অ্যাডিলেড

অ্যাডিলেড (ইংরেজি: Adelaide) অস্ট্রেলিয়ার সাউথ অস্ট্রেলিয়া (দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া) অঙ্গরাজ্যের রাজধানী শহর। জনসংখ্যার বিচারে এটি সমগ্র অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ৫ম বৃহত্তম শহর (সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন ও পার্থের পর)। ২০১৭ সালের জুন মাসের হিসাব অনুযায়ী অ্যাডিলেড শহরে ১৩ লক্ষেরও বেশি লোক বাস করে।[1] অ্যাডিলেড শহরে সাউথ অস্ট্রেলিয়া অঙ্গরাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ বাস করে; ফলে অস্ট্রেলিয়ার সমস্ত অঙ্গরাজ্যের মধ্যে এই রাজ্যের জনসংখ্যাই সর্বাধিক কেন্দ্রীভূত।

অ্যাডিলেড
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া
উপর থেকে নিচে, বাম থেকে ডানে: কেন্দ্রীয় অ্যাডিলেড (লফটি পর্বত থেকে তোলা), ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ভবন, সেন্ট পিটারস ক্যাথেড্রাল (সন্তু পিতরের মহাগির্জা), সমুদ্রসৈকতের সন্নিকটস্থ গ্লেনিল্‌গ উপশহর, এল্ডার পার্ক উদ্যানের একটি রোটান্ডা বা বৃত্তাকার বসার জায়গা, এবং সন্ধ্যায় আলোকিত ভিক্টোরিয়া চত্বর
ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক৩৪°৫৫′৪৪″ দক্ষিণ ১৩৮°৩৬′৪″ পূর্ব
জনসংখ্যা১৩,৩৩,৯২৭ (২০১৭)[1] (৫ম)
 • জনঘনত্ব৪০৯.৪৬৯/km2 (১,০৬০.৫২0/sq mi) (2011)
প্রতিষ্ঠার তারিখ২৮ ডিসেম্বর ১৮৩৬ (1836-12-28)
আয়তন৩,২৫৭.৭ বর্গ কি.মি.(১,২৫৭.৮ বর্গমাইল)[2]
সময় অঞ্চলACST (UTC+9:30)
 দিবালোক সংরক্ষণ সময়ACDT (UTC+10:30)
লর্ড মেয়র অফ অ্যাডিলেড (নগরপাল)স্যান্ডি ভারশুর
অবস্থান
  • মেলবোর্ন[3] থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে ৬৫৪ কি.মি. (৪০৬ মা.) দূরে
  • ক্যানবেরা[4] থেকে পশ্চিম দিকে ৯৫৮ কি.মি. (৫৯৫ মা.) দূরে
  • সিডনি[5] থেকে পশ্চিম দিকে ১,১৬১ কি.মি. (৭২১ মা.) দূরে
  • ব্রিসবেন[6] থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ১,৬০০ কি.মি. (৯৯৪ মা.) দূরে
  • পার্থ[7] থেকে পূর্ব দিকে ২,১৩০ কি.মি. (১,৩২৪ মা.) দূরে
রাজ্য নির্বাচনী এলাকাAdelaide
গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বার্ষিক বৃষ্টিপাত
22.4 °সে
72 °ফা
12.3 °সে
54 °ফা
543.7 মি.মি.
21.4 ইঞ্চি

অ্যাডিলেড শহরটি ফ্লোরিও উপদ্বীপের উত্তরে, অ্যাডিলেড সমভূমির উপরে অবস্থিত। এর একপাশে ভারত মহাসাগরের সেন্ট ভিনসেন্ট উপসাগর, অপর পাশে নিম্ন উচ্চতার লফটি পর্বতমালা শহরটিকে ঘিরে রেখেছে। শহরটি সমুদ্র উপকূল থেকে পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং উত্তর প্রান্তের গলার (Gawler) এলাকা থেকে দক্ষিণে সেলিকস সৈকত পর্যন্ত এটি প্রায় ৯৪ থেকে ১০৪ কিলোমিটার দূরত্ব ধরে প্রসারিত হয়েছে। নগরের মধ্য দিয়ে টরেন্স নদী প্রবাহিত হয়েছে।

