বাগদা চিংড়ি

বাগদা চিংড়ি (ইংরেজি: Prawn) দশপদবিশিষ্ট চিংড়ি গোত্রীয় প্রাণী। পৃথিবীতে ৭ ধরনের পরিবারের ৫৪০ প্রজাতির বাগদা চিংড়ি রয়েছে। এ ধরনের চিংড়ি সর্বোচ্চ ৩৩০ মিলিমিটার বা ১৩ ইঞ্চি এবং ওজনে ৪৫০ গ্রাম বা ১ পাউন্ড হয়ে থাকে। আদর্শ রন্ধনপ্রণালী অনুসরণ করে মনুষ্য খাবার উপযোগী দামী অর্থকরী প্রাণী হিসেবে এর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। চিংড়ি তার আবাসস্থলরূপে উন্মুক্ত মৎস্যক্ষেত্রে বিচরণ করে। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য এ চিংড়ি খামারেও উৎপাদন করা হয়।

ফ্রাইড রাইস এর সাথে বাগদা চিংড়ি ভাজি

Dendrobranchiata
সময়গত পরিসীমা: Famennian–Recent
কা
পা
ক্রি
প্যা
Penaeus monodon
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Arthropoda
উপপর্ব: Crustacea
শ্রেণী: Malacostraca
বর্গ: Decapoda
উপবর্গ: Dendrobranchiata
Bate, 1888
Superfamilies and families [1]

Penaeoidea

Aciculopodidae
Aegeridae
Aristeidae
Benthesicymidae
Carpopenaeidae
Penaeidae
Sicyoniidae
Solenoceridae

Sergestoidea

Luciferidae
Sergestidae
প্রতিশব্দ [2]

Penaeidea Dana, 1852

শারীরিক কাঠামো

অন্যান্য প্রজাতির চিংড়ির তুলনার এর বাহ্যিক কাঠামো তার একেক অংশের চেয়ে একটু চ্যাপ্টা প্রকৃতির। সবচেয়ে বড় আকৃতির বাগদা চিংড়ি হচ্ছে পিনেয়াস মোনোডন। এটি সর্বোচ্চ ৩৩৬ মিলিমিটার বা ১৩.২ ইঞ্চি এবং ওজনে ৪৫০ গ্রাম বা ১ পাউন্ড ওজন পর্যন্ত হয়ে থাকে।[3] বংশবৃদ্ধির উপযুক্ত স্থান হিসেবে সরাসরি পানিতে ডিম উৎপাদন করে। ডিমের প্রাথমিক অবস্থারূপে লার্ভায় প্রোটোজোয়েল, জোয়া এবং পোসলার্ভার সংমিশ্রণে গঠিত হয়।[4] সুস্পষ্টভাবে দিক-নির্দেশনা ও চলাফেরার সুবিধার্থে মাথার সম্মুখ অংশে শূড় রয়েছে। মাথায় একজোড়া চোখের সাহায্যে সম্মুখ দিক অবলোকন করে সদর্পে অগ্রসর হয়।[5] বক্ষস্থলে পাঁচ জোড়া পেরিওপড বা হাঁটার উপযোগী পা রয়েছে। প্রথম তিন জোড়া পায়ে ছোট থাবা আছে।[6] লুসিফারিডে এবং এসটেস গোত্রের বাগদা চিংড়ির শেষ দুই জোড়া পায়ে থাবা নেই।[7]

এর অধিকাংশ মাংসপেশী তলপেটকে বাঁকানোর কাজে ব্যবহার করা হয় এবং তলেপেটের প্রায় সবটুকু অংশই মাংসপেশী দিয়ে পূর্ণ।[8] ১৭টিরও অধিক মাংসপেশী প্রত্যেক জোড়া প্লিওপডকে সাঁতার কার্য্যে অংশ নিতে সাহায্য করে। ১৬টি শক্তিশালী মাংসপেশী লেজের অঙ্গ সঞ্চালন ও পিছনের দিকের চলাফেরায় ভূমিকা রাখে। এ মাংসপেশীগুলোই একত্রিতভাবে মাংস হিসেবে পরিচিত এবং এর জন্যেই বাণিজ্যিকভাবে আহরণসহ খামারে চাষাবাদ করা হয়।[9]

