পরিবেশ নারীবাদ

পরিবেশ নারীবাদ (ইংরেজি: Ecological feminism) একটি বিশেষ দার্শনিক অবস্থান তথা দৃষ্টিভঙ্গী যা সমাজে নারীর ন্যায্য অধিকার ও পরিবেশবিপর্যয় রোধকল্পে পরিবেশের সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে। প্রকৃতির ওপর মানুষের যে নিপীড়ন তার সঙ্গে নারীর ওপর পুরুষতন্ত্রের আধিপত্য ও নিপীড়নের যে সাজুয্য তা পরিবেশ নারীবাদের ভিত্তি। ১৯৭০-৮০’র দুই দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন সভা-সমিতিরে মধ্যে দিয়ে পরিবেশ নারীবাদ-এর ধারণাটি দানা বাঁধে। ফ্রাসোয়াঁ দ্যুবন থেকে শুরু করে ক্যারেন ওয়ারেন, ভাল প্লামউড, মারে বুকচিন, জিম চেনি, বন্দনা শিবা, মারিয়া মাইজ প্রমুখ লেখক ইতোমধ্যে পরিবেশ নারীবাদের প্রবক্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তাদের অনুধাবন ও তাত্ত্বিক অবস্থানের মধ্যে তারতম্য রয়েছে। তবে তাদের অভিন্ন অবস্থানটি হলো পিতৃতন্ত্রের বিরূদ্ধতা —যে পিতৃতন্ত্র প্রকৃতি ও নারী উভয়কে অধস্তন মনে করে ও উভয়ের নিপীড়ন ও শোষণের জন্য দায়ী।[1][2]

ধারণার বিকাশ

ফরাসি নারীবাদী লেখক ফ্রাসোয়াঁ দ্যুবন (Françoise d'Eaubonne) ১৯৭৪ সালে প্রথম পরিবেশ নারীবাদ শব্দটি তার Le Féminisme ou la Mort (বাংলা: নারীবাদ নাকি মৃত্যু) গ্রন্থে ব্যবহার করেন। অর্থের বিভিন্নতা সত্ত্বেও মুলত নারীর প্রতি কর্তৃত্ব ও প্রকৃতির ওপর মানুষের আধিপত্য বিষয়ক মতবাদ। প্রকৃতির সাথে নারীর একাত্মতা ও ঘনিষ্ঠতা পরিবেশ মুল্যায়ন এর একটি দিক। এই মতবাদ অনুযায়ী নারী ও প্রকৃতির ওপর মানুষের আধিপত্য বিস্তারের মাঝে এক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

কিছু নারীবাদী ফ্রাসোয়াঁ দ্যুবনের ধারণার সমালোচনা করেছেন যেখানে মনে করা হয় নারীত্বের কোমল প্রবৃত্তির গুণে পরিবেশ নারীবাদ গড়ে উঠেছে । কিন্তু সৃষ্টির একেবারে প্রথম থেকেই নারীরা প্রকৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে বলেই পরিবেশ সুরক্ষায় পরিবেশ নারীবাদের জন্ম। পাশ্চাত্য পুরুষ শাসিত সমাজে যেমন বিভিন্ন উপগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয় যারা অবহেলিত ও অবদমিত হয়ে থাকে, যেমন নারী, শিশু, দরিদ্র, বর্ণবৈষম্যের শিকার মানবগোষ্ঠী প্রভৃতি; তেমনই প্রকৃতির বুকে নানা প্রাকৃতিক উপাদান যেমন, বায়ুমণ্ডল, স্থলভাগ, জলসম্পদ কিংবা প্রাণীগোষ্ঠী একইভাবে মানবজাতির দ্বারা অবদমিত ও অবহেলিত হয়ে চলেছে । অর্থাৎ প্রাকৃতিক উপাদান সমূহের নির্বিচারে অত্যধিক ব্যবহার মানবগোষ্ঠীকে এক বিষম বিপদের সম্মুখীন করে তুলেছে । এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হল পরিবেশ নারীবাদ । এই মতবাদের যথাযথ প্রয়োগেই পরিবেশ সংরক্ষণ ঘটানো সম্ভব হবে কেননা নারীসুলভ গুণসমৃদ্ধ সমাজ উপযুক্ত রূপে পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি যত্নবান হবে । নারী যেমন সমাজকে স্নেহমমতা, সহযোগিতা ও সহমর্মিতা দিয়ে যত্নে ধরে রাখে, সেভাবেই একমাত্র প্রাকৃতিক পরিবেশকে রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন ঘটানো যাবে।

পুরুষতন্ত্র ও নিপীড়ন

নারী ও নদী

বিভিন্ন তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গী

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:Feminist theory টেমপ্লেট:Environmental humanities টেমপ্লেট:Environmental social science

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.