১৯৮৯ তিয়েনআনমেন স্কয়ারে বিক্ষোভ

১৯৮৯ তিয়েনআনমেন স্কয়ারে বিক্ষোভ বেইজিংয়ে ছাত্রদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়। চীনে সচরাচর এ বিক্ষোভটি ৪ঠা জুনের ঘটনা[1] বা ’৮৯-এর গণতান্ত্রিক আন্দোলন নামে পরিচিত।[1] ১৯৮৯-এর বসন্তে এ বিক্ষোভকে শহরে বসবাসকারী অধিবাসীগণ ব্যাপকভাবে স্বাগতঃ জানায়। চীনের রাজনৈতিক নেতৃত্বও ব্যাপকভাবে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে। অনমনীয় নেতৃবর্গ রাজধানীতে সামরিক আইনজারী করে এ বিক্ষোভকে জোরপূর্বক দমন করেন।[2][3] ৩-৪ জুনে বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্মমভাবে অগণিত হত্যাযজ্ঞ পরিচালিত হয়। এতে সেনাবাহিনী অ্যাসাল্ট রাইফেল ও ট্যাঙ্ক ব্যবহার করে। এ হত্যাযজ্ঞটি তিয়েনআনমেন স্কয়ার গণহত্যা বা ৪ জুন গণহত্যা নামে পরিচিত।

১৯৮৯ তিয়েনআনমেন স্কয়ারে বিক্ষোভ
১৯৮৯ চীনা গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এর অংশ
তারিখ১৫ এপ্রিল, ১৯৮৯ – ৪ জুন, ১৯৮৯
(১ মাস, ২ সপ্তাহ ও ৬ দিন)
অবস্থান
বেইজিং
দেশব্যাপী ৪০০ শহর
কারণ
  • হু ইয়াওবাংয়ের মৃত্যু
  • অর্থনৈতিক পুণর্গঠন
  • মুদ্রাস্ফীতি
  • রাজনৈতিক দূর্নীতি
  • আর্থিক কেলেঙ্কারী (ঝাও জিয়াংয়ের ও দেং জিয়াওপিংয়ের পুত্ররা)
  • কর্মসংস্থান
  • পূর্ব ইউরোপে সামাজিক অস্থিরতা
  • নানজিংয়ে আফ্রিকা-বিরোধী বিক্ষোভ
লক্ষ্যসমূহ"দূর্নীতিমুক্ত কমিউনিস্ট পার্টি", সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা
প্রক্রিয়াসমূহঅনশন, রাস্তায় বসা, সরকারী জায়গা দখল
ফলাফল
  • ৩ জুন, ১৯৮৯ তারিখ থেকে বেইজিংয়ের নির্দিষ্ট এলাকাগুলোয় সামরিক আইন প্রয়োগ (ঘোষণা: ২০ মে ১৯৮৯ (1989-05-20) – ১০ জানুয়ারি ১৯৯০ (1990-01-10), ৭ মাস ও ৩ সপ্তাহ)
  • বিক্ষোভকারী (মূলতঃ কর্মী) ও দাঙ্গাকারী কর্তৃক পিএলএ বাহিনীকে বাঁধাদান এবং বেইজিং ও তিয়েনআনমেন স্কয়ারের আশেপাশে পিএলএ কর্তৃক শতশত থেকে হাজার হাজার সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যু, অগণিত আহত
  • তিয়েনআনমেন স্কয়ারের অভ্যন্তরে অনির্ভরযোগ্য সূত্রে স্বল্পসংখ্যক বিক্ষোভকারীর মৃত্যু
  • ৩ জুনের মৃত্যুর পর দাঙ্গাকারী কর্তৃক ৪ জুন স্বল্পসংখ্যক সৈনিকের মৃত্যু
  • বিক্ষোভে নেতৃত্বকারী ও গণতন্ত্রীপন্থী কর্মীদেরকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান অথবা কারাগারে প্রেরণ
  • পরের মাসগুলোয় কিছু দাঙ্গাকারীকে অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ফাসীকাষ্ঠে ঝোলানো
  • চাও চিয়াংকে বরখাস্ত
  • চিয়াং স্যমিনের পদোন্নতি
  • গণচীনের উপর পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক অবরোধ ও অস্ত্রবাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা
  • বাজার পুণর্গঠনে বিলম্ব
  • গণমাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ কঠোর
  • রাজনৈতিক পুণর্গঠন স্থগিত
নাগরিক সংঘাতের দলসমূহ
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি
চীন সরকার
পিপলস লিবারেশন আর্মি
পিপলস আর্মড পুলিশ
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
কারখানার কর্মী
বেইজিংয়ের অধিবাসী
বুদ্ধিজীবী
গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারী
পুণর্গঠনবাদী
নেতৃত্ব দানকারীগণ

