প্রোটিন

প্রোটিন (আমিষ) জৈব বৃহত-অণুর প্রকারবিশেষ। প্রোটিন মূলত উচ্চ ভর বিশিষ্ট নাইট্রোজেন যুক্ত জটিল যৌগ যা অ্যামিনো অ্যাসিডের পলিমার। জীন নির্দিষ্ট অনুক্রমে অনেকগুলি আলফা অ্যামিনো অ্যাসিড পেপটাইড বন্ধন দ্বারা পলিপেপটাইড শৃঙ্খল পলিমার তৈরি করে এবং তা সঠিকভাবে ভাঁজ হয়ে একটি প্রোটিন তৈরি হয়।খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন ছাড়া কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব কল্পনা করা সম্ভব নয়। তাই প্রোটিনকে সকল প্রাণের প্রধান উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। সব প্রোটিনই কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেননাইট্রোজেন দিয়ে গঠিত। প্রোটিনকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাঙলে প্রথমে এমাইনো এসিড পরে কার্বন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়। অর্থাৎ অনেক এমাইনো এসিড পাশাপাশি যুক্ত হয়ে একটি প্রোটিন অণু তৈরী করে।

protein model mosaic.

শ্রেণীবিভাগ

উৎসগত দিক দিয়ে প্রোটিনের শ্রেণীবিভাগ

উৎস অনুযায়ী প্রোটিনকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

  • প্রাণিজ প্রোটিন: যে প্রোটিনগুলো প্রাণিজগৎ থেকে পাওয়া যায় তাদেরকে প্রাণিজ প্রোটিন বলে। যেমন: মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি। এই প্রোটিনকে প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন বলে।
  • উদ্ভিজ্জ প্রোটিন: উদ্ভিদ জগৎ থেকে প্রাপ্ত প্রোটিনকে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বলে। যেমন: ডাল, বাদাম, সয়াবিন, শিমের বিচি ইত্যাদি। উদ্ভিজ্জ প্রোটিনকে দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রোটিন বলে।

১ গ্রাম প্রোটিন থেকে চার কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালরির ২০-২৫ ভাগ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য থেকে গ্রহণ করা উচিত। প্রতিদিন খাবারে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের পাশাপাশি কিছু প্রাণিজ প্রোটিনও গ্রহণ করতে হবে।

    • ভৌত,রাসায়নি গুনাবলি এবং দ্রবনীয়তার ভিত্তিতে প্রোটিনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় যথা :-
ক) সরল প্রোটিন ৷
খ) যুগ্ন প্রোটিন ৷
গ) উৎপাদিত প্রোটিন
  • দ্রবণীয়তার ওপর ভিত্তি করে সরল প্রোটিনকে আবার ৭ ভাগে ভাগ করা হয় যথা :-
১) অালবিউমিন
২) গ্লোবিউলিন 
৩) গ্লুটোলিন 
৪) প্রোলামিন
৫) হিস্টোন
৬) প্রোটামিন
৭) স্ক্লোরোপ্রোটিন ৷৷৷
  • যুগ্ন প্রোটিনকেও আবার ৮ ভাগে ভাগ করা যায় ৷ যথা :-
১) নিউক্লিওপ্রোটিন
২) গ্লাইকোপ্রোটিন বা মিউকোপ্রোটিন
৩) লিপোপ্রোটিন
৪) ক্রোমোপ্রোটিন 
৫) মেটালোপ্রোটিন
৬) ফসফোপ্রোটিন
৭) ফ্লাভোপ্রোটিন
৮) লৌহ-প্রোফাইরিন প্রোটিন ৷৷৷

প্রোটিনের কার্যকারিতা

আমাদের দেহের অস্থি, পেশি, বিভিন্ন দেহযন্ত্র, রক্ত কণিকা থেকে শুরু করে দাঁত, চুল, নখ পর্যন্ত প্রোটিন দিয়ে গঠিত। প্রোটিন শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি সাধন ও দেহ গঠন করে। আমাদের দেহের কোষগুলো প্রতিনিয়তই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এই ক্ষয়প্রাপ্ত স্থানে নতুন কোষগুলো গঠন করে ক্ষয়পূরণ করতে ও কোনো ক্ষতস্থান সারাতে প্রোটিনের ভূমিকা রয়েছে। যখন দেহে ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেটের অভাব দেখা যায় তখন প্রোটিন তাপশক্তি উৎপাদনের কাজ করে। রোগ সৃষ্টিকারী রোগজীবাণুকে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের দেহে তাদের প্রতিরোধী পদার্থ বা অ্যান্টিবডি তৈরী করা প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মানসিক বিকাশ বা মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য।

দেহে প্রোটিনের অভাব হলে বর্ধনরত বয়সের শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যে প্রোটিনের ঘাটতি থাকলে কোয়াশিয়রকর রোগ হয়। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মেধা ও বুদ্ধি কমে যায়। তাই প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র

  • Branden C, Tooze J (১৯৯৯)। Introduction to Protein Structure। New York: Garland Pub। আইএসবিএন 0-8153-2305-0।
  • Murray RF, Harper HW, Granner DK, Mayes PA, Rodwell VW (২০০৬)। Harper's Illustrated Biochemistry। New York: Lange Medical Books/McGraw-Hill। আইএসবিএন 0-07-146197-3।
  • Van Holde KE, Mathews CK (১৯৯৬)। Biochemistry। Menlo Park, California: Benjamin/Cummings Pub. Co., Inc। আইএসবিএন 0-8053-3931-0।

বহিঃসংযোগ

ডাটাবেস এবং প্রকল্প

টিউটোরিয়াল এবং শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.