নিতুন কুন্ডু

নিতুন কুন্ডুু (পুরো নামঃ শ্রী নিত্য গোপাল কুন্ডু ) (৩ ডিসেম্বর, ১৯৩৫ - ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৬)[1] একজন বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী, নকশাবিদ, ভাস্কর, মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্প-উদ্যোক্তা। তিনি সাবাশ বাংলাদেশ, সার্ক ফোয়ারা প্রমূখ বিখ্যাত ভাস্কর্যের স্থপতি। তিনি আসবাবপত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অটবি স্থাপন করেন ও সফলতা লাভ করেন।[2][3] তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৯৭ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।[3]

নিতুন কুন্ডু
শিল্পী নিতুন কুন্ড
জন্ম
শ্রী নিত্য গোপাল কুন্ড

(১৯৩৫-১২-০৩)৩ ডিসেম্বর ১৯৩৫
মৃত্যু১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬(2006-09-15) (বয়স ৭০)
বারডেম, ঢাকা, বাংলাদেশ
জাতীয়তা ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
যেখানের শিক্ষার্থীঢাকা আর্ট কলেজ
পরিচিতির কারণচিত্রাঙ্কন, গ্রাফিক নকশা, ভাস্কর্য
ধরনতেলরঙ, জলরঙ, অ্যাক্রিলিক, এচিং, সেরিগ্রাফ, পেনসিল
পুরস্কারএকুশে পদক

প্রাথমিক জীবন

নিতুন কুন্ডুর জন্ম দিনাজপুরে। তার লেখাপড়ায় হাতেখড়ি ১৯৪২ সালে বড়বন্দর পাঠশালায়। ১৯৪৭ সালে ভর্তি হন দিনাজপুর শহরের গিরিজানাথ হাইস্কুলে। ১৯৫২ সালে তিনি মেট্রিকুলেশন পাস করেন।তিনি পড়ালেখা করেছেন তদানীন্তন ঢাকা আর্ট কলেজে (বর্তমানের চারুকলা ইনস্টিটিউট)। সেখান থেকে তিনি ১৯৫৯ সালে চিত্রকলায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসান ও মরমি শিল্পী সফিউদ্দিন আহমেদের প্রিয় ছাত্র ছিলেন।[4][5]

কর্মজীবন

চিত্রশিল্পী নিতুন কুন্ডু ১৯৫৯ সালে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ‘ডিজাইনার’ হিসেবে। ১৯৬২ সালে ইউনাইটেড স্টেটস ইনফরমেশন সার্ভিসেস (ইউসিস)-এর প্রধান ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৭০ সালে তোপখানা রোডে বিখ্যাত বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিটপীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চাকরি ছেড়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে নিতুন কুন্ডু ১৯৭৫ সালে অটবি লিমিটেড নামক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে তিনি আসবাবপত্র নির্মাণের ব্যবসায় শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে অটবি নামে বর্তমান সময়ের বিখ্যাত শিল্প প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলেন তিনি। অটবির আসবাবপত্র দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং এটি একটি ব্যবসাসফল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ভাস্কর ও আসবাবপত্র ডিজাইনার হিসেবে পরিচিতি পেলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজ করার ব্যাপারেও তিনি আগ্রহী ছিলেন। শিল্পী হওয়ার নেশা ছিল তার মজ্জাগত। শিল্পী হিসেবে তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালে তাকে একুশে পদক প্রদান করে।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নিতুন কুন্ডু কলকাতয় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের জনসংযোগ বিভাগে কাজ করেন। শিল্পী কামরুল হাসানের সাথে মিলে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে পোস্টার ডিজাইন ও অন্যান্য নকশা প্রণয়ন করেন। তার প্রণীত পোস্টারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সদা জাগ্রত বাংলার মুক্তিবাহিনীবাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধা

উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য ও শিল্পকর্ম

সার্ক ফোয়ারা

উল্লেখযোগ্য কাজ

  • ১৯৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধের পোস্টার ডিজাইন
  • স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২-এ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঞ্চ নির্মাণ
  • বিভিন্ন জাতীয় প্রতিযোগিতার ট্রফির নকশা প্রণয়ন ও নির্মাণ
  • জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এর পদকের নকশা
  • প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ-এর নকশা
  • বাংলাদেশ টেলিভিশনের নতুন কুঁড়ি পুরস্কার পদকের নকশা
  • প্রেসিডেন্ট শিশু-কিশোর ফুটবল কাপের নকশা
  • শিল্পমেলা ট্রফির নকশা
  • এশিয়া কাপ ক্রিকেট পুরস্কার পদকের নকশা
  • জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের অভ্যন্তরের লাইটিংয়ের কারুকাজ।

স্বীকৃতি ও পুরস্কার

  • একুশে পদক
  • ডেইলি স্টার-ডিএইচএল শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা পদক
  • জাতীয় চিত্রকলা পুরস্কার ১৯৬৫[6]

দেহাবসান

২০০৬ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর নিতুন কুন্ডু হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে ১৫ই সেপ্টেম্বর সকালে তিনি বারডেম হাসপাতালে মারা যান। ১৬ই সেপ্টেম্বর পোস্তগোলা শ্মশানে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।

তথ্যসূত্র

  1. "শিল্পী নিতুন কুন্ডুর জন্মদিন আজ"Ekushey TV। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২১
  2. http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2010-09-15&ni=33070
  3. সৈয়দ আজীজুল হক। "কুন্ড, নিতুন"বাংলাপিডিয়া। ৬ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২৩, ২০১৪
  4. "নিতুন কুন্ডু"টুনস ম্যাগ। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৪
  5. "স্রষ্টা ও শিল্পী নিতুন কুন্ডু"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২১
  6. http://arts.bdnews24.com/?p=478

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.