রাজেন্দ্র লাহিড়ী

রাজেন্দ্র লাহিড়ী (২৩ জুন, ১৯০১- ১৭ ডিসেম্বর, ১৯২৭), রাজেন্দ্র নাথ লাহিড়ী নামেও পরিচিত, ছিলেন বাঙালি হিন্দু ব্রাহ্মণ বিপ্লবী, যিনি ব্রিটিশদের ভারত থেকে উৎখাত করার জন্য হিন্দুস্তান রিপাবলিকান এসোসিয়েশনের নানা বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯২৫ সানের ৯ আগস্ট লখনৌ থেকে ১৪ মাইল দূরে কাকোরি ও আলমনগর স্টেশনের মাঝে একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে চেন তেনে থামিয়ে তাকাসুদ্ধ সিন্দুক সরানো হয়। এ ব্যাপারে যে ১৬ জন অংশ নেন তিনি তাদের অন্যতম।[1] তাদের এই বীরত্বপূর্ণ কাজ কাকোরি বিপ্লব নামে পরিচিত।

রাজেন্দ্র লাহিড়ী
উত্তর প্রদেশের গোন্ডা জেলা জেলখানায় রাজেন লাহিড়ীর ভাস্কর্য
জন্ম২৩ জুন ১৯০১
মোহনপুর, পাবনা জেলা বাংলাদেশ
মৃত্যু১৭ ডিসেম্বর, ১৯২৭
গোন্ডা জেলা জেলখানা, উত্তর প্রদেশ
জাতীয়তাভারতীয়

ফাঁসির পূর্বে গোন্ডা জেল থেকে রাজেন লাহিড়ী এক চিঠিতে লিখেছিলেন, 'প্রভাতের আলোর মতোই মৃত্যু অনিবার্য। তবে কেন মানুষ মৃত্যুকে ভয় করবে, বা তার জন্য শোক করবে?'[2]

জন্ম

রাজেন্দ্র লাহিড়ীর জন্ম পাবনা জেলার মোহনপুরে। তার পিতার নাম ক্ষিতীশমোহন লাহিড়ী। তার পিতার কাছ থেকেই স্বদেশপ্রেমে দীক্ষা পান। উচ্চশিক্ষার জন্য বেনারস হিন্দু বিদ্যালয়ে আসেন। বারাণসীর ক্লাব, জিম্নাসিয়াম ও সাহিত্য বিষয়ক সকল প্রচেষ্টার সঙ্গে তার যোগ ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা সাহিত্য পরিষদের সম্পাদক হন।[1]

পুলিসি নজরদারী

১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ থেকেই তার উপর পুলিসের সতর্ক নজর ছিলো।[3]

কাকোরি বিপ্লবে অংশগ্রহণ

বাঙলার তৎকালীন বিপ্লবীগণ উত্তর প্রদেশে আধুনিক পদ্ধতিতে বোমা প্রস্তুত শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। রাজেন লাহিড়ী সেই উদ্দেশ্যেই কলকাতা গিয়েছিলেন। দক্ষিণেশ্বরের বোমার কারখানাতে গিয়েই তিনি সংবাদপত্রে কাকোরি বিপ্লব সংক্রান্ত গ্রেপ্তারসমূহের সংবাদ পাঠ করেছিলেন। এদিকে বেনারসে তার বাড়ি তল্লাশি করা হয়েছিল এবং তার গ্রেপ্তারের আদেশপত্র বের হয়েছিলো।[3]

মামলার রায়ে সাজা

১৯২৬ সানে কাকোরি বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং এটির বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করে। এই মামলার বিচারে পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিল, রাজেন্দ্র লাহিড়ী, ঠাকুর রৌশন সিং, আসফাকউল্লা খানের ফাঁসি হয়। শচীন্দ্রনাথ সান্যালের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয়। মন্মথ গুপ্তের ১৩ বছর এবং যোগেশচন্দ্র চ্যাটার্জি, গোবিন্দচরণ কর, শচীন্দ্রনাথ বক্সি, মুকিন্দীলাল, রাজকুমার সিং, রামকৃষ্ণ ক্ষেত্রীর ১০ বছর সাজা হয়। এছাড়াও বিষ্ণু শরণ দুব্লিশ, সুরেশচন্দ্র ভট্টাচার্যের ৭ বছর, ভূপেন্দ্রনাথ সান্যাল, রাম দুলারী ত্রিবেদী, প্রেমকিষণ খান্না, বনোয়ারী লাল এবং পরমেশ কুমারের পাঁচ বছরের জেল হয়। এঁরা সকলেই এই অনুশীলন সমিতির সভ্য ছিলেন।[4]

তথ্যসূত্র

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৬৪৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. শৈলেশ দে, মৃত্যুর চেয়ে বড়, বিশ্ববাণী প্রকাশনী; কলকাতা; অগ্রহায়ণ, ১৩৯২; পৃষ্ঠা - ১৫৫।
  3. শংকর ঘোষ, শহীদ আসফাকউল্লা, প্রমিথিউস পাবলিশিং হাউস, ২৪ মার্চ ২০১৩, কলকাতা, পৃষ্ঠা-১৩৮-১৩৯
  4. ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, জেলে ত্রিশ বছর, ধ্রুপদ সাহিত্যাঙ্গন, ঢাকা, ঢাকা বইমেলা ২০০৪, পৃষ্ঠা ১৮৪।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.