ফুল মোহাম্মদ

ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ (১৯২১ - ২০ জানুয়ারি, ২০০০) ছিলেন একজন বাংলাদেশী শাস্ত্রীয় ও নজরুল সঙ্গীতশিল্পী। সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকার]] কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত হন।

ওস্তাদ

ফুল মোহাম্মদ
জন্ম১৯২১
মৃত্যু২০ জানুয়ারি ২০০০(2000-01-20) (বয়স ৭৮–৭৯)
মৃত্যুর কারণক্যান্সার
জাতীয়তাবাংলাদেশী
পেশাসঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক
দাম্পত্য সঙ্গীজরিনা বেগম
পিতা-মাতাগোলাম রসুল লঘু (পিতা)
মায়মুনা খাতুন (মাতা)
পুরস্কারএকুশে পদক (১৯৮২)

প্রাথমিক জীবন

ফুল মোহাম্মদ ১৯২১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) মুর্শিদাবাদ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ শেখ কালু মিয়া ছিলেন গজলশিল্পী। তাঁর পিতা গোলাম রসুল লঘুও সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর মায়ের নাম মায়মুনা খাতুন।[1] তিন বছর বয়সে পিতার কাছে তাঁর সঙ্গীতের হাতেখড়ি হয়। তাঁর পিতা সিদ্ধান্ত নেন তাঁকে রাগ সঙ্গীত শিখাবেন। এরপর পিতার বন্ধু মেঘবাবুর কাছে পাঠানো হয় এবং তার অধীনে দুই বছর তালিম নেন। মেঘবাবু তাঁকে ওস্তাদ কাদের বক্সের কাছে পাঠান। পাঁচ বছর তালিম নেওয়ার পর কাদের বক্স অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি সেতার পণ্ডিত রামগোবিন্দ পাঠকের কাছে তালিম নেওয়া শুরু করেন।[2]

সঙ্গীত জীবন

১৯৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে অডিশন দেন এবং উত্তীর্ণ হন। কলকাতায় অডিশনের পর তাঁর চাচা তাঁকে মেগাফোন কোম্পানির সংগীত প্রশিক্ষক ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে নিয়ে যান। তিনি তাঁর গানে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে তার নিকট গানের তালিম নেওয়ার পরামর্শ দেন। ১৯৩৮ সালে তিনি সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে ভর্তি হন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। এ সময়ে তিনি অল বেঙ্গল সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় ছয়টি বিভাগে অংশগ্রহণ করে চারটি বিভাগে প্রথম ও দুটি বিভাগে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন।[2]

পরে ১৯৩৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলেজ সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় রাগসংগীত বিভাগে প্রথম ও গজল বিভাগে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। এই প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সেখান থেকে ফুল মোহাম্মদের পরিচয় হয় কাজী নজরুলের সাথে। নজরুল তাঁকে দিয়ে "ইয়া মোহাম্মদ বেহেশত হতে" ও "আঁধার মনের মিনারে মোর" গান দুটি রেকর্ড করান। গান দুটি প্রকাশ করে মেগাফোন রেকর্ড কোম্পানী।[1] এরপর ওস্তাদ মেহেদী হাসান তাঁকে নিজের ছেলে হিসেবে গ্রহণ করেন এবং মোহাম্মাদ তাঁর অধীনে চার বছর তালিম নেন।[2] ১৯৪০ সালে তিনি নিখিল বঙ্গ মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করে প্রশংসিত হন।[3]

কর্মজীবন

দেশ বিভাগের পূর্বে তিনি সিভিল সাপ্লাই ডিপার্টমেন্টে চাকরিতে যোগ দেন। এই সময়ে তিনি জরিনা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দেশ বিভাগের পরে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। পাশাপাশি ঢাকা বেতারেও যোগ দেন। তিনি বেতার ও টেলিভিশনে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও নজরুল সঙ্গীতের পরিচালক হিসেবে বেশ কিছুদিন কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৫ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ছায়ানটে রাগ সঙ্গীত বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।[2]

১৯৬৭ সালে নজরুল একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি সেখানে উপাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষক পদেও কর্মরত ছিলেন কিছুদিন। ১৯৭২ সালে অগ্নিবীণা সঙ্গীত নিকেতনের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালে ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইজর পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন। ১৯৮৯ সালে আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয় ও ১৯৯৪ সালে নজরুল একাডেমির অধ্যক্ষ পদ লাভ করেন।[2]

মৃত্যু

ফুল মোহাম্মদ দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভুগার পর ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।[2]

সম্মাননা

সঙ্গীতে অবদানের জন্য ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদকে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮২ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে।[3]

তথ্যসূত্র

  1. "ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ"অনুশীলন। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে, ২০১৭ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  2. "স্মরণ: ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ"শেয়ার বিজ। ২০ জানুয়ারি, ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে, ২০১৭ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  3. "গানের যুগ সারথি"বেঙ্গল মিউজিক ফেস্ট। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে, ২০১৭ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.