ইসলামী সংস্কৃতি

প্রাথমিকভাবে ইসলামী সংস্কৃতি শব্দটি ধর্মনিরপেক্ষ একাডেমিয়ায় ঐতিহাসিকভাবে ইসলামী মানুষদের প্রচলিত সাংস্কৃতিক প্রথার বর্ণনায় ব্যবহৃত হয়। যেহেতু ইসলাম ধর্ম ৭ম শতাব্দিতে আরবে উৎপত্তি লাভ করেছিল, তাই মুসলিম সংস্কৃতির শুরুটা ছিল প্রধানত আরবীয়ইসলামী সাম্রাজ্যগুলোর পরিধি দ্রুত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, মুসলিম সংস্কৃতিও ইরানি, বাংলাদেশি, তুর্কী, পাকিস্তানি, মঙ্গল, চীনা, ভারতীয়, মালয়, সোমালীয়, মিশরীয়, ইন্দোনেশীয়, ফিলিপাইন, গ্রিক, রোমক, বাইজেন্টাইন, স্প্যানিশ, সিসিলিয়, বলকানীয়, পশ্চিমা সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত এবং তাদের সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে।

পারিভাষিক ব্যবহার

ইসলামী সংস্কৃতি শব্দটি নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। মুসলিমরা অনেক দেশ এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে বসবাস করে এবং ইসলামের ধর্মের প্রতি তাদের আনুগত্য সত্ত্বে্‌ও, মুসলমানদের মাঝে সাংস্কৃতিক একতার বিষয়গুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখা কঠিন হতে পারে। তবুও নৃতত্ত্ববিদ ও ঐতিহাসিকগণ ইসলাম সম্পর্কে পাঠ করেন, কোন এলাকার সংস্কৃতির ওপর একটি দৃষ্টিভঙ্গি- প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে, যেখানে এই ধর্মই প্রধান।

ইসলামের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, মার্শাল হগসন, তার তিন-খণ্ডের দ্য ভেঞ্চার অব ইসলাম[1]-বইয়ে "ইসলামী" ও "মুসলিম" শব্দের একাডেমিক ব্যবহারে ধর্মীয় বনাম ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি শুধুমাত্র কেবল ধর্মীয় ঘটনাবলির জন্যই এই পদ ব্যবহার করে এর সমাধান প্রস্তাব করেন, এবং তিনি ঐতিহাসিকভাবে সমস্ত মুসলিম জনগণের সাংস্কৃতিক দিকগুলি চিহ্নিত করে "Islamicate" শব্দটি আবিষ্কার করেন। তবে, তার প্রভেদ বহুলভাবে গৃহীত হয়নি, এবং এই নিবন্ধের সাধারণ ব্যবহারে তাই বিভ্রান্তি রয়েই গেছে।

ধর্মীয় অণুশাসন এবং ইসলামে বিশ্বাস

ইসলামী সংস্কৃতিতে সাধারণভাবে সমস্ত অনুশীলনগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা ইসলামের ধর্মের কাছাকাছি থেকে উন্নতি লাভ করেছে, সেই সঙ্গে কুরআনিক অনুশীলন যেমন- সালাত এবং নন-কুরআনিক যেমন- ইসলাম বিশ্বের বিভিন্ন বিভাগ। এটি বাংলার ঐতিহ্যে বাউল রূপে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং প্রায় সমস্ত বাংলার শান্তিপূর্ণ ধর্মান্তরকে সুগম করেছে।

ভাষা ও সাহিত্য

আরবি

প্রথমদিকে মুসলিম সাহিত্য ছিল আরবি, যেহেতু তা ছিল মক্কা এবং মদিনায় ইসলামের প্রবক্তা মুহাম্মাদ এর সম্প্রদায়ের ভাষা। যেহেতু মুসলিম সম্প্রদায় ইতিহাসের গোড়ার দিকে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ছিল, এর সাহিত্যে প্রদর্শিত ফলাফল ছিল ধর্মীয় গড়নের মধ্যে। কুরআন, হাদীস এবং নবীর সিরাত (জীবনী) সম্পর্কিত রচনাগুলি মুসলিম সম্প্রদায়ের সাহিত্যের সর্বপ্রাচীন নিদর্শন তৈরী করেছে।

মুসলিম জনসংখ্যার মানচিত্র (পিউ গবেষণা কেন্দ্র, ২০০৯).

