তুরস্কের ইতিহাস
তুরস্কের ইতিহাস হল বর্তমান সময়ের তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের অঞ্চলসমূহের ইতিহাস, তথা আনাতোলিয়া (তুরস্কের এশীয় অংশ) এবং পূর্ব থ্রেসের (তুরস্কের ইউরোপীয় অংশ) ইতিহাস। উসমানীয় সাম্রাজ্য সময়কাল থেকে তুর্কি জাতির ইতিহাসে পরিবর্তন দেখা দেয় এবং বর্তমান সময়ের তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের অঞ্চল, বিশেষ করে আনাতোলিয়া ও থ্রেসের ইতিহাসে পার্থক্য দেখা যায়।[1][2]
তুরস্কের ইতিহাস | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ধারাবাহিকের একটি অংশ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
![]() | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বিষয় অনুযায়ী
|
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
![]() | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
তুরস্ক নামটি এসেছে মধ্য লাতিন তুর্চিয়া অর্থাৎ "তুর্কদের দেশ" থেকে, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি অঞ্চল, যা পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া নিয়ে গঠিত। প্রারম্ভিক মধ্যযুগে এই অঞ্চল তুর্কি জাতির নিয়ন্ত্রণে আসে।
তুর্কি জাতি যখন বর্তমান তুরস্কের অংশগুলো জয় করে তখন থেকে শুরু করে তুরস্কের ইতিহাস মধ্যযুগীয় সেলজুক সাম্রাজ্য, মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগের উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং ১৯২০-এর দশক থেকে বর্তমান তুরস্ক প্রজাতন্ত্র পর্যন্ত বিস্তৃত।[1][2]
প্রাচীন আনাতোলিয়া ও থ্রেস
আনাতোলিয়া
আনাতোলিয়ার (এশিয়া মাইনর) প্রাচীন ইতিহাস দুটি প্রাক-ইতিহাস, প্রাচীন নিকট প্রাচ্য (ব্রোঞ্জ যুগ ও প্রারম্ভিক লৌহ যুগ), ধ্রুপদী আনাতোলিয়া, হেলেনিস্টিক আনাতোলিয়া, প্রারম্ভিক মধ্যযুগীয় সময়কালে ক্রুসেডের যুগের বাইজেন্টীয় আনাতোলিয়া এবং পঞ্চদশ শতাব্দীর তুর্কদের (সেলজুক/উসমানীয় সাম্রাজ্য) আনাতোলিয়া বিজয় পর্যন্ত ভাগ করা যায়।
আনাতোলিয়ায় সংস্কৃতির প্রথম নিদর্শন হল প্রস্তর যুগের মানুষের সৃষ্ট বস্তু। ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতার তথা হাটিয়ান, আক্কাদীয়, আসিরীয়া ও হিতিত জাতির অবশিষ্টাংশে জনগনের প্রাত্যহিক জীবন ও তাদের বাণিজ্যের বিভিন্ন উদাহরণ পাওয়া যায়। হিতিতদের পতনের পর গ্রিক সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে পশ্চিম উপকূলে ফ্রিগিয়া ও লিদিয়া রাষ্ট্র শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তারা এবং আনাতোলিয়ার বাকি অংশ পরবর্তীকালে পারস্যের হাখমানেশি সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয়।
পারস্য শক্তিশালী হয়ে ওঠতে শুরু করলে আনাতোলিয়ায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় অনেক বন্দর নগর গড়ে ওঠে ও ধনশালী হয়ে ওঠে। সমগ্র আনাতোলিয়া বিভিন্ন সাত্রাপিতে বিভক্ত হয়ে যায় এবং প্রতিটি সাত্রাপি মধ্য পারস্য শাসকদের নিয়োগকৃত সাত্রাপ (গভর্নর) দ্বারা পরিচালিত হত। প্রতিবেশী জনগণ প্রথম যে রাষ্ট্রকে আর্মেনিয়া বলে ডাকত তার আর্মেনীয় ওরোন্তি রাজবংশের রাষ্ট্র ছিল এবং খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর