মানব যৌনতা

মানব যৌনতা হল মানুষের কামোদ্দীপক অভিজ্ঞতা এবং সাড়াপ্রদানের ক্ষমতা। কোন ব্যক্তির যৌন অভিমুখীতা অন্য ব্যক্তির প্রতি তার যৌন আগ্রহ ও আকর্ষণকে প্রভাবিত করতে পারে।[1] বিভিন্ন পন্থায় যৌনতা প্রকাশ বা উপভোগ করা যায়; যার মধ্যে চিন্তা, কল্পনা, কামনা, বিশ্বাস, দৃষ্টিকোণ, মূল্যবোধ, আচরণ, প্রথাসম্পর্ক অন্তর্গত।[2] এই বিষয়গুলো তাদের জৈবিক, আবেগীয়, সামাজিক অথবা আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে। যৌনতার জৈবিক এবং দৈহিক বৈশিষ্ট্য ব্যাপকভাবে মানব প্রজনন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত, যার অন্তর্গত হল মানব যৌনতার সাড়াদান চক্র এবং মৌলিক জৈব তাড়না যা সকল প্রজাতির মধ্যেই বিদ্যমান থাকে।[3] যৌনতার দৈহিক এবং আবেগীয় বৈশিষ্ট্যের মূল বিষয়বস্তু হল বিভিন্ন ব্যক্তির মাঝে বন্ধন যা গভীর অনুভূতি অথবা প্রেম, বিশ্বাস এবং পরিচর্যার দৈহিক বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়। সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলো কোন ব্যক্তির যৌনতার উপর মানব সমাজের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত, অপরদিকে আধ্যাত্মিকতা কোন ব্যক্তির সঙ্গে অন্যান্য মানুষের আধ্যাত্মিক সংযোগ নিয়ে আলোচনা করে। এছাড়াও যৌনতা জীবনের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, আইনগত, দার্শনিক, নৈতিক, নীতিশাস্ত্রীয় এবং ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যের দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং এগুলোকে প্রভাবিতও করে। [4]

সাধারণত কোন ব্যক্তি বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছালে যৌন কর্মকাণ্ডের প্রতি তার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।[5] কোন ব্যক্তির যৌন অভিমুখীতা এবং যৌন আচরণের ভিত্তি কি তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ দাবি করেন যৌনতা জিন কর্তৃক নির্ধারিত, আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন এটি পরিবেশের দ্বারা পরিবেষ্টিত, এবং বাকিরা বলেন যে পূর্বোক্ত উভয় কারণই ব্যক্তির যৌন অভিমুখীতা গঠনে পারস্পারিকভাবে অবদান রাখে।[1] উক্ত প্রসঙ্গ এভাবে প্রকৃতি বনাম প্রতিপালন বিতর্কে মোড় নেয়। প্রথম দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী, অনেকে দাবি করে মানুষ তার বৈশিষ্ট্য জন্মগতভাবে ধারণ করে যা তাদের তাড়না ও প্রবৃত্তি হতে বোঝা যায়, দ্বিতীয় দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী, অনেকে দাবি করেন কোন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য তার বৃদ্ধি ও প্রতিপালন অনুযায়ী জীবনভর পরিবর্তিত হতে থাকে, যা সামাজিক মূল্যবোধ এবং গঠনমূলক পরিচয়ের মাধ্যমে বোঝা যায়।

জেনেটিক পার্থক্যের কারণে ব্যক্তিভেদে বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য হয় কিনা তা জেনেটিক গবেষণা করে বোঝার চেষ্টা করা হয়।[6] মানব যৌনতায় মানব ক্রোমোজোমের উপর গবেষণা করে পাওয়া গেছে যে, "মোট মানব জনসংখ্যার ১০% এর ক্রোমোজোমের এমন পার্থক্য রয়েছে যা এক্সএক্স-নারী কিংবা এক্সওয়াই-পুরুষ শ্রেণীর সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে মেলে না।"[7]

"মানব সঙ্গী নির্বাচন, প্রজনন ও প্রাজননিক কৌশল, এবং সামাজিক শিক্ষালাভ তত্ত্বের" বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ যৌনতার বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে। [8] যৌনতার সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলো ঐতিহাসিক পরিবর্তন এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের দ্বারা পরিচালিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বিবাহের মাধ্যমে যৌন আনন্দের ইহুদি দৃষ্টিভঙ্গি এবং যৌন আনন্দকে পরিত্যাগ করার ব্যাপারে অন্যান্য ধর্মের কিছু দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখযোগ্য।[3] কিছু সংস্কৃতিকে আবার যৌনতার ব্যাপারে নিপীড়নমূলক হিসেবে বর্ণনা করা হয়। যৌনতা গবেষণার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক দলের মানবীয় পরিচয়, যৌনবাহিত রোগ এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াও অন্তর্ভুক্ত থাকে।

টীকা

  1. "Sexual orientation, homosexuality and bisexuality"। American Psychological Association। ৮ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৩
  2. "Sexual and reproductive health: Defining sexual health"WHO.int। World Health Organization। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৫
  3. King, Bruce M. (২০১৩)। Human Sexuality Todayআইএসবিএন 9780136042457।
  4. "Things We Get Wrong About Human Sexuality (TED Talk)"EmpireHive (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৩-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০২-২৮
  5. Carlson, Neil R. and C. Donald Heth. "Psychology: the Science of Behaviour." 4th Edition. Toronto: Pearson Canada Inc., 2007. 684.
  6. "10 Scientific Ideas That Scientists Wish You Would Stop Misusing"। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৪
  7. Butler, Judith. Gender Trouble: Feminism and the Subversion of Identity. New York City: Routledge, 1990. 107,
  8. Sexual Strategies Theory: An Evolutionary Perspective on Human Mating by David M. Buss and David P. Schmitt

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.