মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী
মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী (১৮৭৫-১৯৫০) ছিলেন ইসলামী চিন্তাবিদ, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ও সাংবাদিক। মুসলিম যুগের চট্টগ্রামের সরকারি নাম ইসলামাবাদের নামানুসারেই তিনি নিজের নাম ইসলামাবাদী রাখেন।
মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী | |
---|---|
জন্ম | ১৮৭৫ |
মৃত্যু | ১৯৫০ |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
পেশা | সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ |
রাজনৈতিক দল | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, কৃষক প্রজা পার্টি |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মনিরুজ্জামান ১৮৭৫ সালে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার আড়ালিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
কর্মজীবন
তিনি সোলতান (১৯০১), হাবলুল মতিন (১৯১২), মোহাম্মদী (১৯০৩), কোহিনুর (১৯১১), বাসনা (১৯০৪) এবং আল এছলাম পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন।
পরবর্তী জীবন এবং মৃত্যু
১৯৩০ সালে তিনি চট্টগ্রামের কদমমোবারক মুসলিম এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। ঐ সময়ে তিনি কংগ্রেসের অহিংস নীতির প্রতি আস্থা হারান এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি সমর্থন দান করে ফরোয়ার্ড ব্লকে যোগদান করেন। তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালে ভারত ছাড় আন্দোলনে যোগদান ও আজাদ হিন্দ ফৌজের কার্যক্রমের প্রতি সক্রিয়ভাবে সমর্থন করা। সে সময় তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিপ্লবী কেন্দ্র স্থাপন করেন। নেতাজী যখন আজাদ হিন্দ ফৌজ নিয়ে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দখল করে ভারতের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উড়িয়ে ‘দিল্লি চলো’ শ্লোগান তুলে এগিয়ে চলছিলেন ভারতের দিকে ঐ সময় মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর সাথে পরিচয় ঘটে বেংগল ভলান্টিয়ার্স এর সুবোধ চক্রবর্তীর। সুবোধের সাথে আলাপ করে মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী এত বেশি মুগ্ধ হন যে শেষ বয়সে একটা ঝুঁকি নেবার জন্য রাজি হয়ে পড়েছিলেন। সুবোধকে সঙ্গে নিয়ে তিনি চলে আসেন চট্টগ্রামের দেয়াঙ পাহাড়ে। চট্টগ্রামের পাহাড়-পর্বত ডিঙ্গিয়ে আরাকানের পথ ধরে আবারও নেতাজীর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার লক্ষ্যে যখন পথ চলছিলেন তখন সীমান্ত এলাকায় ছিল সতর্ক পাহারা। আজাদ হিন্দ ফৌজ দখলে থাকার কারণে সতর্কতা যেন সীমাহীন হয়ে পড়েছিল।
মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী বীরকণ্ঠে তার সহচরকে বলছিলেন, আমার জীবনের মাত্র কয়েকদিন বাকি, এই চরম ঝুঁকি নিতে আমার অসুবিধেও নেই। তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝুঁকি নিলেন, শ্যালক মোর্শেদকে নিয়ে একেবারে ফকির সেজে নেতাজীর সাথে তিনি সাক্ষাৎ করেছিলেন। ব্রিটিশ গুপ্তচরেরা তখন মওলানার সমস্ত বিপ্লবী কার্য টের পায়। সে কারণে তার শহরস্থ বাড়ি, তৎকালীন পটিয়ার (বর্তমান চন্দনাইশ) বাড়ি, সীতাকুন্ডের বাড়ি, কলকাতার বাসভবনে ইংরেজ সার্জেন্টের নেতৃত্বে বিপুল সৈন্যের মাধ্যমে তল্লাশি চালানো হয়। ঐ সময় মওলানাকে চট্টগ্রাম শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ব্রিটিশ সরকার মহাত্মা গান্ধী, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু প্রভৃতি নেতার সাথে মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীকেও দিল্লির লালকিল্লায় বন্দী করে রাখেন। অতঃপর তাকে সেখান থেকে পাঞ্জাবের ময়াওয়ালী জেলে স্থানান্তর করেন। সেখানকার জেলের ছাদের বিমের সঙ্গে রজ্জু দিয়ে ৬৫ বছর বয়স্ক মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর দু’পা বেঁধে মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে রেখে তার উপর অশেষ নির্যাতন চালানো হয়েছিল গোপন তথ্য জানার জন্য। [1] মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর শিক্ষক। তিনি কদম মোবারক মুসলিম এতিম খানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পটিয়ার দেয়াঙ পহাড়ে তিনি ইসলামী আরবী বিশ্ব বিদ্যালয়ের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। বর্তমানে তিনি কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদের কবরস্থানে শায়িত আছেন।