অ্যাডিলেড শহরটিকে যুক্তরাজ্যের রাজা ৪র্থ উইলিয়ামের রাণী অ্যাডিলেডের (জাক্‌স-মাইনিঙেনে থেকে আগত) নামে নামকরণ করা হয়। শহরটিকে ১৮৩৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার একটি ব্রিটিশ প্রদেশের রাজধানী হিসেবে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়। অ্যাডিলেডের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন কর্নেল উইলিয়াম লাইট শহরটির নকশা করেন এবং টরেন্স নদীর কাছে শহরটির অবস্থান নির্বাচন করেন, যেখানে আদিবাসী কাউরনা জাতির লোকেরা বাস করত। লাইট শহরটিকে বর্গজালিকার মত করে সাজান, যাতে অনেক বৃক্ষশোভিত রাজপথ বা বুলেভার্ড এবং বড় বড় নাগরিক চত্বর ছিল এবং গোটা শহরটিকে অ্যাডিলেড পার্কল্যাণ্ড উদ্যানটি ঘিরে রেখেছিল। ইতিহাসের প্রথম পর্যায়ে অ্যাডিলেড ছিল একটি সমৃদ্ধ ও ধনবান শহর। ২য় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত এটি অস্ট্রেলিয়ার ৩য় বৃহত্তম শহর ছিল। অপরাধীদের উপনিবেশ নয়, এরকম গুটিকয়েক অস্ট্রেলীয় শহরের মধ্যে অ্যাডিলেড একটি।[8][9] অ্যাডিলেড শহরটি অন্যান্য শহরের তুলনায় ধর্মীয় স্বাধীনতা, রাজনৈতিক উদারপন্থার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা এবং নাগরিক স্বাধীনতার ব্যাপারগুলিতে এগিয়ে ছিল।[10] ১৯শ শতকের মধ্যভাগ থেকে এটি "গির্জার শহর" ("City of Churches") হিসেবে পরিচিত; এই তকমাটি অ্যাডিলেডের মানুষের ধর্মপরায়ণতা নয়, বরং তাদের ধর্মীয় বৈচিত্র্যকে নির্দেশ করে।[11] অ্যাডিলেডের অধিবাসীদেরকে স্থানীয় ইংরেজি ভাষাতে "অ্যাডিলেডিয়ান" ("Adelaidean") নামে ডাকা হয়।[12][13]

অ্যাডিলেড সাউথ অস্ট্রেলিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রশাসনিক ও আর্থ-বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এই ভবনগুলি শহরের কেন্দ্রে নর্থ টেরেস রাজপথ ও কিং উইলিয়াম সড়কের উপরে এবং মহানগর এলাকার বিভিন্ন অংশে অবস্থিত। বর্তমানে অ্যাডিলেড এর বহুসংখ্যক উৎসব, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, উঁচুমানের খাবার ও ওয়াইন, দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত, এবং এর বৃহৎ প্রতিরক্ষা ও শিল্পোৎপাদন খাতের জন্য পরিচিত। শহরটির জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত উচ্চ। এটি প্রায়ই বিশ্বের সেরা ১০টি বাসযোগ্য শহরের তালিকাতে স্থান পায়, যে তালিকাটি দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকী প্রতি বছর ১৪০টি শহরের উপর প্রকাশ করে থাকে।[14][15][16][17][18] ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ সালে প্রপার্টি কাউন্সিল অফ অস্ট্রেলিয়া অ্যাডিলেডকে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরের মর্যাদা দান করে।[19][20][21] অ্যাডিলেডে ইলেকট্রনিক, মোটরগাড়ীর সরঞ্জাম, শিল্প যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক পদার্থ, বস্ত্র ও প্লাস্টিকের পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অ্যাডিলেড বন্দরে জাহাজ নির্মাণের সুবিধাদি বিদ্যমান। অ্যাডিলেডের উত্তর-পূর্বাংশে ৫০ কিলোমিটার (৩০ মাইল) দূরে অবস্থিত বারোসা উপত্যকায় মদ উৎপাদন করা হয়। উল্লেখযোগ্য স্থান হিসেবে - বোটানিকাল গার্ডেন্স, গভর্নমেন্ট হাউজ, ন্যাচারেল হিস্ট্রি মিউজিয়াম (প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর)। ১৮৭৪ সালে অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৯১ সালে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

