তাবলিগ জামাত

তাবলিগ জামাত একটি ইসলাম ধর্মভিত্তিক সংগঠন যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা। [1][2] সাধারণত মানুষকে আখিরাত, ঈমান, আমল-এর কথা বলে তিনদিনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। এর পর যথাক্রমে সাতদিন ও চল্লিশদিন-এর জন্য আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াত-এর কাজে উদ্বুদ্ধ করা হয়ে থাকে। তাবলিগ জামাত-এর মুল ভিত্তি হিসেবে ধরা হয় ৬টি উসুল বা মূলনীতিকে। এগুলো হলো: কালিমা, নামায, ইলমযিকির, একরামুল মুসলিমিন বা মুসলমানদের সহায়তা করা, সহিহ নিয়ত বা বিশুদ্ধ মনোবাঞ্ছা, এবং তাবলিগ[3] বা ইসলামের দাওয়াত।[4][5]

তাবলিগ জামাত
تبلیغی جماعت
২০০৯ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত তাবলিগ জামাতের বার্ষিক ইজতেমা
সেপাঙ সেলানগার, মালয়েশিয়া
 পাকিস্তান
 যুক্তরাজ্য
 মালয়েশিয়া
 দক্ষিণ আফ্রিকা
 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
 শ্রীলঙ্কা
ধর্ম
সুন্নি (ইসলাম)
(প্রধানতঃ দেওবন্দি)
ধর্মগ্রন্থ
কোরআন
ভাষা
Liturgical: আরবি
বাংলাদেশে: বাংলা
পাকিস্তান ও ভারত:উর্দু
যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের: স্ব স্ব স্থানীয় ভাষা

উৎপত্তি

ঢাকা বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে সমবেত মুসুল্লীগণ।

মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়ার জন্য আল্লাহ পৃথিবীতে অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু মুহাম্মদ(সাঃ) আল্লাহর শেষ বাণীবাহক, তার পরে আর কোনো নবী বা রাসূল আসবেন না, তাই মুহাম্মদ(সাঃ) বিদায় হজের ভাষণে মুসলমানদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার দায়িত্বটি দিয়ে যান।[6][7][8] তবে এবিষয়ে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কুরআনেও উল্লেখ আছে:[9]

ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুহাম্মদ(সাঃ)এর মৃত্যুর পর তার আদর্শস্নাত সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীগণের মাধ্যমে ইসলামী জীবন বিধান প্রচার ও প্রসারের কার্যক্রম আরো বিস্তৃতি লাভ করে। [7] কিন্তু মুসলিম শাসকদের ক্ষমতা বিলুপ্তির পর ইসলামী প্রচার কার্যক্রমে ভাটা পড়তে থাকে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য মুসলিম মনীষীদের প্রচেষ্টাও অব্যাহত ছিল। এমনই পরিস্থিতিতে মাওলানা মুহাম্মাদ ইলিয়াস (রহ.) ভারতের দিল্লিতে তাবলিগ জামাতের সূচনা করেন [11] এবং তার নিরলস প্রচেষ্টার ফলে তাবলিগ জামাত একটি বহুল প্রচারিত আন্দোলনে রূপ নেয়।[12][13][14] সারা বিশ্বে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া তাবলিগ জামাতের অন্যতম উদ্দেশ্য।[4][15][16][17][18]

ঢাকার রমনা এলাকায় অবস্থিত কাকরাইল মসজিদ

কাকরাইল মসজিদ

কাকরাইল মসজিদ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কাকরাইল এলাকায় রমনা পার্কের পাশে অবস্থিত একটি মসজিদ। এটি বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের মারকায বা প্রধান কেন্দ্র। ১৯৫২ সালে এই মসজিদটি তাবলিগ জামাতের মারকায হিসেবে নির্ধারিত হয়। মসজিদটির আদি নাম ছিল মালওয়ালি মসজিদ।[19][20]

পরবর্তীতে ১৯৬০এর দশকে তাবলিগ জামাতের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ইঞ্জিনিয়ার মরহুম হাজী আব্দুল মুকিতের তত্ত্বাবধানে তিন তলা মসজিদটি পুনঃনির্মাণ করেন।[21]

বিশ্ব ইজতেমা

ঢাকা বিশ্ব ইজতেমার মুসল্লিগণ-এর একাংশ

বিশ্ব ইজতেমা বা বিশ্ব ইজতিমা হল , তাবলিগ জামাতের বার্ষিক বৈশ্বিক সমাবেশ, যা বাংলাদেশের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তাবলিগ জামাতের এই সমাবেশটি বিশ্বে সর্ববৃহৎ এবং এতে অংশগ্রহণ করেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। 'বিশ্ব ইজতেমা' শব্দটি বাংলা ও আরবি শব্দের সম্মিলনে সৃষ্ট: আরবি 'ইজতেমা' অর্থ সম্মিলন, সভা বা সমাবেশ, একত্রিত হওয়া। সাধারণত প্রতিবছর শীতকালে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়ে থাকে, এজন্য ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসকে বেছে নেয়া হয়।