স্নায়ুতন্ত্রের কাঠামো পৃষ্ঠদেশে অবস্থিত মস্তিস্ক এবং পেটের উপরস্থিত স্নায়ু শিরার মাধ্যমে অন্ননালী বা অইসোফেগাসের চতুর্দিক দু'টি কমিসুরের সাহায্যে সংযুক্ত থাকে।[10]

বৈজ্ঞানিক নাম

বাগদা চিংড়ির ফুলকা কয়েকটি অংশে বিভক্ত যা গাছের শাখার ন্যায়। এর উপর ভিত্তি করে বৈজ্ঞানিক নাম প্রদান করা হয়েছে। প্রাচীন গ্রীক ভাষা ডেনড্রোন (অর্থ গাছ) (δένδρον) এবং ব্রাঞ্চিয়া (অর্থ ফুলকা) (βράγχια)-এর সংমিশ্রণে এর বৈজ্ঞানিক নাম ডেনড্রোনব্রাঞ্চিয়াটা (Dendrobranchiata) রাখা হয়েছে।[11]

জীবাশ্ম

২০১০ সালের পূর্বে সবচেয়ে প্রাচীন বাগদা চিংড়ির জীবাশ্মটি মাদাগাস্কারের এক পাথরে পাওয়া যায়। এটি আনুমানিক ২৫০ মিলিয়ন বছর পূর্বেকার পার্মো-ট্রাইয়াজিক যুগের বলে ধারণা হয়।[12][13] ২০১০ সালে এসিকুলোপোডা গোত্রীয় বাগদা চিংড়ীর জীবাশ্ম ওকলেহোমায় আবিস্কৃত হয় যা ৩৬০ মিলিয়ন বছরের পুরনো।[14] তবে সবচেয়ে ভাল জীবাশ্মটি পাওয়া গেছে জার্মানিতে যা ছিল জুরাসিক আমলের।[13]

জীবিত প্রজাতির বাগদা চিংড়িগুলো ৭টি গোত্রে বিভক্ত। তন্মধ্যে ৫টি অতিবৃহৎ গোত্রীয় পেনেইওয়াইডিয়া এবং অন্য দু'টি সার্জেস্টোয়াইডিয়া গোত্রের।[2] যদিও অনেকে বর্তমান শ্রেণীকরণে আপত্তি জানিয়েছেন।[15] ৫৪০টি প্রজাতিসহ আরো প্রায় ১০০ বিলুপ্ত প্রজাতি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।[1] এছাড়াও আরো দুটি বিলুপ্ত প্রজাতির গোত্র রয়েছে।[1]

প্রাপ্তিস্থান

বাগদা চিংড়ির আবাসস্থল ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। অধিকাংশ প্রজাতির চিংড়িই ৪০° উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৪০° দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে দেখা যায়।[16] কিছু প্রজাতিকে আবার উচ্চতর অক্ষাংশেও দেখা যেতে পারে। বেন্থিওজেনিমা বোরিয়ালিস প্রজাতির বাগদা চিংড়ি প্রশান্ত মহাসাগরের ৫৭° উত্তর অক্ষাংশে এবং জেনাদাস কেম্পি প্রজাতির চিংড়িকে এন্টার্কটিক মহাসাগরে দেখা যায়।[16]

জীববৈচিত্র্য

কিছু প্রজাতির চিংড়ি স্বাদু পানিতে অবস্থান করে। কিন্তু অধিকাংশ বাগদা চিংড়িকেই সাগরে দেখা যায়।[17] সার্জেস্টিডেই এবং বেন্থেসিসাইমাইডাইয়ে প্রজাতিটি গভীর জলে অবস্থান করে। সোলেনোসেরিডেই প্রজাতিটি উপকূলের কাছাকাছি বাস করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে বেশী। কিন্তু অধিকাংশ পেনেইডে প্রজাতিটি উপকূল থেকে দূরবর্তী এলাকায় বসবাস করে। আবার কিছু প্রজাতি সমুদ্রের তলদেশে দিনে অবস্থান করে এবং রাত্রিতে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়।[17]

