মেটে হুতোমপ্যাঁচা
মেটে হুতোমপ্যাঁচা (বৈজ্ঞানিক নাম: Bubo coromandus) বা ভুমা প্যাঁচা (ইংরেজি নাম: Dusky eagle-owl) Strigidae (স্ট্রিজিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Bubo (বুবো) গণের অন্তর্গত বড় আকারের প্যাঁচা।[2][3] মেটে হুতোমপ্যাঁচার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ করোম্যান্ডলের হুতোমপ্যাঁচা (লাতিন: bubo = হুতোমপ্যাঁচা, coromandus = করমন্ডল উপকূল)।[3] পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এরা বিস্তৃত, প্রায় ১৪ লক্ষ ৩০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস।[4] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে, কিন্তু এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[1] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।[3]
.jpg)
মেটে হুতোমপ্যাঁচা Bubo coromandus | |
---|---|
![]() | |
মেটে হুতোমপ্যাঁচা (Bubo coromandus) | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Strigiformes |
পরিবার: | Strigidae |
গণ: | Bubo |
প্রজাতি: | B. coromandus |
দ্বিপদী নাম | |
Bubo coromandus (Latham, 1790) | |
প্রতিশব্দ | |
Strix coromandus |
উপপ্রজাতি
মেটে হুতোমপ্যাঁচার উপপ্রজাতি দুইটি[5]:
- B. c. coromandus (Latham, 1790) - পাকিস্তান, মধ্য ও উত্তর ভারত, দক্ষিণ নেপাল, আসাম ও বাংলাদেশের ঢাকা, খুলনা ও সিলেটের পত্রপতনশীল বনে দেখা যায়; চীনের পূর্বাঞ্চলে যে সদস্যগুলো দেখা যায় তারা সম্ভবত এ উপপ্রজাতির অন্তর্ভুক্ত।
- B. c. klossi (Robinson, 1911) - উত্তর ও পশ্চিম মায়ানমার, পশ্চিম থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া।
বিবরণ
মেটে হুতোমপ্যাঁচা কানঝুঁটিওয়ালা বড়সড় নিশাচর পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৫৮ সেমি, ডানা ৪০ সেমি, ঠোঁট ৪.২ সেমি, লেজ ১১.৫ সেমি ও পা ৬.৮ সেমি।[3] এর পিঠ ধূসরাভ-বাদামি। অতি সরু ছিটে দাগ ও বিচ্ছিন্ন কালচে বাদামি ছিটে দাগ দেখা যায়। দেহতল ধূসরাভ সাদা। সূক্ষ্ম আঁকাবাঁকা দাগ রয়েছে। কাঁধ ও ডানা বাদামি। ডানায় পীতাভ ও সাদাটে তিলা থাকে। লেজের পালকে আড়াআড়ি ডোরা রয়েছে। চোখ ফিকে হলুদ। ঠোঁট নীলচে-সাদা। আঙুল ফিকে বাদামি ও নখর কালচে বাদামি। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। ছানা সাদা কোমল পালকে ঢাকা তুলতুলে বলের মত দেখতে।[3]
স্বভাব
মেটে হুতোমপ্যাঁচা পুরোন আমবাগান, তেঁতুলবন, বাগান ও ঘন বনের বসবাস করে। সাধারণত পানির ধারে এর বিচরণ বেশি। সচরাচর একা কিংবা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। গাছে বসে ভূমিতে শিকার খোঁজে ও লম্বা নখর দিয়ে শিকার ধরে খায়। এর খাদ্যতালিকায় রয়েছে ছোট স্তন্যপায়ী, পাখি, সরীসৃপ, বড় পোকা, জলজ পোকা ইত্যাদি। রাতে, বিশেষ করে ভোর ও গোধূলিতে এবং মেঘাচ্ছন্ন দিনে কর্মতৎপর থাকে। দিনে ছায়াঘেরা গাছে ঘুমায় ও সূর্যাস্তের একঘণ্টা আগে জেগে ওঠে। সচরাচর গম্ভীর স্বরে ডাকে: ও-ও-ও-ও-ও-ও-ওওওওউ। শীতকালে ও বর্ষাকালে বেশি ডাকে। নভেম্বর-এপ্রিল মাসে পানির ধারে বড় গাছের কোটরে এরা বাসা করে। এছাড়া শকুন, চিল ও ঈগলের পুরোন বাসায় সবুজ পাতার আস্তরণ দিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ২টি। ডিমের মাপ ৫.৯ × ৪.৮ সেমি।[3]
তথ্যসূত্র
- "Bubo coromandus"। The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৫।
- রেজা খান (২০০৮)। বাংলাদেশের পাখি। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ৬৭। আইএসবিএন 9840746901।
- জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.) (২০০৯)। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১১৮।
- "Dusky Eagle Bubo coromandus"। BirdLife International। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৫।
- "Dusky Eagle-owl (Bubo coromandus)"। The Internet Bird Collection। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৩।
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে মেটে হুতোমপ্যাঁচা সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |