বাঙালি মুসলমানের মন

বাঙালি মুসলমানের মন বাংলাদেশের অগ্রণী লেখক ও চিন্তাবিদ আহমদ ছফা বিরচিত একটি প্রবন্ধসংকলন। গ্রন্থটি ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটিতে সত্তরের দশকে ছফা রচিত নয়টি প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে। গ্রন্থটির নাম প্রবন্ধ "বাঙালি মুসলমানের মন" (১৯৭৬)-এ ছফা বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয়ের হাজার বছরের বিবর্তন বিশ্লেষণপূর্বক তাদের পশ্চাদগামিতার কারণ অনুসন্ধান করেছেন।[1][2][3] আনিসুজ্জামানসলিমুল্লাহ খানসহ আরো অনেকে ছফার বাঙালি মুসলমানের মন (১৯৮১) প্রবন্ধসংকলনটিকে বাংলা ভাষায় রচিত গত শতাব্দীর সেরা দশ চিন্তার বইয়ের একটি বলে মনে করেন।[3][4][5][6]

বাঙালি মুসলমানের মন
লেখকআহমদ ছফা
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
ধরনপ্রবন্ধসংকলন
প্রকাশিত১৯৮১
প্রকাশকবাংলা একাডেমী

"বাঙালি মুসলমানের মন"

পটভূমি

"বাঙালি মুসলমানের মন" শীর্ষক প্রবন্ধটি একটি বিশেষ কারণে লিখিত।[7] স্বঘোষিত নাস্তিক ছিলেন আবুল ফজল (সাহিত্যিক) একদিন সকালে তিনি আবুল ফজলকে টুপি পরে সিরাত অনুষ্ঠানে যাওয়া দেখে বিস্মিত হন। জিয়াউর রহমান সরকারের তখন তিনি উপদেষ্টাও ছিলেন। আবুল ফজলের বদলে যাওয়াটাকে তিনি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে না করে এর কার্যকারণ সন্ধানের চেষ্টা করেন।[7] আবুল ফজলের পরিবর্তিত রূপ তার মধ্যে প্রচণ্ড রকম আলোড়ন সৃষ্টি করে। সেই আলোড়ন নিয়ে এক রাতে ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ শীর্ষক প্রবন্ধটি লেখেন।[7]

বিষয়বস্তু

যে জাতি উন্নত বিজ্ঞান, দর্শন এবং সংস্কৃতির স্রষ্টা হতে পারে না, অথবা সেগুলোকে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে গ্রহণ করতে পারে না, তাকে দিয়ে উন্নত রাষ্ট্র সৃষ্টিও সম্ভব নয়। যে নিজের বিষয় নিজে চিন্তা করতে জানে না, নিজের ভালোমন্দ নিরূপণ করতে অক্ষম, অপরের পরামর্শ এবং শোনা কথায় যার সমস্ত কাজ-কারবার চলে, তাকে খোলা থেকে আগুনে কিংবা আগুন থেকে খোলায়, এইভাবে পর্যায়ক্রমে লাফ দিতেই হয়।

"বাঙালি মুসলমানের মন"

"বাঙালি মুসলমানের মন"-এর মূল বিষয়বস্তু হল বাঙালি মুসলমানের প্রকৃত স্বরূপ অন্বেষণ।[1] বাঙালি মুসলমান আসলে কারা, আর তাদের মনের রূপায়ন কোন কোন সমাজ-সাংস্কৃতিক অভিঘাতে গড়ে উঠেছে, সেক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমান একত্রে বাঙালি আর মুসলমান হওয়ার জন্যে যে সংকট অনুভব করে ঐতিহাসিক পটভূমিকায় এর একটি সামাজিক সাংস্কৃতিক রূপান্তর ছফা আলোচনা করেছেন।[1] বৌদ্ধধর্ম যুগের রাজত্ব অবসানের পরে মুসলিম বিজয়ের সময়ে এদেশের বড় সংখ্যার একটি বৌদ্ধ এবং হিন্দুদের অন্ত্যজ (ডোম, হড্ডি, হরিজন ইত্যাদি) জনগোষ্ঠী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। শত বছরের ইতিহাসে রক্তে এসেছে স্রোত। এক রক্ত আরেক রক্তের সাথে মিশে সৃষ্টি করেছে নতুন জনগোষ্ঠী।

