চেঙ্গিজ খান

চেঙ্গিজ খান (মঙ্গোলীয়: Чингис Хаан ছিঙ্গিস্‌ খ়াং  আ-ধ্ব-ব: [ʧiŋgɪs χaːŋ], ), (১১৬২[1]আগস্ট ১৮, ১২২৭) প্রধান মঙ্গোল রাজনৈতিক ও সামরিক নেতা বা মহান খান, ইতিহাসেও তিনি অন্যতম বিখ্যাত সেনাধ্যক্ষ ও সেনাপতি। জন্মসূত্রে তার নাম ছিল তেমুজিন (মঙ্গোলীয়: Тэмүжин অডিও ফাইল "Temujin.ogg" খুঁজে পাওয়া যায়নি)। তিনি মঙ্গোল গোষ্ঠীগুলোকে একত্রিত করে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের (Екэ Монгол Улус; ১২০৬ - ১৩৬৮) গোড়াপত্তন করেন। নিকট ইতিহাসে এটিই ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সম্রাজ্য। তিনি মঙ্গোলিয়ার বোরজিগিন বংশে জন্ম নিয়েছিলেন। এক সাধারণ গোত্রপতি থেকে নিজ নেতৃত্বগুণে বিশাল সেনাবাহিনী তৈরি করেন।যদিও বিশ্বের কিছু অঞ্চলে চেঙ্গিজ খান অতি নির্মম ও রক্তপিপাসু বিজেতা হিসেবে চিহ্নিত[2] তথাপি মঙ্গোলিয়ায় তিনি বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে সম্মানিত ও সকলের ভালোবাসার পাত্র। তাকে মঙ্গোল জাতির পিতা বলা হয়ে থাকে। একজন খান হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে চেঙ্গিজ পূর্বমধ্য এশিয়ার অনেকগুলো যাযাবর জাতিগোষ্ঠীকে একটি সাধারণ সামাজিক পরিচয়ের অধীনে একত্রিত করেন। এই সামাজিক পরিচয়টি ছিল মঙ্গোল

চেঙ্গিজ খান
মুঘল সাম্রাজ্যের খাগান
(মুঘলদের খান)
রাজত্বকাল১২০৬১২২৭
রাজ্যাভিষেক১২০৬ (কুরুলতাই খেন্তি রাজ্য, মঙ্গোলিয়া এর সময়কালে)
পূর্ণ নামচেঙ্গিস খান
(জন্ম নাম: Temüjin)
traditional script:
উপাধিখান, খাগান
উত্তরসূরিওগেদাই খান
দাম্পত্যসঙ্গীBörte Ujin
Kulan
Yisugen
Yisui
others
সন্তানাদিJochi
Chagatai
ওগেদাই
তোলুই
others
রাজবংশBorjigin
পিতাYesükhei
মাতাHo'elun

