জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাস

জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্ভবত পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রাকৃতিক বিজ্ঞান । এর ইতিহাস বিশ্লেষণ করতে গেলে ফিরে যেতে হয় সুপ্রাচীন কালে যখন মানুষ কেবল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা করতে। সেই ধর্মীয় যুগের ছোয়া এখনও জ্যোতিষ শাস্ত্রে পাওয়া যায়। জ্যোতিষ শাস্ত্র দীর্ঘদিন ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাথেই চর্চা করা হতো, পশ্চিমা বিশ্বে ১৭৫০ - ১৮০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই দুইটি শাস্ত্র পৃথক হয়ে যায়। প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা বলতে বুঝাতো খালি চোখে দৃশ্যমান খ-বস্তু যেমন, সূর্য, চন্দ্র, তারা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ। এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো কৃষিভিত্তিক পঞ্জিকা। মূলত দিগন্তের বিভিন্ন অংশে সূর্যের অবস্থানের পরিবর্তন এবং তারাসমূহের আপেক্ষিক অবস্থানের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করতে যেয়েই বর্ষ গণনা পদ্ধতির আবির্ভাব হয়। কোন কোন সভ্যতায় এই জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক উপাত্তসমূহই জ্যোতিষ শাস্ত্রের ভবিষ্যৎ বলায় ব্যবহৃত হতো।

বিজ্ঞানের ইতিহাস
পটভূমি
সমাজ তত্ত্ব
Historiography
Pseudoscience
যুগ অনুসারে
প্রাক পরীক্ষামূলক
প্রাচীন সংস্কৃতিতে
মধ্যযুগে
রেনেসাঁর যুগে
বৈজ্ঞানিক বিপ্লব
বিষয় অনুসারে
প্রাকৃতিক বিজ্ঞান
গণিত
জ্যোতির্বিজ্ঞান
জীববিজ্ঞান
রসায়ন
বাস্তব্যবিজ্ঞান
ভূগোল
পদার্থবিজ্ঞান
সামাজিক বিজ্ঞানসমূহ
অর্থনীতি
ভাষাতত্ত্ব
রাষ্ট্রবিজ্ঞান
মনোবিজ্ঞান
সমাজ বিজ্ঞান
প্রযুক্তি
কৃষিবিজ্ঞান
কম্পিউটার বিজ্ঞান
Materials science
চিকিৎসা শাস্ত্র
বিচরণ সহযোগী পৃষ্ঠাসমূহ
তারিখ
প্রবেশদ্বার
বিষয়শ্রেণীসমূহ

প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তারা এবং গ্রহের মধ্যে পার্থক্য করতে পারতেন, কারণ তারাসমূহ প্রায় শতাব্দীকাল একই অবস্থানে থাকে যেখানে গ্রহসমূহ বেশ কম সময়ের মধ্যেই তাদের স্থান পরিবর্তন করে থাকে।

আদি ইতিহাস

প্রাচীন সংস্কৃতিতে খ-বস্তুসমূহকে দেবতা এবং পবিত্র আত্মার সত্তা দ্বারা চিহ্নিত করা হতো। আর যেহেতু প্রাচীন বিশ্বাসমতে দেবতারা প্রাকৃতিক পরিবর্তন ঘটাতেন তাই এটিই সাধারণ বিশ্বাস ছিল যে এই খ-বস্তুসমূহের আপেক্ষিক অবস্থানের পরিবর্তনের কারণেই বৃষ্টি, খরা, ঋতু এবং জোয়ারের মত ঘটনাসমূহ ঘটে থাকে। এটি সাধারণ্য প্রচলিত ছিল যে সবচেয়ে দক্ষ পেশাদার জ্যোতির্বিদরা হলেন ধর্মগুরু (যেমন, ম্যাগি) এবং তারা যেভাবে স্বর্গের ব্যাখ্যা করতেন তাকে অলৌকিক বলে মনে করা হতো। সুতরাং জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রাচীন ইতিহাসকে বলা যায় জ্যোতিষ শাস্ত্রের ইতিহাস। জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত যেসকল প্রাচীন স্থাপত্য পাওয়া যায় (যেমন: স্টোনহেঞ্জ) তার সবগুলো যে একইসাথে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ের কাজ করতো তা বলাই বাহুল্য।

