বাকু
বাকু (আজারবাইজানি ভাষায়: Bakı) আজারবাইজানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। শহরটি আজারবাইজানের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে আবসেরোন উপদ্বীপে কাস্পিয়ান সাগরের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। শহরটির কাছেই কাস্পিয়ান সাগরে অনেকগুলি তৈলক্ষেত্র রয়েছে। তৈল পরিশোধন তাই শহরটির প্রধান শিল্প। বাকুর নিকট থেকে উৎসারিত পাইপলাইন দিয়ে সুপসা, জর্জিয়া, নভোরসিয়িস্ক ও রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগর-তীরবর্তী বন্দরগুলিতে এবং তুরস্কের ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর সেইহানে তেল সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও বাকুতে লোহার কেবল, তুলা, চামড়া ও খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত কারখানা আছে।
বাকু Bakı | ||
---|---|---|
Capital city | ||
![]() ![]() Clockwise: Details of the façade of the Ismailiyya building, Philharmony Fountain in front of the Magomayev Philharmonic Hall, a vessel on the Bay of Baku, the city skyline and the Maiden Tower | ||
| ||
ডাকনাম: বাতাসের শহর | ||
![]() ![]() বাকু ![]() ![]() বাকু ![]() ![]() বাকু ![]() ![]() বাকু | ||
স্থানাঙ্ক: ৪০°২৩′৪৩″ উত্তর ৪৯°৫২′৫৬″ পূর্ব | ||
Country | ![]() | |
সরকার | ||
• Mayor | Eldar Azizov | |
আয়তন[1] | ||
• Capital city | ২১৪০ কিমি২ (৮৩০ বর্গমাইল) | |
উচ্চতা | {{formatnum:−২৮ মিটার (� ফুট)|R}} | |
জনসংখ্যা (2015 (estimate))[2] | ||
• Capital city | ২২,৬২,৬০০ | |
• জনঘনত্ব | ১০৫৭/কিমি২ (২৭৪০/বর্গমাইল) | |
• পৌর এলাকা | ২৭,৯৫,০০০[3] | |
• মহানগর | ৪৬,৭০,৭৪০ | |
বিশেষণ | Bakuvian[4] আজারবাইজানি: Bakılı | |
সময় অঞ্চল | AZT (ইউটিসি+4) | |
Postal code | AZ1000 | |
এলাকা কোড | (+994) 12 | |
যানবাহন নিবন্ধন | 10–90-99 AZ | |
ওয়েবসাইট | www | |
প্রাতিষ্ঠানিক নাম | Walled City of Baku with the Shirvanshah's Palace and Maiden Tower | |
ধরন | Cultural | |
মানক | iv | |
অন্তর্ভুক্তির তারিখ | 2000 (24th session) | |
রেফারেন্স নং | 958 | |
Endangered | 2003–2009 | |
দেশ | আজারবাইজান | |
অঞ্চল | ইউরোপ ও এশিয়া |
ইতিহাস
বাকু শহরের সবচেয়ে প্রাচীন এলাকাটি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং এর নাম ইচেরি শেহ্র অর্থাৎ ভেতরের শহর। ২০০০ সালে ইউনেস্কো ইচেরি শেহ্রকে একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে মর্যাদা দেয়। এই এলাকাটিতে জরুথুষ্ট্র, সসনিয়, আরবি, পারসিক, শির্বানি, উসমানীয় ও রুশ সংস্কৃতির চিহ্ন বহনকারী স্থাপত্য ও বসতিবিন্যাসের এক অদ্বিতীয়, দুর্লভ সম্মিলন ঘটেছে। ইচেরি শেহ্রের প্রতিরক্ষা প্রাচীরগুলি ১২শ শতকে নির্মিত হয়েছিল। এখানকার সরু ঘোরানো রাস্তাগুলি দিয়ে অনেকগুলি ঐতিহাসিক স্থানে যাওয়া যায়, যাদের মধ্যে আছে ১২শ শতকে নির্মিত একটি মিনার, উপকূলের কাছে অবস্থিত একটি বড় পাথরের দুর্গ, ১৫শ শতকে নির্মিত শির্ভান শাহ প্রাসাদ (বর্তমানে একটি জাদুঘর), এবং ১১শ শতকের সিনিক-কালা মিনার ও মসজিদ। ইচেরি শেহ্রের প্রাচীরের বাইরে পাহাড়ের ঢালে কাস্পিয়ান সাগরের দিকে মুখ করে অনেক আধুনিক দালানকোঠা গড়ে উঠেছে। আধুনিক বাকু শহরের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে আছে ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বাকু সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, একটি অপেরা ভবন, এবং অনেকগুলি নাট্যমঞ্চ ও জাদুঘর। ১৯৬৭ সালে শহরে একটি পাতাল রেল ব্যবস্থা চালু করা হয়।
