মানবেন্দ্রনাথ রায়

মানবেন্দ্রনাথ রায় (২১শে মার্চ, ১৮৮৭ - ২৫শে জানুয়ারি, ১৯৫৪) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা। তার আসল নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। বিপ্লবী কাজ করতে গিয়ে তিনি অসংখ্য ছদ্মনাম গ্রহণ করেন। মি. মার্টিন, মানবেন্দ্রনাথ, হরি সিং, ডা. মাহমুদ , মি. হোয়াইট, মি. ব্যানার্জী ইত্যাদি। তবে এম. এন. রয় নামেই মানবেন্দ্রনাথ রায় সমধিক পরিচিতি। তিনি ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়নের তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন। তিনি সমাজতাত্তিকদের কাছে একজন ‘র‌্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট’ হিসেবে পরিচিত।

মানবেন্দ্র নাথ রায়
২২শে মার্চ, ১৮৮৭ – ২৫শে জানুয়ারি, ১৯৫৪

মানবেন্দ্রনাথ রায
ডাক নাম: নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য
জন্মস্থান: আড়বেলিয়া,২৪ পরগণা জেলা,ব্রিটিশ ভারত
জীবনকাল: ২২শে মার্চ, ১৮৮৭ – ২৫শে জানুয়ারি, ১৯৫৪
আন্দোলন: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, ভারত-জার্মানী ষড়যন্ত্র, কমিউনিজম
প্রধান সংগঠন: যুগান্তর দল, ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টি, মেক্সিকান কমিউনিস্ট পার্টি,University of Toilers

শিক্ষা

পিতা দীনবন্ধু ভট্টাচার্যের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা, তারপর হরিনাভি এংলো ইন্ডিয়ান স্কুলে ভর্তি হন। রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্বর্ধনা জানাতে গেলে স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন। ১৯০৬ জাতীয় বিদ্যাপীঠ থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। যাদবপুর বেংগল টেকনিকাল ইনস্টিটিউট এ ভর্তি।

বিপ্লবী রাজনীতিতে

রাজনৈতিক ডাকাতিতে অংশগ্রহণকারী সন্দেহে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও প্রমাণাভাবে ছাড়া পান। মজফরপুর ও মুরারীপুকুর মামলায় অধিকাংশ কর্মী বন্দি হলে বাঘা যতীনের সংগে গুপ্ত সংগঠন গড়ে তোলার কাজ করেন। ভারত ও ভারতের বাইরে যোগাযোগ করতে থাকেন বিপ্লবোদ্দেশ্যে। রাজনৈতিক ডাকাতিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গার্ডেনরিচ ও বেলেঘাটায়। তাকে বাঁচাতে বিপ্লবী রাধাচরন প্রামানিক জেলেই স্বীকারোক্তি দিয়ে মর্মান্তিকভাবে বিশ্বাসঘাতকের কলঙ্ক নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সি. মার্টিন ছদ্মনামে বাটাভিয়া যাত্রা। জার্মান অস্ত্র ভারতে আসছে জেনে পুলিশ ধরপাকড় শুরু করে। মানবেন্দ্রনাথ তখন গোয়ায়। তার সাথে যোগাযোগের উদ্দেশ্যে বাঘা যতীন বিপ্লবী ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায় কে পাঠান গোয়ায়। তিনি ধরা পড়ে পুলিশের কারাগারে শহীদ হন। ইতিমধ্যে মানবেন্দ্রনাথ ১৯১৫ সালের ১৫ আগস্ট আবার দেশত্যাগ করেন এবং ফিলিপাইন্স চলে যান। ক্রমাগত দেশ বদলে, নাম বদলে জাপানে চলে যান ও রাসবিহারী বসুর সাথে সাক্ষাত হয়। সানফ্রানসিসকোতে তিনি মানবেন্দ্রনাথ ছদ্মনামটি গ্রহণ করেন।

কমিউনিজমের পথে

আমেরিকা থাকাকালীন মার্কসবাদ পড়তে শুরু করেন। সোসালিস্ট ভ্রাতৃসংঘের তিনিই প্রথম ভারতীয় সদস্য। মেক্সিকোতে সোসালিস্ট পার্টি পরিচালিত আন্দোলনে যোগদান এবং মার্ক্সবাদী তাত্বিক হিসেবে বিশেষ পরিচিতি লাভ। মেধা ও বুদ্ধিমত্তার জেরে তিনি লেনিনের দৃষ্টি আকর্ষনে সক্ষম হন। লেনিনের উপনিবেশ বিষয়ক থিসিসের সাথে ভিন্নমত পোষন করে নিজস্ব থিসিস পেশ করেছিলেন। মস্কোয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের তৃতীয় সম্মেলনে যোগদান করেন। অবনী মুখোপাধ্যায়ের সংগে তার যৌথ রচনা 'ইন্ডিয়া ইন ট্রানজিশন' এই সময়ই প্রকাশিত হয়। ১৯২৪ সালে লেনিনের মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট সংগঠনের পক্ষ থেকে চীনে পাঠানো হয় তাকে। বোরোদিনের সাথে মতপার্থক্য হলে চীন থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে নিজের মত বিরোধীতার ফলে তিনি নিন্দিত ও কমিন্টার্ন থেকে বিতাড়িত হন।

ভারতে

নানা অভিযোগে মানবেন্দ্রনাথ রায়কে ১৯২৯ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল থেকে বহিস্কার করা হয়। ১৯৩৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে গঠন করেন "লিগ অব রাডিকেল কংগ্রেসমেন" । ১৯৪০ সালে গঠন করেন রাডিকেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। ১৯৪০ সালে তিনি কংগ্রেসের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। সেই সময় তিনি ও সুভাষচন্দ্র বসু প্রভাত রঞ্জন সরকার এর কাছ থেকে দীক্ষা (আধ্যাত্মিক সাধনা) নেন। মানবেন্দ্রনাথ রায় চাইতেন ভারতের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা । অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারত যদি স্বাধীন হয়, তবেই ভারত প্রকৃত স্বাধীনতা পাবে, এই ছিল তার উপলদ্ধি । কিন্তু সুভাষচন্দ্র চাইতেন কোনো ভাবে ভারত আগে স্বাধীন হোক।

রচনা

মানবেন্দ্রনাথ সারা জীবনে অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছেন। ১৭টি ভাষায় দক্ষতা ছিল। তার রচিত ৬৭ টি গ্রন্থ ও ৩৯ টি পুস্তিকার কথা জানা যায়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'নিউ হিউম্যানিজম' (১৯৪৭) , মাই মেমোয়ার্স (১৯৫৪), রেভলিউশন এন্ড কাউন্টার রেভলিউশন ইন চায়না, রিজন রোমান্টিসিজম এন্ড রেভলিউশন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ইন্ডিয়া ইন ট্রানজিশন' গ্রন্থটি বিপ্লবী অবনী মুখার্জীর সাথে মিলিতভাবে রচিত। শিবনারায়ণ রায়ের সম্পাদনায় Selected Works of M.N.Roy (1932–1936) চারখণ্ডে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.