বাল্যকাল

বাবা ইয়েসুগেই এবং মা ইয়েলুন উজিনের বড় সন্তান তেমুজিন ১১৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তেমুজিনের জন্মের দিনই বাবা ইয়েসুগেই পুরোনো শত্রু তাতারদের সাথে যুদ্ধে জয়ী হয়ে দুজন বন্দী তাতার নেতাকে বন্দী করে নিয়ে আসেন। তাদের একজনের নাম ছিলো তেমুজিন। যুদ্ধ জয়ের আনন্দে পরাজিত শত্রু নেতার নামে বাবা ইয়েসুগেই ছেলের নাম রাখেন তেমুজিন। ১২০৬ সালে তেমুজিন যখন সমগ্র মঙ্গোলিয়ার খান নির্বাচিত হন তখন নতুন নাম নেন চেঙ্গিস খান। চেঙ্গিস নামের অর্থ হলো universal ruler বা সারা বিশ্বের শাসক। চেঙ্গিস খানের যখন ৯ বছর বয়স তখন তার বাবা ইয়েসুগেই কেরাইট গোত্রের বোরটের সাথে তার বিয়ে ঠিক করেন। বোরটে ছিলো চেঙ্গিসের চেয়ে বয়সে ১ বছরের বড়। মঙ্গোল রীতি অনুযায়ী বিয়েটা ছেলে-মেয়ে সাবালক হওয়ার পরেই হত। বিয়ে ঠিক হওয়ার কিছুদিন পর পুরোনো এক তাতার শত্রু ইয়েসুগুইকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে। নিজ গোত্রের কিছু কুচক্রী লোক বালক চেঙ্গিসের নেতৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করে দলবল সহ মা, ভাই বোন সহ চেঙ্গিসকে গোত্র থেকে বের কর দেয়। এর পরের সাত বছর চেঙ্গিস খানের জীবন ছিলো এক ভয়াবহ কঠিন সংগ্রামের জীবন। মঙ্গোলিয়ার বিস্তীর্ন বিরাণ সমতল ভূমিতে গাছপালার শিকড়-বাকড় আর খরগোশ জাতীয় প্রাণী শিকার করে বেঁচে থাকবার সংগ্রাম। মা'র কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষায় তিনি পরিবারের কর্তার ভূমিকা পালন শুরু করেন। অন্যকে রক্ষা করার বিদ্যা তখনই তার রপ্ত হয় যা পরবর্তীতে কাজে লেগেছিল।

রাজ্য জয়

৪০- ৫০ বছর বয়সের সময় তিনি মঙ্গোল জাতির পত্তন ঘটানোর পর বিশ্বজয়ে বের হন। প্রথমেই জিন রাজবংশকে পরাজিত করেন। চীন থেকেই তিনি যুদ্ধবিদ্যা কূটনীতির মৌলিক কিছু শিক্ষা লাভ করেন। পালাক্রমে দখল করেন পশ্চিম জিয়া, উত্তর চীনের জিন রাজবংশ, পারস্যের খোয়ারিজমীয় সম্রাজ্য এবং ইউরেশিয়ার কিছু অংশ। মঙ্গোল সাম্রাজ্য অধিকৃত স্থানগুলো হল আধুনিক: গণচীন, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, ইরাক, ইরান, তুরস্ক, কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং কুয়েত। চেঙ্গিজ খান ১২২৭ মারা যাওয়ার পর তার পুত্র ও পৌত্রগণ প্রায় ১৫০ বছর ধরে মঙ্গোল সম্রাজ্যে রাজত্ব করেছিল।

ব্যক্তি চেঙ্গিস


চেঙ্গিস তার জীবনে বোরটে ছাড়াও আরও পাঁচজনকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু আর কাউকেই তিনি তার ছোটবেলার ভালবাসা বোরটের মত বোধহয় ভালবাসেননি। তিনি সবসময়ই বোরটের পরামর্শ শুনতেন এবং তা প্রয়োজনে গ্রহণও করতেন। মেরকিটদের কাছে নির্যাতিত সেই দুঃসহ এক বছরের ঘটনা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বোরটের প্রতি তার ভালবাসায় চিড় ধরাতে পারেনি।