বাঙালি মুসলমানের মনের রূপরেখার সূচক হিসেবে পুঁথি সাহিত্য ও ভাষা বিশ্লেষণ করেছেন ছফা।[1] পুঁথি সাহিত্য বাংলা সাহিত্য সম্ভারের একটি নবতর দিক উন্মোচন করে। একটি সমাজে দুইটি শ্রেণির বাস্তবতায় কোন অংশের জন্যে এই পুঁথি রচিত হয়েছিল, তাদের সামাজিক প্রয়োজন কী ছিল, সেক্ষেত্রে কোন প্রেক্ষাপটে তাদের নিজস্ব ভাষিক পরিমন্ডলে অন্য সংস্কৃতির আবাহন তৈরি হয়েছিল, মুসলিম শাসনের নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে বাঙালি মুসলমানের যে ভিন্নতা, এটা নৃতাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক আলোচনার বিষয়। পুঁথি সাহিত্য ধর্মীয় কাহিনীতে ভাস্বর। এক্ষেত্রে এ ধর্মীয় কাহিনীগুলোর চরিত্রগুলো অলৌকিক মহিমায় উজ্জ্বল। এ গ্রন্থটি মনোসমীক্ষণধর্মিতার পরিচয় বহন করে। মানুষের বিশ্বাসের জগতে এই অলৌকিক বর্ণনা কেন মানুষের যৌক্তিক ব্যাখ্যার দ্বার খুলতে পারে না, এ বিষয়গুলো সর্বদা সাধারণের মনে প্রশ্ন হিসেবে বিরাজ করে। ছফা দেখিয়েছেন, মধ্যযুগে সৃষ্ট এ সাহিত্যকর্মগুলোর নতুন সামাজিক চাহিদার দরুন তৈরি হয়েছিল। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের তুলনায় হিন্দুরা অধিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ লাভ করে।[1] এক্ষেত্রে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে মুসলমানদের সঙ্গে হিন্দুদের সংঘাতের সৃষ্টি ও আত্মরক্ষার প্রয়োজনে সামাজিক পরিবর্তন ও নবতর মূল্যচেতনায় সমাজের গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে। পুঁথি সাহিত্য, দোভাষী সাহিত্যগুলো এ ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে হিন্দুদের সঙ্গে মুসলমানদের সংস্কৃতিগত বিভেদ তৈরি না হলেও মুসলমানরা নিজেদের সংস্কৃতিকে নিজেদের মত করে রূপান্তরিত করেছিলেন। এরপর ইংরেজ সময়ে দেখা যায়, একটি অভিজাত হিন্দু শ্রেণি সমাজে মাথাচারা দিয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে মুসলমানদের অংশগ্রহণ না থাকার কারণ হিসেবে ইংরেজদের অন্ধবিদ্বেষ থেকে গড়ে তোলা ‘ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি’-কে দায়ী করলেও, এটার মধ্য দিয়ে মুসলিম সমাজের পিছিয়ে থাকার কারণ ব্যাখ্যা করা যায় না। অনেকটা বলা যায়, সেই সুপ্রাচীন সময় থেকে বারবার ধর্ম পরিবর্তন করার ফলে বাইরের দিক ছাড়া তাদের বিশ্বাস এবং মানসিকতার মৌলবস্তুর পরিবর্তন ঘটেনি।[1] আজ অবধি বাঙলী মুসলমানের চিন্তাধারার মূল কাঠামোটি রয়ে গেছে অপরিবর্তিত। আর সেই কথাই ছফা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন নিজস্ব যুক্তি, বিশ্লেষণ আর দর্শনের মধ্য দিয়ে।

"শিক্ষার দর্শন"

"শিক্ষার দর্শন" ছফা বলেছেন রাষ্ট যন্ত্র প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে কখনোই নিখাদ বলা যায় না। রাষ্ট নিজস্ব প্রয়োজনে শিক্ষার বিষয়বস্তুতে হস্তক্ষেপ করে এমন কি পুরোপুরি সত্য নয় এমন ইতিহাসের আশ্রয় নেয়। যেমন পাকিস্তান তার শিক্ষার ব্যবস্থায় এমন তথ্যকে (সে তথ্য যতই ভ্রান্ত হোক না কেন) পৃষ্ঠপোষকতা করবে যেখানে তাদের পরাজয় হবে গৌরবান্বিত আর বাঙালীর বিজয় হবে তুচ্ছ (ছফা এখানে ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডের উদাহরণ ব্যবহার করেছেন) এমন কাজ শুধু পাকিস্তান নয়, প্রতিটি রাষ্টযন্ত্র কম বেশি করে থাকে।