প্রাচীনকালে রেশম পথের উপর অবস্থিত একটি বন্দর ও বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে বাকুর গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে এটি পারস্য সাম্রাজ্যের অংশে পরিণত হয়। ৭ম শতকের শেষ পর্যায়ে আরবেরা অঞ্চলটি দখল করে এবং সেখানে ইসলাম প্রবর্তন করে। ১২শ শতকের শুরুর দিকে বাকু শিরভান রাজ্যের শাসক শাহদের রাজধানীতে পরিণত হয়। কিন্তু সেলজুক ও মঙ্গোলেরা ক্রমাগত তাদের ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা চালায়। ১৫শ শতকে শির্ভান শাহেরা বাকুতে একটি বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করেন। ১৬শ শতকের শুরুতে বাকু সাফাভিদ রাজত্বের অধীনে আসে। সাফাভিদেরা ইরান শাসন করতেন। ১৭২৩ সাল পর্যন্ত বাকু সাফাভিদদের দখলে ছিল। ঐ বছর রুশেরা শহরটি দখলে নেয়। ১৭৩৫ সালে শহরটি সাফাভিদদের ফেরত দেয়া হয়, কিন্তু শিঘ্রই তাদের পতন ঘটে এবং বাকুতে একটি তুর্কি মুসলিম খানাত প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮০৬ সালে বাকুকে আবারও রুশ সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। ১৮৭০-এর দশকে এখানে বড়-আকারের তেল উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ১৯শ শতকের শুরুতে শহরটি রাশিয়ার প্রায় সমস্ত তেলের সরবরাহ করত। রাশিয়ার তেল শিল্পের কেন্দ্র হিসেবে বাকু দ্রুত শিল্পায়িত হয় এবং এখানকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। শহরে প্রচুর রুশ ও আর্মেনীয় অভিবাসী হন এবং শহরের জনগণ জাতিগতভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৯০৫ সালে শহরের আজারবাইজানি ও আর্মেনীয় জাতির লোকদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
১৯১৮ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত বাকু স্বাধীন আজারবাইজানের রাজধানী ছিল। স্বাধীন আজারবাইজান ছিল সোভিয়েত রাশিয়ার বলশেভিক শাসনের বিরোধী। ১৯২০ সালে সোভিয়েতরা শহরটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। ১৯২২ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত বাকু নবসৃষ্ট আন্তঃককেশীয় সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ছিল। এরপর এটি আজারবাইজান সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের রাজধানী হয়। ১৯৯১ সালে আজারবাইজান একটি স্বাধীন দেশে পরিণত হলে বাকু এই নতুন রাষ্ট্রেরও রাজধানী হয়। ১৯৯৪ সালে বাকু সন্ত্রাসী হামলা ও সরকারবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তেল শিল্পের প্রসারের সাথে সাথে শহরটির দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটেছে।
ভূগোল
বাকু ক্যাস্পিয়ান সাগরের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। শহরের আশেপাশে প্রচুর গলিত আগ্নেয়গিরি (কেরাকী, বোগখ-বোগখা, লোকবাতান এবং অন্যান্য) এবং লবণের হ্রদ (বায়ুশোর, খোদাশান ইত্যাদি) রয়েছে।
জনসংখ্যা
১৯৮৮ সাল অবদধি রুশ, আর্মেনীয় এবং ইহুদি জনগোষ্ঠী বাকুর অনেক বড় অংশ ছিল যা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে অবদান রেখেছিল এবং বাকুর ইতিহাসে বিভিন্ন উপায়ে (সংগীত, সাহিত্য, স্থাপত্য এবং প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি) যুক্ত করেছিল। কারাবাখ যুদ্ধের সূচনা এবং ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে আর্মেনিয়ানদের বিরুদ্ধে পোগ্রোম শুরু হওয়ার সাথে সাথে, শহরের বিশাল আর্মেনিয়ান জনগণকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কমিউনিজম আগ্রাসনের অধীনে সোভিয়েতরা বাকু ও কুবার বেশিরভাগ ইহুদি সম্পত্তি দখল করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে আজারবাইজানীয় রাষ্ট্রপতি হায়দার আলিয়েভ বেশ কয়েকটি সিনাগগ এবং সোভিয়েতদের দ্বারা জাতীয়করণ করা একটি ইহুদি কলেজ ইহুদি সম্প্রদায়কে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি এই ভবনগুলি পুনরুদ্ধার করতে উত্সাহিত করেছিলেন এবং আজারবাইজানের ইহুদিদের নিকট এটি বেশ পছন্দ করেছে। ১৮৯৬ সালে নির্মিত গিলাহ সিনাগগ এবং বৃহৎ ক্রুয়েই সিনাগগ সহ মূল ১১টি সিনাগগের নতুনভাবে সংস্কার শুরু হয়েছে।
