নীহাররঞ্জন গুপ্ত
ডাঃ নীহাররঞ্জন গুপ্ত (জন্মঃ ৬ই জুন, ১৯১১ - মৃত্যুঃ ২০শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬) একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক। তিনি ছিলেন জনপ্রিয় রহস্য কাহিনীকার এবং চিকিৎসক। তিনি বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র কিরীটি রায়ের স্রষ্টা হিসেবে উপমহাদেশে স্মরণীয় হয়ে আছেন।[1][2][3]
নীহাররঞ্জন গুপ্ত | |
---|---|
![]() ডাঃ নীহাররঞ্জন গুপ্ত | |
জন্ম | লোহাগড়া, নড়াইল জেলা নড়াইল, বাংলা প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত | ৬ জুন ১৯১১
মৃত্যু | ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬ ৭৪) | (বয়স
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | চিকিৎসক, ঔপন্যাসিক |
পিতা-মাতা | সত্যরঞ্জন গুপ্ত লবঙ্গলতা দেবী |
প্রাথমিক জীবন
১৯১১ সালের ৬ই জুন তৎকালীন যশোরের (বর্তমান নড়াইল জেলার) লোহাগড়া উপজেলার ইটনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ছিল বিখ্যাত কবিরাজ বংশীয়। তার পিতা-মাতার নাম সত্যরঞ্জন গুপ্ত এবং লবঙ্গলতা দেবী। তিনি শৈশবকাল অতিবাহিত করেন কলকাতায়।
শিক্ষা
পিতার স্থানান্তরিত চাকুরীর কারণে তিনি অনেক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তন্মধ্যে - গাইবান্দা উচ্চ বিদ্যালয় অন্যতম।[3] ১৯৩০ সালে কোন্নগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন অর্জন করেন। কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজ থেকে আই.এসসি ডিগ্রী অর্জনের পর তিনি কলকাতায় কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি বিদ্যায় কৃতকার্য হন।[3] এরপর তিনি লন্ডন থেকে চর্মরোগ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ছাত্রাবস্থায় তার বড় বোন পোকার কামড়ে মারা যায়। ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মহান পেশায় নিয়োজিত থেকে এই রোগ সাড়ানোর জন্য স্বপ্ন দেখেন ও পরবর্তী জীবনে বাস্তবায়িত হয়।
কর্মজীবন
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ও বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত হন। এরপর তিনি মেজর পদে উন্নীত হন। এই চাকুরীর সূত্রে তিনি চট্টগ্রাম, বার্মা (বর্তমানঃ মায়ানমার) থেকে মিশর পর্যন্ত বিভিন্ন রণাঙ্গনে ঘুরে বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন।[1] যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষ ডিগ্রী অর্জন শেষে তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যোগ দেন। এরপর তিনি ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করেছেন। ভারত বিভক্তির পর ১৯৪৭ সালে তিনি ও তার পরিবার স্থায়ীভাবে কলকাতায় অভিবাসিত হন।[4]
সাহিত্যজীবন
শৈশবকাল থেকেই তিনি সর্বদাই স্বপ্ন দেখতেন লেখক হবার। একসময় তিনি শান্তিনিকেতনে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আশীর্বাদ গ্রহণসহ তার স্বাক্ষর বা অটোগ্রাফ সংগ্রহ করেন।[2] আঠারো বছর বয়সে নীহাররঞ্জন তার প্রথম উপন্যাস রাজকুমার রচনা করেন। ইংল্যান্ডে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি গোয়েন্দা গল্প রচনায় আগ্রহান্বিত হয়ে স্বীয় লেখার উত্তোরন ঘটান এবং আগাথা ক্রিস্টির সাথে সাক্ষাৎ করেন।[2] ভারতে ফিরে এসে তিনি তার ১ম গোয়েন্দা উপন্যাস কালোভ্রমর রচনা করেন। এতে তিনি গোয়েন্দা চরিত্র হিসেবে কিরীটি রায়কে সংযোজন করেন যা বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যে এক অনবদ্য সৃষ্টি। পরবর্তীতে কিরীটি তীব্র জনপ্রিয়তা পায় বাঙালি পাঠকমহলে। তিনি বাংলা সাহিত্যে রহস্য কাহিনী রচনার ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী লেখক ছিলেন।[5]
উপমহাদেশীয় প্রেক্ষাপট ও উপযোগী করে রচিত হয়েছে তার রহস্য উপন্যাসগুলো। বর্মা বা অধুনা মায়ানমার দেশের কথা বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে তার রচনায়। এ পর্যন্ত প্রায় পঁয়তাল্লিশটি উপন্যাসকে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় চলচ্চিত্রায়ণ করা হয়েছে যথাক্রমে টলিউড ও বলিউডের চলচ্চিত্রাঙ্গনে।[6] এছাড়াও তিনি শিশুদের উপযোগী সাহিত্য পত্রিকা সবুজ সাহিত্যের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।[1][2]
রচনাসমগ্র
বড়দের ও ছোটদের উপযোগী - উভয় ধরনের গোয়েন্দা উপন্যাস রচনায় সবিশেষ পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছেন নীহাররঞ্জন। মোট দুই শতাধিক গ্রন্থ তিনি রচনা করে গেছেন। উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো হলো -
- কালোভ্রমর
- মৃত্যুবাণ
- কালনাগ
- উল্কা
- উত্তরফাল্গুনী
- হাসপাতাল
- কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী
- লালুভুলু
- রাতের রজনীগন্ধা
- কিরীটি অমনিবাস
- অপারেশন
সম্মাননা
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রকর এস এম সুলতান ইটনায় অবস্থিত নীহাররঞ্জন গুপ্তের বাসভবনে শিশুস্বর্গ-২ প্রতিষ্ঠা করেন। ২৪ নভেম্বর, ১৯৯৩ সালে নড়াইলের তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী হোসেন এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে এস এম সুলতানের মৃত্যুর পর শিশু সংগঠনের কর্মীরা তা দখল করে। ২০০৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ নীহাররঞ্জন গুপ্তের বাসভবন অধিগ্রহণ ও সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগী হয়। কিন্তু, অদ্যাবধি এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।[4]
তথ্যসূত্র
- Sengupta, Subhodh Chandra; Basu, Anjali, সম্পাদকগণ (২০০২)। "নীহাররঞ্জন গুপ্ত" [Nihar Ranjan Gupta]। Samsad Bangali Charitabhidhan (Bibliographical Dictionary) (Bengali ভাষায়)। Volume 2 (4th edition সংস্করণ)। Kolkata: Shishu Sahitya Samsad। পৃষ্ঠা 168। আইএসবিএন 81-85626-65-0। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - "Kolkatar Kadcha"। Anandabazar Patrika। জুন ২৭, ২০১১। পৃষ্ঠা 4।
- Bipul, Mohammad Hasanuzzaman; Shanta, Samiul Amin। "নীহার রঞ্জন গুপ্ত"। Jessore.Info। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ১০, ২০১১।
- "নড়াইলে সুলতানের শিশুস্বর্গ এখন জুয়াড়িদের আখড়া"। News Bangla 24। সেপ্টেম্বর ৩, ২০১০। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ১০, ২০১১।
- "Nihar Ranjan Gupta"। www.goodreads.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-০৩।
- "Nihar Ranjan Gupta's birth anniversary observed"। The Daily Star। জুন ৮, ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ১০, ২০১১।