শক্ত অবস্থানকারী

  • দেং জিয়াওপিং
  • লি ফাং
  • ইয়াং শাংখুন
  • ইয়াও ইলিন
  • লি সিমিং
  • ছেন সিথুং
  • ছি হাওথিয়েন
  • লিউ হুয়াছিং

মধ্যপন্থী

  • ঝাও জিয়াং
  • হু কিলি
  • ইয়ান মিংফু
  • বাও তং
  • দেং লিকুন
  • ওয়ান লি
  • জুন কিনজিয়ান

ছাত্রনেতা

  • উ-আরখাইসি
  • ছাই লিং
  • কং ছিংতুং
  • ওয়াং তান
  • শেন থুং
  • লিউ কাং
  • ফাং সুংতে
  • ওয়াং হুই
  • লি লু

বুদ্ধিজীবী

  • লিউ সিয়াওবো
  • ওয়াং চুনথাও
  • তাই ছিং
  • হোউ ত্যচিয়েন
  • সুই চিয়েন
ক্ষয়ক্ষতি
নিহত২৪১-২,৬০০
আহত৭,০০০-১০,০০০

প্রেক্ষাপট

১৫ এপ্রিল, ১৯৮৯ সালে চীনের সাবেক কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব ও উদারবাদী রাজনৈতিক ও অর্থনীতি পুণর্গঠনকারী হু ইয়াওবাংয়ের মৃত্যুকে ঘিরে এ বিক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে থাকে।[4] তার স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা শোভাযাত্রা সহকারে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে একত্রিত হতে থাকে।[5] মুদ্রাস্ফীতি, চাকুরীর সীমিত সুযোগ ও পার্টির অভ্যন্তরে দূর্নীতির বিরুদ্ধে হু সোচ্চার ছিলেন।[6] বিক্ষোভকারীরা সরকারের স্বচ্ছতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, শিল্প-কারখানায় নিয়োজিত কর্মীদের অধিকারের বিষয়েও দাবী তোলে।[7] বিক্ষোভের চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রায় এক মিলিয়ন লোক সমবেত হয়েছিলেন। অধিকাংশই বেইজিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল।

হত্যাকাণ্ড

শুরুতে সরকার বিক্ষোভকারীদের প্রতি নমনীয় ভূমিকায় ছিল।[8] ছাত্ররা অনশনের ডাক দেয় ও দেশের বিভিন্ন অংশে তাদের সমর্থনে প্রতিবাদ সভা চলতে থাকে। মে মাসের মাঝামাঝিতে চার শতাধিক শহরের বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।[9] এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনের অবিসংবাদিত নেতা দেং জিয়াওপিং ও দলের অন্যান্য বয়োজ্যেষ্ঠ নেতৃবর্গ বলপ্রয়োগের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেন।[10] ২০ মে, দলীয় কর্তৃপক্ষ সামরিক আইন জারী করেন ও বেইজিংয়ে ৩০০,০০০ সৈনিক মোতায়েন করেন।[9]

