আসকান দেজাঘা

সায়েদ আসকান দেজাঘা (ফার্সি: اشكان دژآگه, জন্ম ৫ জুলাই ১৯৮৬) একজন ইরানী পেশাদার ফুটবলার,[1][2] যিনি এটাকিং মিডফিল্ডার এবং রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলেন। দেজাঘা ইরানে জন্মগ্রহণ করেন। ১ বছর বয়সে তিনি জার্মানির বার্লিনে চলে যায়। ১৬ বছর বয়সে তিনি জার্মানির নাগরিকত্ব পায়। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত জার্মানির বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন। তবে বর্তমানে তিনি ইরান জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলছেন।

আসকান দেজাঘা
২০১৬ সালে ইরানের হয়ে অনুশীলনে দেজাঘা
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম সায়েদ আসকান দেজাঘা
জন্ম (1986-07-05) ৫ জুলাই ১৯৮৬
জন্ম স্থান তেহরান, ইরান
উচ্চতা ১.৮১ মিটার (৫ ফুট ১১  ইঞ্চি)
মাঠে অবস্থান মিডফিল্ডার
জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের খেলোয়াড়ী জীবন*
বছর দল উপস্থিতি (গোল)
২০০৭-২০০৭ হের্থা ২ ৫৬ (২১)
২০০৪-২০০৭ হের্থা ২৬ (১)
২০০৭-২০১২ উলসবার্গ ১৩১ (১৮)
২০১২-২০১৪ ফুলহাম ৪৪ (৬)
২০১৪-২০১৬ আল আরাবি ৪৫ (৯)
জাতীয় দল
২০০২-২০০৩ জার্মানি অনুর্ধ-১৭ ১০ (৪)
২০০৩-২০০৪ জার্মানি অনুর্ধ-১৮ (২)
২০০৪ জার্মানি অনুর্ধ-১৯ ১১ (৩)
২০০৪-২০০৫ জার্মানি অনুর্ধ-২০ (২)
২০০৫-২০০৯ জার্মানি অনুর্ধ-২১ ২০ (৪)
২০১২ ইরান 38 (7)
  • পেশাদারী ক্লাবের উপস্থিতি ও গোলসংখ্যা শুধুমাত্র ঘরোয়া লিগের জন্য গণনা করা হয়েছে এবং ২৫-১১-২০১৬ তারিখ অনুযায়ী সঠিক।
† উপস্থিতি(গোল সংখ্যা)।

ক্লাব ক্যারিয়ার

হের্থা

দেজাঘা হের্থার হয়ে পেশাদার ফুটবল খেলা শুরু করেন। ২০০৪-০৫ বুন্দেসলিগার সেই অভিষেক ম্যাচে ভিএফএল বোচামের বিপক্ষে ৫ মিনিট খেলেন, ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়। হের্থা ফুটবল ক্লাবের ইতিহাসে তিনি সর্বকনিসঠ ফুটবলার। তিনি হের্থায় প্রথমে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে খেলতো, তবে দ্রুত নিজেকে ফরোয়ার্ড পজিশনে নিয়ে আসে এবং ১২ টি গোল দিয়ে ২০০৫-০৬ মৌসুমে নিজের ক্লাবের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। ২০০৫-০৬ মৌসুমের উয়েফা কাপে ৩ টি ম্যাচ খেলে।

উলসবার্গ

২০০৭ সালে দেজাঘা ভিএফএল উলসবার্গে যোগ দেয়। সে তার ২য় মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ৮ টি গোল দেয়। দেজাঘা তার ক্লাবের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলো। ২০০৯-১০ মৌসুমে তিনি দলের ১ম একাদশে জায়গা হারান। ২০১০-১১ মৌসুমে তিনি আবার দলে নিয়মিত খেলার সুযোগ পায়। এরপর সে ফুলহামে যোগ দেয়। তিনি ছোটবেলা থেকে প্রিমিয়ার লিগে খেলার সপ্ন দেখতেন। দেজাঘা বুন্দেসলিগায় মোট ১৯ টি গোল এবং ২৫ টি এসিস্ট করেন।

ফুলহাম

২০১২-১২ মৌসুম

২০১২ সালের ৩১ আগস্ট দেজাঘা ৩ বছরের চুক্তিতে প্রিমিয়ার লিগের দল ফুলহামে যোগ দেয়। তাকে দলে নিতে ফুলহাম ২.৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে। তিনি প্রিমিয়ার লিগে খেলা ৩য় ইরানী ফুটবলার, তার আগে আন্দ্রেনিক তেয়মৌরিয়ান এবং করিম বাঘেরি প্রিমিয়ার লিগে খেলেছে। ২০ আগস্ট অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে ১-০ গোলে জয় পায়, সেই ম্যাচের শেষ ২০ মিনিট খেলেন তিনি। ১০ নভেম্বর তিনি আর্সেনালের বিপক্ষে ১ম বারের মত ১ম একাদশে জায়গা পায়।

