ভৌগোলিক নিরক্ষরেখা

অন্ধকার ও মেঘমুক্ত আকাশের দিকে তাকালে অসংখ্য জ্যোতিষ্ক চোখে পড়ে যাদেরকে অত্যন্ত দূরত্ব হেতু একটি বিরাট ব্যাসার্ধের গোলকের পৃষ্ঠের কিছু স্থির বিন্দু বলে ভ্রম হয় যেখানে পৃথিবী পৃষ্ঠে দণ্ডায়মান দর্শক কেবল মাত্র গোলকের উপরের অর্ধাংশই দেখতে পান। কল্পিত এ গোলককেই খ-গোলক বলা হয়। ভৌগোলিক নিরক্ষরেখা হল পৃথিবীর খ-গোলকের পৃষ্ঠে কল্পিত সেই মহাবৃত্ত যার অবস্থান পৃথিবীর নিরক্ষীয় সমতলে। এই প্রসঙ্গ সমতল হল নিরক্ষীয় স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার ভিত্তি। অন্য কথায়, মহাকাশে পৃথিবীর নিরক্ষরেখার বিমূর্ত অভিক্ষেপই ভৌগলিক নিরক্ষরেখা।[1] পৃথিবীর অক্ষীয় আনতির (axial tilt) কারণে, ভৌগোলিক নিরক্ষরেখা এই মুহূর্তে সূর্যপথের (ecliptic) তথা পৃথিবীর কক্ষীয় সমতলের সাপেক্ষে প্রায় ২৩.৪৪° কোণে হেলে রয়েছে। ভৌগোলিক নিরক্ষরেখার এই হেলে থাকার পরিমাণ অর্থাৎ আনতি গত ৫০ লক্ষ বছর ধরে ২২.০° থেকে ২৪.৫° পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়েছে।[2]

এই মুহূর্তে ভৌগলিক নিরক্ষরেখা নিরক্ষীয় সমতলের সাথে প্রায় ২৩.৪৪° কোণে আনত। ছবিটিতে পৃথিবীর অক্ষীয় আনতি, ঘূর্ণন অক্ষ এবং কক্ষীয় সমতলের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে।

পৃথিবীর নিরক্ষরেখায় দণ্ডায়মান কোন পর্যবেক্ষক ভৌগলিক নিরক্ষরেখাকে ঠিক তার মাথার উপরে সুবিন্দু দিয়ে একটি অর্ধবৃত্তাকার পথে যেতে দেখবেন। পর্যবেক্ষক নিরক্ষরেখা থেকে সরে গিয়ে উত্তর বা দক্ষিণ দিকে গমন করলে ভৌগোলিক নিরক্ষরেখা এর বিপরীত দিগন্তের দিকে হেলে পড়বে। অসীম দূরবর্তী একটি অর্ধবৃত্তকে ভৌগোলিক নিরক্ষরেখা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায় যেখানে অর্ধবৃত্তটিকে খ-গোলকের পৃষ্ঠে বিবেচনা করা হয় এবং পৃথিবী পৃষ্ঠে পর্যবেক্ষকের অবস্থান নির্বিশেষে অর্ধবৃত্তটির প্রান্তবিন্দুদ্বয় দিগন্তকে ঠিক পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ছেদ করে। ভৌগলিক নিরক্ষরেখাটি ভৌগোলিক মেরুদ্বয়ে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক দিগন্তের সাথে মিলে যায়। যে কোন অক্ষাংশে অবস্থানকারী পর্যবেক্ষক থেকে ভৌগলিক নিরক্ষরেখার অবস্থান অসীম দূরবরৃতী হলেও ভৌগলিক নিরক্ষরেখার তল থেকে পর্যবেক্ষক কেবল নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকে। তাই যে কোন অক্ষাংশের ক্ষেত্রে ভৌগলিক নিরক্ষরেখাটি একটি অভিন্ন বৃত্তচাপ বা বৃত্ত পরিগণিত হবে।[3]

ভৌগোলিক নিরক্ষরেখার নিকটবর্তী জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুসমূহ পৃথিবীর অধিকাংশ স্থান থেকে দিগন্তের উপরে প্রতীয়মান হয়। তবে এদের তুঙ্গীভবন ঘটে নিরক্ষরেখায় বা নিরক্ষরেখার সন্নিকটে। ভৌগোলিক নিরক্ষরেখা বর্তমানে নিম্নোক্ত তারামণ্ডলগুলোর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে:

  • একশৃঙ্গী মণ্ডল
  • ক্ষুদ্র কুকুর মণ্ডল
  • বাসুকী
  • ষষ্ঠাংশ মণ্ডল
  • সিংহ
  • কন্যা
  • সর্প মণ্ডল (শীর্ষ)
  • সর্পধারী মণ্ডল
  • সর্প মণ্ডল (পুচ্ছ)
  • গরুড়
  • কুম্ভ

এই তারামণ্ডলীগুলোকে প্রায় সারা বিশ্বব্যাপী দেখা যায়।

পৃথিবী ছাড়াও অন্যান্য জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুরও অনুরূপভাবে সংজ্ঞায়িত ভৌগলিক নিরক্ষরেখা বিদ্যমান।

তথ্যসূত্র

  1. "Celestial Equator"। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০১১
  2. Berger, A.L. (১৯৭৬)। "Obliquity and Precession for the Last 5000000 Years"। Astronomy and Astrophysics51 (1): 127–135। বিবকোড:1976A&A....51..127B
  3. Millar, William (২০০৬)। The Amateur Astronomer's Introduction to the Celestial Sphere। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-67123-1।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.