আসহাব উদ্দীন আহমদ

আসহাব উদ্দীন আহমদ (১৯১৪ - ১৯৯৪) একজন বাংলাদেশী লেখক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ ও দক্ষ সংগঠক। তিনি যুক্তফ্রন্টের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য এবং একজন কমিউনিস্ট ছিলেন। চট্টগ্রাম সিটি কলেজ, সাধনপুর পল্লী উন্নয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় মোট ২৭টি গ্রন্থ রচনা করেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০০৫ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক-এ ভূষিত হন।[1]

আসহাব উদ্দীন আহমদ
জন্মআসহাব উদ্দীন আহমদ
১৯১৪
বাঁশখালী, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
মৃত্যু২৮ মে ১৯৯৪(1994-05-28) (বয়স ৭৯–৮০)
সমাধিস্থলবাঁশখালী ডিগ্রী কলেজ, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
পেশালেখক, অধ্যাপক, সম্পাদক
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
শিক্ষাইংরেজি সাহিত্য
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি
  • বিপ্লব বনাব অতি বিপ্লব
  • দ্বিপদ বনাম চতুস্পদ
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারএকুশে পদক
সক্রিয় বছর১৯৪৯১৯৯৪

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা

আসহাব উদ্দীন ১৯১৪ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর গ্রামের সচ্ছল এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[2] তার বাবা মুনশী সফর আলী চৌধুরী ও মা নাসিমা খাতুন। তিনি ১৯৩২ সালে বাণীগ্রাম-সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯৩৪ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৩৬ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ১৯৩৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এমএ পাস করেন।

কর্মজীবন

শিক্ষকতা দিয়ে আসহাব উদ্দীন আহমদ কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি প্রথমে চট্টগ্রাম কলেজ, পরে একে একে তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমান হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজ), লাকসাম নবাব ফয়েজুন্নেসা কলেজ, ফেনী সরকারী কলেজ-এ ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ-এ ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন বেসরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির মুখপত্র 'দি টিচার'-এর সম্পাদক।[3]

রাজনৈতিক জীবন

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন-এর পর থেকে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় উঠেন এবং কলেজের অধ্যাপনা ছেড়ে দেন। মার্ক্সবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে যোগ দেন কৃষক-শ্রমিকদের পাশে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী লীগের (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিপ্লবী রাজনীতির অনুসারী হওয়ায় তাকে পাকিস্তান আমলে এক বছর জেল খাটতে হয়। আইয়ুব খান ক্ষমতায় আসার পর তার রাজনীতি নিষিদ্ধ হয় এবং তার নামে হুলিয়া জারি হয়। ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ডে হুলিয়া মাথায় নিয়ে জীবন কাটাতে হয়। পাকিস্তান সরকার তাকে ধরে দেওয়ার জন্য পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে।[4] ১৯৬৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টি দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেলে তিনি পিকিংপন্থিদের সাথে ছিলেন এবং ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। সেই সময়ে তিনি বিভিন্ন গ্রামে কৃষকদের বাড়িতে তাদের আশ্রয়ে আত্মগোপন করে কাটান। ১৯৮০ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে গণচীন সফর ।এ বছরের শেষের দিকে সক্রিয় রাজনীতি হতে অবসর নেন।

সাহিত্যকর্ম

আসহাব উদ্দীনের লেখালেখির মূল উপাদান ছিল শোষণমুক্তি ও সমাজ পরিবর্তন। ১৯৪৯ সালে তার রচিত প্রথম বই বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর প্রকাশিত হয়। তিনি তার আমার সাহিত্য জীবন বইতে বলেছেন,

আমার লেখায় হাসি-ঠাট্টার ভেতর দিয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও অবিচারকে তুলে ধরা হয়েছে এবং জনগণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিকে প্রচার করা হয়েছে, জনপ্রিয় করা হয়েছে, প্রোপাগান্ডার আকারে নয়, সাহিত্য রূপে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা

