হাফেজ্জী হুজুর

মওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ, যিনি হাফেজ্জী হুজুর নামে প্রসিদ্ধ ও পরিচিত, ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, সমাজ সংস্কারক, ইসলামী ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা।[2][3] তিনি ১৯৮১ ও ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হন।[4] এরমধ্যে ১৯৮১ সালের নির্বাচনে ১.৭৯% ভোট পেয়ে তৃতীয় এবং ১৯৮৬ সালে ৫.৬৯% ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন।[5]

মোহাম্মদ উল্লাহ
জন্মমোহাম্মদ উল্লাহ
১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ
লুধুয়া, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, ব্রিটিশ ভারত, বর্তমানে বাংলাদেশ
মৃত্যুমে ৬, ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ/ রমযান ৮, ১৪০৭ হিজরী[1]
সমাধি স্থানকামরাঙ্গীরচর
অন্য নামহাফেজ্জী হুজুর
জাতীয়তাবাংলাদেশী
জাতিভুক্তবাঙালি
যুগঊনবিংশ শতাব্দী - বিংশ শতাব্দী
পেশারাজনীতিবিদ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব
মাজহাবহানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
মূল আগ্রহইসলামি রাজনীতি, সুফিবাদ
উল্লেখযোগ্য ধারণাতওবার রাজনীতি প্রবর্তন
লক্ষণীয় কাজবাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রতিষ্ঠা
শিক্ষায়তনদারুল উলুম দেওবন্দ

প্রারম্ভিক জীবন

মোহাম্মদ উল্লাহ ১৮৯৫ সালে লক্ষীপুর জেলার রায়পুর থানাধীন লুধুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মুনশী ইদ্রিস এবং দাদার নাম আকরাম উদ্দীন মিয়াযী। তিনি প্রথমে ফতেপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করে পরবর্তীতে চন্দ্রগঞ্জ মাদ্রাসায় এক বছর এবং কুমিল্লার লাকসামে নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানীর মাদ্রাসায় আরো এক বছর পড়ালেখা করেন। তবে সেখানে থেকে পরবর্তীতে নোয়াখালীর খিলবাইছ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯১৩ সালে ভারতের পানিপথে প্রথমে কারী আবদুস সালামের অধীন ও পরবর্তীতে কারী আখলাক হুসাইনের অধীনে ১৯১৫ সালে হিফজ শেষ করেন। হিফজ শেষে তিনি ১৯১৫ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত সাহারানপুর মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন এবং সেখান থেকে কুতুবে সিত্তাহর কিতাব শেষ করে ১৯২৩ সালে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ইসলামী শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরের সনদ লাভ করেন।[6]

পরবর্তী জীবন ও রাজনীতি

শিক্ষাজীবন শেষে বাংলাদেশে ফিরে তিনি শামসুল হক ফরিদপুরী ও আবদুল ওয়াহাবের সাথে একত্রিত হয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামি শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা স্থাপন করেন। এসব মাদ্রাসার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- বড়কাটারা, ফরিদাবাদ ও লালবাগ মাদ্রাসা। ১৯৬৫ সালে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে তিনি নূরিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৮১ সালে মুহাম্মাদুল্লাহ্‌ বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন।[7] তিনি ১৯৮১ ও ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হন।[4] এরমধ্যে ১৯৮১ সালের নির্বাচনে ১.৭৯% ভোট পেয়ে তৃতীয় এবং ১৯৮৬ সালে ৫.৬৯% ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন।[5]

ব্যক্তিগত জীবন

মোহাম্মদ উল্লাহ-এর মোট ৪ পুত্র এবং ৬ কন্যাসহ মোট ১০ সন্তানের জনক। যার মধ্যে আহমাদুল্লাহ আশরাফ পরবর্তীতে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির হন। অন্যপুত্র হামিদুল্লাহও একপর্যায়ে পৃথক খেলাফত আন্দোলন গঠন করেন। মেয়ের জামাই প্রয়াত ফজলুল হক আমিনী।

মৃত্যু

১৯৮৭ সালের ৭ মে মোহাম্মদ উল্লাহ মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।[8] ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ গুলিস্তানের নগর ভবন সংলগ্ন ফিনিক্স রোডের নাম পরিবর্তন করে ‘মওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) রোড’ নামকরণ করেছিলেন[3] তবে ২০১৭ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নামকরণ বাতিল করে।[9]

তথ্যসূত্র

  1. হামিদী, মুজিবুর রহমান (জুলাই ১৮, ২০১৩)। "তওবার রাজনীতির প্রবর্তক আধ্যাত্মিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ."দৈনিক সংগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৩
  2. Kantho, Kaler। "হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর জীবনে রমজান - কালের কণ্ঠ"
  3. BanglaNews24.com। "হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)"banglanews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০৭
  4. "নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ অফিসিয়াল ওয়েবসাইট"। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৩
  5. সিরাজুল ইসলাম, সৈয়দ (১৯৮৭)। "Bangladesh in 1986: Entering a New Phase. Part II"এশিয়ান সার্ভে২৭ (২): ১৬৩–১৭২। অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  6. "তওবার রাজনীতির প্রবর্তক আধ্যাত্মিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ."The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০৭
  7. "জীবদ্দশায় ছেলেরা, এখন নাতিরা পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে"
  8. "হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ."DailyInqilabOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০৭
  9. "'সড়ক থেকে হাফেজ্জী হুজুরের নাম মুছে দেওয়ার পরিণাম শুভ হবে না' - banglatribune.com"

আরো দেখুন

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.