একে-৪৭

একে-৪৭ বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র। এটি একটি গ্যাস পরিচালিত স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। এর ডিজাইনার রাশিয়ার (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) মিখাইল কালাশনিকভ। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটিরও অধিক এই অস্ত্র বিক্রি হয়েছে এবং বিশ্বের প্রায় ৫০ টিরও বেশি দেশের সামরিক বাহিনীতে এটি ব্যাবহ্ত্রত হচ্ছে। যা কিনা দুনিয়ার সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় রাইফেল। একে ৪৭ এর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ এর সহজ ব্যবহার,নির্ভরতা ও রক্ষানাবেক্ষন ইত্যাদি। এটাকে বিশ্বের প্রথম কার্যকর অটোমেটিক রাইফেল বলা হয়। ১৯৫১সাল থেকে এখনও এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সৈন্যদের মধ্যে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার মূল কারণ এটি জলে ভিজিয়ে, ধুলাতে রেখে বা এর উপর দিয়ে রাস্তা মেরামতের রোলার চালানোর পরও এটিকে আগের মতই ব্যবহার করা যায়,যা এর সমপর্যায়ের অন্যান্য অস্ত্রের ক্ষেত্রে অসম্ভব।

একে-৪৭

AK-47 with 6H2 bayonet
প্রকার আক্রমণাত্মক
উদ্ভাবনকারী সোভিয়েত ইউনিয়ন
ব্যবহার ইতিহাস
ব্যবহারকাল ১৯৪৯–বর্তমান (বিশ্বব্যাপি)
১৯৪৯–১৯৭৮ সোভিয়েত ইউনিয়ন
ব্যবহারকারী See Users
যুদ্ধে ব্যবহার *Hungarian Revolution of ১৯৫৬[1]
  • Vietnam War
  • See other conflicts and wars
উৎপাদন ইতিহাস
নকশাকারী মিখাইল কালাশনিকভ
নকশাকাল ১৯৪৬–1948[2]
উৎপাদনকারী Kalashnikov Concern and various others including Norinco
উৎপাদনকাল 1949–1959
উৎপাদন সংখ্যা ≈ 75 million AK-47s, 100 million Kalashnikov-family weapons.[3][4]
সংস্করণসমূহ See Variants
তথ্যাবলি
ওজন Without magazine:
৩.৪৭ কেজি (৭.৭ পা)
Magazine, empty:
০.৪৩ কেজি (০.৯৫ পা) (early issue)[5]
০.৩৩ কেজি (০.৭৩ পা) (steel)[6]
০.২৫ কেজি (০.৫৫ পা) (plastic)[7]
০.১৭ কেজি (০.৩৭ পা) (light alloy)[6]
দৈর্ঘ্য Fixed wooden stock:
৮৮০ মিমি (৩৫ ইঞ্চি)[7]
৮৭৫ মিমি (৩৪.৪ ইঞ্চি) folding stock extended
৬৪৫ মিমি (২৫.৪ ইঞ্চি) stock folded[5]
ব্যারেলের দৈর্ঘ্য সার্বিক লম্বা:
৪১৫ মিমি (১৬.৩ ইঞ্চি)[7]
Rifled bore length:
৩৬৯ মিমি (১৪.৫ ইঞ্চি)[7]

কার্টিজ 7.62×39mm
কার্যপদ্ধতি/অ্যাকশন Gas-operated, rotating bolt
গুলির হার Cyclic rate of fire:
600 rds/min[7]
Combat rate of fire:
Semi-auto 40 rds/min[7]
Bursts 100 rds/min[7]
নিক্ষেপণ বেগ ৭১৫ মি/সে (২,৩৫০ ফুট/সে)[7]
কার্যকর পাল্লা ৩৫০ মি (৩৮০ গজ)[7]
ফিডিং 30-round detachable box magazine[7]
There are also 5- 10-, 20- and 40-round box and 75- and 100-round drum magazines available
সাইট 100–800 m adjustable iron sights
Sight radius:
৩৭৮ মিমি (১৪.৯ ইঞ্চি)[7]
একে-৪৭ এর ছবি