আসহাব উদ্দীন চট্টগ্রাম সিটি কলেজ, সাধনপুর পল্লী উন্নয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজ, পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয়, সাতকানিয়া কলেজ এবং রত্নপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।[1]

মৃত্যু

আসহাব উদ্দীন আহমদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৪ সালের ২৮ মে ঢাকার সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজ প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়।[5]

গ্রন্থতালিকা

  • বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর (১৯৪৯)
  • জান ও মান (১৯৫০)
  • ধার (১৯৫৪)
  • বন্দে ভোটারম (Bande Votaram) (১৯৬১)
  • ইন্দিরাদি সমীপেষু
  • সের আনা টাকা মাত্র (১৯৬৮)
  • আওয়ামী লীগের মীর জাফরী ঐতিহ্য (১৯৭০)
  • হাতের পাঁচ আঙ্গুল (১৯৭০)
  • লেখক ও পাচক (১৯৭১)
  • দাড়ি সমাচার (১৯৭১)
  • বিপ্লব বনাব অতি বিপ্লব (১৯৭৪)
  • ভাতের বাংলা কাপড়ের বাংলা (১৯৭৪)
  • বাঁশ সমাচার (১৯৭৪)
  • দ্বিপদ বনাম চতুস্পদ (১৯৭৫)
  • পথ চলিতে
  • মীর জাফরী ঐতিহ্য
  • ইন্দিরা গান্ধীর বিচার চাই (১৯৭৫)
  • উদ্ধার (১৯৭৮)
  • আমার সাহিত্য জীবন (১৯৮০)
  • ডেনজার সিগন্যাল (১৯৮০)
  • ঘুষ (১৯৮৬)
  • উজান স্রোতে জীবনের ভেলা (১৯৯০)
  • দাম শাসন দেশ শাসন (১৯৯১)
  • ভূমিহীন কৃষক কড়িহীন লেখক (১৯৯২)
  • আসহাব উদ্দীন আহমদের সেরা রম্য রচনা সংগ্রহ (১৯৯৪)

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • একুশে পদক (২০০৫, মরণোত্তর)[6]
  • বৌদ্ধ একাডেমি পদক
  • অনুপম পদক
  • চট্টগ্রাম কলেজ প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ পদক
  • আইনজীবি সমিতি পদক
  • বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র পদক, চট্টগ্রাম

তথ্যসূত্র

  1. "প্রফেসর আসহাব উদ্দিন আহমদ ও সাবেক জেলা প্রশাসক এয়ার মোহাম্মদ চৌধুরী স্মরণে সভা"দৈনিক পূর্বকোণ। চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ। জুন ৭, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১৬
  2. "আসহাব উদ্দিন আহমদ"প্রিয় নিউজ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১৬
  3. সলিমুল্লাহ খান (৩১ ডিসেম্বর ২০১৪)। "আসহাব উদ্দীন আহমদের জীবনস্মৃতি: উন্মেষপর্ব"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১৬
  4. হায়দার আকবর খান রনো (১৮ এপ্রিল ২০১৪)। "বিপ্লবী ও সাহিত্যিক আসহাব উদ্দীন আহমদ"দৈনিক আজাদী। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২০১৭-০৪-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১৬
  5. "অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন আহমদের আজ ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী"দৈনিক ইত্তেফাক। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২৮ মে ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১৬
  6. "Face conspiracy with Ekushey spirit - PM urges patriotic citizens, distributes Ekushey Padak"দ্য ডেইলি স্টার। ঢাকা, বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারি ২০, ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৬

গ্রন্থপঞ্জি

  • আসহাব উদ্দীন আহমদ, রচনা সমগ্র, ১ম খণ্ড, আনু মুহাম্মদ ও এনতেজার উদ্দীন আহমদ সম্পাদিত (ঢাকা: মীরা প্রকাশন, ২০০৪)।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.