ফিদে

ফেডেরাসিওঁ ইন্তারনেসিওনাল দে ইশেক (ফরাসীঃ Fédération Internationale des Échecs - FIDE) যা বিশ্ব দাবা সংস্থা বা ফিদে নামে পরিচিত। এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতীয় দাবা ফেডারেশনকে নিয়ন্ত্রণ করে। পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব পালন করে। সচরাচর বিশ্ব দাবা সংস্থা ফরাসী ভাষায় ফিদে নামেই বিশ্বব্যাপী সমধিক পরিচিত।

ফেডেরাসিওঁ ইন্তারনেসিওনাল দে ইশেক
(বিশ্ব দাবা সংস্থা)
নীতিবাক্যGens una sumus
"আমরা সবাই একই জনগোষ্ঠী"
গঠিত২০ জুলাই, ১৯২৪
ধরণজাতীয় দাবা সংস্থাগুলোর সংগঠন
সদরদপ্তরএথেন্স, গ্রীস
সদস্যপদ
১৫৮ দেশের জাতীয় দাবা সংস্থা
সভাপতি
কিরস্যান ইলিয়ামঝিনোভ
ওয়েবসাইটফিদে.কম - প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

ভূমিকা

বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশীপ বিশেষ করে উন্মুক্ত, প্রমিলা এবং জুনিয়র বা কনিষ্ঠদের জন্য দাবা চ্যাম্পিয়নশীপ, আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশীপ এবং দাবা অলিম্পিয়াডের আয়োজনে তাদের সক্ষমতা প্রদর্শন করে আলোচিত হয়েছে। সংগঠনটি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি কর্তৃক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। দাবা সংস্থাটিতে পরিচালনা পরিষদ রয়েছে এবং এটি বৈশ্বিক ও মহাদেশীয় পর্যায়ে দাবা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে।[1] এছাড়াও, ফিদে কর্তৃক আরোপিত নিয়ম-কানুন এবং প্রবিধান অন্যান্য শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রয়োগ হচ্ছে কি-না তা-ও পর্যবেক্ষণ করে।

এটি দাবা খেলার যাবতীয় নিয়ম-কানুন প্রবর্তন করে যা প্রতিটি খেলা হিসেবে বোর্ড এবং দাবার চালের প্রয়োগ করা হয়। এ নিয়ম-কানুন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রতিপালন করা হয়। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অনুসৃত নীতিমালা স্থানীয় প্রতিযোগিতায়ও অনুসরণ করা হয়। তবে স্থানীয় দাবা পরিচালনা পরিষদ ইচ্ছে করলে এ নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়ে পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধন করতে পারেন।

ইতিহাস

সেন্ট পিটার্সবার্গে ১৯১৪ সালের এপ্রিল মাসে প্রাথমিকভাবে একটি আন্তর্জাতিক দাবা ফেডারেশন গঠনের রূপরেখা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। জুলাই, ১৯১৪ সালে ম্যানহিম আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতা চলাকালীন সময়ে আরেকটি উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ১ম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের প্রেক্ষাপটে তা কার্যতঃ সাময়িকভাবে ব্যর্থতায় পরিণত হয়। ১৯২০ সালে গোটেনবার্গ প্রতিযোগিতায় আবারো দাবা সংস্থা গঠনের চেষ্টা চালানো হয়।[2]

১৯২২ সালে রুশ দাবাড়ু ইউগিনি নোস্কো-বোরোভস্কি লন্ডনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকালীন সময়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, প্যারিসে অনুষ্ঠতিব্য অলিম্পিক গেমসের ৮ম আসর চলাকালে একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। স্বাগতিক দেশের ফরাসী দাবা ফেডারেশন প্রতিযোগিতাটি পরিচালনা করবে। পরবর্তীতে স্বীকৃতিবিহীন অবস্থায় ১ম দাবা অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। ২০ জুলাই, ১৯২৪ সালে প্যারিস টুর্ণামেন্ট চলাকালীন সময়ের শেষদিনে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণে ফিদে নামে দাবা সংস্থাটির প্রতিষ্ঠা হয় যা ছিল সকল খেলোয়াড়ের মিলনস্থল।[1][2][3][4] এছাড়া, ১৯২৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে দাবা খেলাকে অলিম্পিক গেমসে অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু, শৌখিন ও পেশাদারী খেলায়াড়দের মতবিভেদের কারণে তা হতে পারেনি।[5] শৈশবকালীন সময়ে ফিদে সংস্থা হিসেবে কম শক্তিমত্তার অধিকারী ছিল এবং এর আর্থিক সঙ্গতিও ছিল দূর্বলমানের।