চেঙ্গীস খান এবং তার মা জীবনে মোট চার জন ছেলেকে পালক হিসাবে গ্রহণ করেন। মজার ব্যাপার হলো এরা সবাই ছিলো শত্রু গোত্রের ছেলে এবং তাদের সবার বয়স ছিলো খুবই অল্প। মেরকিটদের সাথে যুদ্ধের পর চেঙ্গিস ৫ বছর বয়সী কুচুকে (মেরকিট) নিয়ে এসে তার মাকে দেন। ইয়েলুন ছেলেটাকে পছন্দ করে ফেলেন এবং তাকে তার পালক ছেলে হিসাবে গ্রহণ করেন। পরবর্তী কালে কুচু একজন প্রসিদ্ধ মঙ্গোল জেনারেল হয়েছিলেন। ১১৯৬ সালে চিরদিনের শত্রু তাতার বাহিনীকে জিন রাজ্যের ওয়াং ইয়ানজিনের সহায়তায় যুদ্ধে পরাজিত করে। এই যুদ্ধের পর এক তাতার বালককে নিয়ে এসে মাকে দেন। এই ছেলেকেও ইয়েলুন পালক ছেলে হিসাবে গ্রহণ করেন। এই তাতার বালক শিজি হুতুহু পরবর্তিকালে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সর্বোচ্চ বিচারকের পদটিও চেঙ্গিস খান সৃষ্টি করেছিলেন দেশের আইন কানুন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম চালানোর জন্য। ঝুদের সাথে যুদ্ধে চেঙ্গিস বোয়েরহু নামে আরেকটি ছেলেকে এনে তার মাকে দেন। ইয়েলুন একেও পালক ছেলে হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। বড় হয়ে বোয়েরহু নামকরা যোদ্ধা হয়েছিলো।

চেঙ্গীস খান সাহসী এবং বিশ্বস্ত মানুষদের পছন্দ করতেন এবং বিনিময়ে ফেরৎ দিতেন সেই বিশ্বস্ততা। তিনি মানুষ চিনতে খুব কমই ভুল করতেন। একের পর যাদের তিনি পরাজিত করেছেন পরবর্তীতে তারাই তার বিশ্বস্ত অনুসারীতে পরিনত হয়েছিলো। তাতারদের সাথে যুদ্ধে ঝু গোত্রের যোগ দেবার কথা ছিলো। কিন্তু তারা তা না করে চেঙ্গিস খানের পিছিয়ে পরা সৈন্যদের আক্রমণ করে এবং তাদের সম্পদ লুন্ঠন করে। চেঙ্গিস খান এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাতারদের পরাজিত করেই আবার ঝু’দের আক্রমণ করে এবং পরাজিত করেন। ঝুদের পরাজিত করে চেঙ্গিস খানে সবচাইতে বড় যে পুরষ্কারটি লাভ করেন তার নাম হলো ‘মুহুলাই’। মুহুলাইয়ের সাহসীকতা এবং বীরত্বের জন্য চেঙ্গিস তাকে নিজের দলে নিয়ে নেন। পরবর্তী কালে মুহুলাই কুচুর মতই চারজন বিখ্যাত মঙ্গোল জেনারেলের একজন হন। ১২০২ সালে চেঙ্গিস তায়িচুদের সাথে যুদ্ধে তীরবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন। যুদ্ধের পর ঝিবি নামে এক অসীম সাহসী যোদ্ধা তার কাছে এসে বলেন, ” গতকাল আমার তীরেই আপনি আহত হয়েছিলেন। আপনি যদি আমাকে বাঁচিয়ে রাখেন তবে আমি আপনার দলে যোগ দিতে চাই।” চেঙ্গিস তার সততায় মুগ্ধ হয়ে ঝিবির ইচ্ছা পূরণ করেন। পরবর্তী কালে ঝিবি চারজন বিখ্যাত ভ্যানগার্ডের একজন হয়েছিলো।

প্রথম লিখিত মঙ্গোল ভাষা সৃষ্টির সাথে সাথে চেঙ্গিস তার রাজ্যের জন্য ইয়াসা নামে পরিচিত প্রথম লিখিত আইন বা কোড-অব-ল তৈরী করেছিলেন। উইঘুরদের সাথে যুদ্ধে চেঙ্গিস তাতাঙ্গেরকে বন্দী করেন। তাতাঙ্গের ছিলেন একজন উইঘুর ভাষাবিদ। চেঙ্গিসের আদেশে তাতাঙ্গের উইঘুর ভাষার সাহায্যে লিখিত মঙ্গোল শব্দ সৃষ্টি করেন এবং প্রথমবারের মত লিখিত মঙ্গোলিয়ান ভাষার সৃষ্টি করেন। বর্তমানের মঙ্গোলিয়ান ভাষা সেই লিখিত উইঘুর-মঙ্গোলিয়ান ভাষারই আরও উন্নত সংস্করণ।

