বসন্ত বিশ্বাস

বসন্ত বিশ্বাস (৬ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৫ - ১১ মে ১৯১৫) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী।

বসন্ত কুমার বিশ্বাস
বসন্ত কুমার বিশ্বাসের চিত্র
জন্ম(১৮৯৫-০২-০৬)৬ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৫
পোড়াগাছা, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ, বৃটিশ ভারত
মৃত্যু১১ মে ১৯১৫(1915-05-11) (বয়স ২০)
আমবালা, Punjab, British India
প্রতিষ্ঠানJugantar
আন্দোলনIndian Independence movement

প্রথম জীবন

ছাত্রাবস্থায় তার শিক্ষক ছিলেন ক্ষীরোদচন্দ্র গাঙ্গুলি, মূলত তার প্রভাবেই বসন্ত বিপ্লবী রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। যুগান্তর গোষ্ঠীর কর্মী অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এর সাথে বসন্তর পরিচয় হয় এবং সেই সূত্র ধরে ১৯১১ সালের শেষ দিকে রাসবিহারী বসুর সাথে 'বিশে দাস' ছদ্মনাম নিয়ে তিনি উত্তর ভারত চলে যান, রাসবিহারীর বৃহৎ বিপ্লব পরিকল্পনা সফল করার ব্রত নিয়ে।[1]

হার্ডিঞ্জ হত্যা চেষ্টা ও গ্রেপ্তার

রাসবিহারী বসুর তত্ত্বাবধানে তিনি বোমা ছোঁড়া অভ্যেস করতে থাকেন। তাদের টার্গেট ছিল বড়লাট হার্ডিঞ্জ। এই বোমাটি বিপ্লবী রাসবিহারীর অনুরোধে তৈরী করে দিয়েছিলেন প্রবীন বিপ্লবী মণীন্দ্রনাথ নায়েক[1] স্ত্রীলোকের পোশাকে লীলাবতী নাম নিয়ে বসন্ত ১৯১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর লর্ড হার্ডিঞ্জকে শোভাযাত্রার মধ্যে বোমা মেরে আহত করেন দিল্লীর রাজপথে। সরকার একমাস পরে আততায়ীকে গ্রেপ্তারের জন্য এক লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। তিনি পরিহাস করে দিল্লীর জুম্মা মসজিদ থেকে এর উত্তর লেখেন। এরপর লাহোরে এসে লরেন্স গার্ডেনে পুলিস অফিসারদের নৈশ ক্লাবে বোমা ফেলার ষড়যন্ত্রে যোগ দেন। এ ব্যাপারে আমীরচাঁদ প্রমুখ কয়েকজন গ্রেপ্তার হলে ১৯১৪ সনে তিনি নিজগ্রামে ফিরে আসেন। ২৪শে ফেব্রুয়ারি পিতৃশ্রাদ্ধের সময় নবদ্বীপ থেকে কৃষ্ণনগরে বাজার করতে এলে জ্ঞাতি-ভাই শত্রুতা করে পুলিসে খবর দেওয়ায় তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯১৪ সালের ২৫ মে দিল্লীর দায়রা আদালতে বিচার শুরু হয়। প্রথম বিচারে মুক্তি পেলেও সরকার পক্ষের আপিলে অন্যান্য তিনজনের সঙ্গে তার মৃত্যু দণ্ডাদেশ হয় ১০ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাব হাইকোর্টের রায়ে।[2]

বিচারে চারজনের ফাঁসি

বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জের উপর আক্রমণের নেতা ছিলেন রাসবিহারী বসু। বসন্ত বিশ্বাস বোমা নিক্ষেপ করে সুকৌশলে পলায়ন করতে পেরেছিলেন।[3] এই মামলায় বিচারে বসন্ত বিশ্বাস ছাড়াও অপর তিনজন আমীরচাঁদ, অবোধবিহারী ও বালমুকুন্দের ফাঁসির আদেশ হয়। প্রিভি কাউন্সিলে আপিল করা হলেও তা অগ্রাহ্য হয় এবং আমিরচাঁদ, অবোধবিহারী, বালমুকুন্দর ফাঁসি হয় ৮ মে ১৯১৫ আর এদের সর্বকনিষ্ঠ বসন্তর ফাঁসি কার্যকর করা হয় ১৯১৫ সালের ১১ মে আমবালা জেলের ভেতর।[4][5]

স্মৃতি

বসন্ত বিশ্বাসের জন্ম নদীয়া জেলার পোড়াগাছায়। তার পিতার নাম মতিলাল বিশ্বাস। নীল বিদ্রোহের নেতৃত্ব দানকারী প্রধান নেতা দিগম্বর বিশ্বাস তার পূর্বপুরুষ, খুল্ল পিতামহ।[2][5] তার স্মরনে তার বিদ্যালয় মুড়াগাছায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ আছে যা উদ্বোধন করেন বিপ্লবী ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত। বিপ্লবী রাসবিহারী বসু আরেকটি স্মৃতিফলক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জাপানে তার শিষ্য শহীদ বসন্ত বিশ্বাসের নামে।

তথ্যসূত্র

  1. নারায়ন সান্যাল। আমি রাসবিহারীকে দেখেছি। কলকাতা: করুনা প্রকাশনী।
  2. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৪৫৭, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  3. ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, জেলে ত্রিশ বছর, পাক-ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ধ্রুপদ সাহিত্যাঙ্গন, ঢাকা, ঢাকা বইমেলা ২০০৪, পৃষ্ঠা ১৭৯।
  4. শৈলেশ দে, মৃত্যুর চেয়ে বড়, বিশ্ববাণী প্রকাশনী, কলিকাতা, প্রথম (বি) সংস্করণ, অগ্রহায়ণ ১৩৯২, পৃষ্ঠা ৯৪।
  5. বিপ্লবী বসন্তকুমার বিশ্বাস। কলকাতা: গ্রন্থতীর্থ। ২০১২। আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৫৭২-৩২৪-৫ |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.