স্নেহ পদার্থ

স্নেহ পদার্থ (ইংরেজি: Fat) বলতে সেই সমস্ত যৌগের শ্রেণীকে বোঝায় যারা সাধারণত জৈব দ্রাবকে দ্রবণীয় কিন্তু পানিতে অদ্রবণীয়। রাসায়নিক গঠন বিবেচনা করলে, স্নেহ পদার্থ হল গ্লিসারল ও ফ্যাটি অ্যাসিডসমূহের ট্রাই-এস্টার। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় স্নেহ পদার্থ আণবিক কাঠামো ও উপাদানের উপর নির্ভর করে কঠিন বা তরল আকারে থাকতে পারে। যেসমস্ত স্নেহ পদার্থ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে, তাদেরকে "তেল" বলা হয়। আর যেগুলি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কঠিন অবস্থায় থাকে সেগুলিকে ইংরেজিতে fat বলা হয়। আর লিপিড বলতে উভয়কেই বোঝায়। উল্লেখ্য, তেল বলতে আরও সাধারণভাবে পানির সাথে মিশে না এবং তৈলাক্ত অনুভূত হয়, এরকম যেকোন তরলকেই বোঝানো হতে পারে, যেমন - পেট্রোলিয়াম, হিটিং অয়েল, ইত্যাদি।

এক প্রকারের ট্রাইগ্লিসারাইড জাতীয় স্নেহ পদার্থের অণু

স্নেহ পদার্থ আসলে লিপিড জাতীয় পদার্থের একটি শ্রেণী। অন্য লিপিডগুলির সাথে স্নেহ পদার্থের রাসায়নিক গঠন ও ভৌত ধর্মে পার্থক্য আছে। লিপিড অণু জীবনের আণবিক কাঠামো ও বিপাক প্রক্রিয়ার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এগুলি পরভোজী জীবের (যাদের মধ্যে মানুষও অন্তর্গত) খাদ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

মানুষের খাওয়ার যোগ্য স্নেহ পদার্থের মধ্যে আছে মার্জারিন, মাখন, ক্রিমলার্ড। স্নেহ পদার্থ খাওয়ার পর এগুলি শরীরের ভেতরে ভেঙে লাইপেজে পরিণত হয়।

স্যাচুরেটেড ফ্যাট –এই জাতীয় ক্ষতিসাধক ফ্যাট মূলতঃ প্রানীজ উৎস থেকে পাওয়া যায় যেমন- রেড মিট, পূর্নমাত্রায় ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি ইত্যাদি। এই ফ্যাট রক্তের সামগ্রিক কোলেস্টেরলের মাত্রা ও লো-ডেনসিটি লাইপো প্রোটিন এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলতঃ আপনার শরীরে কার্ডিয়-ভাসকুলার রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদির সম্ভাবনা ভীষনভাবে বেড়ে যায়।

ট্রান্স ফ্যাট –এটি আরেকটি ক্ষতিকারক ফ্যাট যা স্বভাবিকভাবে আপনাআপনিই কিছু খাদ্যে অল্প পরিমানে উৎপন্ন হয়। কিন্তু অধিকাংশ ট্রান্স ফ্যাটই খাদ্যপক্রিয়াকরনের সময়(পারসিয়াল হাইড্রোজিনেশন)তেল থেকে উৎপন্ন হয় যেমন-বাটার।

ওমেগা থ্রি ও ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড হল শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ায় অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। এই জাতীয় ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি আমরা নিজেরা প্রস্তুত করতে পারি না। ফলতঃ খাদ্য থেকেই এগুলি আমাদের লাভ করতে হয়। ওমেগা থ্রি ও ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড উভয়ই পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড(PUFA) তবে রাসায়নিক গঠনাবলির দিক দিয়ে এটি অন্যের থেকে আলাদা। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডএর কয়েকটি উৎকৃষ্ট উৎস হল শীতল জলের মাছ যথা স্যালমন, সার্ডিন, কর্ড, ম্যাকরেলহেরিংইকোসাপেন্টাইনোইক অ্যাসিড(EPA)ডোকোসাহেক্সাইনোইক অ্যাসিড(DHA) (ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড) দেহে ভীষন ভাবে প্রয়োজন বিশেষতঃ বাচ্চাদের মস্তিষ্কএর উন্নতি সাধনের জন্য। আখরোট ও ফ্ল্যাক্স সীড এর মতো উদ্ভিজ উৎস থেকে ALA(ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড) পাওয়া যায় যা দেহে EPA ও DHA রূপান্তরিত হয়। অপরদিকে ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডএর উৎস হল বীজ, বাদাম ও রিফাইন উদ্ভিজ্জ তেল।

স্বাভাবিক ভাবে, এই দুই প্রকার অত্যাবশ্যক ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে প্রাপ্ত হরমোনগুলির প্রভাবও ভিন্ন। ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে প্রাপ্ত হরমোনগুলি ইনফ্লামেশন বৃদ্ধি করে এবং রক্ত জমাট বাধা, কোষ বিভাজন ও বিস্তার প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে দেয়। আবার ওমেগা থ্রি প্রাপ্তব্য হরমোনগুলি উপরিউক্ত প্রক্রিয়াগুলিকে কমিয়ে দেয়। সুতরাং এই উভয় প্রকার বিরুদ্ধাচারী হরমোনগুলির ভারসাম্য বজায় থাকা একান্তই প্রয়োজন সুস্বাস্থ্যের জন্য। দেহে প্রয়োজনীয় উপাদানের ভারসাম্যহীনতার কারনে শ্বাসকষ্ট, করোনারী হৃদরোগ, নানাবিধ ক্যান্সার, অটো-ইমিউনিটি ও স্নায়ুবৈকল্য জনিত রোগের হার বৃদ্ধি পায়। এই সকল রোগগুলি শরীরের প্রদাহজাত বলেই ধরা হয়। আবার স্থুলতা, মানসিক অবসাদ, ডিসলেক্সিয়া, হাইপার অ্যাক্টিভিটি ও এমনকি হিংসার প্রবণতা বৃদ্ধির জন্যও দায়ী ওমেগা থ্রি ও ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডএর ভারসাম্যহীনতা।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.