২০০৪ সালের হিসাবে, "আনুমানিক ৫০০ মিলিয়ন বিশ্বব্যাপী আগ্নেয়াস্ত্রের ভেতর, প্রায় ১০০ মিলিয়ন কালাশনিকভ পরিবারের অন্তর্গত, যার তিন-চতুর্থাংশ হচ্ছে একে-৪৭ গুলো"।[3]

গুনাবলি

একে ৪৭ এর অন্যতম বৈশিষ্ট হল এর বুলেট এর মারাত্বক ভেদন ক্ষমতা ,এটি ৭.৬২*৩৯ মি.মি বুলেটকে ৭১৫ মিটার/সেকেন্ডে ছুড়ে যা ৮ ইঞ্চি কাঠ এবং ৫ ইন্চি কনন্ক্রিট ভেদ করতে পারে। এছাড়া এতে কষ্টমাইজ বুলেট ব্যবহার করা যায়। এতে সিঙ্গেল শট, ব্রাস্ট অব ফায়ার এবং গ্রেনেড ছুড়ার সুবিধা আছে । নির্ভরতার দিক দিয়ে আজও একে ৪৭ অনন্য। একে ৪৭ এ কখনো ব্যাক ফায়ার হয় না। এটিকে দুনিয়ার যেকোন স্থানে ব্যবহার করা যায়। তীব্র শীত,গরম,ভেজা আবহওয়াতেই এর কিছু হয় না। অন্যান্য রাইফেলের তুলনায় একে-৪৭ জ্যাম হবার রেটও কম। বর্তমান বিশ্বের সব দেশই একে ৪৭ বা এর বিভিন্ন সংস্করনের রাইফেল ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশে সেনাবাহিনীতে একে ৪৭ এর চাইনিজ সংস্করন টাইপ ৫৬ ব্যবহৃত হয়।

কালাশনিকভের পূর্ণ নাম মিখাইল তিমোফিয়েভিচ কালাশনিকভ। তিনি সাবেক সোভিয়েট সেনাবাহিনীর একজন লে. জেনারেল। ১৯১৯ সালের ১০ নভেম্বর সাইবেরিয়ার আলতাই অঞ্চলে কুরিয়া নামে একটি গ্রামে কৃষক পরিবারে তার জন্ম। তিমোফেল ও আলেকসান্দ্রা কালাশনিকভ দম্পতির তিনি সপ্তদশ সন্তান। ১৯৩৮ সালে তিনি সোভিয়েট রেড আর্মিতে যোগদান করেন। ২৪তম ট্যাংক রেজিমেন্টের সিনিয়র ট্যাংক কমান্ডার হিসাবে পদোন্নতি পান তিনি। ১৯৪১ সালের অক্টোবরে ব্রায়ানস্কে তিনি জার্মান বাহিনীর গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন। আহত হওয়ায় তিনি ৬ মাস ছুটিতে ছিলেন। জার্মানদের হাতে উন্নততর অস্ত্র থাকায় রাতে তার সুনিদ্্রা হতো না। ছুটিতে থাকাকালে একটি নয়া কারবাইন তৈরির ধারণা তার মাথায় আসে। নিজের ধারণাকে কাজে লাগাতে তিনি মাতাই অস্ত্র কারখানায় যান। কর্তৃপক্ষ তাকে তার উদ্ভাবনী ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ দেয়। তিনি আমেরিকান এম-১ এবং জার্মান এসআইজি-৪৪ এর ডিজাইনের সর্বোত্তম কৌশলের সমন্বয়ে একটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৪ সালে তিনি একটি কারবাইনের ডিজাইন তৈরি করেন। যৌবনে ইজভেস্ক অস্ত্র কারখানায় ডিজাইন নিয়ে ব্যস্ত মিখাইল কালাশনিকভ