বেইজিংয়ের প্রাণকেন্দ্র তিয়েনআনমেন স্কয়ারের দিকে অগ্রসরমান সেনাবাহিনীর আক্রমণকে রুখতে অস্ত্রহীন সাধারণ নাগরিকগণ বাঁধা দেবার চেষ্টা চালায়। ঐ স্কয়ারেই ছাত্রসহ অন্যান্য প্রতিবাদকারীরা সাত সপ্তাহ অবস্থান করছিল। কয়েকশত থেকে কয়েক হাজার পর্যন্ত নাগরিককে হত্যা করা হয়।[11] চীন সরকার এ বিক্ষোভকে পাল্টা-বিপ্লব দাঙ্গা নামে পরিচিতি ঘটায়। এ ঘটনার বিষয়ে কোনরূপ আলোচনা ও স্মরণ করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।[12][13]

প্রতিক্রিয়া

বিক্ষোভ নস্যাৎ করার পর সরকার বিক্ষোভকারী ও তাদের সহায়তাকারীদের গণহারে গ্রেফতার করতে থাকে। বিদেশী সাংবাদিকদেরকে তাদের দেশে ফেরৎ পাঠান ও ঘরোয়া গণমাধ্যমে এ বিষয়ে লেখার উপর কর্তৃত্ব আরোপ করেন। পুলিশ ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা হয়। বিক্ষোভকারীদের প্রতি কোনরূপ নমনীয়তা প্রদর্শন করা হয়নি।[14] ঝাও জিয়াংকে পার্টির নেতৃত্ব থেকে দূরে রাখা হয় ও তার স্থলে জিয়াং জেমিনকে মনোনয়ন দেয়া হয়। রাজনৈতিক পুণর্গঠন মূলতঃ স্থবির হয়ে পড়ে ও ১৯৯২ সালে দক্ষিণাঞ্চলে দেং জিয়াওপিংয়ের সফরের পূর্ব পর্যন্ত অর্থনৈতিক পুণর্গঠন করা হয়নি।[15][16] বিক্ষোভকারীদের প্রতি চীন সরকার কর্তৃক সেনাবাহিনীর ব্যবহার করাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক নিন্দা জানানো হয়। পাশ্চাত্যের দেশসমূহ অর্থ সরবরাহ বন্ধ রাখে ও অস্ত্র বাণিজ্যেও এর প্রভাব পড়ে।

তথ্যসূত্র

  1. Events named by date in Chinese are conventionally named by the number of the month and the date, followed by the type of event. Thus, the common Chinese name for the crackdown on the 1989 massacre ("六四事件"), is literally (word-by-word) "Six" "Four" "Incident" ("" means "six", "" means "four", "事件" means "incident"), which refers to the incident which occurred on the "Fourth day" of the "Sixth month", in other words, the "June Fourth Incident", which is the usual translation.
  2. "The Gate of Heavenly Peace"। Long Bow Group Inc. in collaboration with ITVS। ১৯৯৫। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৫, ২০১২
  3. Zhao, Ziyang (২০০৯)। "The origins of the 1989 Student Movement"। Prisoner of the State: The Secret Journal of Premier Zhao Ziyang। Simon & Schuster। আইএসবিএন 1-4391-4938-0।
  4. Naughton, Barry. '’The Chinese Economy: Transitions and Growth’’. Cambridge, MA: The Massachusetts Institute of Technology Press, 2007. আইএসবিএন ৯৭৮-০-২৬২-১৪০৯৫-৯. pp.99.
  5. Pan, Philip P. (2008). Out of Mao's Shadow: The Struggle for the Soul of a New China. Simon & Schuster. p. 274. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৪১৬৫-৩৭০৫-২.
  6. Pan, Philip P. (২০০৮)। Out of Mao's Shadow: The Struggle for the Soul of a New China। Simon & Schuster। পৃষ্ঠা 274। আইএসবিএন 978-1-4165-3705-2।
  7. Zhao, D. p. 147
  8. Anthony Saich, The People’s Movement: Perspective on Spring 1989 M.E. Sharpe 1990, আইএসবিএন ০৮৭৩৩২৭৪৬২, 9780873327466 P.172
  9. Thomas 2006
  10. Miles, James (জুন ২, ২০০৯)। "Tiananmen killings: Were the media right?"। BBC News। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৫, ২০১২
  11. Jan Wong, Red China Blues, Random House 1997, p.278
  12. Vogel, Ezra F. (২০১১)। Deng Xiaoping and the Transformation of China। Belknap Press of Harvard University Press। পৃষ্ঠা 634। আইএসবিএন 0-674-05544-6।
  13. AFP (জুন ৪, ২০০৯)। "China tightens information controls for Tiananmen anniversary"The Age। Australia। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৩, ২০১০
  14. Miles, James (1997). The Legacy of Tiananmen: China in Disarray. University of Michigan Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৪৭২-০৮৪৫১-৭. p. 28
  15. "The Consequences of Tiananmen", Andrew J. Nathan.
  16. Goodman, David S. G. (1994). Deng Xiaoping and the Chinese revolution. Psychology Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৪১৫-১১২৫২-৯. p. 112

