বোমাং সার্কেল

বোমাং সার্কেল (বা বোমাং চক্র; বর্মী: ဗိုလ်မင်းထောင်) বর্তমানে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি নিয়মতান্ত্রিক সার্কেলের (বা চক্রের) অন্যতম। সম্পূর্ণ বান্দরবান জেলা এই সার্কেলের আওতাভুক্ত। বোমাং রাজপরিবারের সদস্যরা মারমা সম্প্রদায়ভুক্ত এবং তারা রাগ্রাইসা নামে পরিচিত।[1] বোমাং সার্কেলের অধিকাংশ বাসিন্দা ষোড়শ ও অষ্টাদশ শতকের মধ্যে ম্রাউক উ রাজ্য বা আরাকান (অধুনা মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য) থেকে বিতাড়িত হয়ে দক্ষিণে বসতি স্থাপন করে, যেখানে পালংসা (ဖလံသား) নামে পরিচিত অন্য মারমা প্রধান সার্কেলের বাসিন্দারা (মং সার্কেল) উত্তর-পশ্চিমে বসতি স্থাপন করে।[1]

বান্দরবানের মারমা (মগ) সম্প্রদায়ের মাঝে বোমাং রাজা (১৯০৬)

নেতৃত্ব

বোমাং সার্কেল একজন বংশানুক্রমিক প্রধান বা সার্কেল চীফ বা গোত্রপতি দ্বারা শাসিত যিনি আনুষ্ঠানিকভাবে জনসাধারণ কর্তৃক "রাজা" নামে আখ্যায়িত হন। বোমাং রাজা মৌজার হেডম্যানদের এবং কারবারি বা গ্রাম প্রধানদের নিয়োগ করেন এবং তারা ঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে কি না তার তদারকি করেন। তিনিই সর্বেসর্বা অর্থাৎ যেকোনো সময় কোনোরকম অনিয়ম দেখলে কারবারিদের অপসারণ (পদত্যাগ) করতে পারেন।[2][3] বর্তমান বোমাং সার্কেল চীফ হলেন উচপ্রু চৌধুরী (ချောဖြူ), যিনি পেশায় একজন প্রকৌশলী।[4] বোমাং রাজা প্রতিবছর তিনদিন ব্যাপি উৎসব রাজপুণ্যাহয় নেতৃত্ব দান করেন, যেটা ১৮৭৫ সাল থেকে হয়ে আসছে।[5][6][7] তিনি পদাধিকার বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পরিষদ এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য।[8]

ইতিহাস

বোমাংরা নিজেদের টেগু সাম্রাজ্যের তাবিনসেওয়াথিনন্দ বাইনের বংশধর দাবি করে।[9][10] ব্রিটিশ শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চাকমা সার্কেল, বোমাং সার্কেল ও মং সার্কেল নামে তিনটি সার্কেলে প্রশাসনিকভাবে বিভাজিত ছিল যেগুলো চাকমা ও মারমা সম্প্রদায় হতে আসা বংশানুক্রমিক সার্কেল প্রধান বা গোত্রপতিদের দ্বারা শাসিত হতো।[11][12] ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের রাজস্ব ও প্রশাসনিক দায়িত্বের বোঝা লাঘবের উদ্দেশ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিধিমালা, ১৯০০ অনুসারে অত্র অঞ্চলের ভূমি প্রশাসন, কর আদায় ও সামাজিক বিরোধ মীমাংসার দায়িত্ব সার্কেল চীফ বা গোত্রপতিদের উপর অর্পিত হয়েছে।[12][13] ১৯০১ সালে বোমাং সার্কেল ২,০৬৪ বর্গমাইল (৫,৩৫০ কিমি) পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।[14] এই প্রশাসনিক কাঠামো ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল, তার পর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে সার্কেলগুলোর বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত করা হয় এবং স্থানীয় সরকারকে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে নিয়ে আসা হয়।[15]

তথ্যসূত্র

  1. I, Fonkem Achankeng (২০১৫-০৯-২৮)। Nationalism and Intra-State Conflicts in the Postcolonial World (ইংরেজি ভাষায়)। Lexington Books। আইএসবিএন 9781498500265।
  2. Soszynski, Henry। "BOHMONG MAHAL"World of Royalty। ২০১৮-০৯-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৯
  3. "Saching Prue new Mong King"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৯-০১-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৯
  4. "Raj Punnah begins December 21"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-১২-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৯
  5. "Raj Punnah begins Dec 21"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১১-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৯
  6. "Full implementation during this govt"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১২-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৯
  7. "Raj Punnah fest begins in hills"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-১২-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৯
  8. "Chittagong Hill Tracts Peace Accord" (PDF)। ১৯৯৭-১২-০২।
  9. "The history of Raja of the Bohmong Circle" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৯
  10. Gardens, The Horniman Museum and। "Five Go Collecting: Kingly Swords"Horniman Museum and Gardens (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৯
  11. Hutchinson, Robert Henry Sneyd (১৯০৬)। An Account of the Chittagong Hill Tracts (ইংরেজি ভাষায়)। Bengal Secretariat Book Depot।
  12. Kundu, Debasish; Samadder, Mrinmoy; Khan, Ashrafuzzaman; Shajahan Naomi, Sharin (২০১১-০১-০৪)। "State of Justice in Chittagong Hill Tracts: Exploring the Formal and Informal Justice Institutions of Indigenous Communities"
  13. "Bandarban wears festive look as Rajpunyah starts"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১০-০১-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৯
  14. Hutchinson, Robert Henry Sneyd (১৯০৬)। An Account of the Chittagong Hill Tracts (ইংরেজি ভাষায়)। Bengal Secretariat Book Depot।
  15. Zaman, M. Q. (১৯৮২)। "Crisis in Chittagong Hill Tracts: Ethnicity and Integration"। Economic and Political Weekly17 (3): 75–80। জেস্টোর 4370578

গ্রন্থপঞ্জি

  • বাংলা একাডেমি বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা : বান্দরবান
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.