মুক্তেশ্বর মন্দির, ভুবনেশ্বর
গঙ্গেশ্বর শিবমন্দির ভারতের ওড়িশা রাজ্যের ভুবনেশ্বরে অবস্থিত একটি শিবমন্দির। মন্দিরটি ৯৫০-৯৭৫ সালের দিকে নির্মিত[1] এবং ওড়িষায় হিন্দু মন্দির বিকাশ গবেষণার জন্য উক্ত স্থাপনাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তেশ্বরের শৈল্পিক উন্নয়ন এক নতুন ধারার সৃষ্টি করে যা পূর্বের সকল স্থাপনা থেকে স্বতন্ত্রটা তৈরী করে এবং এর প্রভাব পুরো এক শতাব্দী জুড়ে থাকে। এই প্রভাব দৃশ্যমান হয় রাজারাণী মন্দির এবং লিঙ্গরাজ মন্দির নির্মাণশৈলীতে।[2] এটা শহরের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ।[3]
মুক্তেশ্বর মন্দির | |
---|---|
![]() | |
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দুধর্ম |
জেলা | খুরদা জেলা |
শ্বর | মুক্তেশ্বর (শিব) |
অবস্থান | |
রাজ্য | ওড়িশা |
দেশ | ভারত |
![]() ![]() ওড়িশা | |
ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক | ২০°১৪′৩৩.৭২″ উত্তর ৮৫°৫০′২৫.৪১″ পূর্ব |
স্থাপত্য | |
ধরন | কলিঙ্গ স্থাপত্যশৈলী |
সম্পূর্ণ হয় | ৯৫০-৯৭৫ সাল |

ইতিহাস
সোমবংশী যুগের প্রথম দিকের কাজ হচ্ছে মুক্তেশ্বর মন্দির। অধিকাংশ শিক্ষাবিদদের মতে এটা পরশুরামেশ্বর মন্দিরের উত্তরসূরি এবং ব্রহ্মেশ্বর মন্দিরের পূর্বে নির্মিত। পারসি ব্রাউনের মতে মন্দিরটি ৯৫০ সালে নির্মাণ করা হয়। এই মন্দিরে তোরণ রয়েছে যা অত্র অঞ্চলের অন্য কোন মন্দিরে নেই। এটা মন্দিরটি আলাদা স্বকীয়তা দিয়েছে এবং কিছু কিছু নির্মাণ শৈলী নির্দেশ করে যে এর নির্মাতারা নতুন একটা কৃষ্টির সূচনা করেছে। কেসি পানিগ্রাহীর মতে এর নির্মাণকাল ৯৬৬ সাল যা সোমবংশী রাজা ১ম যযাতি’র শাসনকাল। কিন্তু মন্দিরটি যে যযাতি নির্মাণ করেছেন তার কোন ঐতিহাসিক নিদর্শন নেই।
স্থাপত্যশৈলী


স্থাপত্যশৈলীর কারণে মুক্তেশ্বর মন্দিরকে ওড়িশা স্থাপত্যশৈলীর মুক্তা বলা হয়[4]। মন্দিরটি পশ্চিমমুখী এবং নিচু ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। জগমোহনের উপরে বিদ্যমান পিরামিডাকৃতির ছাঁদ এই অঞ্চলে প্রথম[5]। ভুবনেশ্বরের অন্যান্য বৃহৎ মন্দিরের তুলনায় মুক্তেশ্বর ছোট মন্দির। মন্দিরটি অষ্টকোনাকৃতির দেয়াল দিয়ে ঘেরা যার গায়ে বিভিন্ন নকশা খোদাই করা। বিশ্বাস করা হয় যে পরীক্ষামূলক নতুন এই সংস্করণ এর পূর্বের সব সংস্করণকে পূর্ণতা দিয়ে নতুন এক ধারার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। পরবর্তীতে শহরের বিভিন্ন মন্দিরে এই ধারার সংযোগ লক্ষ্য করা যায়। মন্দিরটিতে একটি পোর্চ আছে যা তোরণ নামে পরিচিত এবং অষ্টভুজাকৃতির চত্ত্বরের প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে। মন্দিরটি দুটি অংশ নিয়ে গঠিতঃ বিমান এবং মুখশালা। এরা একটা উচু ভিত্তিত উপরে অবস্থিত। মন্দিরটি পিথাডেউলা ধরনের প্রাক নির্মাণ।
পোর্চ
.jpg)