১৯২৭ সালে লন্ডনে ফিদে কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ১ম দাবা অলিম্পিয়াড আয়োজন করতে সক্ষম হয়। এতে মাত্র ১৬টি দেশের প্রতিযোগীগণ অংশ নিয়েছিলেন।[5] ২য় বিশ্বযুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অলিম্পিয়াডটি মাঝেমাঝেই বার্ষিকাকারে কিংবা অনিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৫০ সালে থেকে অদ্যাবধি প্রতিযোগিতাটি প্রতি দুই বছর অন্তর অর্থাৎ দ্বি-বার্ষিকভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। [5] ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত ৩৭তম দাবা অলিম্পিয়াডে বিশ্বের ১৩৩ দেশের দাবাড়ু অংশ নিয়েছিলেন।

অলিম্পিক কমিটি কর্তৃক স্বীকৃতি

১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি বা আইওসি ফিদেকে স্বীকৃতি দেয়। স্বীকৃতির দুই বছর পর ফিদে আইওসি'র মাদক-মুক্ত নিয়ম-কানুন দাবা খেলায়ও প্রবর্তন করে। এরফলেই এ আন্দোলনে সম্পৃক্তির ফলাফলস্বরূপ দাবা খেলাও অলিম্পিক খেলায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট হিসেবে পরিগণিত হয়।[6]

সাংগঠনিক সদস্য

বর্তমানে ১৫৮টি দেশের দাবা সংস্থা ফিদে'র সদস্য হিসেবে রয়েছে। তন্মধ্যে - ১৪২টি জাতিসংঘ স্বীকৃত দেশ। কিছুকাল পূর্বে এর সদস্য হিসেবে ১৫৯টি দাবা সংস্থা ছিল; কিন্তু একটি সংস্থাকে বিতাড়িত করা হয়। নীচের তালিকাটি অসম্পূর্ণ; কখনোবা নতুন রাষ্ট্র যোগদান করে আবার কিছু দাবা সংস্থা ভেঙ্গে যাওয়ায় কিংবা পাওনা অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়াই এর মূল কারণ।

আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, এন্ডোরা, এঙ্গোলা, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, আজারবাইজান, বাহামা, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বার্বাডোস, বেলারুশ, বেলজিয়াম, বেলিজ, বলিভিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বতসোয়ানা, ব্রাজিল, ব্রুনেই দারুসসালাম, বুলগেরিয়া, বুরুন্ডি, কম্বোডিয়া, কানাডা, চিলি, চীন, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, আইভরিকোস্ট, ক্রোয়েশিয়া, কিউবা, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েডর, মিশর, এল সালভেদর, এস্তোনিয়া, ইথিওপিয়া, ফ্যারাও দ্বীপপুঞ্জ, ফিজি, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জর্জিয়া, জার্মানি, ঘানা, গ্রীস, গুয়েতমালা, গুয়েরনসে, হাইতি, হন্ডুরাস, হাঙ্গেরী, আইসল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, আয়ারল্যান্ড, ইসরায়েল, ইতালি, জ্যামাইকা, জাপা, জার্সি, জর্ডান, কাজাখস্তান, কেনিয়া, কুয়েত, কিরগিজিস্তান, লাওস, লাতভিয়া, লেবানন, লিবিয়া, লিচেনস্টেইন, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, ম্যাকাও, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার, মালাউই, মালয়েশিয়া, মাল্টা, মৌরিতাস, মেক্সিকো, মলদোভা, মোনাকো, মঙ্গোলিয়া, মরক্কো, মোজাম্বিক, মায়ানমার, নামিবিয়া, নেপাল, নেদারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, নিকারাগুয়া, নাইজেরিয়া, নরওয়ে, পাকিস্তান, পালাউ, পানামা, পাপুয়া নিউগিনি, প্যারাগুয়ে, পেরু, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, কাতার, রোমানিয়া, রাশিয়া, রুয়ান্ডা, স্যান ম্যারিনো, সার্বিয়া, সিচিলিস, সিয়েরা লিওন, সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, সুদান, সুরিনাম, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিরিয়া, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগো, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, উরুগুয়ে, উজবেকিস্তান, ভেনেজুয়েলা, ভিয়েতনাম, ইয়েমেন, জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে।

অন্যান স্বায়ত্ত্বশাসিত দেশ কিংবা দ্বীপগুলো হলো - আরুবা, বার্মুদা, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, চীনা তাইপে, ইংল্যান্ড, ফ্যারাও আইল্যান্ড, গুয়ার্নসি, হংকং, জার্সি, ম্যাকাও, নেদারল্যান্ড এনটিলস্, ফিলিস্তিন, পুর্টোরিকো, স্কটল্যান্ড, আমেরিকান ভার্জিন আইল্যান্ড এবং ওয়েলস।

