালেশিয়া:
বয়স্কদের রিকেটস্ অস্টিওম্যালেশিয়া নামে পরিচিত।
লক্ষণসমূহ:
- অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণে বিঘ্ন ঘটে।
- ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর সঞ্চয় কমতে থাকে।
- থাইরয়েড গ্রন্থির কাজের পরির্বতন ঘটে।
- অস্থি দূর্বল ও কাঠিন্য কমে যায় ফলে হালকা আঘাতে অস্থি ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি।
প্রতিরোধ:
উপযুক্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন “ডি” যুক্ত খাবার গ্রহণ করা।
ভিটামিন ই বা টোকোফেরল
ভিটামিন কে বা ন্যাপথোকুইনোন
কে১
সবুজ শাক-সব্জিতে পাওয়া যায়।[9]
কে২
মাছের দেহে এই ভিটামিন পাওয়া যায়।[9]
ভিটামিন পি
ভিটামিন পি-এর রাসায়নিক নাম হল: বায়োফ্ল্যাভোনয়েড (bioflavonoid)। এটি লেবু জাতীয় সকল ফলেই পাওয়া যায়।[9]
তথ্যসূত্র
- Dietary Reference Intakes: Vitamins The National Academies, 2001.
- Vitamin and Mineral Supplement Fact Sheets Vitamin A
- N/D= "Amount not determinable due to lack of data of adverse effects. Source of intake should be from food only to prevent high levels of intake"(see Dietary Reference Intakes: Vitamins).
- Plain type indicates Adequate Intakes (A/I). "The AI is believed to cover the needs of all individuals, but a lack of data prevent being able to specify with confidence the percentage of individuals covered by this intake" (see Dietary Reference Intakes: Vitamins).
- Vitamin and Mineral Supplement Fact Sheets Vitamin B6
- Vitamin and Mineral Supplement Fact Sheets Vitamin B12
- Value represents suggested intake without adequate sunlight exposure (see Dietary Reference Intakes: Vitamins).
- The Merck Manual: Nutritional Disorders: Vitamin Introduction Please select specific vitamins from the list at the top of the page.
- vitamin A2: Encarta Dictionary Tools
- স্বাস্থ্যবটিকা, মাইকেল এ. পেট্টি, দৈনিক প্রথম আলো, পৃ. ১৩; প্রকাশকাল: ২৭ ডিসেম্বর ২০১১; সংগ্রহের তারিখ: ৬ জানুয়ারি ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।