গামোচা

গামোচা অসমীয়া সমাজ জীবনের অতি আদরের বস্ত্ৰ৷ সাধারণত গামোচা চারি দিকে রঙ্গিন সূতায় (বিভিন্ন রঙ্গ থাকে) বোনা একটি সাদা দীর্ঘ কাপড়৷ রেশম সূতা থেকে বিশেষভাবে গামছা তৈরি করা হয় যদিও পাট ইত্যাদি সূতা থেকেও এটা তৈরি করা হয়৷ গামোচা অসমীয়ার বাহিরেও বাঙ্গালি, বিহারী এবং উড়িষ্যার মানুষেরাও ব্যবহার করে, অবশ্য অসমীয়া গামোচার সাথে তাদের গামছার বহু পাৰ্থক্য রয়েছে। তাছাড়া অসমীয়া মানুষেরা গামোচাটিকে এক সাংস্কৃতিক তথা সন্মানের প্ৰতীক হিসাবে ব্যবহার করে কিন্তু অন্য জায়গায় একে শুদুমাত্র নিত্য ব্যবহাৰ্য্য সামগ্ৰী হিসেবেই ব্যবহার হতে দেখা যায়। আসামে গামছা কে ‘”গামোচা’” "গাম্‍চা", "মুক্‍চা" ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।

একটি পূৰ্ণাঙ্গ রূপের গামছা

নামের উৎস

গামোচার নাম এবং উৎপত্তি সম্পৰ্কে কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না৷ সাহিত্যিকভাবে এর অৰ্থ হচ্ছে কোনো বস্ত্ৰ দিয়ে শরীর মোচার কাৰ্য৷ (গা-শরীর + মচ্)৷ ফলে অসমীয়া সংস্কৃতিতে গা-মচা বস্ত্ৰটিকে গামোচা হিচাপে নামকরণ করা হয়েছে৷ এটা নিশ্চিত যে ভারতের অন্য কোন জায়গা থেকে আসামে গামোচা আসেনি বা ভারতের অন্য জায়গায় গামোচার ব্যবহার হতে দেখা যায় না৷ বৰ্তমান থাইল্যান্ডে গামোচার মতো একটি বস্ত্ৰ ব্যবহার করার কথা জানা যায়৷ আসামের ইতিহাসে গামোচা সম্পৰ্কে দুই এটি কথা লিখা আছে৷ ইতিহাসবিদ ড. লীলা গগৈর মতে আহোম সাম্রাজ্যর থেকেই আসামে গামোচার প্ৰচলন হয়৷ এমনকি মহাপুরুষ শঙ্করদেব এর সময়ে গামোচার প্ৰচলন হওয়ার কথা জানা যায়৷ এডওয়াৰ্ড গেইটর 'A History Assam' গ্ৰন্থটিতে গামোচার কথা উল্লেখ করেছেন৷ গ্ৰন্থটি অনুযায়ী ১৭৩৯ সালে একটি গামোচার দাম ছিল ৬ পয়সা৷[2]

ব্যবহার

তাঁতের ফুলের চানেকী
অসমের একটি বস্ত্ৰ বিপনীতে গামোচা পরিহিত একজন বিক্ৰেতা
তাঁতশালয় একজন বধূ

অসমীয়া সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্ৰে গামোচার ব্যবহার হতে দেখা যায়৷ এক কথায় অসমীয়া সমাজ-সংস্কৃতি, রীতি-নীতি সকল ক্ষেত্ৰে গামোচার বিশেষ অবদান আছে৷[2]

  • গামোচা(গামছা)কে দৈনিক কাজে গা-ধোঁয়ার পর শরীর মোছার জন্যে ব্যবহার করা হয়৷
  • নামঘরএ ধর্মীয় কোনো শাস্ত্ৰ ডেকে রাখার জন্যে এটি ব্যবহার করা হয়৷
  • কৃষকেরা এটি কোমরে বেঁধে(টাঙালি) বা কোমরে পড়ার কাপড় হিচসেবে ব্যবহার করে৷
  • নামঘরএ প্ৰাৰ্থনা করার সময় এটি কাঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়৷
  • কোনো সভায় বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সন্মান জানানোর জন্যে গামোচায় সন্মান জানানো হয়৷

প্ৰকার

অসমীয়া সমাজে গামোচার ব্যরহারের ওপর নিৰ্ভর করে একে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়।যেমন:-

  1. পানী-গামোচা
  1. তামোল-গামোচা
  1. বিহুয়ান ইত্যাদি নামে নামকরণ করা হয়৷

আনাকাটা

অসমে প্ৰচলিত গামোচার অন্য একটা রূপ হল আনাকাটা গামোচা। আনাকাটা মানে হচ্ছে যখন গামোচা কাটি ছাড়া তৈরি হয়।এটি সাধারণত বিয়ে শাদিতে ব্যবহার করা হয়।

সাংস্কৃতিক বিশেষত্ব

গামোচায় থাকা ফুলের পাপরি
গামোচা এবং জাপি

অসমীয়া সংস্কৃতিতে গামোচা(গামছা) বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে৷ বিহু, বিবাহ অনুষ্ঠান বা অন্যান্য যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গামোচাকে সন্মানের প্ৰতিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷ অসমের সকল শ্ৰেণীর জাতি গামোচা ব্যবহার করে৷ অসমের বিহু উৎসবের সাথে গামোচার বিশেষ সম্পৰ্ক আছে৷ বিহু নৃত্যের সময়ে যুবকরা গামোচাকে মাথায় বেঁধে বিহু নৃত্যে অংশ গ্ৰহণ করে৷ এজন্যে গামোচাকে বিহুয়ান বলা হয়৷ অন্যদিকে বিবাহ অনুষ্ঠানে সকল ক্ষেত্ৰে গামোচাকে উপহার দেয়ার সাথে সন্মান জানানোর জন্যেও গামোচা ব্যবহার করা হয়৷[2]

আরো দেখুন

তথ্য সূত্র

  1. মৰমৰ দীঘ আৰু চেনেহৰ নাণি দি বোৱা বিহুৱানখন, লেখিকা: দীপশিখা গগৈ, অসমীয়া প্ৰতিদিন, বুধবাৰ, ১১ এপ্ৰিল, ২০১২
  2. http://onlinesivasagar.com/lifestyle/gamosa.html

বহিঃ সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.