রাইবোজোম
রাইবোজোম জীব কোষে অবস্থিত রাইবোনিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা। রাইবোজোম প্রধানত প্রোটিন সংশ্লেষণে সাহায্য করে। প্রোটিনের পলিপটাইড চেইন সংযোজন এই রাইবোজোমে হয়ে থাকে। এছাড়া রাইবোজোম এ কাজে প্রয়োজনীয় উৎসেচক সরবরাহ করে। এই উৎসেচক বা এনজাইমের কাজ হলো প্রাণরাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে দেওয়া।

আবিস্কার
১৯৫৪ সালে বিজ্ঞানী Albert Claude (1899-1983) যকৃত কোষের সাইটোপ্লাজমকে সেন্ট্রিফিউজ করে আরএনএ সমৃদ্ধ ৬০০-২০০০Å ব্যাসবিশিষ্ট বহু কণা পৃথক করে নাম দেন মাইক্রোজোম।পরবর্তীতে বিজ্ঞানী Richard B Roberts ১৯৫৮ সালে এর নাম দেন রাইবোজোম।একে ক্লডের দানা বা প্যালডের দানাও বলা হয়।
উৎপত্তি
প্রোক্যারিওটিক কোষে আদি ক্রোমোসোম এবং ইউক্যারিওটিক কোষে নিউক্লিওলাস থেকে রাইবোজোমের উৎপত্তি।
অবস্থান
প্রাক-কেন্দ্রিক ও সু-কেন্দ্রিক উভয় প্রকার কোষে এদের পাওয়া যায়। এগুলো সাইটোপ্লাজমে মুক্ত অবস্থায় এবং নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের গাত্রে যুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
প্রকারভেদ
ক. ৫৫S-মাইটোকন্ড্রিয়ায় উপস্থিত রাইবোজোম।
খ. ৬০S-ছত্রাকে উপস্থিত রাইবোজোম।
গ. ৭০S-প্রোক্যারিওটিক কোষে উপস্থিত রাইবোজোম।
ঘ. ৮০S-ইউক্যারিওটিক কোষে উপস্থিত রাইবোজোম।
ভৌত গঠন
রাইবোজোম সাধারণত গোলাকার এবং দ্বিস্তর বিশিষ্ট ঝিল্লি দিয়ে আবৃত।এদের ব্যাস সাধারণত 100-400Å;এদের দৈর্ঘ্য প্রোক্যারিওটিক কোষে 100-280Å,ইউক্যারিওটিক কোষে 300-400Å এবং প্রস্থ 200-240Å।
প্রতিটি রাইবোজোম দুটি উপএককের সমন্বয়ে গঠিত। প্রোক্যারিওটিক কোষে 50S ও 30S একত্রে 70S এবং ইউক্যারিওটিক কোষে 60S ও 40S একত্রে 80 গঠন করে।60S উপএককটি গম্ভুজাকৃতির এবং আয়তনে বড়।এটি এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ও নিউক্লিয়াসের গাত্রে যুক্ত থাকে।40S উপএকক অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকৃতির এবং 60S উপএককের উপরে টুপির ন্যায় বিন্যস্ত থাকে।উপএককদ্বয় একটি সরু ফাটল দ্বারা পৃথক।70S রাইবোজোমের 50S উপএককটি পঞ্চভুজাকৃতির। তবে 30S ও 40S উপএককদ্বয়ের নির্দিষ্ট কোনো আকৃতি নেই।প্রোটিন সংশ্লেষণকালে mRNA-র জন্য একাধিক উপএকক একত্রিত হয়ে polyribosome গঠন করে।
রাসায়নিক গঠন
রাইবোজোমে প্রোটিন ও RNA ১-১ অনুপাতে বিদ্যমান।অর্থাৎ ৫০ ভাগ প্রোটিন ও ৫০ ভাগ RNA।তবে 70S রাইবোজোমে RNA-র পরিমাণ প্রোটিন অপেক্ষা বেশী থাকে। রাইবোজোমে বিদ্যমান প্রোটিন জটিল প্রকৃতির।ক্ষুদ্র ও বৃহৎ উপএককে প্রায় ৫০ প্রকার প্রোটিন থাকে।
কাজ
ক.আমিষ সংশ্লেষণের কাজ করে।
খ. সংশ্লেষিত আমিষকে গলজিবস্তুতে প্রেরণ করে।
গ. অনেক সময় স্নেহ জাতীয় পদার্থ গঠনে সাহায্য করে।