বাকুর মহানগরে বহু সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে। বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায় হল মুসলমান। মুসলমানদের বেশিরভাগই শিয়া মুসলিম, এবং আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র ইরানের পরে বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিয়া জনসংখ্যার দেশ। শহরের উল্লেখযোগ্য মসজিদগুলির মধ্যে রয়েছে জুমা মসজিদ, বিবি-হায়াবত মসজিদ, মুহাম্মদ মসজিদ এবং তাজা পীর মসজিদ।
দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে আরো কিছু ধর্মবিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদে আজারবাইজান একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে রয়েছে রুশ অর্থোডক্স খ্রিস্টান, ক্যাথলিক লেভানটাইনস, জর্জিয়ান অর্থোডক্স খ্রিস্টান, লুথারানস, আশকানাজি ইহুদি এবং সুফি মুসলমানরা।
জোরোস্ট্রু্বাদ যদিও বর্তমান সময়ের মধ্যে এই শহরের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও বিলুপ্ত হয়েছে, তারপরে আজারবাইজান এবং জোরোস্ট্রিয়ান নববর্ষ (নওরোজ) শহরে এবং অন্যান্য অঞ্চলে প্রধান ছুটির দিন ও উৎসব হিসাবে এখনও পালিত হয়।
শিক্ষা
বাকু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, জুনিয়র কলেজ এবং ভোকেশনাল স্কুল রয়েছে। বাকু স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়, আজারবাইজানের প্রথম প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়, এটি ১৯১৯ সালে আজারবাইজান ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক সরকার চালু করেছিল। সোভিয়েত শাসনামলের প্রথম দিকে, বাকুতে আজারবাইজান স্টেট অয়েল একাডেমি, আজারবাইজান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং আজারবাইজান স্টেট ইকোনমিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যেমন আজারবাইজান কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়, আজারবাইজান ভাষা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আজারবাইজান আর্কিটেকচার এবং নির্মাণ বিশ্ববিদ্যালয়।
বাকুর দৃশ্যাবলি
- বাকুর কাছে উপসাগর
- পুরাতন শহর (বাকু)
- অপেরা
- মুসা নাগিয়েভের প্রাসাদ, বর্তমানে বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃতpalace nowadays
- আজারবাইজানের জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি (ইসমাইলিয়া)
- মেইডেন মিনার
- রাত্রীকালীন মেইডেন মিনার
- পুরাতন শহর এবং সোভিয়েত আমলের ভবন
- পুরাতন বাকু শহরে যাওয়ার দরজা
- ইয়ট ক্লাব
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- "Administrative, density and territorial units and land size by economic regions of Azerbaijan Republic for January 1. 2007"। ২৪ নভেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০০৯।
- "CIA World Factbook"। ৭ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৮।
- Demographia: World Urban Areas ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মে ২০১৮ তারিখে – Demographia, 2016
- Thomas de Waal (২০১০)। The Caucasus: An Introduction। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 16। আইএসবিএন 0-19-975043-2।