উমাইয়া সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার পর সেকুলার (secular) মুসলিম সাহিত্যের বিকাশ হয়। উদাহরণ, আরব্য উপন্যাস "এক হাজার এক রজনীর কাহিনী"। কোন ধর্মীয় উপাদান বিহীন এই সাহিত্য আরবেরা তাদের সমস্ত সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে দেয়, যা তাদের বিস্তৃত সংস্কৃতির অংশে পরিনত হয়।

পারস্য

আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের আমলে, ফার্সী মুসলিম সভ্যতার অন্যতম ভাষায় পরিনত হয়। অনেক বিখ্যাত মুসলিম সাহিত্য ফার্সীতে রচিত। দেখুন ফরিদ উদ্দিন আত্তারের পাখির সমাবেশ এবং রুমির কবিতা।

দক্ষিণ এশীয়

পাকিস্তানের লাহোরের বাদশাহী মসজিদ হল দক্ষিণ এশিয়ায় মুঘল নকশা ও স্থাপত্যের প্রাচীন নিদর্শনের অল্পসংখ্যক নমুনাগুলোর একটি।

বাংলায় বাউল ধারার লোক সঙ্গীত এক ধরনের ঐতিহ্য সমন্বয়পন্থী (syncretist) কাব্য রচনা করেছে, যা অনেক স্থানীয় ইমেজের সঙ্গে সুফিবাদ মিশিয়েছে। বিশিষ্ট কবিদের মধ্যে ছিলেন হাছন রাজা এবং লালন

আধুনিক

আধুনিক সময়ে, ভাষার ভিত্তিতে লেখকের শ্রেণীকরন ক্রমশ অগুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ছে। নোবেল জয়ী মিশরীয় লেখক নাগিব মাহফুজের রচনা ইংরেজীতে অনূদিত হয়ে সারা পৃথিবীতে পঠিত হচ্ছে। ওরহান পামুকের (Orhan Pamuk) মত অনেক লেখক সরাসরি ইংরেজিতে লিখছেন বিস্তৃত আন্তর্জাতিক পাঠকের কাছে পৌছানোর জন্য।

থিয়েটার

ইসলামে সীমিত মাত্রার মধ্যে অনুমোদিত।[2] এখানে ইসলাম আল্লাহ, মুহাম্মদ (সাঃ) ও তার স্ত্রীগণের এবং ফেরেশতাদের চরিত্রায়ন নিষিদ্ধ।

তার পারফর্মিং আর্টের মধ্যে, মধ্যযুগীয় ইসলামী বিশ্বে থিয়েটারের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে পাপেট থিয়েটার (যার মধ্যে আছে হ্যান্ড পাপেট, ছায়া নাটক এবং সুতায় নাড়ানো পুতুল নাচের নাটক) এবং passion play যা 'তাজিয়া' নামে পরিচিত যেখানে অভিনেতারা মুসলিম ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা পুনরাভিনয় করেন। বিশেষত শিয়া ইসলামী নাটকগুলো হযরত আলীর পুত্র হাসান ইবনে আলী এব হোসেন ইবনে আলী'র শাহাদাতের ঘটনা নিয়ে আবর্তিত হয়। মধ্যযুগের আদব সাহিত্যে আখরাজা (akhraja) নামক সরাসরি প্রদর্শিত ধর্ম নিরপেক্ষ নাটকের উল্লেখ রয়েছে, যদিও এইগুলি পাপেট ও তাজিয়া থিয়েটার হতে কম পরিচিত (less common) ছিল। [3]

ওমানের মাস্কাটে রয়্যাল অপেরা হাউজ। একে ইসলামী সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত প্রথম নাট্যমঞ্চ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যাতে প্রাচীন সঙ্গীতও বিদ্যমান ছিল।[4]

