দুধ
দুধ হল স্তন্যপায়ী প্রাণীর দুগ্ধগ্রন্থি থেকে উৎপন্ন একপ্রকার সাদা তরল। অন্যান্য খাদ্যগ্রহণে সক্ষম হয়ে ওঠার আগে এটিই হল স্তন্যপায়ী শাবকদের পুষ্টির প্রধান উৎস। স্তন থেকে দুগ্ধ নিঃসরণের প্রাথমিক পর্যায়ে শাল দুধ উৎপন্ন হয় যা, শাবকের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

গবাদি পশু থেকে জাত দুধ হল মানুষের একটি প্রধান খাদ্য। কাচা দুধের পুষ্টির পরিমাণ বিভিন্ন প্রাণীর ক্ষেত্রে ভিন্ন হলেও তাতে প্রচুর পরিমাণে সম্পৃক্ত স্নেহ পদার্থ, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি পাওয়া যায়। আবার গরুর দুধ হল সামান্য অম্লজাতীয়।[2][3]
সমগ্র বিশ্বে ৬০০ কোটিরও বেশি দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের গ্রাহক রয়েছে এবং এদের মধ্যে অধিকাংশই উন্নয়নশীল দেশগুলির নাগরিক। প্রায় ৭৫ কোটি মানুষ গোপালক পরিবারে বসবাস করে। ২০১০ সালে বিশ্বের গব্যখামারগুলি থেকে ৭২ কোটি টন দুধ উৎপন্ন হয়।[4] ভারত বিশ্বের বৃহত্তম দুগ্ধ উৎপাদক এবং গ্রাহক হয়েও দুধ আমদানি বা রফতানি করে না। নিউজিল্যান্ড, ই ইউ-১৫ এবং অস্ট্রেলিয়া হল বিশ্বের তিন বৃহত্তম দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য রফতানিকারী দেশ। চীন, মেক্সিকো এবং জাপান হল বিশ্বের তিন বৃহত্তম দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য আমদানিকারী দেশ। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পুষ্টি বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তায় দুধের অবদান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। পালিত পশু, ডেয়ারি প্রযুক্তি, দুধের গুণগত মান, ইত্যাদির উন্নতিসাধন সারা বিশ্বে দারিদ্র্য ও অপুষ্টি দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।[5]
দুধ গ্রহণের বিভিন্ন উপায়


সাধারণতঃ দুধ গ্রহণের দু'টি উপায় রয়েছে। একটি হল প্রাকৃতিক, যেটি সকল স্তন্যপায়ী শাবকের পুষ্টির উৎস এবং অপরটি হল বিভিন্ন বয়সী মানুষের খাদ্য হিসেবে অন্যান্য প্রাণী থেকে জাত দুধ গ্রহণ করা।
স্তন্যপায়ী শাবকের পুষ্টি
প্রায় সকল স্তন্যপায়ীর ক্ষেত্রেই শাবককে সরাসরি স্তন্যপান করানোর মধ্যে দিয়ে দুধ খাওয়ানো হয় অথবা দুধ দুইয়ে নিয়ে তা সংরক্ষণ করে রেখে পরে খাওয়ানো হয়।
মানবশিশুকে অনেক সময় টাটকা ছাগলের দুধ খাওয়ানো হয়ে থাকে। কিন্তু এই পদ্ধতি অবলম্বনের ফলে শিশুর বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার শিকার হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।[6]
মানুষের খাদ্য হিসেবে দুধ