শুরুর দিকের পূর্ব তুরস্কের অংশগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা হাখমানেশি শাসনকালে আর্মেনিয়া সাত্রাপি হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সময়ে কয়েকটি সাত্রাপ বিদ্রোহ করে, কিন্তু মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে প্রথম দারিয়ুস রাজপথ নির্মাণ করেন, যা পশ্চিম আনাতোলিয়ার সার্দিস নগরীর সাথে সুসার মূল নগরীর যোগসূত্র স্থাপন করে।[3]
থ্রেস

থ্রেসীয়রা ছিল ইন্দো-ইউরোপীয় উপজাতিদের একটি দল, যারা মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি বড় অংশে বসবাস করত।[4] তাদের উত্তরে সিথীয়, পশ্চিমে কেল্টীয় ও ইলিরীয়, দক্ষিণে প্রাচীন গ্রিক এবং পূর্ব কৃষ্ণ সাগর অবস্থিত ছিল। তারা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের একটি দূরবর্তী শাখা থ্রেসীয় ভাষায় কথা বলত। থ্রেসীয় জাতি ও থ্রেসীয় সংস্কৃতি বিষয়ক অধ্যয়নকে থেসোলজি বলা হয়।
১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে আনাতোলিয়ার পশ্চিম উপকূলে এওলীয় ও আইওনীয় গ্রিকদের ঘনবসতি ছিল। এই উপনিবেশদের দ্বারা অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ নগরী প্রতিষ্ঠা লাভ করে, যেমন মিলেটাস, এফেসাস, স্মির্না ও বাইজেন্টিয়াম। বাইজেন্টিয়াম ৬৭৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মেগারা থেকে আগত গ্রিক উপনিবেশ দ্বারা গঠিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে মহান দারিয়ুস থ্রেস এবং স্থানীয় থ্রেসীয় জাতিকে পরাজিত করে এবং তারা পুনরায় ৪৯২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিসে পারস্যদের প্রথম আক্রমণকালে মার্ডোনিয়াসদের অভিযানের পর সাম্রাজ্যটি করায়ত্ব করে।[5] সম্ভবত গ্রিসে পারস্যের পরাজয়ের পর[6] থ্রেস অঞ্চলসমূহ পরবর্তীকালে প্রথম টেরেসের প্রতিষ্ঠিত ওড্রিসীয় রাজ্য কর্তৃক একত্রিত হয়।[7]
থ্রেসীয়রা সাধারনত নগরী-প্রতিষ্ঠা করত না। তাদের সবচেয়ে বড় নগরীটি মূলত একটি বড় গ্রাম[8] এবং তাদের একমাত্র বৃহৎ নগরী হল সিউথোপোলিস।[9][10]
বাইজেন্টীয় সময়কাল
- আরও দেখুন: বাইজেন্টীয় সাম্রাজ্য, কনস্টান্টিনোপল, এবং সাসানীয় সাম্রাজ্য
.jpg)
৩৩৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহান আলেকজান্ডার পারস্য হাখমানেশি সাম্রাজ্য জয় করেন, যার ফলে এই অঞ্চলে সাংস্কৃতিক সমজাতীয়তা ও হেলেনিস্টিক সভ্যতার প্রভাব বৃদ্ধি পায়। ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর আনাতোলিয়া কয়েকটি ক্ষুদ্র হেলেনিস্টিক রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যায়, যার সব কয়টি খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে রোমান সাম্রাজ্যের অংশ হয়। আলেকজান্ডারের বিজয়ের পর হেলেনিস্টিক সভ্যতার প্রভাবের যে প্রক্রিয়া শুরু হয় তা রোমান শাসনকালে আরও ত্বরান্বিত হয় এবং যিশুর জন্মের পরবর্তী প্রারম্ভিক শতাব্দীগুলোতে স্থানীয় আনাতোলীয় ভাষা ও সংস্কৃতি প্রাচীন গ্রিক ভাষা ও সংস্কৃতির প্রভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