ঘানা এবং আইভরিকোস্টকে সাময়িকভাবে ফিদের সদস্যভূক্তি থেকে স্থগিতাদেশ প্রদান করা হয়। উক্ত দু'টি দেশের দাবা সংস্থার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মজনিত কারণে এ স্থগিতাদেশ দেয়া হয়।

সভাপতি

প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অদ্যাবধি ছয় জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ফিদে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[7]

ফিদে সভাপতিদের তালিকা
ক্রমিক নংনামদেশের নামসময়কালপরিচিতি
১। আলেকজান্ডার রুয়েব নেদারল্যান্ড ১৯২৪-১৯৪৯ডাচ, আইনজীবি ও কূটনীতিবিদ
২। ফোকে রোগার্ড সুইডেন ১৯৪৯-১৯৭০সুইডেনের আইনজীবি
৩। ম্যাক্স ইউউই নেদারল্যান্ড ১৯৭০-১৯৭৮ডাচ, গণিতের অধ্যাপক
৪। ফ্রেড্রিক ওল্ফাসসন আইসল্যান্ড ১৯৭৮-১৯৮২আইসল্যান্ডের আইনজীবি ও গ্র্যান্ডমাস্টার
৫। ফ্লোরেন্সিও ক্যাম্পোমেইনস ফিলিপাইন ১৯৮২-১৯৯৫ফিলিপিনো দাবাড়ু ও রাজনীতিবিদ
৬। কিরসান আইলিয়ামঝিনোভ রাশিয়া ১৯৯৫-বর্তমানরুশ কূটনৈতিক ও রাজনীতিবিদ

প্রবর্তিত পুরস্কার

সংগঠনের তরফে একাধিক ফিদে পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। তন্মধ্যে - ইন্টারন্যাশনাল আরবিটার অন্যতম। এ পুরস্কার অর্জনের জন্য ব্যক্তিকে প্রতিযোগিতামূলক এবং বিশ্বস্ত হিসেবে শীর্ষস্থানীয় দাবা প্রতিযোগিতায় তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকা পালন করে থাকেন।[8]

ইলো রেটিং পদ্ধতির সাহায্যে ফিদে খেলোয়াড়দেরকে বিভিন্ন উপাধি প্রদান করে। সেগুলো হলো - ফিদে মাস্টার (এফএম), ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার (আইএম) এবং আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টার। একই ধাঁচের পুরস্কার প্রমিলা বা মহিলা দাবাড়ুদেরকেও প্রদান করা হয়।[9] এছাড়াও, সমস্যা সমাধানে সক্ষমতা এবং অনুশীলনের মধ্য দিয়ে সমাধানে সক্ষম দাবাড়ুদেরকে মাস্টার এবং গ্র্যান্ডমাস্টার শিরোপা প্রদান করে থাকে। পরবর্তীতে সেরা সমস্যা ও সমাধানে চালচিত্র ফিদের সাময়িক পত্রিকা ফিদে এলবামে প্রকাশ করা হয়।[10]

ডাকযোগে কিংবা ই-মেইলের সাহায্যে দাবা খেলা নিয়ন্ত্রণ করে ইন্টারন্যাশনাল করেসপন্ডেন্স চেজ ফেডারেশন নামীয় স্বতন্ত্র একটি সংগঠন। এটি ফিদেকে যখন, যেখানে প্রয়োজন সহায়তা প্রদান করে থাকে।

তথ্যসূত্র

  1. "FIDE History"। FIDE। ১১ জানুয়ারি ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২
  2. Wall, W.। "FIDE History"। ২০০৯-১০-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২৭
  3. Seirawan, Y. (১৯৯৮)। "Whose Title Is it, Anyway?"GAMES Magazine অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  4. FIDE History by Bill Wall. Retrieved 2 May 2008.
  5. Brace, Edward R. (১৯৭৭), An Illustrated Dictionary of Chess, Hamlyn Publishing Group, পৃষ্ঠা 64, আইএসবিএন 1-55521-394-4
  6. "FIDE to adopt IOC Medical Code"The Hindu। ২০০১-০৮-০৭। ২০১১-০৭-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২৬
  7. ফিদে সভাপতিদের তালিকা, সংগ্রহকালঃ ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১২ইং
  8. "FIDE Handbook"। FIDE। (contents page)
  9. "FIDE Ratings"। FIDE। (portal to other FIDE ratings-related pages)
  10. Harkola, H.। "FIDE Albums"

আরও পড়ুন

  • Kazic, Bozidar; Keene, Raymond; Lim, Kok Ann (১৯৮৫)। The Official Laws of Chess। Batsford। আইএসবিএন 0-7134-4802-4।
  • FIDE (১৯৮৯)। The Official Laws of Chess (2nd সংস্করণ)। Macmillian। আইএসবিএন 0-02-028540-X।

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:National members of the World Chess Federation

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.