বৈশালী জেলা

বৈশালী জেলা হল ভারতের বিহার রাজ্যের ৩৯টি জেলার অন্যতম। মহাভারত এবং বৌদ্ধজৈন ইতিহাসে উল্লিখিত প্রাচীন মিথিলা অঞ্চলের বৈশালী শহরের নামে এই জেলার নামকরণ করা হয়েছে। এই জেলাটি তিরহূত বিভাগের অন্তর্গত।[1]

বৈশালী জেলা

ضلع ویشالی
বিহারের জেলা
বিহারে বৈশালীর অবস্থান
দেশভারত
রাজ্যবিহার
প্রশাসনিক বিভাগতিরহূত
সদরদপ্তরহাজিপুর
সরকার
  লোকসভা কেন্দ্রহাজিপুর, বৈশালী
  বিধানসভা আসনহাজিপুর, লালগঞ্জ, বৈশালী, মহুয়া, রাজা পাকের, রাঘোপুর, মাহনার, পাতেপুর
আয়তন
  মোট২০৩৬ কিমি (৭৮৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
  মোট৩৪,৯৫,২৪৯
  জনঘনত্ব১৭০০/কিমি (৪৪০০/বর্গমাইল)
জনতাত্ত্বিক
  সাক্ষরতা৬৮.৫৬%
  লিঙ্গানুপাত৮৯২
প্রধান মহাসড়ক১৯ নং জাতীয় সড়ক, ৭৭ নং জাতীয় সড়ক, ১০৩ নং জাতীয় সড়ক
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট

ইতিহাস

প্রাচীন বৈশালী

বৈশালী নামটি এসেছে রাজা বিশালের নাম থেকে। বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের উত্থানের আগে বৈশালী ছিল সমৃদ্ধ লিচ্ছবি প্রজাতন্ত্রের রাজধানী। মহাবীরের জন্মের (খ্রিস্টপূর্ব ৫৯৯ অব্দ) আগেও এই রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। সম্ভবত এটিই ছিল বিশ্বের প্রথম প্রজাতন্ত্র। পরবর্তীকালে অনুরূপ প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়েছিল প্রাচীন গ্রিসে[2] লিচ্ছবি রাজ্যটি অধুনা বিহারের গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। বৈশালীর প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে অল্পই জানা যায়। বিষ্ণুপুরাণে বৈশালীর ৩৪ জন রাজার উল্লেখ রয়েছে। এঁদের মধ্যে প্রথম ছিলেন নভগ। ইনি সম্ভবত মানবাধিকার-সংক্রান্ত কোনো কারণে সিংহাসন ত্যাগ করে ঘোষণা করেছিলেন, “আমি এখন মাটির এক মুক্ত চাকা, আমার জমির রাজা।” সর্বশেষ রাজার নাম সুমতি। এঁকে হিন্দু দেবতা রামের পিতা দশরথের সমসাময়িক বলা হয়েছে।

বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগ্রন্থগুলিতে অসংখ্যবার বৈশালী শহরের উল্লেখ পাওয়া যায়। এর থেকে বৈশালী ও অন্যান্য মহাজনপদগুলি সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। এই তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দে গৌতম বুদ্ধের জন্মের আগে খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বৈশালী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অর্থাৎ, এটিই ছিল বিশ্বের প্রথম প্রজাতন্ত্র।

মহাবীর বৈশালীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। গৌতম বুদ্ধ তার শেষ উপদেশ বৈশালীতে প্রদান করেছিলেন এবং এখানেই তার পরিনির্বাণের কথা ঘোষণা করেছিলেন। বহু লোককথা ও বৌদ্ধ সাহিত্যে উল্লিখিত বিশিষ্ট রাজনর্তকী আম্রপালিও বৈশালীর অধিবাসী ছিলেন। তিনি গৌতম বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন।

বৈশালী শহর থেকে এক কিলোমিটার দূরে অভিষেক পুষ্করিণী অবস্থিত। এই পবিত্র জলাধারের জল বৈশালীর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অভিষেকের কাজে ব্যবহৃত হত। এই জলাধারের কাছেই জাপানি নতুন ধর্মের নিপ্পনজান-ম্যোহোজি-দাইসঙ্গ সম্প্রদায় নির্মিত একটি জাপানি মন্দির ও বিশ্ব শান্তি স্তুপ অবস্থিত। অভিষেক পুষ্করিণীর কাছে একটি বুদ্ধের দেহাবশেষ স্তুপ রয়েছে। বুদ্ধের দেহাবশেষ আট ভাগে বিভক্ত হলে বৈশালীর অধিবাসীরা তার একটি ভাগ পান। তারা এখানেই সেই দেহাবশেষ সংরক্ষণ করেছিলেন।

