ড্যানিয়েল গ্যাব্রিয়েল ফারেনহাইট

ড্যানিয়েল গ্যাব্রিয়েল ফারেনহাইট (ইংরেজি: Daniel Gabriel Fahrenheit) (জন্মঃ ২৪ মে, ১৬৮৬ - মৃত্যুঃ ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৭৩৬) একজন পদার্থবিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং গ্লাসে ফুৎকারপ্রদানকারী ব্যক্তি ছিলেন। ১৭০৯ সালে এলকোহল থার্মোমিটার এবং ১৭১৪ সালে পারদ থার্মোমিটার উদ্ভাবন করেন। তাপমাত্রা মাপার এককের প্রভূত উন্নতি করে সমগ্র বিশ্বে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি যা পরবর্তীতে তার নামে নামাঙ্কিত করা হয় ফারেনহাইট স্কেল নামে।[1]

ড্যানিয়েল গ্যাব্রিয়েল ফারেনহাইট
জন্ম(১৬৮৬-০৫-১৪)১৪ মে ১৬৮৬
ডানজিগ (গানস্ক), পোলিশ-লিথুয়ানিয়ান কমনওয়েলথ
মৃত্যু১৬ সেপ্টেম্বর ১৭৩৬(1736-09-16) (বয়স ৫০)
দ্য হেগ, ডাচ প্রজাতন্ত্র
কর্মক্ষেত্রপদার্থবিজ্ঞান, তাপমাত্রা পরিমাপন
পরিচিতির কারণফারেনহাইট তাপমাত্রা স্কেল, ফারেনহাইট হাইড্রোমিটার
স্বাক্ষর

ফারেনহাইট তৎকালীন পোলিশ-লিথুয়ানিয়ান কমনওয়েলথের ড্যানজিগ (গানস্ক) এলাকায় অর্থনৈতিক জোটের সামিল এক জার্মান ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেন ডাচ প্রজাতন্ত্রে।[1][2]

শৈশবকাল

জার্মান হ্যান্স ব্যবসায়িক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফারেনহাইট। পরিবারটি অনেকগুলো হ্যানসিয়েটিক লীগ নিয়ে গড়া শহরগুলোয় বাস করতো। রোস্টকে ফারেনহাইটের প্রপিতামহ বসবাস করেছেন এবং গবেষকদের ধারণা যে ফারেনহাইটের পরিবার হাইডেশেইমে এলাকা থেকে এসেছেন।[3] কোনিগ্সবার্গের নেইফোফ থেকে ডানজিগে তার দাদা এসেছেন এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে ব্যবসায়ী হিসেবে ১৬৫০ সালে বসবাস করতে থাকেন। তার পুত্র ড্যানিয়েল ফারেনহাইট ডানজিগের বিখ্যাত ব্যবসায়ী পরিবারের কন্যা কনকোর্ডিয়া সুম্যানকে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের দুই পুত্র ও তিন কন্যা সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। তার বোন ভার্জিনিয়া এলিজাবেথ ফারেনহাইট ডানজিগের অভিজাত পরিবারের সন্তান বেঞ্জামিন ইফরেইম ক্রুয়েজারকে বিয়ে করেছিলেন।[4]