পৃথিবীর বর্ষপঞ্জিসমূহ তৈরি করা হয়েছিলো সূর্য এবং চন্দ্রের আচরণের উপর ভিত্তি করে। এদের আচরণের মাধ্যমেই যে দিন, মাস এবং বছরের আবর্তন ঘটে তা আমরা আজ ভাল করেই জানি। এই বর্ষপঞ্জিসমূহ কৃষিকাজে প্রভূত সহযোগিতা করতো, কারণ ফসলের ভালো ফলন নির্ভর করে বছরের ঠিক সময়ে এটি লাগানো হলো কি-না তার উপর। তাই কৃষির ইতিহাস শুরুর পরপরই এর প্রয়োজন দেখা দিয়েছিলো। সবচেয়ে পুরনো আধুনিক বর্ষপঞ্জি তৈরি হয়েছে রোমান বর্ষপঞ্জির উপর নির্ভর করে। রোমানরা এক বছরকে বার মাসে এবং প্রত্যেক মাসকে ত্রিশ অথবা একত্রিশ দিনে বিভক্ত করেছিলো। ৪৬ খৃস্টপূর্বাব্দে জুলিয়াস সিজার বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনে এবং এর সাথে অধিবর্ষ যোগ করে।

বাইবেলে মহাবিশ্বে পৃথিবীর অবস্থান এবং তারা ও অন্যান্য গ্রহসমূহের প্রকৃতি নিয়ে বেশ কিছু ভাষ্য রয়েছে। দেখুন: বাইবেলীয় বিশ্বতত্ত্ব

মেসোপটেমিয়া

পশ্চিমা জ্যোতির্বিজ্ঞানের সূচনা ঘটে মেসোপটেমিয়ায়। মেসোপটেমিয়া - শব্দটির অর্থ "নদীসমূহের মধ্যবর্তী ভূমিসমূহ"। এই অঞ্চলটি টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নামক দুইটি নদীর মাঝে অবস্থিত ছিল। এই অঞ্চলেই সুমের, অ্যাসিরিয়া এবং ব্যাবিলনিয়ার মত সুপ্রাচীন সম্রাজ্যসমূহ গড়ে উঠেছিলো। খৃস্টপূর্ব প্রায় ৩৫০০ - ৩০০০ অব্দে সুমেরীয়রা কীলকাকার নামে একধরনের লিখন পদ্ধতি তৈরি করেছিলো। এই সুমেরীয়রা খুব মৌলিক কিছু জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক কাজ করেছিলো। এই কাজগুলো খুব বেশি না হলেও এগুলো ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। সুমেরীয়রা নাক্ষত্রিক ধর্মতত্ত্বের (ভৌতিক ধর্মতত্ত্ব নামেও পরিচিত) গোড়াপত্তন করে। এই ধর্মতত্ত্ব মেসোপটেমীয় পুরাণ এবং ধর্মে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এছাড়া ষাটভিত্তিক একধরনের সংখ্যাপদ্ধতি ব্যবহার করতো যা তাদেরকে খুব বড় বা ছোট সংখ্যাসমূহ উপস্থাপনের কাজে সহযোগিতা করতো। তারাই প্রথম একটি বৃত্তকে ৩৬০ ডিগ্রীতে ভাগ করে এবং তার প্রতিটিকে ৬০ মিনিটে ভাগ করে। আরও তথ্যের জন্য দেখুন: ব্যাবিলনীয় সংখ্যাপদ্ধতি এবং ব্যাবিলনীয় গণিত

বর্তমানকালে চিরায়ত উৎসসমূহ নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে যেয়ে আমরা প্রায়ই ক্যালডিয়ান (Chaldeans) শব্দটি ব্যবহার করি। এই শব্দটি মেসোপটেমিয়ার জ্যোতির্বিদদের বুঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে যারা মূলত জ্যোতিষ শাস্ত্রের চর্চা করতো এবং ধর্মীয় অলৌকিকত্ব প্রদর্শন করে বেড়াতো। এজন্যে ক্যালডিয়ান শব্দটির আরেক অর্থ হচ্ছে: জ্যোতির্বেত্তা বা ভবিষ্যৎ বক্তা

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.