তথ্যসূত্র

  1. "33218.0 - Regional Population Growth, Australia, 2016-17"Australian Bureau of Statistics। ২৪ এপ্রিল ২০১৮। ১ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৮
  2. "2011 Census Community Profiles, Code 4GADE (GCCSA)"। Australian Bureau of Statistics। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
  3. "Great Circle Distance between ADELAIDE and MELBOURNE"। Geoscience Australia। মার্চ ২০০৪।
  4. "Great Circle Distance between ADELAIDE and CANBERRA"। Geoscience Australia। মার্চ ২০০৪।
  5. "Great Circle Distance between ADELAIDE and SYDNEY"। Geoscience Australia। মার্চ ২০০৪।
  6. "Great Circle Distance between ADELAIDE and Brisbane"। Geoscience Australia। মার্চ ২০০৪।
  7. "Great Circle Distance between ADELAIDE and Perth"। Geoscience Australia। মার্চ ২০০৪।
  8. A History of the Faculty of Arts at the University of Adelaide 1876-2012University of Adelaide Press। ২০১২। পৃষ্ঠা 245। আইএসবিএন 978-1-92206436-3।
  9. Troy, Patrick (২০০০)। A History of European Housing in Australia। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 188। আইএসবিএন 978-0-521-77733-9।
  10. "Progressive Adelaide"BBC। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৭
  11. Religion: Diversity ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ আগস্ট ২০১৩ তারিখে, SA Memory. Retrieved on 23 December 2010.
  12. Salt, Bernard (২৭ মার্চ ২০১১)। "Adelaide's European twin"Sunday Mail। Adelaide: News Limited। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১১[...] the Adelaideans could withdraw to vantage points within the city centre [...]
  13. "On your bike, Adelaide"Adelaidean। Adelaide: University of Adelaide। ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৬It could be argued that Adelaideans are easily influenced by all things wheels [...]
  14. "Liveability rankings"The Economist
  15. "404"। ২৪ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  16. "Liveability ranking"The Economist
  17. "Daily chart"The Economist line feed character in |কর্ম= at position 5 (সাহায্য)
  18. "Archived copy" (PDF)। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৮ অজানা প্যারামিটার |archive- url= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  19. "Adelaide crowned nation's most livable city"ABC News Online। Australian Broadcasting Corporation। ২২ জানুয়ারি ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১১
  20. "Adelaide voted nation's most liveable"AdelaideNow। ২৫ মার্চ ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০১২
  21. "Adelaide the country's most liveable city"The Sydney Morning Herald। ৪ মার্চ ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৩

আরও পড়ুন

  • Kathryn Gargett; Susan Marsden, Adelaide: A Brief History Adelaide: State History Centre, History Trust of South Australia in association with Adelaide City Council, 1996 আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭৩০৮-০১১৬-০
  • Susan Marsden; Paul Stark; Patricia Sumerling, eds, Heritage of the City of Adelaide: an illustrated guide Adelaide: Adelaide City Council, 1990, 1996 আইএসবিএন ৯৭৮-০-৯০৯৮৬৬-৩০-৩
  • Derek Whitelock et al., Adelaide: a sense of difference Melbourne: Arcadia, 2000 আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৭৫৬০-৬৫৭-৬

বহিঃসংযোগ


টেমপ্লেট:Adelaide landmarks

টেমপ্লেট:South Australia টেমপ্লেট:Capital cities of Australia

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.