তথ্য আদান প্রদান ছিলো চেঙ্গীস খানের সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর একারণে তিনি চালু করেছিলেন ইয়াম (Yam) পদ্ধতির। ইয়াম পদ্ধতির কারণে তার তথ্য বাহকেরা দিনে প্রায় ২০০ মাইলেরও বেশী পথ পাড়ি দিয়ে এক যায়গা থেকে অন্য যায়গায় তথ্য নিয়ে যেতে পারত। এজন্য তিনি বিভিন্ন চেকপোস্ট তৈরী করেছিলেন যেখানে সবসময়ই তথ্য বাহকদের জন্য ঘোড়া, খাদ্য, এবং পানির সুব্যবস্হা থাকত। এর রক্ষাণাবেক্ষনে নিয়োজিত ব্যক্তিরা চাহিবা মাত্র তথ্য বাহকদের এইসব সেবা প্রদান করতে বাধ্য ছিলো। ফলে দূরবর্তী অঞ্চলের মধ্যে সবসময়ই খুব সহজেই যোগাযোগ রক্ষা করতে সমর্থ ছিলেন। অনেক সময় সাধারণ নাগরিকরাও তথ্যবাহকদের তাদের নিজেদের গুরুত্বপূর্ন খবর আদান-প্রদানের কাজে ব্যবহার করতে পারত। তথ্য বহনের এই রাস্তা ধরেই তিনি ব্যবসায় নিয়োজিত দেশী বিদেশী ক্যারাভানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আদেশ দিয়েছিলেন। তার কড়া নির্দেশ ছিলো কেউ যেন এ সমস্ত ক্যারাভান আক্রমণ না করে। এর ব্যত্যয় ঘটলে তার শাস্তি ছিলো ভয়াবহ। আর এর ফলেই সম্ভব হয়েছিলো পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আদান প্রদানের।

মঙ্গোল সম্রাজ্য

তথ্যসূত্র

  1. Rashid al-Din asserts that Genghis Khan lived to the age of 72, placing his year of birth at 1155. The Yuanshi (元史, History of the Yuan dynasty, not to be confused with the era name of the Han Dynasty), records his year of birth as 1165. According to Ratchnevsky, accepting a birth in 1155 would render Genghis Khan a father only at the age of 30, and would imply that at the ripe age of 72 he personally commanded the expedition against the Tanguts. Also, according to the Altan Tobci, Genghis Khan's sister, Temulin, was nine years younger than he; but the Secret History relates that Temulin was an infant during the attack by the Merkits, during which Genghis Khan would have been 18, had he been born in 1155. Zhao Hong reports in his travelogue that the Mongols he questioned did not and had never known their ages.
  2. http://afe.easia.columbia.edu/mongols/history/history.htm

বহিঃসংযোগ

প্রাসঙ্গিক অধ্যয়ন

  • Cable, Mildred and Francesca French. The Gobi Desert (London: Landsborough Publications, 1943).
  • Man, John. Gobi : Tracking the Desert (London : Weidenfeld & Nicolson, 1997) hardbound; (London : Weidenfeld & Nicolson, 1998) paperbound, আইএসবিএন ০-৭৫৩৮-০১৬১-২; (New Haven: Yale, 1999) hardbound.
  • Stewart, Stanley. In the Empire of Genghis Khan: A Journey among Nomads (London: Harper Collins, 2001) আইএসবিএন ০-০০-৬৫৩০২৭-৩.
  • History Channel's biography of Genghis Khan
  • Secret History of the Mongols: The Origin of Chingis Khan (expanded edition) (Boston: Cheng & Tsui Asian Culture Series, 1998) adapted by Paul Kahn, আইএসবিএন ০-৮৮৭২৭-২৯৯-১.
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.