জীববিজ্ঞানের ইতিহাস

জীববিজ্ঞানের ইতিহাস হলো প্রাচীন কাল থেকে ব‍র্তমান সময় পর্যন্ত এই জগতের জীবিত সকল কিছু সম্পর্কিত জ্ঞান৷ আলাদা ভাবে নির্দিষ্ট ক্ষেত্র হিসেবে জীববিজ্ঞানের ধারনা আসে প্রথম প্রায় ১৯শ শতাব্দীতে৷ প্রাচীন কালে জীববিজ্ঞান ছিল মূলত ঔষধের ব্যবহার ওজীব সম্পর্কিত সামগ্রিক জ্ঞান৷অ্যারিস্টটলকে জীববিজ্ঞানের জনক বলা হয়৷

জীববিজ্ঞান শব্দটির ব্যুৎপত্তি

জীববিজ্ঞানের প্রাশ্চাত্য প্রতিশব্দ Biology,যা দুটি গ্রীক শব্দ bios যার অর্থ জীবন,এবং logos যাএ অর্থ জ্ঞান থেকে এসেছে৷ প্রথম ১৮০০ সালে জার্মানীতে ব্যবহৃত হয় এবং পরে ফরাসী প্রকৃ্তিবিদ জঁ-বাতিস্ত দ্য লামার্ক জীবিত বস্তু সংক্রান্ত অনেকগুলি শাস্ত্রের ধারক নাম হিসেবে এতি প্রকাশ করেন পরে ইংরেজ প্রানীবিজ্ঞানী ওশিক্ষাবিদ ট্মাস হেনরি হাক্সলি জীববিজ্ঞানকে একটি একত্রিকারক শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন৷

প্রাচীনকালে জীববিজ্ঞান

প্রাচীন মানুষ তার জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য গাছপালা ও প্রাণীদের সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করত৷ জীববিজ্ঞানের জ্ঞানের প্রথম ধারণা প্রাচীন মানুষের মাথায় আসে ১০০০০বছর আগে। মানুষ প্রথম চাষাবাদ করা শুরু করে এবং পশুপাখিকে পোষ মানানো শুরু করে,সেখান থেকেই মূলত শুরু।

প্রাচীন সভ্যতা মেসোপটেমিয়া,ইজিপ্ট,ভারতীয় উপমহাদেশ,এবং চীন থেকে বিখ্যাত কিছু শল্যচিকিৎসক এবং প্রকৃ্তি বিজ্ঞানী সৃষ্টি হয়ে ছিলেন।যেমন সুস্রুত এবং ঝ্যাং ঝনজিং।এনাদের নিজস্ব পৃথক দর্শন ছিল। তবে আধুনিক জীববিজ্ঞানের মূল এসেছে মূলত প্রাচীন গ্রীক দর্শন থেকে।

প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় জীববিজ্ঞান

প্রাচীন মেসোপটেমিয়ানদের প্রকৃ্তি সম্পর্কেজানার বেশ আগ্রহ ছিল। প্রানী শরীরতত্ত্ব সম্পর্কে তাদের বেশ জ্ঞান ছিল।তবে মেসোপটেমিয়ানরা কিছুটা জাদু বিদ্যার ওপর বিশ্বাসী ছিলো।তারা চিকিৎসার সাথে জাদুবিদ্যার প্রয়োগের ফলে আরোগ্য লাভ হয় বলে মনে করত।পূর্ব সেমিটক সংস্কৃতিতে বংশ পরম্পরায় চিকিৎসা পেশা হিসেবে চলে আসত এবং এটি অত্যন্ত সম্মান জনক পেশা হিসেবে গন্য হত।এই চিকিৎসকেরা নারী বা পূরুষ উভয়ই হতে পারতেন এবং ক্ষত সারিয়ে তোলা থেকে শুরু করে ছোটখাটো শল্যচিকিৎসাও করেছিলেন।প্রাচীন মেসোপটেমিয়ানরা রোগের বিস্তার রোধেও সাফল্য অর্জন করেন।

প্রাচীন চীনের সংস্কৃতি

প্রাচীন চীনারা জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছিলেন যেমন ভেষজবিদ্যা,শরীরতত্ত্ব,রসায়ন,দর্শন ইত্যাদি।চীনা চিকিৎসাবিদ্যা মূলত ইয়িন এবং ইয়ান তত্ত্ব এবং পঞ্চ পর্যায়ের ওপর মূলত আবর্তিত হত। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থশতাব্দীতে জুয়াং জি এর মতো তাওবাদী দার্শনিকেরাও বিবর্তনবাদের ধারনাগুলো সমর্থন করেছিলেন।