১৪ আগস্ট, ১৭০১ সালে বিষাক্ত মাশরুম আমানিতা ফ্যালোইডেস খেয়ে তার পিতা-মাতা মৃত্যুবরণ করেন। এরপর রসায়নবিদ হিসেবে তিনি আমস্টারডামে প্রশিক্ষণার্থে গমন করেন। ফারেনহাইটের সবিশেষ আগ্রহ ছিল প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার এবং পরবর্তীতে তিনি এ বিষয়ে যথেষ্ট পারদর্শীতার পরিচয় দেন। ১৭১৭ সাল থেকে তিনি বার্লিন, হ্যালে, লিপজিগ, ড্রেসডেন, কোপেনহেগেন এবং তার নিজ শহরে ভ্রমণ করেন। তখনও তার বড় ভাই জীবিত ছিলেন। এ সময়েই তিনি ওলে রোমার, দার্শনিক ক্রিশ্চিয়ান ওল্ফ এবং গোটফ্রিড লিবনিজের সাথে সাক্ষাৎ করেন কিংবা যোগাযোগ রক্ষা করেছিলেন। ১৭১৭ সালে গ্লাসে ফুৎকারপ্রদানকারী হিসেবে হেগে বসবাস করতে শুরু করেন। উদ্ভাবন করেন - ব্যারোমিটার, আল্টিমিটার এবং থার্মোমিটার। ১৭১৮ সাল থেকে আমস্টারডামে রসায়ন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৭২৪ সালে ইংল্যান্ড পরিদর্শন করেন এবং একই বছর রয়েল সোসাইটির ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হন।[5] ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৭৩৬ সালে দ্য হেগে ফারেনহাইট মৃত্যুবরণ করেন এবং হেগের ক্লুস্টারকার্ক এলাকার ক্লোইস্টার চার্চে তাকে সমাহিত করা হয়।

ফারেনহাইট স্কেল

হেগে ড্যানিয়েল ফারেনহাইটের সমাহিত কবরস্থানে স্মারক প্ল্যাক।

ফারেনহাইটের ১৭২৪ সালে সৃষ্ট নিবন্ধ অনুসারে[6][7] তাপমাত্রা নিরূপণে তিনি তিনটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রবিন্দুর কথা তুলে ধরেছেন -

  • সর্বনিম্ন তাপমাত্রার জন্য বরফ, পানি এবং অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড লবণকে একত্রিত করে মিশ্রণ প্রস্তুত করা হয়। এরপর সাম্যাবস্থার জন্য অপেক্ষা করা হয়। পরবর্তীতে এ মিশ্রণে থার্মোমিটার রাখা হয় এবং থার্মোমিটারের তরলকে সর্বনিম্ন বিন্দুতে নিয়ে আসা হয়, যা ০° ফারেনহাইট নামে পরিচিত।
  • দ্বিতীয় তাপমাত্রার জন্য থার্মোমিটারকে পানিতে রাখা হয়। যখন পানি বরফের আকৃতি ধারণ করে তখন এটি ৩২° ফারেনহাইট নামে পরিচিতি পায়।[8]
  • তৃতীয় যোগ্যতা নির্ধারণী বিন্দু হিসেবে থার্মোমিটারকে বাহুর নিচে কিংবা মুখে রাখা হয়। এক্ষেত্রে মানুষের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হিসেবে ৯৬° ফারেনহাইট ধরা হয়।

ফারেনহাইট লক্ষ্য করে দেখেছেন যে, ৬০০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় পারদ তাপে ফুটে উঠে। অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে একত্রে কাজ করে তিনি দেখেনে যে, পানির স্ফুটনাঙ্ক হিমাঙ্কের চেয়ে প্রায় ১৮০ ডিগ্রী বেশি। তাই তারা পানির স্ফুটনাঙ্ক এবং হিমাঙ্কের মধ্যবর্তী পার্থক্য পুরোপুরি ১৮০ ডিগ্রী ধরে ১ ডিগ্রী ফারেনহাইটের সংজ্ঞা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।[6] এর ফলে নতুন সংশোধিত স্কেলে মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৯৮.৬° ফারেনহাইট, যা তার প্রকৃত স্কেল ছিল ৯৬ ডিগ্রী।[9]

সেলসিয়াস স্কেল ব্যবহারের পূর্বে ইউরোপের সর্বত্র ফারেনহাইট স্কেল একচেটিয়াভাবে ব্যবহার করা হতো। এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণের প্রাত্যহিক সঙ্গী হিসেবে তাপমাত্রা পরিমাপের জন্যে এটি ব্যবহার করেন।[10] পাশাপাশি বেলিজ, যুক্তরাজ্য এবং কানাডায়ও এর প্রচলন রয়েছে।

