অবনী মুখোপাধ্যায়

অবনীনাথ মুখোপাধ্যায় ভারতীয় উপমহাদেশের একজন সাম্যবাদী, বিপ্লবী। তিনি ১৯২০ সালে ১৭ অক্টোবর তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন।

অবনী মুখোপাধ্যায়
Abani Mukherjee
অবনী মুখোপাধ্যায়
জন্ম(১৮৯১-০৮-০৩)৩ আগস্ট ১৮৯১
মৃত্যু২৮ অক্টোবর ১৯৩৭(1937-10-28) (বয়স ৫৬)
Moscow, Russian SFSR, Soviet Union
জাতীয়তাভারতীয়
পরিচিতির কারণসাম্যবাদী, বিপ্লবী

জন্ম ও শৈশব

অবনীনাথ মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের আদি নিবাস বাংলাদেশের খুলনায়

স্বদেশী আন্দোলন

কুখ্যাত কার্লাইল ফতোয়া জারি করে ব্রিটিশ সরকার ছাত্র আন্দোলন নিষিদ্ধ করলে ১৯০৫ সালে তার বিরুদ্ধে কিশোর অবনীনাথ একটি জনসভায় যোগ দেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে শাস্তি প্রদান করলে তিনি স্কুল থেকে পালিয়ে জামালপুরের রেল শ্রমিক ধর্মঘটে সামিল হন। অল্প বয়েসেই সান্নিধ্য পেয়েছিলেন প্রবীন কমিউনিস্ট ব্যক্তিত্ব সখারাম গনেশ দেউস্করের। অবনীর পিতা রাজনীতি থেকে দূরে পাঠাতে তাকে আমেদাবাদের টেক্সটাইল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এ পড়তে পাঠান। ১৯১৪ সালে তার বাঘা যতীনের সাথে আলাপ, তারই পরামর্শে চাকরি নিয়ে জাপান যাত্রা করেন জাপানে ও অন্যান্য এশীয় দেশের সশস্ত্র বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগের উদ্দেশ্যে।

বিপ্লব প্রচেষ্টা

টোকিওতে তার দেখা হয় চীন বিপ্লবের হোতা সান ইয়াত-সেনের সাথে, তার সহকর্মী ওয়েসির সাথে রাসবিহারী বসুর আলাপ করিয়ে দেন অবনী। গদর বিপ্লবী ভগবান সিং, অবনী ও রাসবিহারী অস্থায়ী বিপ্লব কমিটি গঠন করেন। জার্মান দূতের সাথে দেখা করে ফেরার পথে বিপ্লবীদের নাম ঠিকানাসহ নোটবই নিয়ে ধরা পড়েন পেনাং পুলিশের হাতে। ১৯১৭ তে সিঙ্গাপুরে তাকে বন্দী করে রাখা হলে কয়েকজন জার্মান যুদ্ধবন্দীর সাথে অবনীনাথ দু:সাহসীক ভাবে পলায়ন করেন। সেখান থেকে সুমাত্রায় এক রবার বাগিচায় কাজ নেন ও গোপনে যোগাযোগ করেন ইন্দোনেশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির সাথে। মানবেন্দ্রনাথ রায়ের মতে সেখানেই তিনি রুশ বিপ্লবের কথা জানতে পারেন ও কমিউনিজমে আকৃষ্ট হন।[1]

সমাজতন্ত্রের পথে

জাল ছাড়পত্রের সাহায্যে শাহির ছদ্মনামে অবনীনাথ এরপর চলে যান হল্যান্ডজার্মানি। বিপ্লবী ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, বীরেন চট্টোপাধ্যায়মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সাথে তার পরিচয় হয়। সাম্যবাদী চিন্তার আলোকে বাইরে থেকে বিপ্লব প্রচেষ্টা ও জাতীয়তাবাদী ও কমিউনিস্ট ইউরোপ প্রবাসী সমস্ত ভারতীয় বিপ্লবীদের সাথে নিয়ে একটি বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলাই ছিল তাদের মূল কর্মসূচী। এসময় ব্রিটিশ সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের খবর আসে অবনী রাশিয়ায়। তারা রাশিয়ার কাছে অবনীকে প্রত্যর্পনের দাবী জানায়।

কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা

১৯২০ সালে ১৭ অক্টোবর তাসখন্ডে ৮ জন সদস্যকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা হলো কমিউনিস্ট পার্টি যার অন্যতম সদস্য অবনীনাথ ও তার পত্নী রোজা ফিটিংগফ। রাশিয়ান রোজা ফিটিংগফকে তিনি বিয়ে করেন ১৯২০ সালে। এরপর অবনী তৃতীয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে মেক্সিকো কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সংগে। ১৯২২ এ রাশিয়ার দুর্ভিক্ষ-ত্রানে ভারতীয় সমিতির তিনি সম্পাদক হন। একই বছর ভারতের স্বাধীনতা বিষয়ে রাশিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে আলোচনা চালান[2]