কারাগজ নামক তুর্কী ছায়া থিয়েটার (shadow theater) এ অঞ্চলের পাপেট শিল্পকে ব্যাপক প্রভাবিত করে। ধারণা করা হয় এটা চীন থেকে ভারত হয়ে এসেছে। পরবর্তিতে মোঙ্গলরা চীনাদের থেকে নিয়ে এবং সেন্ট্রাল এশিয়ার তুর্কীদের দেয়। এভাবে ছায়া থিয়েটারের শিল্প সেন্ট্রাল এশিয়ার তুর্কীদের দ্বারা আনাতোলিয়ায় আসে। অন্য গবেষকেরা দাবি করেন যে, ছায়া থিয়েটার আনাতোলিয়াতে আসে ষোড়শ শতাব্দীতে মিশর থেকে। এই দাবীর পক্ষে যে ঘটনা আছে তা হলো, যখন ইয়াভুজ সুলতান সেলিম মিশর ১৫১৭ সালে জয় করেন তখন তার সম্মানে আয়োজিত একটি পার্টিতে তিনি ছায়া থিয়েটার দেখেন। এটি দেখে সেলিম (প্রথম সেলিম) এতোটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি পাপেটিয়ারকে তার ইস্তাম্বুলের প্রাসাদে নিয়ে আসেন। সেখানে তার একুশ বছরের সন্তান সোলায়মান (পরবর্তিতে সুলতান, সোলায়মান দা ম্যাগণিফিসেন্ট) এই নাটকে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি এটা প্রায়ই দেখতেন এবং এভাবে ছায়া থিয়েটার উসমানিয় প্রাসাদে তার জায়গা করে নেয়।[5]

অন্যান্য স্থানে টিকে থাকা ছায়া পাপেট শিল্পের শৈলী খায়াল আল-জিল নামে পরিচিত – একটি ইচ্ছাকৃত রূপক পরিভাষা যার সর্বোত্তম প্রচলিত অনুবাদ হল "কল্পনার ছায়া" অথবা "স্বপ্নের ছায়া"। এই ছায়া পাপেটের সঙ্গে ঢোল, তম্বুরা, বাঁশি সহকারে সরাসরি আবহ সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এছাড়াও ধোয়া, আগুন, বজ্রপাত ঝুনঝুনি, বিভিন্ন রকম শব্দ সহ আরও অনেক রকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষকে হাঁসানো হয় ও বিমোহিত করা হয়। [6]

ইরানে ১০০০ সিইর পূর্ব থকেই পাপেটশিল্পের অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়, কিন্তু সেসময় ইরানে শুধুমাত্র দস্তানা ও ঝুলন্ত দড়ি চালিত পাপেট জনপ্রিয় ছিল।[7] পাপেট শিল্পের বাদবাকি প্রকরণগুলো ১৮ থেকে ১৯ শতকে তুর্কি সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজার রাজবংশের শাসনামলে বিস্তৃতি লাভ করে।

উৎসব

ঈদ উল-ফিতর, ঈদ উল-আযহা এবং আশুরা এর উপর নিবন্ধসমূহ দেখুন। (আরও দেখুন হোসায়তাবুইক), মাওলিদ, লাইলাতুল মিরাজ ও শব-ই-বরাত।

বিবাহ

ইসলামে বিবাহকে চরম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। ইসলামের শেষ নবী, মুহাম্মাদ, বলেছেন যে, "ধর্মের অর্ধেক হচ্ছে বিয়ে"; বিবাহ ও পরিবারের গুরুত্ব দিয়ে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

ইসলামে বিবাহ একটি আইনি বন্ধন এবং একজন পুরুষ ও একজন নারীর মাঝে শারীয়াহ অনুমোদিত সামাজিক চুক্তি

তথ্যসূত্র

  1. http://www.amazon.com/Venture-Islam-Classical-Age/dp/0226346838
  2. Meri, Josef W.; Bacharach, Jere L. (২০০৬)। Medieval Islamic Civilization: An Encyclopedia। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 807। আইএসবিএন 0-415-96691-4।
  3. Moreh, Shmuel (১৯৮৬), "Live Theatre in Medieval Islam", David Ayalon, Moshe Sharon, Studies in Islamic History and Civilization, Brill Publishers, পৃষ্ঠা 565–601, আইএসবিএন 965-264-014-X
  4. http://www.ansamed.it/en/oman/news/ME.XEF10980.html%5B%5D
  5. Tradition Folk The Site by Hayali Mustafa Mutlu
  6. Article Saudi Aramco World 1999/John Feeney
  7. The History of Theatre in Iran: Willem Floor:আইএসবিএন ০-৯৩৪২১১-২৯-৯: Mage 2005
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.