জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ২২ মার্চ ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। এর বর্তমান সভাপতি আব্দুল মুমিন ইমামবাড়ী ও মহাসচিব নূর হুসাইন ক্বাসিমী।[1]

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
চেয়ারম্যানশায়খ আব্দুল মুমিন
মহাসচিবনূর হোসাইন কাসিমী
সদর দপ্তরঢাকা, বাংলাদেশ
ছাত্র শাখাছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ
মতাদর্শইসলামী
জাতীয় সংসদের আসন
০ / ৩০০
নির্বাচনী প্রতীক
বাংলাদেশের রাজনীতি
রাজনৈতিক দল
নির্বাচন

ইতিহাস

১৯১৯ সনে দারুল উলূম দেওবন্দ কেন্দ্রিক সর্বপ্রথম[2] ইসলামী রাজনৈতিক দল জমিয়তের কার্যক্রম শুরু হয়, তখন উপমহাদেশ কেন্দ্রিক এ দলের নাম ছিল জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ। পর্যায়ক্রমে পাকিস্তান গঠন হলে এর নাম জমিয়তে উলামা পাকিস্তান হয়। এরপর যখন বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে তখন একক ইসলামী দল হিসেবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্বেই যখন দেশের পরিস্থিতি উত্তাল তখন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পূর্বপাকিস্তান গঠন করা হয়। যা পরবর্তিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ নামে নামকরণ করা হয়। [3][4]

ব্রিটিশ ভারত (১৯১৯ - ২৫শে অক্টোবর ১৯৪৭)

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্য। ব্রিটিশরা ভারত দখল করার পর শাহ আব্দুল আজীজ দেহলভী আন্দোলন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে সিপাহী বিপ্লব, বালাকোটের যুদ্ধ, শামেলী যুদ্ধ, রেশমী রুমাল আন্দোলন সংঘটিত হয়।শায়খুল হিন্দ মাহমূদুল হাসানের উদ্যোগে ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় “জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ”।[5] যা সর্বপ্রথম ১৯২০ সালের ১ জানুয়ারি ভারতবর্ষের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দাবি করে।[6] ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে জমিয়ত নেতৃবৃন্দ জেল-জুলুম-নির্যাতন ভোগ করেন। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ অখণ্ড ভারতের পক্ষে থাকলেও ঐ অঞ্চলের (পাকিস্থানের) আলেমরা মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি (পাকিস্থানের) দাবিকে পূর্ণ সমর্থন করেন।[7][8]

পাকিস্তান সময়কাল (২৬শে অক্টোবর ১৯৪৭- ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১)

১৯৪৫ সালের ২৬শে অক্টোবর ঐ অঞ্চলের ওলামায়ে কেরাম জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম গঠন করেন। জমিয়ত নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ ভূমিকায় স্বতন্ত্র আবাসভূমির আন্দোলন সফলতার মুখ দেখে। যার ফলে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান জন্ম লাভ করে। করাচিতে পাকিস্থানের প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানি এবং ঢাকায় উত্তোলন করেন মাওলানা জাফর আহমদ উসমানি। ১৯৫১ সালে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার দাবীতে সিলেটে উলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালে করাচিতে জমিয়তের উদ্যোগে সর্বদলীয় সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে ২২ দফা মূলনীতি প্রণিত হয়। ১৯৫৩ সালে ঢাকার পল্টন ময়দানে জমিয়তের উদ্যোগে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার দাবীতে দুই দিনব্যাপী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। [9] ১৯৫৩ সালে উভয় পাকিস্তানে খতমে নবুওয়াত আন্দোলন। পরবর্তীতে পাকিস্তানে রাষ্ট্রিয়ভাবে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে জমিয়ত নেতৃবৃন্দের অবদান রাখে। আইয়ুব খান কর্তৃক নিয়োজিত ইসলামী গবেষণা পরিষদের ড.ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলে। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব বিরোধী জোটের অন্যতম শরিক দল ছিল।[3][10][11]

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১)

১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জমিয়ত (বর্তমান জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম) মুক্তিযুদ্ধকে রাজনৈতিক ভাবে সমর্থন দিয়েছিল। স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্বেই যখন দেশের পরিস্থিতি উত্তাল তখন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পূর্বপাকিস্তান গঠন করা হয়। যা পরবর্তিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ নামে নামকরণ করা হয়।[3]

বাংলাদেশ অধ্যায় (১৯৭১-বর্তমান)

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর নিবন্ধন নং ২৩। স্বাধীন বাংলার প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন তাজাম্মুল আলী এরপর মরহুম আজিজুল হক। পরবর্তি সভাপতি আব্দুল করীম শায়খে কৌড়িয়া। তার পর সভাপতি নির্বাচিত হন মরহুম আশরাফ আলী বিশ্বনাথী। ২০০৫ সালে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন মাসিক মদীনা সম্পাদক মুহিউদ্দীন খান। পরবর্তীতে সভাপতি নির্বাচিত হন শায়খ আব্দুল মোমিন। তিনি বর্তমানে সভাপতির পদে আছেন।[3]

ছাত্র সংগঠন

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহযোগী সংগঠন ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ ১৯৯২ সনের ২৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "Bangladesh Election Commission - Home page"। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০১৪
  2. "Why did the Pak Maulana visit Deoband?"। Rediff India Abroad। জুলাই ১৮, ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ মে ১৯, ২০১২
  3. শাকের হোসাইন শিবলি, ইসলামি গবেষণা, সমালোচনা ও প্রবন্ধ (২০১৬)। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের ভূমিকা (পেপারব্যাক)। বাংলাদেশ: রকমারি। পৃষ্ঠা 32।
  4. "Why did the Pak Maulana visit Deoband?"www.rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-২৬
  5. "Why did the Pak Maulana visit Deoband?"। Rediff India Abroad। ১৮ জুলাই ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১২
  6. Qasmi, Ali Usman; Robb, Megan Eaton (২০১৭)। Muslims against the Muslim League: Critiques of the Idea of Pakistan (English ভাষায়)। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 2। আইএসবিএন 9781108621236।
  7. "History & Founders"Jamiat Ulama-i Hind | Bahadur Shah Zafar Marg | New Delhi (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-২৬
  8. Khan, Feisal (২০১৫)। Islamic Banking in Pakistan: Shariah-Compliant Finance and the Quest to make Pakistan more Islamic। Routledge। পৃষ্ঠা 253। আইএসবিএন 978-1-317-36652-2।
  9. Jamiat Ulema-e-Islam (JUI) at ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে Islamopedia Online
  10. McDermott, Rachel Fell; Gordon, Leonard A.; T. Embree, Ainslie; Pritchett, Frances W.; Dalton, Dennis (২০১৩)। Sources of Indian Tradition Modern India, Pakistan, and Bangladesh (Third edition. সংস্করণ)। New York: Columbia University Press। পৃষ্ঠা 457। আইএসবিএন 9780231510929।
  11. Ishtiaq Ahmed, The Pathology of Partition, The Friday Times, 6 November 2015.
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.