যৌবনে ইজভেস্ক অস্ত্র কারখানায় ডিজাইন নিয়ে ব্যস্ত মিখাইল কালাশনিকভ

কিন্তু তার ডিজাইন কর্তৃপক্ষের পছন্দ হয়নি। তবে ব্যর্থ হলেও তিনি দমে যাননি। ১৯৪৬ সালে তার উদ্ভাবিত একে-৪৭ রাইফেলের পূর্ববর্তী সংস্করণ ‘একে-৪৬’ সরকারিভাবে সামরিক বাহিনীতে পরীক্ষা করা হয়। ১৯৪৭ সালে রেড আর্মির কয়েকটি নির্দিষ্ট ইউনিটে তার রাইফেল গ্রহণ করা হয়। ১৯৪৯ সালে প্রতি মিনিটে ৬ শ’ গুলিবর্ষণে সক্ষম তার উদ্ভাবিত রাইফেল সোভিয়েট সেনাবাহিনীতে পূর্ণমাত্রায় চালু করা হয়। দুই বছরের মধ্যে একে-৪৭ সোভিয়েট সেনাবাহিনীতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সে সময় থেকে এ রাইফেল সোভিয়েট ইউনিয়নের একটি অন্যতম রপ্তানি সামগ্রীতে পরিণত হয়। একে-৪৭ রাইফেল অত্যন্ত কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য হওয়ায় ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এম-১৬ রাইফেল ফেলে দিয়ে এ অস্ত্র গ্রহণ করে। এ পর্যন্ত এক কোটির বেশি একে-৪৭ রাইফেল নির্মাণ করা হয়েছে। ৫০টির বেশি দেশ এবং অসংখ্য গেরিলা গ্রুপ এ অস্ত্র ব্যবহার করছে। তবে সাবেক ওয়ারশ জোটভুক্ত দেশগুলোতে পাইরেসি হওয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষতি হয় ২ শ’ কোটি ডলার। আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও সোভিয়েট যুগে একে-৪৭ রাইফেলের প্যাটেন্ট সংরক্ষণ না করায় কালাশনিকভ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ১৯৯১ সালে স্বত্ব সংরক্ষণ করার আইনি লড়াইয়ে তিনি হেরে যান। ১৯৪৯ সাল থেকে তিনি উদমার্টিয়ার ইজভেস্কে বসবাস করছেন। ৭ দশমিক ৬২ এমএম ক্যালিবারের এ রাইফেল উদ্ভাবনের জন্য তিনি স্টালিন মেডেল লাভ করেন। Mikhail Kalashnikov - 10.11.2009

Mikhail Kalashnikov - 10.11.2009 গত ২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর জন্মদিনে রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ তার হাতে ‘হিরো অব রাশা’ পদক তুলে দেন। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে কালাশনিকভ নিজের লেখা একটি দেশাত্মবোধক কবিতা আবৃত্তি করেন। আরেকটি অজানা বিষয় মারণাস্ত্রের জনক কালাশনিকভ একজন শৌখিন কবি। এ পর্যন্ত তার ৬টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে ৯৪ বছর বয়সে রাশিয়ার উদমুরত প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ইজহভস্কে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে যেটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখা হয়, সেই একে-৪৭ এর উদ্ভাবক মিখাইল কালাশনিকভ।

গ্যাস ব্যবহার করে একটি চাইনিজ (টাইপ ৫৬) একে ৪৭ রাইফেলের ক্রিয়াকৌশল

বর্ননা

ব্যবহারকারী দেশ সমুহ

তথ্যসূত্র

[8] [9]

  1. http://www.nybooks.com/articles/2011/02/10/most-influential-weapon-our-time/ The Most Influential Weapon of Our Time. The New York Review of Books. Max Hastings FEBRUARY 10, 2011 ISSUE. "József Tibor Fejes, a young Hungarian identified by C. J. Chivers in The Gun as ‘the first known insurgent to carry an AK-47.’ According to Chivers, ‘Fejes obtained his prize after Soviet soldiers dropped their rifles during their attack on revolutionaries in Budapest in 1956…. The Hungarian Revolution marked the AK-47’s true battlefield debut."
  2. Monetchikov 2005, chpts. 6 and 7: (if AK-46 and AK-47 are to be seen as separate designs).
  3. Killicoat, Phillip (এপ্রিল ২০০৭)। "Weaponomics: The Global Market for Assault Rifles" (PDF)World Bank Policy Research Working Paper 4202 (Post-Conflict Transitions Working Paper No. 10)। Oxford University। পৃষ্ঠা 3। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০১০
  4. НСД. 7,62-мм автомат АК 1967, পৃ. 161–162।
  5. НСД. 7,62-мм автомат АКМ (АКМС) 1983, পৃ. 149–150।
  6. monetchikov 2005
  7. Kalashnikov AK (AK-47) AKS, AKM and AKMS assault rifles (USSR)

অধিকতর পড়াশোনার জন্য

বই
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.