কসবা মসজিদ

কসবা মসজিদ বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক মসজিদবরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামে এর অবস্থান।

কসবা মসজিদ

অবকাঠামো

মোট নয়টি গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদ দেখতে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ এর সাথে অনেকাংশে মিল রয়েছে। পোড়ানো লাল ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বর্গাকার এ মসজিদটি। এর প্রতিটি বাহু ১৬.৯৬ মিটার দীর্ঘ । [1] এবং দেয়ালগুলো প্রায় ২.১৮ মিটার চওড়া। মসজিদের আয়তন ১১.৬৮ মিটার ×১১.৬৮ মিটার।[2] মসজিদের চারকোণে রয়েছে ৪টি মিনার। ছাদের উপরের গম্বুজগুলি চারটে পাথরের স্তম্ভের উপর ভর করে দন্ডায়মান। মনে করা হয় স্তম্ভগুলো আগ্নেয় শিলাজাত ব্যাসল্ট কিংবা ডলেরাইট পাথরের।[3] কোণের বৃত্তাকার বুরুজসমূহ ছাদ পর্যন্ত প্রলম্বিত। মসজিদের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে একটি করে মোট তিনটি খিলানপথ রয়েছে। প্রতি দেয়ালে রয়েছে তিনটি করে খিলান। এগুলির মধ্যে কেন্দ্রীয় খিলানটি অন্য দুটির চেয়ে বড়। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের কেন্দ্রীয় খিলানগুলিই শুধু খোলা রয়েছে। বাকি খিলানগুলি ভরাট করে দেওয়া হয়েছে ইট দিয়ে। কিবলা দেয়ালের তিনটি মিহরাব-কুলুঙ্গি পূর্ব দেয়ালের খিলানগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তৈরি করা হয়েছে।

মসজিদের অভ্যন্তরভাগ চারটি পাথরের স্তম্ভ দ্বারা নয়টি চতুষ্কোণ ‘বে’-তে বিভক্ত করা হয়েছে। চারটি পাথরের স্তম্ভের উপর স্থাপিত খিলানগুলিতে ভর করে মসজিদের নয়টি গম্বুজ নির্মিত হয়েছে। প্রতি বে-তে গম্বুজের ভিত্তির নিচে পরস্পর ছেদকারী খিলানগুলির চারটি ত্রিকোণাকার জায়গায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পেন্ডেন্টিভ অলঙ্করণ। চারকোণের বুরুজগুলির ভিত্তি কিছুটা বাঁকানো এবং চূড়া একেবারে সমান। ইমারতটির কার্ণিশ প্রচলিত বাঙালি রীতিতে কিছুটা বাঁকানো। মসজিদের অলংকরণে ছিল পোড়ামাটির বুটিদার নকশা, খাঁজ কাটা হীরক আকৃতির নকশা, প্যাঁচানো নকশা, শিকল নকশা এবং গোলাপ নকশা। বর্তমানে এগুলির নমুনা টিকে আছে মিহরাবের কুলুঙ্গিতে এবং দরজার খিলানে।[4]

মসজিদের সামনে একটি পুকুর আছে যা এখন প্রায় শুকিয়ে গিয়েছে। সম্ভবত ওযু করার জন্য এটি খনন করা হয়েছিল। [5]

ইতিহাস

এ মসজিদ নির্মাণের তারিখ সংযুক্ত কোনো শিলালিপি পাওয়া যায় নি। জনশ্রুতি আছে,সম্রাট জাহাঙ্গীর এর আমলে এই জঙ্গল আবাদ করার জন্য এক দল লোক জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করার সময় নয়টি গম্বুজ, পাঁচটি দরজা ও বহু মূল্যবান শ্বেত পাথরের এ মসজিদটির সন্ধান পান। গভীর জঙ্গল কেটে মসজিদ দেখতে পেয়ে এর কোনো প্রতিষ্ঠাতা বা নির্মাণকারীর সন্ধান না পেয়ে তখন ওই এলাকার মুসলমানরা এর নাম রাখেন 'আল্লাহর মসজিদ'।[6] আবার বলা হয়ে থাকে, জনৈক সাবহি খান ষোল শতকের প্রথমদিকে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। অবশ্য নির্মাতার আর কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না। কসবা মসজিদের ভূমি-নকশা, পরিমাপ, অভ্যন্তরীণ বিন্যাস, ছাদের উপর গম্বুজের অবস্থান, প্রবেশ দরজার অবস্থান ও অলংকরণ, চারকোণের বুরুজসমূহ প্রভৃতি দেখলে একে বাগেরহাটের খান জাহান নির্মিত নয়গম্বুজ মসজিদ এবং খুলনার মসজিদকুড় মসজিদ এর অনুকৃতি বলে মনে হবে। খান জাহানি স্থাপত্য রীতির সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠ মিল থাকায় মনে করা হয় যে, খান জাহান আলী কর্তৃক এ অঞ্চল মুসলিম অধিকারে আসার পর পনেরো শতকের মাঝামাঝি সময়ে কসবা মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। [4]

ডঃ দানীর মতে, এ মসজিদ পনেরো শতকে নির্মিত হয়েছে। ড. দানী লিখেছেন- “Kasba is an old village in Thana Gauranadi and it contains a mosque situated on the western side of an ancient road said to have been constructed by sabi Khan in early 16th century. But this mosque resembles that at masjidkur in all respects. This oblong building having circular towers at the four corners, is roofed over with nine domes in three rows, resting below on stone pillars. Its affinity with khan Jahan’s building suggests that it was also erected during his time in the middle of the 15th century.”[7]

বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।[1] এতে নিয়মিত নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে।

তথ্যসূত্র

  1. http://www.archaeology.gov.bd/site/page/b9ab644d-ae23-41ea-abbb-253013d7c697/%E0%A6%95%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%A6,-%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B2
  2. http://www.barisal.gov.bd/site/tourist_spot/512f2176-1796-11e7-9461-286ed488c766/%E0%A6%95%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%20%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%A6%20%E0%A6%97%E0%A7%8C%E0%A6%B0%E0%A6%A8%E0%A6%A6%E0%A7%80,%20%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A5%A4
  3. https://study-research.net/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AE-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%95%E0%A7%80%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%A8/cultural-heritage/
  4. "কসবা মসজিদ"বাংলাপিডিয়া
  5. ইউআরএল=http://www.barisal.gov.bd/node/993286/%E0%A6%95%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%A6-%E0%A6%97%E0%A7%8C%E0%A6%B0%E0%A6%A8%E0%A6%A6%E0%A7%80,-%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A5%A4%7Cসংগ্রহের-তারিখ=৩০%5B%5D জানুয়ারি ২০১৯|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20161124225259/http://www.barisal.gov.bd/node/993286/%E0%A6%95%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%A6-%E0%A6%97%E0%A7%8C%E0%A6%B0%E0%A6%A8%E0%A6%A6%E0%A7%80%2C-%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A5%A4%7C%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%AD%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%96%3D%E0%A7%A8%E0%A7%AA নভেম্বর ২০১৬|অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ}}
  6. http://www.obhijan.com/attractions/%E0%A6%95%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%A6
  7. http://www.barisalpedia.net.bd/barisalpedia/index.php?title=%E0%A6%95%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%BE_%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%A6,_%E0%A6%97%E0%A7%8C%E0%A6%B0%E0%A6%A8%E0%A6%A6%E0%A7%80
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.