যদিও ভিন্ন প্রজাতির দুধ গ্রহণ বা পান করা প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ, তবুও বিশ্বের বহু সংস্কৃতিতে শৈশব উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও মানুষ অন্যান্য প্রাণীর (মূলতঃ গরু, ছাগল, ভেড়া, ইত্যাদি গবাদি পশুর) দুধ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। বহু সহস্রাব্দ ধরে মানুষ গরুর দুধ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তা থেকে মাখন, দই, আইসক্রিম, ইত্যাদি প্রস্তুত করে এসেছে। এছাড়াও আধুনিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে আরও বিভিন্ন প্রকারের দুগ্ধজাত দ্রব্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।
প্রাণিজগতে মানুষেরাই হল একমাত্র ব্যতিক্রম যারা ল্যাকটোজ নামক শর্করার প্রতি সহ্যমাত্রা সামান্য কম (৫%-এরও কম) থাকা সত্ত্বেও শৈশবোত্তীর্ণ কালেও দুগ্ধপান করে থাকে।[7] ল্যাকটোজ শর্করাটি পরিপাক করার জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক ল্যাকটেজ জন্মের পর ক্ষুদ্রান্ত্রে সর্বোচ্চ পরিমাণে ক্ষরিত হয় এবং নিয়মিত দুগ্ধপান না হলে ক্রমশঃ এর ক্ষরণ হ্রাস পেতে থাকে।[8] ভারত হল বিশ্বে সর্বোচ্চ পরিমাণে গবাদি পশু ও মহিষের দুধের উৎপাদক এবং গ্রাহক।[9]
দেশ | দুধ (লিটার) | চিজ (কেজি) | মাখন (কেজি) |
---|---|---|---|
![]() | 135.6 | 6.7 | 2.4 |
![]() | 127.0 | 22.5 | 4.1 |
![]() | 105.9 | 10.9 | 3.0 |
![]() | 105.3 | 11.7 | 4.0 |
![]() | 90.1 | 19.1 | 1.7 |
![]() | 78.4 | 12.3 | 2.5 |
![]() | 75.8 | 15.1 | 2.8 |
![]() | 55.7 | 3.6 | 0.4 |
![]() | 55.5 | 26.3 | 7.5 |
![]() | 54.2 | 21.8 | 2.3 |
![]() | 51.8 | 22.9 | 5.9 |
![]() | 49.1 | 23.4 | 0.7 |
![]() | 47.5 | 19.4 | 3.3 |
![]() | 39.5 | - | 3.5 |
![]() | 9.1 | - | 0.1 |
মূল্য
২০০৭ সালের রিপোর্ট অনুসারে মূলত সারা বিশ্বে আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধির কারণে দুধের চাহিদা ও মূল্য উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত উল্লেখযোগ্য হল চীনে ব্যাপক হারে দুধের চাহিদা বৃদ্ধি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ভর্তুকিপ্রদত্ত মূল্যকে অতিক্রম করা দুধের মূল্যবৃদ্ধি।[11]
পুষ্টি মূল্য
পানি (গ্রাম) ৮৭.৭, খাদ্যশক্তি(কিলো ক্যালরি) ৬৪, আমিষ (গ্রাম) ৩.৩, এ্যাশ (গ্রাম) ০.৭, ফ্যাট (গ্রাম) ৩.৬, কোলেস্টেরল (মিলিগ্রাম) ১১, পটাসিয়াম (মিলিগ্রাম) ১৪৪, ভিটামিন-এ (আই ইউ) ১৪০
nutritional value | of Milk [12] |
name | গরুর দুধ |
wate | 88.32 g |
kj | 252 |
protein | 3.22 g |
fat | 3.25 g |
carbs | 5.26 g |
sugars | 5.26 g |
lactose | 5.26 g |
calcium_mg | 113 |
satfat | 1.865 g |
monofat | 0.812 g |
polyfat | 0.195 g |
vitA_ug | 46 |
thiamin_mg | 0.044 |
riboflavin_mg | 0.183 |
vitB12_ug | 0.45 |
choline_mg | 14.3 |
vitD_iu | 2 |
potassium_mg | 132 |
magnesium_mg | 10 |
sodium_mg | 43 |
তথ্যসূত্র
- "Breastmilk: Colostrum, Foremilk and Hindmilk"। Drpaul.com। ২৯ জুন ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-২৬।
- William H. Bowen and Ruth A. Lawrence (২০০৫)। "Comparison of the Cariogenicity of Cola, Honey, Cattle Milk, Human Milk, and Sucrose"। Pediatrics। 116 (4): 921–6। doi:10.1542/peds.2004-2462। PMID 16199702।
- Soil pH: What it Means, SUNY College of Environmental Science and Forestry. www.esf.edu. ২১ জুলাই ২০০৯ তারিখে সংগৃহীত।
- "Milk,total + Total, World Production (see Livestock Primary data)"। Food and Agriculture Organization of the United Nations। ২০১০।
- Hemme and Otte (২০১০)। "Status and Prospects for Smallholder Milk Production: A Global Perspective" (PDF)। Food and Agriculture Organization of the United Nations।
- Basnet, S.; Schneider, M.; Gazit, A.; Mander, G.; Doctor, A. (এপ্রিল ২০১০)। "Fresh Goat's Milk for Infants: Myths and Realities—A Review"। Pediatrics। 125 (4): e973–977। doi:10.1542/peds.2009-1906। PMID 20231186।
- Champe, Pamela (২০০৮)। "Introduction to Carbohydrates"। Lippincott's Illustrated Reviews: Biochemistry, 4th ed.। Baltimore: Lippincott Williams & Wilkins। পৃষ্ঠা 88। আইএসবিএন 9780781769600।
- McGee, Harold (২০০৪) [১৯৮৪]। "Milk and Dairy Products"। On Food and Cooking: The Science and Lore of the Kitchen (2nd সংস্করণ)। New York: Scribner। পৃষ্ঠা 7–67। আইএসবিএন 978-0684800011।
- "World's No 1 Milk Producer"। Indiadairy.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৮-২৮।
- Goff, Douglas (২০১০)। "Introduction to Dairy Science and Technology: Milk History, Consumption, Production, and Composition"। Dairy Science and Technology। University of Guelph। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১।
- Wayne Arnold, "A Thirst for Milk Bred by New Wealth Sends Prices Soaring", The New York Times September 4, 2007.
- Jones, Alicia Noelle (২০০২)। "Density of Milk"। The Physics Factbook।
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে দুধ সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |