বাপ্পী লাহিড়ী
আলোকেশ বাপ্পি লাহিড়ি (ইংরেজি: Alokesh Bappi Lahiri) (জন্মঃ ২৭ নভেম্বর, ১৯৫২) হিন্দী চলচ্চিত্র শিল্প-সহ বাংলা গানের অন্যতম জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপক পরিচিত ব্যক্তিত্ব।[1] এছাড়াও, সঙ্গীত জগতে তিনি বাপ্পী-দা নামেও সমধিক পরিচিত। তিনি নিজের লিখিত অনেকগুলো গান স্বকণ্ঠে ধারণ করেছেন। ১৯৮০'র দশকে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র বিশেষ করে ডিস্কো ড্যান্সার, নমক হালাল এবং শরাবী'র ন্যায় বিভিন্ন চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন।
বাপ্পি লাহিড়ি | |
---|---|
![]() ২০১৭ সালে বাপ্পী | |
জন্ম | অলোকেশ লাহিড়ী ২৭ নভেম্বর ১৯৫২ জলপাইগুড়ি,পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
পেশা | সঙ্গীত পরিচালক, সঙ্গীত শিল্পী |
কার্যকাল | ১৯৭২–বর্তমান |
দাম্পত্য সঙ্গী | চিত্রানী লাহিড়ী |
সন্তান | রেমা লাহিড়ী বাপ্পা লাহিড়ী |
পিতা-মাতা |
|
সঙ্গীত কর্মজীবন | |
উদ্ভব | কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত |
ধরন | চলচ্চিত্র সঙ্গীত, থিয়েটার, ডিসকো, রক, পপ, ক্ল্যাসিকাল |
বাদ্যযন্ত্রসমূহ | তবলা, পিয়ানো, ড্রামস, গিটার, ঢোল |
লেবেল | বিএল সাউন্ড, সারেগামা, টি-সিরিজ, ভেনাস রেকর্ডস এন্ড টেপস, টিপস ইন্ডাস্ট্রীজ, ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ |
ওয়েবসাইট | bappilahiri.com |
শৈশবের দিনলিপি
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে সমৃদ্ধ এক পরিবারে বাপ্পী-দা/বাপ্পী লাহিড়ি জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম আলোকেশ বাপ্পী লাহিড়ি। বাবা অপরেশ ল্যাহড়ী ছিলেন একজন বাংলা সঙ্গীতের জনপ্রিয় গায়ক। মা বাঁশরী লাহিড়িও ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ ও গায়িকা যিনি শাস্ত্রীয় ঘরাণার সঙ্গীত এবং শ্যামা সঙ্গীতে বিশেষ পারঙ্গমতা দেখিয়েছিলেন। তাদের পরিবারেরই একমাত্র সন্তান ও উপমহাদেশের কিংবদন্তিতুল্য সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব বাপ্পী লাহিড়ি।
খুব ছোট বেলা থেকেই তিনি আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি ও জনপ্রিয় হবার লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হবার ইচ্ছে পোষণ করতেন। তিন বছর বয়সেই তবলা বাজাতে শুরু করেন। তার মায়ের আত্মীয় হিসেবে ছিলেন - বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী কিশোর কুমার এবং এস. মুখার্জী। পিতা-মাতার সান্নিধ্যে থেকেই তিনি সঙ্গীতকলায় হাতে খড়ি ও প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি ১৯ বছর বয়সে দাদু (১৯৭২) নামক বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পান।
ব্যক্তিগত জীবন
সঙ্গীত শিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক বাপ্পী ল্যাহড়ী বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক। সংসারে তার স্ত্রী - চিত্রাণী, কন্যা - রিমা এবং পুত্র - বাপ্পা রয়েছে। অলঙ্কারের অত্যন্ত ভক্ত হিসেবে যথেষ্ট পরিচিতি ও সুনাম রয়েছে বাপ্পী ল্যাহড়ী'র। সাধারণতঃ তিনি পোশাকের সাথে স্বর্ণের অলঙ্কার এবং কালো চশমা পরিধান করতেই বেশি ভালবাসেন ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বিখ্যাত সংগীত শিল্পী কিশোর কুমার সম্পর্কে তার মামা হন।
সঙ্গীত জীবন
১৯ বছর বয়সে মুম্বাইয়ে স্থানান্তরিত হন বাপ্পী-দা। ১৯৭৩ সালে হিন্দী ভাষায় নির্মিত নানহা শিকারী ছবিতে তিনি প্রথম গীত রচনা করেন। তার সঙ্গীত ভুবনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় তাহির হুসেনের জখমী (১৯৭৫) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এতে তিনি গীত রচনাসহ গায়কের দ্বৈত ভূমিকায় অংশ নেন। অসম্ভব কিছু নয় শিরোনামে মোহাম্মদ রফি এবং কিশোর কুমারের সঙ্গেও দ্বৈত সঙ্গীতে অংশ নেন বাপ্পী-দা। তার পরের চলচ্চিত্র হিসেবে চালতে চালতে ছবিটির গানও দর্শক-শ্রোতাদের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। রবিকান্ত নাগাইচের সুরক্ষা ছবিতে গান গেয়ে সঙ্গীতকার হিসেবে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে আরোহন করেন।