বাগদা চিংড়ি সুবিধাবাদী ও সর্বভূক প্রাণী হিসেবে পরিচিত।[18] তাদের খাদ্য তালিকায় অনেক ধরনের উপকরণের সমারোহ দেখা যায়। খুব ছোট থেকে বৃহৎ আকৃতির উদ্ভিদ-প্রাণী খাদ্যের শিকার হয়। তন্মধ্যে - মাছ, চেইটোগনাথ, ক্রিল, কোপপড, রেডিওলারিয়া, ফাইটোপ্লাঙ্কটন, নেমাটোসিস্ট, অস্ট্রাকড, ডেট্রাক্রড অন্যতম।[18] একডাইসিস বা বাইরের আবরণ ত্যাগ করার সময় এগুলো কম খাবার গ্রহণ করে। এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে মুখের অংশের কোমলতাজনিত। একবার খোসা ত্যাগের কাজ সমাপণের পর এগুলো সাধারণ সময়ের তুলনায় অধিক খাদ্য গ্রহণ করে।[18]

অর্থনৈতিক উপযোগিতা

ডেনড্রোব্রাঞ্চিয়াটার অর্থনৈতিক গুরুত্ব অত্যন্ত বিশাল ও ব্যাপক। কিছু দেশে বিশেষতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর উৎপাদনের প্রায় পুরোটাই চিংড়ি খামারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। অন্যান্য দেশেও মৎস্য খামারের মাধ্যমে এর চাষাবাদ হয়। ইকুয়েডরে মোট বাগদা চিংড়ির ৯৫% খামারে উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও, মেক্সিকো, চীন, বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়ায়ও খামারের মাধ্যমে চিংড়ি উৎপাদন করা হয়।[19]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জী

  • Bill Baker & Peggy Bendel। "Come and Say G'Day!" (PDF)Travel Marketing DecisionsAssociation of Travel Marketing Executives (Summer 2005)। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ২১, ২০০৭
  • Robert P. D. Crean (নভেম্বর ১৪, ২০০৪)। "Dendrobranchiata"Order Decapoda। University of Bristol। ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ১০, ২০১২
  • William Dall (১৯৯০)। The Biology of the Penaeidae। Advances in Marine Biology। 27Academic Pressআইএসবিএন 978-0-12-026127-7।
  • Sammy De Grave, N. Dean Pentcheff, Shane T. Ahyong; ও অন্যান্য (২০০৯)। "A classification of living and fossil genera of decapod crustaceans" (PDF)Raffles Bulletin of Zoology। Suppl. 21: 1–109।
  • Rodney Feldmann & Carrie Schweitzer (২০১০)। "The oldest shrimp (Devonian: Famennian) and remarkable preservation of soft tissue"। Journal of Crustacean Biology30 (4): 629–635। doi:10.1651/09-3268.1
  • Indian Aquaculture Authority (২০০১)। "Shrimp Aquaculture and the Environment - An Environment Impact Assessment Report, chapter 2; IAA report" (PDF)। ১৬ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০১২
  • Laxman Kanduri & Ronald A. Eckhardt (২০০২)। "HACCP in shrimp processing"। Food Safety in Shrimp Processing: a Handbook for Shrimp Processors, Importers, Exporters and RetailersJohn Wiley and Sons। পৃষ্ঠা 40–64। আইএসবিএন 978-0-85238-270-7।
  • K. Y. Ma, T.-Y. Chan & K. H. Chu (২০০৯)। "Phylogeny of penaeoid shrimps (Decapoda: Penaeoidea) inferred from nuclear protein-coding genes"। Molecular Phylogenetics and Evolution53 (1): 45–55। doi:10.1016/j.ympev.2009.05.019। PMID 19477284
  • J. W. Martin & G. E. Davis (২০০১)। An Updated Classification of the Recent Crustacea (PDF)Natural History Museum of Los Angeles County। পৃষ্ঠা 1–132।
  • Frederick R. Schram, Shen Yanbin, Ronald Vonk & Rodney S. Taylor (২০০০)। "The first fossil stenopodidean"। Crustaceana73 (2): 235–242। doi:10.1163/156854000504183জেস্টোর 20106269
  • Carolina Tavares & Joel W. Martin (২০১০)। "Suborder Dendrobranchiata Bate, 1888"। F. R. Schram, J. C. von Vaupel Klein, J. Forest & M. Charmantier-Daures। Eucarida: Euphausiacea, Amphionidacea, and Decapoda (partim) (PDF)। Treatise on Zoology – Anatomy, Taxonomy, Biology – The Crustacea। 9ABrill Publishers। পৃষ্ঠা 99–164। আইএসবিএন 978-90-04-16441-3।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.