প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্য

চিকিৎসা পদ্ধতির অন্যতম একটি শাখা আয়ুর্বেদ এসেছে ভারতীয় সংস্কৃতির মূল বেদ এর একটি ভাগ অথর্ববেদ থেকে,যা খ্রিষ্ট পূ্র্ব প্রায় ১৫০০ সালেরও পূর্বে লেখা হয়ে ছিলো বলে ধারণা করা হয়।আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের অন্যতম একজন পন্ডিত সুশ্রুত রচিত সুশ্রুত সংহিতা প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাপক অবদান রাখেন। এই সকল গ্রন্থে ভ্রূণের ধারনা স্পষ্ট ভাবে দেওয়া হয়েছিলো এবং শল্যচিকিৎসারও বর্ণ্না পাওয়া যায় ।

প্রাচীন গ্রীক ও রোমান ঐতিহ্য

দার্শনিক অ্যারিস্টটল ছিলেন তৎকালিন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী পন্ডিতদের মধ্যে অন্যতম।তিনি প্রকৃ্তিকে বিশদভাবে পর্যবেক্ষন করেন,বিশেষ ভাবে চারপাশের বিশ্বের গাছপালা ও প্রাণীর অভ্যাস এবং বৈশিষ্ট্য যা তিনি শ্রেণিবদ্ধকরণে যথেষ্ট অবদান রাখেন।তিনি প্রায় ৫৪০টি প্রানীপ্রজাতিকে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন এবং কমপক্ষে ৫০টি বিচ্ছিন্ন করেছেন । অ্যারিস্টটলের উত্তরসূরি থ্রিওফ্রাস্টাসও উদ্ভিদ বিদ্যা সম্পর্কে অনেক বই লিখেছিলেন।প্রকৃ্তপক্ষেই এই সময় জীববিজ্ঞানের ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছিলো।সেই সময়ের জীববিজ্ঞানে ব্যাবহৃত অনেক নাম এখনও ব্যাবহৃত হচ্ছে যেমন ফলের জন্য কার্পোস এবং বীজপত্রের জন্য পেরিকার্পিয়ন

মধ্যযুগীয় এবং ইসলামী জ্ঞান

ইবনে-নাফিস, যিনি পালমোনারি এবং করোনারি সংবহন আবিষ্কার করেছিলেন। রোমান সাম্রাজ্যের পতনের ফলে প্রচুর জ্ঞান অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার বা ধ্বংস হতে হয়েছিল, যদিও এই সময়এগুলো সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়ে ছিল। বাইজান্টিয়াম এবং ইসলামী বিশ্বে গ্রীক রচনাগুলির অনেকগুলি আরবিতে অনুবাদ করা হয়েছিল এবং এরিস্টটলের অনেকগুলি রচনা সংরক্ষণ করা হয়েছিল। উচ্চ মধ্যযুগের সময়, কয়েকজন ইউরোপীয় পণ্ডিত যেমন বিঞ্জেনের হিলডগার্ড , আলবার্টাস ম্যাগনাস এবং ফ্রেডেরিক দ্বিতীয় দ্বিতীয় প্রাকৃতিক ইতিহাস নিয়ে লিখেছিলেন।

রেনেসাঁ এবং প্রারম্ভিক আধুনিক বিকাশ

ইউরোপীয় রেনেসাঁ অনুভূতিক প্রাকৃতিক ইতিহাস এবং দেহবিজ্ঞানের উভয় ক্ষেত্রেই প্রসারিত আগ্রহ নিয়ে আসে। ১৫৩৩ সালে, আন্দ্রে ভেসালিয়াস তার দেহের মানব দেহবিজ্ঞান চিকিত্সা দে হিউম্যানি কর্পোরিস ফ্যাব্রিকায় পশ্চিমা চিকিত্সার আধুনিক যুগের উদ্বোধন করেছিলেন, যা মৃতদেহের বিচ্ছিন্নতার উপর ভিত্তি করে ছিল। ভেসালিয়াস ছিলেন একের পর এক অ্যানাটমিস্ট যিনি ধীরে ধীরে ফিজিওলজি এবং চিকিত্সার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাবিদ্যার সাথে শিক্ষাব্রতত্ত্বকে প্রতিস্থাঅটো ব্রুনফেলস , হাইয়ানামাস বক এবং লিওনার্ট ফুকস বন্য গাছপালার উপর ব্যাপকভাবে লিখেছিলেন।