আরও দেখুন

গ্রন্থপঞ্জী

  • Binyan, Liu; Ruan Ming and Xu Gang (১৯৮৯)। Tell the World: What happened in China and Why। New York: Random House। আইএসবিএন 978-0-394-58370-9। ওসিএলসি 20392647
  • Black, George; Robin Munro (১৯৯৩)। Black Hands of Beijing: Lives of Defiance in China's Democracy Movement। New York: John Wiley। আইএসবিএন 978-0-471-57977-9। ওসিএলসি 243766880 27186722 |oclc= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)
  • Calhoun, Craig C; Jeffrey N. Wasserstrom and Elizabeth Perry (Editors) (১৯৯৪)। "Science, Democracy, and the Politics of Identity"। Popular Protest and Political Culture in Modern China। Westview Press। পৃষ্ঠা 140–7। আইএসবিএন 978-0-8133-2042-7। ওসিএলসি 30623957
  • Cunningham, Philip J. (২০১০)। Tiananmen Moon: Inside the Chinese Student Uprising of 1989। Rowman & Littlefield Publishers, Inc.। আইএসবিএন 978-0-7425-6673-6।
  • Oksenberg, Michel; Sullivan, Lawrence R.; Lambert, Marc, সম্পাদকগণ (১৯৯০)। Beijing Spring, 1989: Confrontation and Conflict: The Basic Documents। Qiao Li। M.E. Sharpe। আইএসবিএন 9780765640574। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২, ২০১৩
  • Salisbury, Harrison (১৯৯২)। The New Emperors: China in the Era of Mao and Deng। New York: Avonআইএসবিএন 978-0-380-72025-5। ওসিএলসি 28306886
  • Spence, Jonathan D (১৯৯৯)। "Testing the Limits"। The Search for Modern China। New York: W. W. Norton & Companyআইএসবিএন 978-0-393-97351-8। ওসিএলসি 39143093 59383489 |oclc= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)
  • Thomas, Antony (২০০৬)। The Tank Man (Video)। PBS। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২, ২০১৩
  • Wong, Jan (১৯৯৭)। Red China Blues: My Long March from Mao to Now (Trade paperback, 416 pages সংস্করণ)। Doubleday। আইএসবিএন 978-0-385-48232-5। ওসিএলসি 37690446
  • "Deng Is Said to Have Backed Tiananmen Violence" article by Michael Wines and Andrew Jacobs in The New York Times June 4, 2010
  • Wu, Renhua (২০০৯)। সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি 六四事件中的戒严部队 [Military Units Enforcing Martial Law During the June 4 Incident] (Chinese ভাষায়)। Hong Kong: 真相出版社। আইএসবিএন 978-0-9823203-8-9। ২০০৭-১০-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৬, ২০১৩
  • Zhang, Liang (২০০১)। Nathan, Andrew; Link, Perry, সম্পাদকগণ। The Tiananmen Papers। Public Affairs। আইএসবিএন 978-1-58648-122-3। Review and synopsis of the book is in the journal Foreign Affairs at The Tiananmen Papers}}
  • Zhang, Liang (pseudonym) (২০০১)। June Fourth: The True Story (Chinese ভাষায়)। Xianggang: Ming jing chu ban she। আইএসবিএন 978-1-58648-122-3। ওসিএলসি 243498894 46859114 50791624 60716940 |oclc= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.