"বাংলার চিত্র-ঐতিহ্যঃ সুলতানের সাধনা"

"বাংলার চিত্র-ঐতিহ্যঃ সুলতানের সাধনা" প্রবন্ধে আহমদ ছফা ভারতবর্ষের চিত্রশিল্পের ইতিহাস আলোচনাপূর্বক শেখ মুহাম্মদ সুলতানের অর্জন ও তার চিত্রকর্মের তাৎপর্য আলোচনা করেছেন।[1] এই প্রবন্ধে ছফা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দীর্ঘ বাক্য লিখেছেন:

শেখ মুহাম্মদ সুলতানের আঁকা গুরুভার নিতম্ব বিশিষ্টা পীনস্তনী এসকল চমৎকার স্বাস্থ্যবতী কর্মিষ্ঠা লীলাচঞ্চলা নারী, স্পর্ধিত অথচ নমনীয় সর্বক্ষন সৃজনলীলায় মত্ত, অহল্যা পৃথিবীর প্রান জাগানিয়া এসকল সুঠামকান্তি কিষাণ, এসকল সুন্দর সূর্যোদয়, সুন্দর সূর্যাস্ত, রাজহাঁসের পাখনার মতো নরোম তুলতুলে এসকল শুভ্র শান্ত ভোর, হিঙুল বরণ মেঘ-মেঘালীর অজস্র সম্ভার, প্রসারিত উদার আকাশ, অবারিত মাঠ গগণ ললাট, তালতমাল বৃক্ষরাজির সারি, দীঘল বাঁকের নদীতীরের এসকল দৃষ্টিশোভন চর, মাঠের পরে মাঠে থরে থরে ঢেউ খেলানো সোনার ধান, কলা পাতার ফাঁকে ফাঁকে জোনাকজ্বলা এমন আটচালা, এসকল আহ্‌লাদী বাছুর এবং পরিণত বয়স্ক গবাদি পশু, সর্বোপরি গোটা জনপদের জনজীবনে প্রসারিত উৎপাদন শৃংখলে আবদ্ধ সভ্যতার অভিযাত্রী অজেয় মানুষ, তারা যেন দৈনন্দীন জীবন স্রোতে কেলিকলারসে যুগ থেকে যুগান্তর পেরিয়ে অনন্তের পথে ভেসে যাচ্ছে, ক্যানভাসে তাদের প্রত্যয়দীপ্ত বলিষ্ঠ উপস্থিতি, স্বচ্ছন্দ ঋজু গতিভঙ্গিমা এমনভাবে বাঁধা পড়েছে, মনে হবে সমস্ত নিসর্গ দৃশ্য ছাপিয়ে মেঘেতে ঠেকেছে তাদের মস্তক এবং পাতালে প্রবিষ্ঠ হয়েছে মূল, তাদের শ্রম-ঘামের ঝঙ্কার, চেষ্টার সঙ্গীত সমস্ত প্রাকৃতিক কোলাহোল ভেদ করে আকাশগঙ্গার কিনারে কিনারে ছলাৎ ছলাৎ ধ্বনিতে একসঙ্গে ফেটে পড়েছে।

আহমদ ছফা, "বাংলার চিত্র-ঐতিহ্য: সুলতানের সাধনা"

"দুই বাংলার সাংস্কৃতিক সম্পর্ক"

