জারি গান

জারি গান বাংলাদেশের এক প্রকারের ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতরীতি। ফার্সি জারি শব্দের অর্থ শোক। মুহাররম মাসে কারবালার বিয়োগান্তক কাহিনীর স্মরণে মূলত এই গানের উদ্ভব। ১৭শ শতক থেকে বাংলায় এই গানের ধারা শুরু হয়।

বাংলাদেশ-এর সঙ্গীত
বাউল, বাংলার আধ্যাত্মিক গান
ধরন
  • ধ্রুপদী
  • রক
  • হিপ হপ
নির্দিষ্ট ধরন
ধর্মীয় সঙ্গীত
জাতিগত সঙ্গীত
ঐতিহ্যবাহি সঙ্গীত
মিডিয়া এবং কর্মক্ষমতা
সঙ্গীত পুরস্কার
সঙ্গীত উৎসব
সঙ্গীত মিডিয়াবেতার

টেলিভিশন

ইন্টারনেট
জাতীয় এবং দেশাত্মবোধক গান
জাতীয় সঙ্গীতআমার সোনার বাংলা
অন্যান্যনতুনের গান (রণসঙ্গীত)
একুশের গান (ভাষা আন্দোলন গাথা)
আঞ্চলিক সঙ্গীত
সম্পর্কিত এলাকা
অন্যান্য এলাকা
  • ভারত
  • পাকিস্তান

ইসলামের ইতিহাস ভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী নাট্যধারার সর্বাধিক জনপ্রিয় পরিবেশনারীতি হচ্ছে জারিগান। কারবালার যুদ্ধে শহীদ ইমাম হাসান-ইমাম হোসেন ও অন্যান্য চরিত্রের অন্তর্গত বেদনা নিয়ে এক ধরনের আহাজারিমূলক সুরে সাধারণত নৃত্য সহযোগে জারিগান পরিবেশিত হয়ে থাকে। এক সময় সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে জারিগানের প্রচলন ছিল। বর্তমানে এ ধরনের নাট্য পরিবেশনার প্রচলন পূর্বের ধারাবাহিকতার চেয়ে কিছুটা কমে গেলেও তা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। ‘জারিগান’ কথাটির ব্যাখ্যা : জারি শব্দটির অর্থ বিলাপ বা ক্রন্দন। এ শব্দটির উৎস-মূল ফার্সি ভাষা। তবে, বাঙলায় এসে শব্দটি অর্থ ব্যাপকতা লাভ করেছে। বাংলাদেশে মহররমের বিশেষ দিনে কারবালার শোকাবহ ঘটনা অবলম্বনে নৃত্যগীত সহকারে যে কাহিনী পরিবেশিত হয় তা সাধারণভাবে জারিগান বলে পরিচিত। এছাড়া, যে কোনো ধর্মীয়, অতিলৌকিক বা সামাজিক বিষয় নিয়ে রচিত গানকেও কখনো কখনো জারিগান নামে ডাকা হয়। কোথাও কোথাও আবার কবিগানকেও জারিগান বলা হয়। সে যা-ই হোক, কারবালা শোকাবহ ঘটনা জারিগানের প্রধান উপজীব্য।

উদ্ভব ও বিকাশ

বাংলায় জারিগান পরিবেশনার উদ্ভবসূত্র আবিষ্কার করা যায় আনুমানিক পঞ্চদশ শতকের বৈঠকী-রীতির ‘জঙ্গনামা’ পরিবেশনায়। গবেষকদের ধারণাÑ‘জঙ্গনামা’ বৈঠকী-রীতির পরিবেশনা থেকে বিবর্তনের পথ ধরে অবশেষে ‘জারিগান’ (শোকসঙ্গীত) নামে বাংলাদেশের স্থানীয় জনসমাজে প্রভূত খ্যাতিলাভ করে।

