সুপারি

সুপারি, বা গুয়া (বিকল্প বানান সুপারী) (সংস্কৃত: গুবাক, ইংরেজি: Betel nut) এরিকাসিয়া পরিবারের এরিকা গণের একটি ফল। এদের গোলাকৃতি পাথরশক্ত বীজ পানের মশলায় কুচি করে দেওয়া হয়। এটা একটি ক্ষতিকর ও নেশা উদ্রেককারী দ্রব্য। কিছু লোক শুধু সুপারি কুচি খেয়ে নেশা করে।

সুপারি
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
বিভাগ: সপুষ্পক উদ্ভিদ
শ্রেণী: লিলিওসিডা
বর্গ: আরিকালেস
পরিবার: এরিকাসি
গণ: এরিকা
প্রজাতি: এ. কাটেক্যু
দ্বিপদী নাম
আরিকা কাটেক্যু
L.
কাচা সুপারি

বিস্তৃতি

সুপারি বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। সুপারির জন্ম সম্ভবত ফিলিপাইন বা মালয়েশিয়ায়ভারত, শ্রীলংকা, মায়ানমার, পাকিস্তান, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, চীন, প্রভৃতি দেশে সুপারি চাষ করা হয়। বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় বিশেষ করে বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ইত্যাদি জেলায় প্রচুর সুপারি জন্মে। উত্তরবঙ্গের রংপুরেও সুপারির চাষ হয়। বাগান আকারে, বাড়ির আশেপাশে বা পুকুর ধারে সাধারণত সুপারি গাছ লাগানো হয়।

সুপারি গাছ

সুপারি একবীজপত্রী সরল কান্ডের অশাখ বড় বৃক্ষ। গাছ প্রায় ২০-২৫ মিটার লম্বা হয়; গোলাকার কাণ্ডের ব্যাস ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি। সুপারির পাতা লম্বা; মধ্যশিরাটি বেশ শক্ত ; মধ্যশিরার দু’পাশ থেকে চিরুনির দাঁতের মত সবুজ পত্রফলক সাজানো থাকে; তবে তা নারিকেল ও খেজুরের চেয়ে প্রশস্ত ও কোমল। পাতায় কোন কাঁটা নেই। দীর্ঘ পত্রখোল বা খোলা কান্ডের সাথে লেগে থাকে।

বিবরণ

সুপারি গাছের ফল ডিম্বাকার থেকে গোলাকার, ছোট। কাচা ফলের রঙ সবুজ, পাকলে হলুদ বা কমলা হয়ে যায়। কাঁদিতে থোকা ধরে অনেক ফল থাকে। কাচা ও পাকা ফল খাওয়া হয়। খোসা ছাড়িয়ে ভিতরে সুগোল যে বিচি থাকে সেটাই খাওয়া হয়। এই বিচি শুকিয়েও খাওয়া হয়। কুচিকুচি করে যাঁতি দিয়ে কেটে পানের সাথে সুপারি খাওয়া হয়।

সুপারির গুনাগুণ

কাচা সুপারি খেলে অনেক সময় মাথা ঘোরে। কাচা সুপারিতে ০.১-০.৫/ অ্যালকালয়েড থাকে, যার কারণে মাথা ঘোরে। প্রতি ১০০ গ্রাম সুপারিতে আছে ২৮৯ ক্যালরি শক্তি যোগানোর ক্ষমতা। 'আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা এজেন্সী'র মতে, সুপারি এক ধরনের কার্সিনোজেন (বিষ), যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সুপারিসহ পান খেলে মুখের ক্যন্সার হতে পারে। ক্রিমি, রক্ত আমাশয়, অজীর্ণ ইত্যাদি রোগ নিরাময়েও সুপারি উপকারী। এর রসে এরিকোলিন ইত্যাদি উপবিষ ভারত উপমহাদেশে মুখের ক্যান্সারের একটি অন্যতম কারণ। কাঁচা সুপারি চিবালে শরীরে গরম অনুভূত হয়, এমনকি শরীর ঘামিয়ে যেতে পারে। সুপারি খেলে তাৎক্ষণিক যেসব সমস্যা দেখা যায় সেগুলো হল-হাঁপানি বেড়ে যেতে পারে ও হাইপারটেনশন বা রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।[1]

চাষাবাদ

বর্ষাকালে বীজ পুঁতে সুপারির চারা তৈরি করা হয়। লোনা নয় এরকম মাটিতে এক বছর বয়সী চারা ৩ মিটার দূরে দূরে গর্ত করে লাগালেই সুপারি বাগান দাঁড়িয়ে যায়। অন্য গাছপালার মধ্যে বা ছায়া জায়গায় লাগালে সুপারি গাছ ভাল হয়। প্রখর রোদ সুপারি গাছ সইতে পারে না। চারা লাগানোর পর ৬-৭ বছরের মধ্যেই ফল ধরা শুরু করে। তবে বেশি ফল ধরে ১০-১২ বছরের পর থেকে। স্থানভেদে বছরের নভেম্বর-মার্চ পর্যন্ত সুপারি সংগ্রহ চলে।

চিত্রশালা

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.