স্বাধীন ভারত

১৯৭২ সালে মুজফফরপুর জেলা ভেঙে পৃথক বৈশালী জেলা গঠিত হয়।[3]

ভূগোল

বৈশালী জেলার আয়তন ২,০৩৬ বর্গকিলোমিটার (৭৮৬ মা)[4] এই জেলার আয়তন স্পেনের টেনেরিফের আয়তনের প্রায় সমান।[5]

অর্থনীতি

২০০৬ সালে ভারত সরকারের পঞ্চায়েত মন্ত্রক দেশের ২৫০টি সর্বাধিক অনগ্রসর জেলার তালিকায় বৈশালী জেলার নাম নথিভুক্ত করে।[6] বর্তমানে বিহারের যে ৩৬টি জেলা অনগ্রসর অঞ্চল অনুদান তহবিল কর্মসূচির অধীনে অনুদান পেয়ে থাকে, এই জেলা তার মধ্যে অন্যতম।[6]

বিভাগ

বৈশালী জেলা তিনটি মহকুমায় বিভক্ত। এগুলি হল: হাজিপুর, মাহনার ও মহুয়া।

জনপরিসংখ্যান

২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, বৈশালী জেলার জনসংখ্যা ৩,৪৯৫,২৪৯।[7] এই জেলার জনসংখ্যা পানামা রাষ্ট্র[8] বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাট রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় সমান।[9] জনসংখ্যার হিসেবে ভারতের ৬৪০টি জেলার মধ্যে এই জেলার স্থান ৮৬তম।[7] এই জেলার জনঘনত্ব ১,৭১৭ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (৪,৪৫০ জন/বর্গমাইল)[7].২০০১-২০১১ দশকে বৈশালী জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২৮.৫৮%।[7] বৈশালী জেলার লিঙ্গানুপাতের হার প্রতি ১০০০ পুরুষে ৮৯২ জন মহিলা[7] এবং সাক্ষরতার হার ৬৮.৫৬%।[7]

প্রাণী ও উদ্ভিদ

১৯৯৭ সালে বৈশালী জেলায় বারেলা সালিম আলি জুব্বা সাহেনি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য গঠিত হয়। এই অভয়ারণ্যের আয়তন  কিমি (০.৮ মা)[10]

চিত্রকক্ষ

বৈশালীর বৌদ্ধ স্তুপ

তথ্যসূত্র

  1. http://tirhut-muzaffarpur.bih.nic.in
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৩ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১৫
  3. Law, Gwillim (২০১১-০৯-২৫)। "Districts of India"Statoids। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-১১
  4. Srivastava, Dayawanti et al. (ed.) (২০১০)। "States and Union Territories: Bihar: Government"। India 2010: A Reference Annual (54th সংস্করণ)। New Delhi, India: Additional Director General, Publications Division, Ministry of Information and Broadcasting (India), Government of India। পৃষ্ঠা 1118–1119। আইএসবিএন 978-81-230-1617-7।
  5. "Island Directory Tables: Islands by Land Area"United Nations Environment Program। ১৯৯৮-০২-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-১১Tenerife 2,034km2 horizontal tab character in |উক্তি= at position 9 (সাহায্য)
  6. Ministry of Panchayati Raj (সেপ্টেম্বর ৮, ২০০৯)। "A Note on the Backward Regions Grant Fund Programme" (PDF)। National Institute of Rural Development। ৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১১
  7. "District Census 2011"। Census2011.co.in। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০
  8. US Directorate of Intelligence। "Country Comparison:Population"। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-০১Panama 3,460,462 July 2011 est. line feed character in |উক্তি= at position 7 (সাহায্য)
  9. "2010 Resident Population Data"। U. S. Census Bureau। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০Connecticut 3,574,097 line feed character in |উক্তি= at position 12 (সাহায্য)
  10. Indian Ministry of Forests and Environment। "Protected areas: Bihar"। ২৩ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১১
টেমপ্লেট:Vaishali district topics

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:Railways in Bihar

টেমপ্লেট:Tirhut Division

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.