দেশে প্রত্যাবর্তন

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্বেও ১৯২২ এর শেষে তিনি ভারতে ফেরেন। এ সময় তাকে গঙ্গাপ্রসাদ, চার্লু, মেলেন ইত্যাকার ছদ্মনাম ব্যবহার করতে হয়েছিল। মাদ্রাজে এসে শ্রমিক নেতা সিংগারাভেলু চেট্টিয়ার এবং কলকাতায় বিপ্লবী সন্তোষ কুমার মিত্রআবদুর রেজ্জাক খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এসময় তার কার্যকলাপ বিতর্কিত, আরেক বিপ্লবী নলিনী গুপ্তের সাথে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী উপদলীয় কলহে জড়িয়ে পড়েন। জাহাজের মাধ্যমে জার্মান বিপ্লবী দের সহায়তায় আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়ার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। ফলত তাকে আবার দেশ ছাড়তে হয়। ভারতত্যাগের পূর্বে মাদ্রাজে হিন্দুস্থান শ্রমিক ও কৃষক পার্টির প্রতিষ্ঠা করে যান ১৯২৪ এর ২রা মার্চ[3]

মার্ক্সবাদী গবেষক

মস্কোয় অধ্যাপনার কাজ করেছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় প্রাচ্যতত্ত্ববিদদের সংস্থার সভাপতি হয়েছিলেন। 'ইন্ডিয়া ইন ট্রানজিশন' বইটি মস্কোতে এম এন রায়ের সাথে মিলিতভাবে রচনা করেন। মডার্ন রিভিউ পত্রিকা খ্যাত বিশিষ্ট সাংবাদিক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় প্রবাসী পত্রিকায় লেখেন যে অবনীনাথ ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে গবেষনা করে মস্কো থেকে পি এইচ ডি লাভ করেন। এছাড়া সমরখন্দ সোভিয়েতের ডেপুটি, কমিউনিস্ট একাডেমী বিজ্ঞানের সদস্য, প্রাচ্য বিভাগের সদস্যপদ অলংকৃত করেন। মোপলা বিদ্রোহ সম্বন্ধে অবনী একটি পুস্তিকা লেখেন যা লেনিনের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারে পাওয়া গেছে। এছাড়া ১৯২৩ সালে তিনি 'গরীবের কথা' একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।[4]

ব্যক্তিগত জীবন ও পুত্রের মৃত্যু

বলশেভিক তরুণী রোজা ফিটিংগফের সাথে তার বিবাহ হয় ১৯২০ সালে। কমিউনিস্ট বিপ্লবী ও গবেষক চিন্মোহন সেহানবীশের সাথে মস্কোয় রোজার সাক্ষাত হয়। জানা যায় অবনীর পুত্র গোরা ঐতিহাসিক স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে শহীদ হন ১৯৪০ সালে। মেয়ের নাম মায়া।[3]

মৃত্যু

অবনীনাথ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু রহস্যাবৃত ও চির বিতর্কিত। সন্দেহ করা হয় বুখারিনের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল এই অভিযোগে রাশিয়ান গোয়েন্দা দপ্তরের নির্দেশে তার মৃত্যুদণ্ড হয়।[1][3]

সম্মাননা

১৯৮৬ সালে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব অবনী মুখোপাধ্যায়কে মরনোত্তর সন্মানে পুনর্বাসিত করেন।[1]

তথ্যসূত্র

  1. গৌতম চট্টোপাধ্যায় (১৯৯২)। সমাজতন্ত্রের অগ্নিপরীক্ষা ও ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলন। কলকাতা: পুস্তক বিপনি। পৃষ্ঠা ৮১। আইএসবিএন 81-85471-11-8।
  2. Arun Chandra Guha। Indias Struggle Quarter of Century 1921 to 1946 Part I। Publication Division Ministry of Information।
  3. সংসদ বাংগালী চরিতাভিধান প্রথম খন্ড। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। ২০০২। পৃষ্ঠা ২২। আইএসবিএন 81-85626-65-0।
  4. গৌতম চট্টোপাধ্যায় ও মঞ্জু চট্টোপাধ্যায় (১৯৮০)। সমকালীন বাঙলা ও লেনিন। কলকাতা: মনীষা গ্রন্থালয়। পৃষ্ঠা ৩৭।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.