মূলা গাভরু

মুলা গাভরু (ইংরেজি: Mula Gabharu;অসমীয়া: মূলা গাভরু) আহোম সাম্রাজ্যের একজন সাহসী নারী ছিলেন। তিনি মোগল সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। ১৫২৭ সনে স্বামীর মৃত্যুর পর মূলা গাভরু পাঁচ বৎসরে যুদ্ধের প্রারম্ভিক কৌশল আয়ত্ত করেন। ১৫৩২ সনে তিনি অসম আক্রমনকারী মোগলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। আহোম নারীকে রনভূমিতে দেখে আহোম সেনারা উৎসাহ পেয়েছিল [1] ও জয় আহোমের জয় ধ্বনি দিয়ে শত্রুকে পরাস্ত করেন। যুদ্ধের যাওয়ার সময় মূলা গাভরুর সতীর্থ হয়েছিল মুহিলা,জয়ন্তী,পমিলা, ললিতা ইত্যাদি মহিলারা।

আহোম রাজ্য রক্ষা

এই সময়ে আহোম সাম্রাজ্যের সম্রাট ছিলেন চুহুংমুং বা স্বর্গনারায়ন । তখন পর্যন্ত মোগলেরা অসম পঞ্চমবার আক্রমণ করেছিল। মূলা গাভরুর স্বামী ফ্রাচেনমুং শুনতে পেলেন যে আহোমের রাজমন্ত্রী খুলনুঙ্গ সহ অন্যান্য বীরযোদ্ধা মোগলের হাতে প্রান হারিয়েছেন। এই কথা ফ্রাচেনমুং তার পত্নীকে বলায় মূলা গাভরু বললেন; ‘’কোন কাজে প্রান লাগেনা? অসমের আকাশে ঘোর মেঘাছান্ন। যুদ্ধে যোগদান করে শত্রুকে নাশকরে অসমের স্বাধীনতা অক্ষয় রাখো।‘’ পত্নীর কথায় সাহস পেয়ে স্বামী বলিলেন;’’ তোমার মত শক্তিরূপা মূর্তিমতী যার পত্নী, তাঁর জীবনে কোন ভয় নাই, পরাজয়ের চিন্তা নাই।‘’ তোমার মহান বানীর ফলস্বরুপ তোমার নাম চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে। জীবন ও মৃত্যু থেকে অনেক বড় হচ্ছে স্বাধীনতা বা দেশপ্রম। কবচ কাপোড় আহোমদের আত্মরক্ষার কবচ ও হেংদা সাহসিকতার অস্ত্র। বিয়ার সময় আহোম মহিলারা স্বামীর হাতে হেংদা দিয়ে বলেন,’’ এই দা দিয়ে নিজের দেশ, নিজের পুত্র ও নিজের ঐশ্বর্য ও সম্মান রক্ষা করিতে সমর্থ হও।‘’ স্বামী ১০০টি জ্বলন্ত প্রদীপকে সাক্ষী করে নিজের দেশ,পুত্র, ঐশ্বর্ষ ও সম্মান রক্ষা করার সংকল্প গ্রহণ করে। কবচ কাপোড় পরিহিত আহোম সেনারা নিজেকে অজেয় বলে মনে করেন। এই বিশ্বাসে আহোম সেনারা বিজয়ী হয়ে রাজ্যের সমৃদ্ধি বিস্তার করেছিল। ফ্রাচেংনমুং কবচ কাপোড় পরিধান করার সুযোগ পায় নাই। সাতদিন পর স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ মূলা গাভরুর কানে আসে। শোকাতুর হয়ে তিনি তার স্বামীর হত্যাকারী ও আহোম সাম্রাজ্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারীদের বিনাশ করার প্রতিজ্ঞা করলেন।[1] প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মূলা গাভরু হাতে হেংদা নিয়ে রনভূমিতে বহুসংখ্যক আহোম সেনাকে হত্যা করেন। যুদ্ধের চতুর্থ দিন তিনি স্বামীর হত্যাকারী আহোম সেনাপতি তুর্বককে দেখতে পায়। যুদ্ধভূমিতে স্বামীর হত্যাকারীকে দেখতে পেয়ে তিনি প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে উঠেন। মূলা গাভরু ও তুর্বকের সহিত প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। কিন্তু তুর্বকের এক যোদ্ধাই অলক্ষে মূলা গাভরুর বুকে অস্ত্র নিক্ষেপ করে ফলে তৎক্ষনাৎ মূলা গাভরুর মৃত্যু হয়। মূলা গাভরুর রক্তে রনভূমী লাল হয়ে যায়। তার মৃত্যুর পর আহোম সেনারা নতুন শক্তিতে জাগ্রত হয়। কনচেং বরপাত্রগোহাইয়ের নেতৃত্বে আহোম সেনারা দিকরাই মূখ নামক স্থানে মোগলকে পরাস্ত করে ও তুর্বককে হত্যা করেন।

থিয়েটার

অসমের ভ্রাম্যমাণ আবাহন থিয়েটার ২০১৯-২০২০ সালে মূলা গাভরু নামক নাটকে তার জীবনি বর্ণিত হয়েছে ।

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.