অনুষ্ঠানের সময়

জারিগানের অনুষ্ঠানের প্রধান সময় হচ্ছে মহররম মাস। এই মাসে সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে জারিগানের আসর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সাধারণত মহররমের ৫ তারিখে থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে প্রায় নিয়মিতভাবে জারিগানের আসর হয়। জারিগান পরিবেশনার জন্য দিন-রাতের কোনো বিধি নিষেধ নেই। তাই রাত ও দিন উভয় সময়েই জারিগানের আসর চলতে পারে। মহররম ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মেলা, উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও আজ কাল জারিগানের অনুষ্ঠান করা হয়।

জারিগানের কুশীলব

জারিগানের দলে আগে যে সকল কুশীলব অভিনয় করতেন এবং বর্তমানে যাঁরা অভিনয় করেন তাঁদের একটা করে নাম আছে। এর শিল্পী-কুশীলবদের মধ্যে প্রধানত নৃত্যকারদেরকে কোথাও খেলোয়াড়, আবার কোথাও জারিয়াল আর জারিগানের প্রধান গায়ককে প্রায় সব অঞ্চলে বয়াতী বলা হয়। এছাড়া, জারিগানের নাচের দলের পরিচালককে বলা হয় রেফারি। জারিগানের আসরে বৈচিত্র্য আনতে যখন নাচের গতি পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় তখন এই রেফারিই বাঁশি ফুঁকে নাচের গতি পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন।

পরিবেশনারীতি

সাধারণত ভূমি সমতলে বৃত্তাকার মঞ্চে সাদা ধুতি বা পাজামার সাথে সাদা গেঞ্জি পরে একজন গায়েন, সহযোগী গায়েন ও একদল নৃত্যকার-দোহার নৃত্যগীতের মাধ্যমে জারিগান পরিবেশন করেন। এই ধরনের নৃত্যগীতে অধিকাংশ সময় মূলগায়েন ও তার সহযোগী গায়েনের অবস্থান থাকে বৃত্তাকারে নৃত্যরত কুশীলবদের বৃত্তের বাইরে। তবে, সহযোগী গায়েনকে কখনো কখনো বৃত্তের কেন্দ্রে অবস্থান করতে দেখা যায়। জারিগান পরিবেশনকালে দোহার-নৃত্যকারগণ হাতে লাল রুমাল বা গামছা ব্যবহার করেন। শুধুমাত্র হাততালি, অঙ্গভঙ্গি ও রুমাল সঞ্চালনের মাধ্যমে জারিগান পরিবেশিত হয়। এর পরিবেশনাতে প্রায় সকল সময় অসাধারণ নৃত্যকৌশল প্রযুক্ত হয়ে থাকে। আসলে জারিতে গানের প্রতি চরণের সঙ্গে নৃত্যের তাল প্রত্য করা যায়। কিশোর ও যুবক নৃত্যকারগণ কখনো পরস্পর সংবদ্ধ, কোমরে হাত দিয়ে বৃত্ত, রেখা ও সর্পিল গতিভঙ্গ সৃজন করেন। এ শ্রেণীর জারিগান শূন্যে লম্ফদানের কৌশলদীপ্ত পৌরুষের পরিচয়বাহী। গবেষকগণ, জারিগানের এ নৃত্যের সঙ্গে মণিপুরী লম্ফনৃত্য বা চৈনিক ব্যালের তুলনা করেছেন। জারিগানে সকল নৃত্যকারী সচরাচর পায়ে নূপুর পরে থাকেন।

এ পর্যায়ে কারবালার মর্মান্তিক যুদ্ধের কাহিনী নিয়ে পরিবেশিত বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের স্বল্পমারিয়া গ্রামের আব্দুর রশীদ বয়াতী ও দলের জারিগানের একটি পালা ‘জয়নাল আবদীনের পত্র’-এর উদ্ধৃতিসহ তার পরিবেশনারীতি সম্পর্কে আলোচনা করা যায়।

তথ্যসূত্র

    • সাইমন জাকারিয়া, বাংলাদেশের লোকনাটক : বিষয় ও আঙ্গিক-বৈচিত্র্য, (ঢাকা : বাংলা একাডেমী, ২০০৮)
    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.