১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতি বছর এই সমাবেশ নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে।[22] প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-শহর-বন্দর থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং বিশ্বের প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি দেশের তাবলিগি দ্বীনদার মুসলমান জামাতসহ ২৫ থেকে ৩০ লক্ষাধিক মুসল্লি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন বা বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন।[23]

আরও পড়ুন

তথ্যসূত্র

  1. Taylor, Jenny। "What is the Tablighi Jamaat?"the Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১৬
  2. Butt, Riazat (১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১)। "Tablighi Jamaat mosque accused of encouraging Muslim isolationism"The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)।
  3. Howenstein, Nicholas; Dr. Eva Borreguero। "Islamist Networks: The Case of Tablighi Jamaat (ইংরেজি ভাষায়)" (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ জুলাই ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০০৭
  4. যার যা ধর্ম, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ঐতিহ্য, ফেব্রুয়ারি ২০০৯ প্রকাশ। ISBN 984-701-930047-6। অভিধান ভুক্তি: "বিশ্ব ইজতেমা" (পৃ. ৩৪৭) ও "তাবলিগ" (পৃ. ২৫৫)।
  5. Ahmed, "Islamic Fundamentalism in South Asia", 1994: p.513 (ইংরেজি ভাষায়)
  6. “মহানবী”, ডক্টর ওসমান গনী, মল্লিক ব্রাদার্স, কলকাতা; তৃতীয় সংস্করণ ১৯৯১।
  7. "Da‘wah produces converts to Islam, which in turn [increases] the size of the Muslim Ummah [community of Muslims]." (ইংরেজি ভাষায়)
  8. Muhsin Khan, The translation of the meanings of Ṣahih AL-Bukhari, Arabic-English, Volume 5, p. 440. (ইংরেজি ভাষায়)
  9. See, for example, Qur'an ayat (verses) 6:19 and 16:36. (ইংরেজি ভাষায়)
  10. “পবিত্র কোরআনুল করীম” (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তফসীর); মূল অনুবাদ গ্রন্থ: তফসীর মা‘আরেফুল ক্বোরআন, জনাব মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শাফী’ [রহ.]; বঙ্গানুবাদ: মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। সউদী বাদশাহ ফাহ্‌দ কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প (বিনামূল্যে বিতরণযোগ্য)।
  11. Dietrich Reetz, Sûfî spirituality fires reformist zeal: The Tablîghî Jamâ‘at in today's India and Pakistan, Archives de sciences sociales des religions [En ligne], 135 (ইংরেজি ভাষায়) |juillet - septembre 2006, mis en ligne le 01 septembre 2009, consulté le 29 novembre 2014. p 33.
  12. Burton, Fred; Scott Stewart (২৩ জানুয়ারি ২০০৮)। "Tablighi Jamaat: An Indirect Line to Terrorism" (ইংরেজি ভাষায়)। Stratfor Intelligence। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০০৯
  13. Sameer Arshad (২২ জুলাই ২০০৭)। "Tabligh, or the enigma of revival" (ইংরেজি ভাষায়)। Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০০৯
  14. Ahmed, "Islamic Fundamentalism in South Asia", 1994: p.524 (ইংরেজি ভাষায়)
  15. Masoodi, Ashwaq (১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "Inside the Tablighi Jamaat"Live Mint (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৬
  16. Ayoob 2007 (ইংরেজি ভাষায়), পৃ. 135
  17. Jenkins, Philip (২০০৭)। God's continent (ইংরেজি ভাষায়) (illustrated, annotated সংস্করণ)। US: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 340। আইএসবিএন 0-19-531395-X।
  18. Rotar, Igor (২৩ জুন ২০০৭)। "Pakistani Islamic Missionary Group Establishes a Strong Presence in Central Asia" (ইংরেজি ভাষায়)। EurasiaNet। ১৮ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০০৮
  19. হাসান মোহাম্মদ (২০১২)। "তাবলীগ"। সম্পাদনা পরিষদ। বাংলাপিডিয়া (দ্বিতীয় সংস্করণ)। বাংলাদেশ: এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৪
  20. গাজী আব্দুল হাদী (২১ জানুয়ারি, ২০১০)। "তাবলিগ জামাতের কাকরাইল মসজিদ কিছুটা ব্যতিক্রম"। দৈনিক কালের কণ্ঠ অনলাইন সংস্করণ। সংগ্রহের তারিখ 22 January 2014 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  21. গাজী আব্দুল হাদী। "কাকরাইল মসজিদের ইতিহাস ও দাওয়াতি কার্যক্রম"। সাপ্তাহিক দেশসময় ডট কম। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৪
  22. বাংলাপিডিয়া ওয়েব সংস্করণ। বিশ্ব ইজতেমা নিবন্ধ।
  23. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান (জানুয়ারি ২৪, ২০১৪)। "বিশ্ব ইজতিমার উৎপত্তি ও বিকাশ"। প্রথম আলো ডট কম। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৪
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.