তথ্যসূত্র

  1. Encyclopedia Britannica "Science & Technology: Daniel Gabriel Fahrenheit"
  2. Encyclopedia of World Biography "Gabriel Fahrenheit"
  3. Kant, Horst (১৯৮৪)। G. D. Fahrenheit / R. -A. F. de Réaumur / A. Celsius। B. G. Teubner। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-১৪
  4. See the Fahrenheit and Krueger genealogies.
  5. "The Royal Society Archive catalogue"। ২৭ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১২
  6. "Fahrenheit temperature scale"। Sizes, Inc। ২০০৬-১২-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-০৯
  7. Fahrenheit describes, in Latin, these numerical choices in the following paper: Fahrenheit, D. G. (১৭২৪)। "Experimenta et Observationes de Congelatione aquae in vacuo factae"। Philosophical Transactions (London)33 (381–391): 78। doi:10.1098/rstl.1724.0016
  8. Heath, Jonathan। "Why does the Fahrenheit scale use 32 degrees as a freezing point?"। PhysLink। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-০৯
  9. Elert, Glenn; Forsberg, C; Wahren, LK (2002)। "Temperature of a Healthy Human (Body Temperature)"Scandinavian Journal of Caring Sciences16 (2): 122–8। doi:10.1046/j.1471-6712.2002.00069.x। PMID 12000664। সংগ্রহের তারিখ 04-12-2008 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  10. For an early attempt to replace the Fahrenheit scale in the United States, see Johnson, Albert (১৯১৬)। Abolish the Fahrenheit Thermometer। Washington, DC: G.P.O.।

আরও পড়ুন

  • Bolton, Henry Carrington (১৯০০)। Evolution of the Thermometer, 1592-1743। Easton, Pennsylvania: The Chemical Publishing Company। পৃষ্ঠা 66 79।
  • Fahrenheit, D. G. (১৭২৪)। "Experimenta circa gradum caloris liquorum nonnullorum ebullientium instituta (Experiments done on the degree of heat of a few boiling liquids)"Philosophical Transactions (London)33: 1।
  • Fahrenheit, D. G. (১৭২৪)। "Experimenta et Observationes de Congelatione aquae in vacuo factae"। Philosophical Transactions (London)33 (381–391): 78। doi:10.1098/rstl.1724.0016 (Latin)
  • Klemm, Friedrich (১৯৫৯) (জার্মানে)। "Daniel Gabriel Fahrenheit"।নতুন জার্মান জীবনী (এনডিবি)। 4। বার্লিন: ডাঙ্কার ও হামব্লোট। pp. 746 et seq..
  • Kops, J (1976)। "Who was G.D. Fahrenheit?"। Zdravotnická pracovnice26 (2) (প্রকাশিত হয় 1976 Feb)। পৃষ্ঠা 118–9। PMID 775856 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |প্রকাশনার-তারিখ= (সাহায্য) (Czech)
  • Lommel (1877) (জার্মানে))। "Fahrenheit, Gabriel Daniel"। সাধারণ জার্মান জীবনী (এডিবি)। 6। লাইপ্‌ৎসিশ: ডাঙ্কার ও হামব্লোট। p. 535{{ #if:535 |–535}।
  • Friedrich Klemm (১৯৫৯) (জার্মানে)। "Daniel Gabriel Fahrenheit"।নতুন জার্মান জীবনী (এনডিবি)। 4। বার্লিন: ডাঙ্কার ও হামব্লোট। pp. 746 et seq..
  • Middleton, W. E. Knowles (১৯৬৬)। A History of the Thermometer and its Use in Meteorology। Baltimore, Maryland: Johns Hopkins Press।
  • Sorokina, T S (1986)। "Creators of medical thermometry (on the 300th anniversary of the birth of Gabriel Daniel Fahrenheit--24 May 1686 and on the 350th anniversary of the death of Santorio Santorio--22 February 1636)"। Klinicheskaia meditsina64 (10) (প্রকাশিত হয় 1986 Oct)। পৃষ্ঠা 147–51। PMID 3543477 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |প্রকাশনার-তারিখ= (সাহায্য) (Russian)
  • Van Der Star, P., সম্পাদক (১৯৮৪)। Fahrenheit's Letters to Leibniz and Boerhaave। Editions Rodopi।

বহিঃসংযোগ


This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.