লুই ব্রেল
লুই ব্রেল (ইংরেজি: Louis Braille; /ˈbreɪl/, ফরাসি : [lwi bʁɑj]; জন্ম: ৪ জানুয়ারি, ১৮০৯ - মৃত্যু: ৬ জানুয়ারি, ১৮৫২) একজন ফরাসী আবিষ্কারক ও পূজনীয় শিক্ষক। ফ্রান্সের কুপভ্রে এলাকায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন।[1] তিন বছর বয়সে অন্ধ হয়ে যাবার পর বিশ বছর বয়সে তিনি অন্যান্য অন্ধ ব্যক্তিদেরকে শিক্ষা দিতে অগ্রসর হন। এরপর এক বছরের মধ্যে অন্ধ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তা ও কল্যাণার্থে তিনি ব্রেইল পদ্ধতি আবিষ্কারের মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ণ করেছেন। দৃষ্টি নিবদ্ধ হওয়া ছাড়াই এক থেকে ছয়টি বিন্দুতে অঙ্গুলী নির্দেশনা ও স্পর্শের মাধ্যমে বিশ্বের লাখো লাখো অন্ধ ব্যক্তিগণ শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণপূর্বক তাদের লেখনী কিংবা পড়ার কাজ সম্পন্নপূর্বক যোগাযোগ প্রক্রিয়া সম্পাদন করে থাকেন। অদ্যাবধি এ পদ্ধতিটি বিশ্বের সর্বত্র পরিচিতি পেয়েছে ও প্রচলিত সকল ভাষায় গ্রহণ করা হয়েছে।
লুই ব্রেল | |
---|---|
![]() লুই ব্রেলের প্রতিকৃতি | |
জন্ম | কুপভ্রে, ফ্রান্স | ৪ জানুয়ারি ১৮০৯
মৃত্যু | ৬ জানুয়ারি ১৮৫২ ৪৩) প্যারিস, ফ্রান্স | (বয়স
সমাধি | প্যানথিয়ন, প্যারিস ৪৮°৫০′৪৬″ উত্তর ২°২০′৪৫″ পূর্ব |
প্রারম্ভিক জীবন
ব্রেল একজন চামড়া ব্যবসায়ীর সন্তান ছিলেন। চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। তিন বছর বয়সে অন্ধ হয়ে যান তিনি। আকস্মিকভাবে এক চোখে সুঁইয়ের গুঁতো লেগে যায়। ঐ সময় এন্টিবায়োটিকের প্রচলন না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত চোখ সংক্রমিত হয়। এটি বিস্তৃত হয়ে অপর চোখকেও আক্রান্ত করে। ফলশ্রুতিতে তিনি অন্ধ হয়ে যান চীরকালের জন্যে। দশ বছর বয়সে অন্ধদের উপযোগী রাজকীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। ব্রেল মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিজ্ঞান এবং সঙ্গীতে দক্ষতা দেখান। পরবর্তীতে চার্চের অর্গ্যান যন্ত্রবাদক হিসেবে যোগদান করেন। যুবকদের অন্ধ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকও ছিলেন তিনি।
মহাপ্রয়াণ
ব্রেল শৈশব থেকে সর্বদাই অসুস্থ অবস্থায় দিনাতিপাত করেন যা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্তও একই অবস্থায় ছিলেন। চল্লিশ বছর বয়সে যক্ষা রোগ ধরা পড়লে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হতে থাকলে কুপভ্রে এলাকায় তার পারিবারিক বাসভবনে নিয়ে আসা হয়। জন্মদিন অতিক্রান্ত হবার দুই দিন পর ১৮৫৩ সালে লুই ব্রেল ৪৩ বছর বয়সে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন।[2]
সম্মাননা
কুপভ্রে এলাকায় অবস্থিত ব্রেলের শৈশবকালীন বাড়ীটিকে ঐতিহাসিক ভবন তালিকায় অন্তর্ভুক্তিসহ লুইস ব্রেল যাদুঘররূপে গড়ে তোলা হয়েছে।[3] শহরের চত্ত্বরে বৃহৎ আকৃতির স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।[4] এ স্মৃতিস্তম্ভটি ব্রেল স্কয়ার নামে পরিচিত।[5] ১৯৫২ সালে তার মৃত্যুর শতবার্ষিকীতে তার দেহাবশেষ প্যারিসের প্যানথিওনে স্থানান্তর করা হয়েছে।[6] শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে তার প্রতীকি অঙ্গস্বরূপ ব্রেলের একটি হাত কুপভ্রেতে নিজ বাড়ীর সম্মুখে সমাহিত করা হয়েছে।[2]
২০০৯ সালে তার দ্বি-শতবর্ষ জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে বিশ্বের সর্বত্র যথাযোগ্য মর্যাদার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রদর্শনী ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হয়। এতে তার জীবন, কর্ম ও ভূমিকা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। বেলজিয়াম এবং ইতালিতে দুই ইউরো, ভারতে দুই রূপী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক ডলার মূল্যমানের মুদ্রা প্রকাশ করা হয়।[7][8][9][10]
গ্যালারী চিত্র
- Bust and bas relief monument in Coupvray.
- Braille's tomb in the Panthéon, Paris.
- Postage stamp (East Germany, 1975): Braille has been honored on stamps worldwide.
- Dollar coin (USA, 2009), issued for Braille's birthday bicentennial.
তথ্যসূত্র
- RNIB: birth of Louis Braille
- Farrell, p. 98.
- Marsan, Colette (২০০৯)। "Louis Braille: A Brief Overview"। Association Valentin Haüy। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১১।
- "Louis Braille Monument"। Louis Braille School, Edmonds, WA। ১৯৯৬। ৮ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১১।
- Farrell, p. 97.
- Kugelmass, J. Alvin (২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২)। "That Those Who Are Blind May Read"। The New York Times। পৃষ্ঠা BR26। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১১।
- "New 2-euro commemorative coin on display in the Museum"। National Bank of Belgium। ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১১।
- "Italy 2 euro commemorative coin 2009 Louis Braille"। Brailleroom। ২০০৯। ২ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১১।
- "Commemorative Coins – India – Louis Braille"। India Stamp Ghar। ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১১।
- "2009 Louis Braille Bicentennial Silver Dollar"। United States Mint। ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১১।