মিঠুন চক্রবর্তী'র ডিস্কো নাচের চলচ্চিত্রগুলোতে বাপ্পী-দা ছিলেন একজন সুযোগ্য সঙ্গীত পরিচালক। ১৯৮০'র দশকের ভারতীয় ডিস্কো সংস্কৃতিতে মিঠুন চক্রবর্তী এবং বাপ্পী ল্যাহড়ী ছিলেন একে-অপরের পরিপূরক। এছাড়াও, তিনি দক্ষিণ ভারত থেকে পরিচালিত অনেক হিন্দী চলচ্চিত্রের গানে অংশ নিয়েছেন সমান তালে। সমগ্র ভারতবর্ষে তিনি নিজেকে 'ডিস্কো কিং' নামে পরিচিতি লাভে সমর্থ হন।
বাপ্পী-দা ভারতীয় চলচ্চিত্র জগৎ থেকে ১৯৯০'র দশকে দূরে সরে যান। প্রকাশ মেহরা'র 'দালাল' ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তী'র জন্য স্বল্প সময়ের জন্য ফিরে আসেন। গুটুর গুটুর গানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রটি বিরাটভাবে দর্শকদের মন জয় করে। গানে তিনি যথোপযুক্ত শব্দ প্রয়োগ ও সঙ্গীত পরিচালনায় যথেষ্ট দক্ষতা দেখিয়েছেন।
গানের ধাঁচ
বাপ্পী ল্যাহড়ী ভারতীয় চলচ্চিত্রে ও ভারতীয় ধাঁচে ডিস্কো সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য পথিকৃৎ হয়ে আছেন। তার রচিত গানগুলো কিশোর কুমার এবং আশা ভোঁসলে'র নৈপথ্য কণ্ঠ সঙ্গীতের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের পর্দায় এসেছে। বিজয় বেনেডিক্ট এবং শ্যারন প্রভাকরকেও তিনি সঙ্গীত শিল্পে অভিষেক ঘটান। এছাড়াও তিনি আলিশা চিনয় এবং ঊষা উত্থাপকে তার সুরের ধারায় শিক্ত করতে ব্যবহার করেছেন।
সঙ্গীত পরিচালনা
বাপ্পী রচিত সঙ্গীতগুলো বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সেগুলো হলোঃ এক বার কহো (১৯৮০); সুরক্ষা; ওয়ারদাত; আরমান; চলতে চলতে; কমাণ্ডো; ইলজাম; পিয়ারা দুশমন; ডিস্কো ড্যান্সার; ড্যান্স ড্যান্স; ফিল্ম হি ফিল্ম; সাহেব; টারজান; কসম পয়দা করনে ওয়ালে কি; ওয়ান্টেড: ডেড অর এলাইভ; গুরু; জ্যোতি; নমক হালাল; শরাবী (১৯৮৫: ফিল্মফেয়ার সেরা সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার); এইতবার; জিন্দাগী এক জুয়া; হিম্মতওয়ালা; জাস্টিস চৌধুরী; নিপ্পু রাব্বা; রোদী ইন্সপেক্টর; সিমহাসনম; গ্যাং লিডার; রৌদী অল্লাদু; ব্রহ্মা; হাম তুমহারে হ্যায় সনম এবং জখমী।
এছাড়াও তিনি মালায়ালম চলচ্চিত্র (কেরালা) দ্য গুড বয়েজ ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।
নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী
এছাড়াও, বাপ্পী লাহিড়ী নিজের লিখিত বেশ কিছু গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তেমনি কিছু উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয় গানের তালিকা নিম্নে দেয়া হলোঃ-
রাহি হু মে (ওয়ান্টেড: ডেড অর এলাইভ); বোম্বাই সে আয়া মেরা দোস্ত (আপ কি খাতির); মৌসম হ্যায় গানে কা (সুরক্ষা); তুম জো ভি হো (সুরক্ষা); তু মুঝে জান সে ভি পিয়ার হ্যায় (ওয়াদাত); ইয়াদ আ রাহা হ্যায় (ডিস্কো ড্যান্সার); সুপার ড্যান্সার (ড্যান্স ড্যান্স); দেখা হ্যায় ম্যায়নে তুমহে ফির সে পলাতকে (ওয়ারদাত); দিল মে হে তুম (সত্যমেব জয়তে); জে লা লা (টারজান); বাম্বাই নাগারিয়া (ট্যাক্সি নং ৯২১১)
হিন্দী চলচ্চিত্রে ডিস্কো ঘরণার গীত প্রচলনের পূর্বে তিনি বেশকিছু চীরস্মরণীয় গান রচনা করেছেন। সেগুলো হলো -
চলতে চলতে মেরে ইয়ে গীত ইয়াদ রাখনা; দিল সে মিলে দিল, দিল সে মিলে দিল (দিল সে মিলে দিল); মুসকুরাতা হুয়া (লাহো কে দো রং); চার দিন কি জিন্দেগী হ্যায় (এক বার কাহো); ধীরে ধীরে সুবহ হুয়ে (হৈসিয়াত); মান হো তুম (তুতে খিলোনে); তেরী ছোটি সি ভুল (শিক্ষা); ইয়ে নায়না ইয়ে কাজল (দিল সে মিলে দিল); গাও মেরে মন (আপনে পরায়ে); পিয়া হি জিনে কি (আরমান); পিয়ার মাঙ্গা হ্যায় তুমহি সে; কে পাগ ঘুঙ্গরাও বান্ধ মিরা নাচি থি।
শুধুমাত্র ডিস্কো সঙ্গীতের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেননি বাপ্পী লাহিড়ী। বেশ কিছু গজল গানও রচনা করেছেন তিনি। সেগুলো হলোঃ-
কিসি নজর কো তেরা ইন্তেজার আজ ভি হ্যায় (এইতবার); আওয়াজ দি হিয়া (এইতবার)।
বহিঃসংযোগ
- প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে Bappi Lahiri (ইংরেজি)
- Unofficial fan club of Bappida
- Bappi Lahiri on SaReGaMaPa Challenge 2007
- Documentation of songs Bappi Lahiri copied or used as "inspiration"
- The song Nothing is Impossible from Zakhmee(1975)