মুক্তেশ্বর মন্দিরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তোরণ বা খিলানপথ যা ৯০০ শতকের বৌদ্ধ স্থাপত্যের প্রভাব]].[6]। তোরণের খাম মোটা এবং হাস্যোজ্বল মহিলা, বানর ও ময়ুরের ভাস্কর্য দিয়ে নকশা করা। তোরণের সম্মুখ ও পশ্চাদ অংশ দেখতে একই রকম।[7]
বিমান

বিমানটি বর্গাকৃতির এবং উঁচু ভিত্তির উপরে অবস্থিত। অন্যান্য মন্দিরের সংগে তুলনা করলে এর শিখর ক্ষুদ্রাকৃতির। এর চারমুখে চারটি নটরাজ এবং চারটি কীর্তিমুখ আছে। শিখরে শীর্ষ অংশে কলস আছে। শিখর ১০.৫ মিটার বা ৩৫ ফুট উঁচু যার প্রত্যেক ইঞ্চি নকশা ও ভাস্কর্য দিয়ে সজ্জিত। ভো নামে সজ্জার নতুন প্রকরণের বিকাশ সম্ভবত এখানেই হয় যা পরবর্তীতে ওড়িশিয় মন্দিরের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে। এর চৈত্য জানালা প্রচুর নকশাকৃত এবং শীর্ষে দানব মাথার মুখোশ এবং বামন মূর্তি আছে।
স্যাংক্টাম
স্যাংক্টাম বিভিন্ন নাগ-নাগিনীর ভাস্কর্য দিয়ে নকশা করা। স্যাংকটামটি ভেতরের দিকে ঘণাকৃতির।
জগমোহন
দশ শতকের মন্দিরটি ক্ষুদ্রাকৃতির। জগমোহনটি ৩৫ মিটার বা ১১৫ ফুট উঁচু। বিশ্বকর্মা মোহরানা ভাস্করদের খোদাইয়ে এটা সজ্জিত। এই মন্দিরটিকে কলিঙ্গ স্থাপত্যশৈলীর নগর স্থাপত্যের মুক্তা বলা হয়। আয়তাকার জগমোহন ছাড়া এটা ওড়িশা মন্দির শৈলীর প্রাক উদাহরণ। জগমোহনের ছাদের বর্ধিত অংশে একটি সিংহমূর্তি তার হাতের উপর বসে আছে। স্থাপনাটির বাইরের দেয়ালে নাগ ও নাগিনীর নকশা করা। জগমোহণের সামনে তোরণ অবস্থিত।
অন্যান্য
.jpg)
ভেতরের প্রবেশপথে তিন মাথা যুক্ত কেতুর মূর্তি আছে যা হিন্দু পূরাণমতে নবগ্রহ নামে অভিহিত করা হয়। মন্দিরের পূর্বদিকে একটি পুকুর এবং দক্ষিণ পশ্চিম দিকে একটি কূয়া আছে। কূপে ডুব দিলে মহিলাদের বন্ধাত্ব দূর হয় বলে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে। মন্দির চত্ত্বরে একটি প্রার্থনাগার আছে যার মধ্যে শিবলিঙ্গ আছে। মন্দিরটি প্রবেশপথ অলঙ্কৃত। মন্দিরটি নিচু সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা। মন্দিরটির ভেতরে বাইরে নানাবিধ ভাস্কর্য রয়েছে।
ধর্মীয় গুরুত্ব
মুক্তেশ্বর শব্দের অর্থ স্বাধীনতার ঈশ্বর। মন্দিরটি হিন্দু দেবতা শিবের। এখানে ধ্যান আসন শিক্ষার একাধিক ভাস্কর্য আছে। কিছু কিছু শিক্ষাবিদের মতে মুক্তেশ্বর নামের সম্ভাব্য তত্ত্ব হচ্ছে এখানে তন্ত্রসাধনা করা হতো। সীমানা প্রাচীরের বাইরের অংশে হিন্দু দেবতাদের ভাস্কর্য আছে যেমন সরস্বতী, গণেশ ও লকুলিশা (পঞ্চদশ শতকে তান্ত্রিক শৈবধর্মের পশুপাতা ধারার প্রবর্তক)[8][9]। চৈত্য খিলানে একাধিক লকুশিলার মূর্তির মিনিয়েচার দেখতে পাওয়া যায় যা বিভিন্ন যোগমুদ্রা প্রদর্শণ করছে। স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোন গর্ভবতী মহিলা যদি অশোকাষ্টমী উৎসবের আগের রাতে যদি মন্দির চত্ত্বরের মদিচা কুন্ড পুকুরে ডুব দেয় তবে পুত্র সন্তানের জনক হবে। সন্ধ্যায় পুকুরের পানি জনসাধারণের কাছে বিক্রি করা হয়।
জনপ্রিয় মাধ্যম