৩২৪ খ্রিষ্টাব্দে মহান কন্সট্যান্টাইন বাইজেন্টিয়ামকে রোমান সাম্রাজ্যের নতুন রাজধানী হিসেবে নির্বাচন করেন এবং এর নাম পরিবর্তন করে রাখেন নতুন রোম। ৩৯৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম থিওডোসিয়াসের মৃত্যুর পর এবং রোমান সাম্রাজ্য তার দুই পুত্রের মধ্যে বিভক্ত হয়ে গেলে, এই নগরীর নাম পরিবর্তন করে কনস্টান্টিনোপল রাখা হয় এবং নগরীটিকে পূর্ব রোম সাম্রাজ্যের রাজধানী করা হয়। এটিকেই পরবর্তীকালে ইতিহাসবেত্তা বাইজেন্টীয় সাম্রাজ্য নামে অভিহিত করেন। এই সাম্রাজ্যই বর্তমান তুরস্কের অঞ্চলসমূহকে মধ্যযুগের শেষ সময় পর্যন্ত শাসন করে।[11] বাকি অঞ্চলসমূহ সাসানীয় সাম্রাজ্যের অধিগত রয়ে যায়।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- "About this Collection"। লাইব্রেরি অব কংগ্রেস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৮।
- হাওয়ার্ড, ডগলাস আর্থার (২০০১)। The History of Turkey (ইংরেজি ভাষায়)। গ্রিনউড পাবলিশিং গ্রুপ। আইএসবিএন 9780313307089। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৮।
- A modern study is D.F. Graf, The Persian Royal Road System, 1994.
- ওয়েবার, ক্রিস্টোফার; ম্যাকব্রিজ, অ্যাঙ্গাস (২০০১)। The Thracians, 700 BC–AD 46। অসপ্রে পাবলিশিংস। ISBN 1-84176-329-2।
- রোইজম্যান, জোসেপ; ওয়ার্দিংটন, ইয়ান (২০১১)। A Companion to Ancient Macedonia (ইংরেজি ভাষায়)। জন উইলি অ্যান্ড সন্স। আইএসবিএন 9781444351637। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৮।
- The Expedition of Cyrus (ইংরেজি ভাষায়)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ২০০৫। আইএসবিএন 9780191605048। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৮।
- Edwards, Iorwerth Eiddon Stephen; Boardman, John; Gadd, Cyril John; Lewis, D. M.; Hammond, Nicholas Geoffrey Lemprière; Hornblower, Simon; Ostwald, M.; Walbank, Frank William; Astin, A. E.; Bowman, Alan K.; Lintott, Andrew William; Crook, John Anthony; Garnsey, Peter; Champlin, Edward; Rawson, Elizabeth; Cameron, Averil; Rathbone, Dominic; Ward-Perkins, Bryan; Whitby, Michael (১৯৯৪)। The Cambridge Ancient History (ইংরেজি ভাষায়)। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 9780521233484। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৮।
- John Boardman, I.E.S. Edwards, E. Sollberger, and N.G.L. Hammond (১৯৯২)। The Cambridge Ancient History, Volume 3, Part 2: The Assyrian and Babylonian Empires and Other States of the Near East, from the Eighth to the Sixth Centuries BC। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃ. ৬১২।
- হানসেন, মোগেন্স হেরমান (২০০৫)। An Inventory of Archaic and Classical Poleis: An Investigation Conducted by The Copenhagen Polis Centre for the Danish National Research Foundation। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃ. ৮৮৮।
- ওয়েবার ও ম্যাকব্রিজ ২০০১, পৃ. ১।
- ওয়াহ, ড্যানিয়েল সি.। "Silk Road Seattle - Constantinople"। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৮।