অ্যালব্র্যাচ্ট ডেরার এবং লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মতো শিল্পীরা, প্রায়শই প্রকৃতিবিদদের সাথে কাজ করতেন, এছাড়াও তারা প্রাণী এবং মানুষের দেহের প্রতি আগ্রহী ছিলেন, বিশদভাবে ফিজিওলজি অধ্যয়ন করেছিলেন এবং শারীরবৃত্তীয় জ্ঞানের বিকাশে অবদান রেখেছিলেন। বিশেষত প্যারাসেলসাসের কার্যক্রমে আলকেমি এবং প্রাকৃতিক যাদুবিদ্যার ঐতিহ্যগুলিও জীবিত বিশ্বের জ্ঞানের দাবি তুলে ধরেছিল । জীবাণুবিদরা জৈব পদার্থকে রাসায়নিক বিশ্লেষণের অধীনে রেখেছিলেন এবং জৈবিক এবং খনিজ উভয় ফার্মাকোলজির সাথে উদারভাবে পরীক্ষা করেছিলেন। এটি বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে ( যান্ত্রিক দর্শনের উত্থান) বৃহত্তর পরিবর্তনের অংশ ছিল যা ১৭শতাব্দীতে অব্যাহত ছিল।

সপ্তদশ এবং আঠারো শতক

১৭ এবং ১৮শতকের বেশিরভাগ সময় জুড়ে প্রাকৃতিক ইতিহাসকে সিস্টেমাইজিং , নামকরণ এবং শ্রেণিবদ্ধকরণ। কার্ল লিনিয়াস ১৭৩৫সালে প্রাকৃতিক বিশ্বের জন্য একটি বেসিক টেকনোমি প্রকাশ করেছিলেন (যার বিভিন্নতা তখন থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে) এবং ১৭৫০ এর দশকে তার সমস্ত প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম প্রবর্তন করেছিলেন। নতুন প্রজাতির আবিষ্কার ও বর্ণনা এবং নমুনাগুলির সংগ্রহ বৈজ্ঞানিক ব্যক্তিদের একটি আবেগ এবং উদ্যোক্তাদের জন্য লাভজনক উদ্যোগে পরিণত হয়েছিল; অনেক প্রকৃতিবিদ বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং সাহসিকতার সন্ধানে বিশ্ব ভ্রমণ করেছিলেন।

১৭শতকের গোড়ার দিকে, জীববিজ্ঞানের মাইক্রো-ওয়ার্ল্ড সবে শুরু হয়েছিল। কয়েকজন লেন্সমেকার এবং প্রাকৃতিক দার্শনিক ষোড়শ শতাব্দীর শেষের থেকেই ক্রুড মাইক্রোস্কোপ তৈরি করে আসছিলেন এবং রবার্ট হুক তার নিজস্ব যৌগিক মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে সেমিনাল মাইক্রোগ্রাফিয়া প্রকাশ করেছিলেন১৬৬৫সালে। শেষ পর্যন্ত একক লেন্সের সাথে ২০০গুণ পর্যন্ত ম্যাগনিফিকেশন তৈরি হয়েছিল - বিজ্ঞানীরা শুক্রাণু , ব্যাকটিরিয়া , ইনফুসোরিয়া এবং মাইক্রোস্কোপিক জীবনের নিছক অদ্ভুততা এবং বৈচিত্র্য আবিষ্কার করেছিলেন।

মাইক্রোগ্রাফিয়ায় , রবার্ট হুক এই কর্কের টুকরো জাতীয় জৈব কাঠামোর ক্ষেত্রে সেল শব্দটি প্রয়োগ করেছিলেন, তবে ১৯ শতকে বিজ্ঞানীরা কোষকে জীবনের সার্বজনীন ভিত্তি হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। মাইক্রোস্কোপিক বিশ্বটি যখন প্রসারিত হচ্ছিল, ম্যাক্রোস্কোপিক বিশ্বটি সঙ্কুচিত হচ্ছিল। জন রে এর মতো উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা বিশ্বজুড়ে পাঠানো সদ্য আবিষ্কৃত জীবের বন্যাকে একটি সুসংগত টেকনোমিতে এবং একটি সুসংগত ধর্মতত্ত্ব ( প্রাকৃতিক ধর্মতত্ত্ব )গুলিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করেছিলেন।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.