২০১৩-১৫ মৌসুম

দেজাঘা ২০১৩-১৪ মৌসুমের ১ম ম্যাচে লিগ কাপে বারটন এলাবিয়নের বিপক্ষে জয়লাভ করে। ২ নভেম্বর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ১ম লিগ ম্যাচ খেলেন। ৪ ডিসেম্বর টটেনহামের বিপক্ষে মৌসুমের ১ম গোল দেন। ২৬ এপ্রিল হাল সিটির বিপক্ষে 'ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ' নির্বাচিত হন। ফুলহামের সমর্থকদের ভোটে দেজাঘা ফুলহামের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়।

আল আরাবি

২০১৪ সালের ২৯ জুলাই দেজাঘা কাতারের ক্লাব আল আরাবিতে যোগ দেয়। দেজাঘা ১ম মৌসুমে আল আরাবির হয়ে ৫ টি গোল দেন। ২০১৫-১৬ মৌসুমে দেজাঘা আল আরাবি ক্লাবের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার

জার্মানি

২০০৪ সালে দেজাঘা জার্মানি অনুর্ধ-১৯ দলে জায়গা পায়, দেজাঘা ১৫ টি ম্যাচে ৭ টি গোল করার সুবাদে জার্মানি অনুর্ধ-২১ দলে ডাক পায়।

২০০৭ সালে অক্টোবরে দেজাঘা জার্মানি অনুর্ধ-২১ দলের হয়ে তেল আবিবে ইসরাইলের বিপক্ষে খেলেনি। তিনি এই ঘটনাকে নিজের ব্যাক্তিগত বিষয় বলে জানান। দেজাঘা বলেন "এখানে রাজনৈতিক ব্যাপার রয়েছে। সকলেই জানে আমি একজন জার্মান-ইরানিয়ান, আমার শিরায় জার্মান রক্তের চেয়ে ইরানী রক্ত বেশি রয়েছে, যাই হোক আমার পিতামাতা ইরানীয়। আরও বলেন "আমি ইসরাইলের বিপক্ষে না, তবে পরবর্তিতে ইরান সফর নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারি। তার এই সিদ্ধান্তে ব্লিড (জার্মানির সর্বোচ্চ বিক্রীত পত্রিকা), রোনাল্ড পোফাল্লা এবং ফ্রাইডবার্ট ফ্লবার্গ (খ্রিস্টান ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য) এবং চার্লট ব্লোচ (সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ জিউসের প্রেসিডেন্ট) প্রতিবাদ করে। পরবর্তিতে দেজাঘা একটি সাক্ষাৎকারে জানায় ইসরাইলের সাথে না খেলার কারণ 'ইরান বিপ্লব'। একজন ইরানীয় হিসেবে ইসরাইলে গেলে ইরান সরকার তাকে কারাবন্দি করত। ইরান বিপ্লবের পর সরকার সকল ইরানীয় খেলোয়াড়দের ইসরাইলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে।

দেজাঘা পরবর্তিতে ইসরাইল বিষয়ে বৈঠকে বসে। দেজাঘা জানায় তার ইরানের নাগরিকত্ব রয়েছে, তিনি ইরানের আইন অনুযায়ী ইসরাইলের বিপক্ষে খেলবে না এবং ইরানের নাগরিকত্ব বাতিল করবে না। ফলে জার্মানি ফুটবল দল থেকে বাদ পড়ে।

ইরান

যেহেতু জার্মানির হয়ে বয়সভিত্তিক ফুটবল খেলছে, সেহেতু ফিফার নিয়ম অনুযায়ী ইরানের হয়ে খেলতে পারবে না। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে ফিফা এই নিয়ম পরিবর্তন করে বিধায় দেজাঘা ইরানের হয়ে খেলার সুযোগ পায়। ডিসেম্বরে ইরানের কোচ আফশিন ঘোটবি কাতারে অনুষ্ঠিত ২০১১ এএফসি এশিয়ান কাপের জন্য দেজাঘাকে দলভুক্ত করে। তবে টুর্নামেন্ট খেলার জন্য তার ক্লাব উলসবার্গ তাকে ছাড়েনি।

২০১১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ইরান জাতীয় দলে পুনরায় ডাক পায়। ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি কাতারের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে জোড়া গোল দেন। ইরানের কোচ কার্লোস কুইরোজ ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপের জন্য দেজাঘাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করে। তিনি বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ৭৩ মিনিট সময়ে বদলি হিসেবে নামেন। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৮৫ মিনিটে এবং বসনিয়ার বিপক্ষে ৬৮ মিনিট খেলেন।

২০১৫ সালের ১২ নভেম্বরে অধিনায়ক আন্দ্রেনিক তেয়মৌরিয়ানের অনুপস্থিতে ইরানকে নেতৃত্ব দেন। ঐ ম্যাচে তুর্কিমেনিস্তাকে ৩-১ গোলে হারায় ইরান।

তথ্যসূত্র

  1. "Ashkan Dejagah – Player Profile"। premierskills.britishcouncil.org। ১৮ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩
  2. "German Jews Offended: Iranian-Born German Soccer Player Refuses to Play Israel"। spiegel.de। ৯ অক্টোবর ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১৪

৩.  "Fulham Sign Dejagah" Fulham F.C. 31 August 2012. Retrieved 1 September 2012.

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.