কে জি মুস্তফা

কে জি মুস্তফা (১৯২৮-২০১০) একজন বাংলাদেশী সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ভাষা সৈনিক। তিনি বাংলাদেশ সরকার কতৃক একুশে পদকে ভূষিত। তার পুরো নাম খোন্দকার গোলাম মুস্তফা। তিনি ১৯২৮ সালে সিরাজগঞ্জের কুড়িপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম খোন্দকার ওয়াসিউজ্জামান এবং মায়ের নাম তাহিয়াতুন্নেসা।[1]

কে.জি মুস্তফা
জন্ম১৯২৮
সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ
মৃত্যু১৩ মার্চ ২০১০ (৮২ বছর)
পেশাসাংবাদিক, কলামিস্ট
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
শিক্ষাএম.এ (রাষ্ট্রবিজ্ঞান)
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারএকুশে পদক
দাম্পত্যসঙ্গীসাবেরা মুস্তফা
সন্তানশামস মুস্তফা (অর্থনীতিবিদ),
সাবির মুস্তফা (বিবিসি বাংলা প্রধান),
সিপার মুস্তফা (আইনজীবি)

শিক্ষা

কে জি মুস্তফা ১৯৪৪ সালে সিরাজগঞ্জের বনোয়ারীলাল বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ-এ ভর্তি হন কিন্তু পরে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ইন্টারমেডিয়েটে ভর্তি হন এবং ইসলামিয়া কলেজ থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন, ১৯৪৯ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় এসে কে জি মুস্তাফা ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ধর্মঘটের সঙ্গে সহযোগিতা করার কারণে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তৃতীয় আহ্বায়ক হিসেবে গ্রেপ্তার হন।[2] আর 'শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে' বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বি.এ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন

রাজনীতি

কে জি মুস্তফা কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়াশোনার সূত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে পরিচিত হন এবং অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। সেই সুবাদেই মূলত: তিনি রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হন। ১৯৪৮ সালে বামপন্থীদের উদ্যোগে শত পুলিশি বাধা-বিপত্তির মুখে গোপনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ গঠিত হয়। গাজীউল হক, আবদুল মতিন, অলি আহাদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, রাজশাহীর আতাউর রহমান, আমিনুল ইসলাম বাদশা প্রমুখের সাথে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ গঠনের প্রস্তুতিপর্বে তিনিও অংশগ্রহণ করেন।[3] বাংলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি দীর্ঘকাল যুক্ত ছিলেন।

ভাষা সৈনিক

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

রাষ্ট্রদূত

১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত লেবাননে এবং ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কে.জি মুস্তফা।

ব্যক্তিগত জীবন

কে জি মুস্তফার স্ত্রীর নাম সাবেরা খাতুন শামসুন আরা (১৯৩৪-২০১২), যিনি সাবেরা মুস্তফা নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। সাবেরা মুস্তফা ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তাদের তিন সন্তান। যথাক্রমে: শামস মুস্তফা (অর্থনীতিবিদ), সাবির মুস্তফা (বিবিসি বাংলা সার্ভিস এর প্রধান) ও সিপার মুস্তফা (আইনজীবি)।[4]

সাংবাদিকতা

দেশ বিভাগের আগে থেকেই কে জি মুস্তফা পেশা হিসাবে সাংবাদিকতাকে গ্রহণ করেন এবং ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালীন সময়েই কলকাতার দৈনিক আজাদ পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার পরও আজাদ পত্রিকাটি ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। কিছুকাল পরে পত্রিকাটি চলে আসে ঢাকায়। ১৯৪৯ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় এসে কে জি মুস্তাফা ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পুনরায় চাকরি নেন আজাদ পত্রিকায়।[2] পরবর্তীকালে তিনি দৈনিক ইনসাফ, দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ অবজারভার, দৈনিক পূর্বকোণসংবাদ পত্রিকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

নব্বই দশকের শেষদিকে তিনি দৈনিক মুক্তকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পাকিস্তান ফেডারেল জার্নালিস্টস ইউনিয়নের সভাপতি এবং স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।

এছাড়া সাপ্তাহিক ইরাক টুডে ও ডেইলি বাগদাদ পত্রিকার প্রতিনিধি হিসাবেও তিনি কাজ করেন। দেশের সাংবাদিকতার উন্নয়ন ও বিকাশে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সাংবাদিক নেতা হিসাবেও তিনি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।

স্বীকৃতি ও সম্মাননা

কে জি মুস্তাফা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মানজনক একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন।

মুত্যু

কে জি মুস্তাফা ২০১০ সালের ০৮ ফেব্রুয়ারি কিডনীজনিত অসুস্থ্যতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে ছিলেন। তিনি কিডনি ও হৃদরোগ সমস্যাসহ বার্ধ্যক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। একমাস পর চিকিৎসা অবস্থায় ১৩ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[5]

তথ্যসূত্র

  1. "মুস্তফা, কে.জি"। বাংলাপিডিয়া।
  2. জাহীদ রেজা নূর (১৪-০৩-২০১০)। "চলে গেলেন কে জি মুস্তাফা"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ 21 November 2017 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  3. রণেশ মৈত্র (৫ জুলাই ২০১৭)। "৬৮ বছরে আওয়ামী লীগের উত্থান-পতন"। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৭
  4. "Sabera Mustafa passes away"দ্যা ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। এপ্রিল ১৬, ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৭
  5. "প্রবীণ সাংবাদিক কে জি মুস্তাফা আর নেই"বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা। ১৩ মার্চ ২০১০। ২২ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৭
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.