"দুই বাংলার সাংস্কৃতিক সম্পর্ক" প্রবন্ধে ছফা বলেছেন, সমগ্র ভারতের সমগ্র জাতিগুলোর মাঝে বাঙালী সবথেকে বেশি প্রগতিশীল এবং অসাম্প্রদায়িক। এর পিছনে ছফা খুব ভাল একটি যুক্তি দিয়েছেন। একমাত্র বাংলা বাদে হিন্দু মুসলমানের অনেকটা সময় ধরে পাশাপাশি অবস্থানের গৌরব আর কোন জাতির মাঝে ততটা দেখা যায় না। ১৯৪৬ সালের মত দাঙ্গার হবার পরেও এই বাংলার হিন্দু মুসলিম আবার একে অপরের সাথে উষ্ণ সম্পর্ক নিয়ে বাস করতে পেরেছিলো সেটা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে যেকোন জাতিদের কাছে দৃষ্টান্ত।

এই প্রবন্ধ আহমদ ছফা বাংলাদেশীদের পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিকদের অন্ধ অনুসরণ আর অনুকরণে ব্যাপারে সর্তক করে দিয়ছেন। তিনি খুব স্পষ্ট করে বলেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের নিজস্ব সাহিত্যধারাকে উত্থানপর্বে পৌছে দিতে যে সাহায্যের প্রয়োজন, সেই সাহায্য দেবার ক্ষমতা অন্তত সেই সময় পশ্চিমবাংলার নেই।

অন্যান্য প্রবন্ধ

সংকলনভুক্ত অন্যান্য প্রবন্ধগুলো হচ্ছে "মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি চরিত্র", "রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃতি সাধনা", "বার্ট্রান্ড রাসেল", "ভবিষ্যতের ভাবনা", "বাংলার ইতিহাস প্রসঙ্গে", ও "একুশে ফেব্রুয়ারি উনিশ শ' বাহাত্তর"।

তথ্যসূত্র

  1. সাত্তার, সরদার আবদুস (২০১৭)। "বাঙালি মুসলমানের মানসদর্পণ"। আহমদ ছফা: আলোকপথের অভিযাত্রী। ঢাকা: সুচয়নী পাবলিশার্স। পৃষ্ঠা ২৭৫–২৯৮।
  2. ইব্রাহিম, আহমেদ (২৯ এপ্রিল ২০১৭)। "Ahmed Sofa In Posterity - Muslim Anxiety In A 'Muslim World'" [ভবিষ্যৎ প্রজন্মপরম্পরায় আহমদ ছফা - একটি 'মুসলিম বিশ্বে' মুসলিম উদ্বেগ]দ্য ডেইলি স্টার (বাংলাদেশ) (ইংরেজি ভাষায়)। ঢাকা: ট্রান্সকম গ্রুপ। ৪ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৮
  3. খান, সলিমুল্লাহ (২০১৩) [প্রবন্ধের প্রথমপ্রকাশকাল ২০০১]। "আহমদ ছফার সাধনা"। আহমদ ছফা সঞ্জীবনী। ঢাকা: আগামী প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৩৯–৪৭। আইএসবিএন 978-984-04-1585-4।
  4. মজহার, ফরহাদ (জুন ২০১৮)। "আহমদ ছফার 'ডেপুটি বাবু'"সাম্প্রতিক দেশকাল ঈদ সংখ্যা ২০১৮। ২ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৮ড. আনিসুজ্জামান ছফার এ বইকে ‘বিগত শতবর্ষে প্রকাশিত হাতেগোনা শ্রেষ্ঠ গ্রন্থসমূহের একটি’ বলে অভিহিত করেছেন।... শিবনারায়ণ দাশ...লিখেছেন 'গ্রন্থটির অসাধারণ তিমির-বিনাশী ক্ষমতা রয়েছে। এ ধরনের মেধাসম্পন্ন দশটি গ্রন্থও যদি প্রকাশিত হয়, তবে বাংলাদেশে রেনেসাঁ কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।’
  5. একবাল, নিখাত (২০০৯)। "Ahmed Sofa" [আহমদ ছফা]Great Muslims of Undivided India [অবিভক্ত ভারতের বিখ্যাত মুসলিম ব্যক্তিত্বসমূহ] (ইংরেজি ভাষায়)। দিল্লি: কালপাজ পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ১৬৫–১৬৯। আইএসবিএন 9788178357560।
  6. রহমান, মুহাম্মদ হাবিবুর (২০১৬)। গঙ্গাঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ (সংশোধিত সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। পৃষ্ঠা ২২০। আইএসবিএন 984 07 5479 3।
  7. "আজও অপরিহার্য আহমদ ছফা"কালের কণ্ঠ। ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৮
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.