ওড়িশা সরকারের পর্যটন দপ্তর বাৎসরিক তিন দিনের নাচের অনুষ্ঠান মুক্তেশ্বর নৃত্য উৎসবের আয়োজন করে মন্দির চত্ত্বরে। উৎসবের মূল আকর্ষণ থাকে ওড়িশার শাস্ত্রীয় নাচ ওড়িশি নৃত্য। জনপ্রিয় ওড়িশি নৃত্যশিল্পীরা মার্দল বাদ্যযন্ত্রের সংগে নৃত্য পরিবেশন করে[10][11]। অনুষ্ঠানটি রাজ্য সরকারের পোর্টালে ওয়েবকাস্ট করা হয়।[12][13]
চিত্রশালা
- মুক্তেশ্বর মন্দিরে্র বাইরে গাছতলায় বসে একজন শিল্পী বাঁশি বাজাচ্ছেন
- মুক্তেশ্বর মন্দিরে্র পার্শ্বদৃশ্য
- বিমান
- মুক্তেশ্বর মন্দিরে্র খিলানপথ
- কীর্তিমুখ মোটিফে খোদাই
- বিষ্ণুর ভাস্কর্য
- মন্দির চত্ত্বরে নৃত্যশিল্পী
তথ্যসূত্র
- Smith, Walter (১৯৯১)। "Images of Divine Kings from the Mukteśvara Temple, Bhubaneswar"। Artibus Asiae। 51 (1/2): 90। doi:10.2307/3249678। জেস্টোর 3249678। (সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))।
- Smith, Walter (১৯৯৪)। The Mukteśvara Temple in Bhubaneswar। Delhi: Motilal Banarsidass Publishers Private Limited। পৃষ্ঠা xix। আইএসবিএন 81-208-0793-6।
- Gopal, Madan (১৯৯০)। K.S. Gautam, সম্পাদক। India through the ages। Publication Division, Ministry of Information and Broadcasting, Government of India। পৃষ্ঠা 175।
- "Temple Architecture"। Cultural Department - Government of Odisha। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মে ২০১৪।
- Jāvīd, ʻAlī; Javeed, Tabassum (২০০৮)। World Heritage Monuments। Algora Publishing। পৃষ্ঠা 192–194। আইএসবিএন 9780875864846।
- "Bhubaneswar tourist attractions"। Bhubaneswar Municipal Corporation। ২০১১-০৮-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-১২।
- Allen, Margaret Prosser (১৯৯১)। Ornament in Indian Architecture। Associated University Press Inc.। পৃষ্ঠা 206–207। আইএসবিএন 0-87413-399-8।
- Parmeshwaranand, Swami (২০০৪)। Encyclopedia of the Śaivism। Sarup & Sons। পৃষ্ঠা 164–165। আইএসবিএন 81-7625-427-4।
- "Bhubaneswar Mukteshvara Temple"। Tourism Development Corporation of Odisha। ২০০৭-০৯-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-১২।
- "Bhubaneswar Mukteshvara Temple"। Tourism Development Corporation of Odisha। ২০১৩-০৪-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-১২।
- "Mukteswar dance festival from January 14 to 16"। The Hindu। ২০১৩-০১-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০১-১৩।
- "Odisha Government webcast"। Government of Odisha। ২০১২-০৫-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-১২।
- "Season of melas"। Daily News। Sri Lanka। ২৩ ডিসেম্বর ২০১০। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৫ – HighBeam Research-এর মাধ্যমে। (সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))।