বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (জন্ম: ১৯ জুলাই, ১৮৯৯ - মৃত্যু: ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯) একজন বাঙালি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও কবি। তিনি বনফুল ছদ্মনামেই অধিক পরিচিত। অবিভক্ত ভারতবর্ষের বিহার রাজ্যের মনিহারীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।[1]

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়
জন্ম(১৮৯৯-০৭-১৯)১৯ জুলাই ১৮৯৯
মনিহারী, বিহার অবিভক্ত ভারতবর্ষ
মৃত্যু৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯(1979-02-09) (বয়স ৭৯)
কলকাতা, ভারত
ছদ্মনামবনফুল
পেশাকথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, কবি
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয়
ধরনকবিতা
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিসাত সমুদ্র তেরো নদী, আকাশবাসী, তুমি

জন্ম ও পরিবার

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের পিতার নাম ডা. সত্যচরণ মুখোপাধ্যায় ও মাতা মৃণালিনী দেবী। তাদের আদি নিবাস হুগলী জেলার শিয়াখালা। কিন্তু তিনি বিহারের পূর্ণিয়া জেলার মণিহারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[2] তার অনুজ অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় খ্যাতনামা চিত্রপরিচালক।

শিক্ষা ও কর্মজীবন

প্রথমে মণিহারী স্কুলে এবং পরে সাহেবগঞ্জ জেলার সাহেবগঞ্জ উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে তিনি লেখাপড়া করেন। শেষোক্ত স্কুল থেকে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রবেশিকা (এন্ট্রান্স) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আই.এস.সি, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হাজারীবাগ সেন্ট কলম্বাস কলেজ থেকে। কলকাতা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন তবে পাটনা মেডিক্যাল কলেজে থেকে এম.বি, ডিগ্রী লাভ করেন। প্যাথলজিস্ট হিসাবে ৪০ বৎসর কাজ করেছেন। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে স্থায়ীভাবে কলকাতায় বসবাস করতে শুরু করেন। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে কলকাতা শহরে তার মৃত্যু হয়।[1]

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় কৈশোর থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে নিজের নাম লুকোতে তিনি বনফুল ছদ্মনামের আশ্রয় নেন। ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে সাহেবগঞ্জ স্কুলে পড়ার সময় মালঞ্চ পত্রিকায় একটি কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। শনিবারের চিঠি তে ব্যঙ্গ কবিতা ও প্যারডি কবিতা লিখে সাহিত্য জগৎতে নিজের আসন স্থায়ী করেন। এছাড়াও নিয়মিত প্রবাসী, ভারতী এবং সমসাময়িক অন্যান্য পত্রিকায় ছোটগল্প প্রকাশ করেন।[1]

প্রকাশনা

লেখক হিসেবে বনফুল হাজারেরও বেশি কবিতা, ৫৮৬টি ছোট গল্প, ৬০টি উপন্যাস, ৫টি নাটক, জীবনী ছাড়াও অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তার রচনাবলীসমগ্র ২২ খণ্ডে প্রকাশিত।[1]

কাব্যগ্রন্থ

  • বনফুলের কবিতা
  • ব্যঙ্গ কবিতা
  • অঙ্গারপণী
  • চতুর্দশী
  • করকমলেষু

উপন্যাস

  • তৃণখণ্ড- ১৯৩৫
  • বৈতরণীর তীরে-১৯৩৬
  • নিরঞ্জনা-১৯৫৫
  • ভুবন সোম-১৯৫৭
  • মহারাণী-১৯৫৮
  • অগ্নীশ্বর-১৯৫৯
  • মানসপুর-১৯৬৬
  • এরাও আছে-১৯৭২
  • নবীন দত্ত-১৯৭৪
  • হরিশ্চন্দ্র-১৯৭৯
  • কিছুক্ষণ-১৯৩৭
  • সে ও আমি-১৯৪২
  • সপ্তর্ষি-১৯৪৫
  • উদয় অস্ত-১৯৭৪
  • গন্ধরাজ-
  • পীতাম্বরের পুনর্জন্ম-১৯৬৩
  • নঞ তৎপুরুষ
  • কৃষ্ণপক্ষ
  • সন্ধিপূজা
  • হাটেবাজারে
  • কন্যাসু
  • অধিকলাল
  • গোপালদেবের স্বপ্ন
  • স্বপ্নসম্ভব
  • কষ্টিপাথর
  • প্রচ্ছন্ন মহিমা
  • দুই পথিক
  • রাত্রি
  • পিতামহ
  • পক্ষীমিথুন
  • তীর্থের কাক
  • রৌরব
  • জলতরঙ্গ
  • রূপকথা এবং তারপর
  • প্রথম গরল
  • রঙ্গতুরঙ্গ
  • আশাবারি
  • সাত সমুদ্র তেরো নদী
  • আকাশবাসী
  • তুমি
  • অসংলগ্ন
  • সীমারেখা
  • ত্রিবর্ণ
  • অলংকারপুরী
  • জঙ্গম
  • অগ্নি
  • দ্বৈরথ
  • মৃগয়া
  • নির্মোক
  • মানদন্ড
  • নবদিগন্ত
  • কষ্টিপাথর
  • স্থাবর
  • ভীমপলশ্রী
  • পঞ্চপর্ব
  • লক্ষ্মীর আগমন
  • ডানা

ছোট গল্প সঙ্কলন

  • বনফুলের গল্প
  • বনফুলের আরো গল্প
  • বাহুল্য
  • বিন্দু বিসর্গ
  • অনুগামিনী
  • বনফুলের শ্রেষ্ঠ গল্প
  • বনফুলের গল্প সংগ্রহ - ১
  • বনফুলের গল্প সংগ্রহ - ২

নাটক

বনফুল ছিলেন জীবনী-নাটকের পথিকৃৎ।

  • শ্রীমধুসূদন
  • বিদ্যাসাগর

উপাধি

তার সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি 'পদ্মভূষণ' উপাধি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি শরৎস্মৃতি পুরস্কার (১৯৫১), রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৬২), বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক (১৯৬৭)। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিলিট উপাধি প্রদান করে ১৯৭৩ সালে।[3]

মৃত্যু

কলকাতায়, ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ তিনি মৃত্যুবরন করেন।

তথ্যসূত্র

  1. হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য বিরচিত বঙ্গসাহিত্যাভিধান, ২য় খণ্ড, ১৯৯০ খ্রি.
  2. সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ২৪৪।
  3. বাংলাপিডিয়া
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.